পতিতাবৃত্তি ও দেহব্যবসা কি সুস্থ সাভাবিক নারীর পেশা হতে পারে? আর দশটা পেশার মত এটাও কি নারীর কর্মক্ষেত্র হওয়া উচিত? অথচ বাংলাদেশে আজ এই পতিতাবৃত্তি ও দেহ ব্যবসাই একটি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। এেেত্র যথাযথ আইন ও আন্তর্জাতিক স্বীকীতি না থাকলেও আমাদের দেশে এই ব্যাপারটার দিকে আইনের প্রয়োগ খুবই অসহায়। নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপ সনদ-সিডও (ঈড়হাবহঃরড়হ ড়ভ ঃযব ঊষরসরহধঃরড়হ ড়ভ অষষ ঋড়ৎসং ড়ভ উরংপৎরসরহধঃরড়হ অমধরহংঃ ডড়সবহ) (ঈঊউঅড) যাকে বলা হয় নারীর আন্তর্জাকি “ইরষষ ড়ভ জরমযঃং”। উক্ত সনদের ৬নং ধারায় বলা হয়েছে; শরীক রাষ্ট্রসমূহ নারীকে নিয়ে সব দরনের অবৈধ ব্যবসা এবং দেহব্যবসার আকারে নারীর শোষণ দমন করার ল্েয আইন প্রণয়নসহ সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। দেশের প্রচলিত ও স্বীকৃত আইনগুলোতেও সরাসরি দেহ ব্যবসা ও প্রতিতাবৃত্তি বিরুদ্ধে অবস্থান রয়েছে।
দ-বিধির ৩৭২, ৩৭৩, ৩৬৪.ক ও ৩৬৬.ক ধারায় বেশ্যাবৃত্তির জন্য অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ক্রয় ও বিক্রয়ের শাস্তির বিধান বর্ণিত হইয়াছে। ৩৭২ ধারায় বলা হইয়াছে যে, যে ব্যক্তি আঠার বৎসরের কম বয়স্ক কোন ব্যক্তিকে যে কোন বয়সে বেশ্যাবিৃত্তি বা অন্য কোন লোকের সহিত অবৈধ যৌন সহবাস অথবা কোন বেআইনী ও অসৎ উদ্দেশ্যে নিয়োজিত বা ব্যবহৃত হইবে এই উদ্দেশ্যে কিংবা অনুরূপ ব্যক্তি যে কোন উদ্দেশ্যে নিয়োজিত বা ব্যবহৃত হইবে এইরূপ সম্ভাবনা রহিয়াছে জানিয়া তাহাকে বিক্রয় করে, ভাড়া দেয় বা প্রকারন্তরে হস্তান্তর করে, সেই ব্যক্তি যে কোন বর্ণনার কারাদন্ড যাহার মেয়াদ দশবৎসর পর্যন্ত হইতে পারে এবং তদুপরি অর্থ দ-েও দ-নীয় হইবে। ৩৭৩ ধারায় বেশ্যাবৃত্তির উদ্দেশ্যে অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারী ক্রয় করা সম্পর্কে বলা হইয়াছে। এইরূপ ক্রয় করিলে তাহার শাস্তি দশ বৎসর পর্যন্ত কারাদ- এবং তদুপরি অর্থদন্ডও হইতে পারে। ৩৬৪.ক তে বলা হয়েছে কোন ব্যাক্তি যদি দশ বৎসরের কম বয়ষ্ক কাউকে খুন, গুরুতর আঘাত, দাসত্ব কিংবা কাম-লালসার শিকারে পরিণত করার উদ্দেশ্যে হরণ করে, তাহলে সে মৃত্যু দ-ে বা যাবজ্জীবন কারা দ-ে দ-িত হবে।
যার মেয়াদ ১৪ বছর পর্যন্ত হতে পারে, তবে ৭ বছরের কম নয়। ৩৬৬.