আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনুসন্ধান : কুরআনে মহানবীর দয়া প্রসঙ্গ



একটা ভারিক্কি গোছের প্রবন্ধ দাঁড় করাতে হবে। বিষয় 'মহানবীর দয়াদর্শন'। এই নিয়ে একটু ঘাঁটঘাটি করছি। প্রথমে কুরআন, তারপর হাদীস, তারপর দর্শন ও ধর্মতত্ত্ব। এ পর্যন্ত কুরআনে যে আয়াতগুলো খুঁজে পেয়েছি, নিচে সেগুলো গুছিয়ে রাখলাম সূত্রসহ।

বলাই বহুল্য, এই পোস্টটা আমার নিজের জন্যেই। আপনারা যা করতে পারেন, তা হলো আমাকে সাহায্য, নবীর দয়াশীলতার উল্লেখ আছে এমন আরো আয়াত জানা থাকলে আমাকে সেগুলো জানিয়ে। অবিশ্যি লাভটা তাতে আমারই। শুকরান! এ অবধি খুঁজে পাওয়া আয়াতগুলো: وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ “আমি তো তোমাকে সৃষ্টিকুলের প্রতি শুধু রহমত রূপেই প্রেরণ করেছি। ” (আল-আম্বিয়া ১০৭) মহানবী শুধু মানুষের জন্যে নন; জিন ও মানব, মুমিন ও কাফির সকলের প্রতিই রহমতরূপে প্রেরিত।

বিশ্বের সকল জীব-জন্তুর জন্যেও তিনি রহমত। সকলকে তিনি আল্লাহর দিকে আহ্বান করেন। অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যান। আল্লাহ বলেন: قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ فَآَمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ الَّذِي يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَكَلِمَاتِهِ وَاتَّبِعُوهُ (১৫৮ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ. (الأعراف “তুমি ঘোষণা করো, ‘হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের সকলের জন্যে সেই আল্লাহর রাসূল রূপে প্রেরিত হয়েছি, যিনি আসমান ও যমীনের একচ্ছত্র মালিক। তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই।

তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। সুতরাং আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর সেই বার্তাবাহক উম্মী নবীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো, যিনি আল্লাহতে ও তাঁর কালামে বিশ্বাস রাখেন। তোমরা তারই অনুসরণ কর। আশা করা যায় তোমরা সরল-সঠিক পথের সন্ধান পাবে। ” আল্লাহ তা'আলা তাঁর নবীকে সম্বোধন করে বলেন : وَإِذْ صَرَفْنَا إِلَيْكَ نَفَرًا مِنَ الْجِنِّ يَسْتَمِعُونَ الْقُرْآَنَ فَلَمَّا حَضَرُوهُ قَالُوا أَنْصِتُوا فَلَمَّا قُضِيَ وَلَّوْا إِلَى قَوْمِهِمْ مُنْذِرِينَ. (الأحقاف : 29 “আর যখন আমি তোমার প্রতি আকৃষ্ট করেছিলাম একদল জিনকে, যারা কুরআন পাঠ শুনছিল।

যখন তারা তার (নবীর) নিকট উপস্থিত হলো, তারা একে অপরকে বলতে লাগল, ‘চুপ করে শোন। ’ যখন কুরআন পাঠ সমাপ্ত হলো, তারা তাদের সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গেল সতর্ককারী রূপে। ” তিনি জগৎসমূহের জন্য রহমত। সকল সৃষ্টি জীবের পক্ষে ও বিপক্ষে প্রমাণ। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য এক বিরাট দান।

ইরশাদ হয়েছে : لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آَيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ. (آل عمران : ১৬৪) “নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের নিজেদেরই মধ্য হতে রাসূল প্রেরণ করেছেন, যে তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনায় ও তাদের পবিত্র করে। তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিখায় । যদিও তারা ইতিপূর্বে পরিষ্কার বিভ্রান্তিতে ছিল। ” মহান আল্লাহ সত্যিই বলেছেন: وَإِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيمٍ (আল-ক্বালাম ৪) “তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী। ” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন আদর্শ, অনুসরণযোগ্য ইমাম যাকে যাকে চিরকাল অনুসরণ করা যায়।

আল্লাহ তাআলা বলেন: لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآَخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا “তোমাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর রাসূলের মধ্যে সর্বোত্তম আদর্শ। যে আল্লাহ ও আখেরাতকে চায় ও বেশি বেশি স্মরণ করে আল্লাহকে। ” (আল-আহযাব ২১) আল্লাহ তাআলা বলেন, لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ “তোমাদের নিকট আগমন করেছে তোমাদেরই মধ্যকার এমন একজন রাসূল, যার কাছে তোমাদের ক্ষতিকর বিষয় অতি কষ্টদায়ক মনে হয়। সে হচ্ছে তোমাদের খুবই হিতাকাংখী, মুমিনদের প্রতি বড়ই স্নেহশীল, করুণাপরায়ন। ” (আত-তাওবা ১২৮) আল্লাহ এ নবীকে পাঠিয়েছেন সাধারণভাবে সকল মানুষের জন্যে আর বিশেষভাবে মুমিনদের জন্যে, যারা তাকে চেনে, তার থেকে উপকার নিতে জানে।

তিনি মুমিনদের কল্যাণ কামনা করেন সর্বদা। তাদের মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য সর্বদা প্রচেষ্টা চালান। তাদের উপর কোন বিপদ এলে তিনিও তাতে আহত হন। তাদের ঈমানের দিকে পথ চলাতে সর্বদা আগ্রহী থাকেন। তাদের জন্য যে কোন ধরনের ক্ষতি তিনি অপছন্দ করেন।

পিতা-মাতারা সন্তানকে যেভাবে ভালবাসে তিনি ঈমানদারদেরকে তার চেয়ে বেশি বেশি ভালোবাসেন। এ জন্যই তার হক সকলের চেয়ে বেশি। উম্মতের জন্যে অবশ্য কর্তব্য হল তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। তাকে সম্মান করা। তাকে সাহায্য করা।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, النَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ وَأَزْوَاجُهُ أُمَّهَاتُهُمْ “নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর এবং তার স্ত্রীরা তাদের মাতা। ” (আহযাব ৬) তাই নিজের চেয়ে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বেশি ভালোবাসতে হবে। যদি নিজের কোন সিদ্ধান্তের সাথে নবীর সিদ্ধান্ত বিরোধী হয় তখন নিজের মতামত বাদ দিয়ে নবীর মতামত বা সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো বলেন, فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ “অতএব আল্লাহর অনুগ্রহ এই যে, তুমি তাদের প্রতি কোমলচিত্ত; আর তুমি যদি কর্কশভাষী, কঠোর হৃদয় হতে, তবে নিশ্চয় তারা তোমার সঙ্গ হতে দূরে সরে যেত। অতএব তুমি তাদের মা করো ও তাদের জন্য মা প্রার্থনা করো এবং কার্য সম্পর্কে তাদের সাথে পরামর্শ করো; যখন তুমি সংকল্প করো তখন আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করো।

যারা তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। ” (সূরা আল-আলে ইমরান : ১৫৯)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।