শিক্ষাঙ্গনে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে মাঠে নেমেছে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীর। প্রথমেই নিজেদের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থির করার অপকৌশল নিয়েছে উগ্রবাদী এই দুই সংগঠন। প্রথম টার্গেট হিসেবেই চট্টগ্রাম ও সিলেটের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছে তারা। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে ইসলামী ছাত্রশিবির একাকার হয়ে গেছে বলেও সন্দেহ করছে গোয়েন্দারা। উভয় সংগঠনের মধ্যে আদর্শগত ব্যাপক মিল থাকলেও রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে তারা পৃথকভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে।
এমনকি হিযবুতের নাটাই শিবিরের হাতে বলেও তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। দুই পক্ষের সিদ্ধান্ত অনুসারে কৌশলগত কারনে হিযবুত তাহরীর নিজ নামে অন্যথায় ছাত্র শিবিরের ব্যানারে কাজ করবে। ইতোমধ্যেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিলি করা পোস্টার ও লিফলেটে ‘হিযবুত তাহরীর উলাইয়াহ বাংলাদেশের’।
সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে (৮৭টি) কমিটি আছে কেবল এ দু’টি সংগঠনেরই। ৩৩টি পাবলিক ও ৫৪টি প্রাইভৈট বিশ্ববিদ্যালয়েই গোপনে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে কাজ করছে শিবির।
তবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে হিযবুত তাহরীরের অবস্থান সবচেয়ে শক্ত। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, বিভিন্ন সময় আলাদা আলাদাভাবে কাজ করলেও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এরা একসঙ্গে কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। হিযবুত তাহরীরের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ শিক্ষক এবং জামায়াতের শীর্ষ কয়েক নেতাই পুরো বিষয়টি মনিটরিং করছেন। এর আগে জননিরাপত্তার জন্য হুমকি অভিহিত করে ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করে সরকার। এই সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
তারপর ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে। জড়িয়ে পড়েন শি¶ক ও শি¶ার্থীরা। প্রথম থেকেই সংগঠনটি বাংলাদেশের সংবিধান, গনতন্ত্র, আইনের শাসন, ও বিচারব্যবস্থার প্রকাশ্য বিরোধিতা করে কাজ শুরু করে। হিযবুত তাহরীরের ছাত্র সংগঠনের নাম ছাত্রমুক্তি। হিযবুত তাহরীর শব্দের বাংলা অর্থ মুক্তির দল।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এর আগে আর কোন সংগঠনের কার্যক্রমে দেশের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শি¶ক ও ছাত্ররা এত বেশি জড়িয়ে পড়েনি। ২০০০ সালে প্রথম তারা কার্যক্রম শুরু করে ‘লিবারেটেড ইয়ুথ’ এর ব্যানারে। তবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ২০০১ সালে। ২০০৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ছাত্রমুক্তি’ ও রোকেয়া হলে ‘আলোকিত ছাত্রী ফোরাম’ নামে শি¶ার্থীদের আলাদা দুটি সংগঠনের যাত্রা শুরু করে। ২০০৬ সালের রমজান মাসে শি¶া ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে এক ইফতার পার্টির মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে ছাত্রমুক্তি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন গত বছর গ্রেফতার হওয়া সংগঠনের প্রধান সমš^য়কারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মহিউদ্দিন আহমেদ। ছিলেন সংগঠনের নেতা গোলাম মাওলা, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শি¶কসহ সরকারী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক ছাত্র। খোঁজ নিয়ে জনা গেছে, হিযবুত তাহরীর পরিচালনা করেন মূলত সংগঠনের চার খলিফা। এর মধ্যে তিন জনই বিশ্ববিদ্যালয়ের শি¶ক। সংগঠনের প্রধান সমš^য়ক মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের শি¶ক, সিনিয়র উপদেষ্টা ড. সৈয়দ গোলাম মওলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক, একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শি¶ক শেখ তৌফিক দলের অন্যতম খলিফা।
আরেক খলিফা হচ্ছেন ব্যবসায়ী কাজী মোরশেদুল হক। সূত্র জানিয়েছে, গোলাম মওলা নব্বই দশকের মাঝামাঝি উচ্চ শি¶ার জন্য কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে ব্রিটেন যান। সেখানেই.তিনি.হিযবুত-তাহ্রীরের.সঙ্গেÕজড়িয়ে.পরেন।
মহিউদ্দিন আহমেদ ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানা যায়। তবে ১৯৯৯ সালের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শি¶ক নিযুক্ত হওয়ার পর ছাত্রশিবিরের সঙ্গে অনেকটা সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেই হিযবুত তাহ্রীকে সংগঠিত করার দায়িত্ব নেন।
এ পর্যন্ত হিযবুত তাহরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে গ্রেফতার হওয়া বেশিরভাগই হচ্ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শি¶ক ও শি¶ার্থী। যাদের মধ্যে আছেন সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক আহমেদ জামাল ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম মওলা, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শি¶ক মামুন আনসারি, লেক হেড গ্রামার স্কুলের গণিতের শি¶ক মনিরুজ্জাামান মাসুদ, রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের শি¶ার্থী ওমর ফারুক, রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শি¶ার্থী আখতার হোসেন, জাহিদুল ইসলামসহ আরও বেশ কিছু নেতা। প্রথমে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছিল এলিফ্যান্ট রোডের কাটাবন মসজিদের পাশে। পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ৫৫/এ পুরানা পল্টনের এইচএম সিদ্দিক ম্যানশনের পঞ্চম তলায় স্থানান্তর করা হয়। এ পর্যন্ত হিযবুত তাহ্রীর প্রকাশ করেছে ২৪টির মতো বই।
ঢাকায় রয়েছে ১০টিরও বেশি পাঠচক্র। আছে ১০ হাজারের ওপর সক্রিয় কর্মী। বর্তমানে বিশ্বের ৯৫টি দেশে রয়েছে হিযবুত তাহরীর। এর মধ্যে ২২ দেশে নিষিদ্ধ হয়েছে সংগঠনটি। বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীর সবচেয়ে বেশি সক্রিয় সিলেটে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রমুক্তির এক কর্মী জনকণ্ঠকে জানান, পৃথিবীর যেসব দেশে হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ এবং যেসব দেশে সক্রিয় সবখানেই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে হিযবুত তাহরীর।
জানা গেছে, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে কয়েক দফা বৈঠক করেই বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সংগঠনটি জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে এককাট্টা হয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাঁটাবনের একটি ভবনে হয়েছে গোপান এ বৈঠক। এই বৈঠকেই প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলায় জামায়াত শিবিরের সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকে জামায়াত ও শিবিরের প্রতিনিধিরাও ছিলেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রেক্ষাপটেই মূলত এই ঐক্য হয়েছে বলে সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। ঐ বৈঠকেই জামায়াতের দেশব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচীতে এক সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নিষিদ্ধ হওয়ায় কৌশলগত কারণেই জামায়াত শিবিরের ব্যানারে কাজ করবে হিযবুত তাহরীর। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, দুুটি সংগঠনের প্রধান ঘাঁটি থাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেমন, চট্টগ্রাম, ইসলামী, শাহাজালাল, রাজশাহী, বুয়েট, এশিয়ান, মানারাত, নর্থ সাউথ, সাউথইস্ট, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমনি চলে নিয়মিত বৈঠক। অভিযোগ আছে, অন্তত ১০টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকপক্ষ মূলত এদেরই পৃষ্ঠপোষক।
এদিকে পরিকল্পনা মতো ইতোধ্যেই নাম পরিবর্তন করে কাজ শুরু করেছে হিযবুত তাহরীর। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিলি করা পোস্টার ও লিফলেটে ‘হিযবুত তাহরীর উলাইয়াহ বাংলাদেশের’ ব্যানারে সরকার উৎখাতের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এদিকে জামায়াতের গণসংযোগ কর্মসূচীর নামে ধর্মীয় জিকির তুলে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে সচেতন শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করতে নেমে পড়েছে শিবির ও হিযবুত তাহরীর।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।