ক তে বলা হয়েছে কোন লোক যদি অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক কোন বালিকাকে যার বয়স ১৮ হয়নি, সংগ্রহ করে তাকে কারো সাথে যৌন সংগম করাতে বাধ্য করে তাহলে সে কারাদ-ে দ-িত হবে। যার মেয়াদ ১০ বৎসর পর্যন্ত হতে পারে এবং সে জরিমানা দ-েও শাস্তি যোগ্য হবে। নারীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা (প্রতিরোধক সাজা) আধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ৪ ও ৫ নং ধারা অনুসারে যে কোন বয়সের নারীকে বেশ্যাবৃত্তি অথবা যে কোন লোকের সহিত অবৈধ যৌনসংগম করিবার জন্য অথবা যে কোন অবৈধ ও নৈতিকতা বিরোধী কাজের জন্য ক্রয়-বিক্রয় বা আমদানী- রফতানী করা হইলে তাহার শাস্তি যাবজ্জীবন কারদন্ড বা ১৪ বৎসর পর্যন্ত কারদা- এবং তদুপরি অর্থদ-েও দ-িত হইবে। উক্ত অধ্যাদেশের ৫ নং ধারায় ১ নং ব্যাখ্যায় বলা হইয়াছে যে, যখন একজন নারীকে কোন বেশ্যার নিকট অথবা যে কোন ব্যক্তির নিকট যে ব্যক্তি পতিতালয় রাখে অথবা পরিচালনা করে তাহার নিকট বিক্রয় করা হয়, ভাড়ার জন্য দেওয়া হয় অথবা অন্য কোন উপায়ে হস্তান্তর করে, যে ব্যক্তি এইরূপ হস্তান্তর করে ভিন্নতর প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত ধরিয়া লওয়া হইবে যে, সেই ব্যক্তি (নারীকে) বেশ্যাবৃত্তিতে ব্যবহার করিবার উদ্দেশ্যে হস্তান্তর করিয়াছে।
২ নং ব্যাখ্যায় বলঅ হইয়াছে, যে ব্যক্তি বেশ্যা অথবা যে ব্যক্তি কোন পতিতালয় রাখে বা পরিচালনা করে সেই ব্যক্তি কোন নারীকে ক্রয় করিলে, ভাড়া নিলে অথবা অন্য উপায়ে দখল নিলে ভিন্নতর প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত ধরিয়া লওয়া হইবে যে, সে বেশ্যাবৃত্তি করানোর জন্য অনুরূপ নারীর দখল নিয়াছে। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮ (২) ও ৩৪ (১)- অনুযায়ী গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং সকল প্রকার জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধ ও আইনত দন্ডনীয়। অতএব আমরা দেখতে পাই যে, বাংলাদেশে পতিতাবৃত্তি আইনত নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে তা বেআইনি নয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন পতিতালয় রয়েছে।
যেগুলো সম্পর্কে কম-বেশী সবাই অবগত। বিভিন্ন এনজিওদের হিসাব মতে বাংলাদেশে প্রায় ১,০০,০০০.০০ (এক লক্ষ) নারী পতিতা রয়েছে। আইনানুযায়ী পতিতাদের উদ্ধার করে সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসন করার কথা। এ উদ্দেশ্যে কিছু ভবঘুরে আশশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এগুলো বাস্তবে পতিতালয়ের চেয়েও জঘন্য।
সেখানে আশ্রিতরা আরও বেশি নিরাপত্তাহীন ও মানবেতর জীবন- যাপন করছে। অন্যদিকে আইনের আড়ালে বাস্তবে পতিতাবৃত্তিকে পেশা যৌনকর্মী হিসাবে দেখানোর একটি জোর প্রচারণা আছে। আর প্রতিতাগুলো অন্যদিকে তৈরী হচ্ছে এক একটি মাদকদ্রব্যের আশ্রয়স্থল। বাংলাদেশের প্রতিতালয়গুলোতে নারী ও শিশুদের মাঝে (১৮-৩৫ বৎসরের) ৯০% ই মাদকসেবী। আমাদের দেশে প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় নারী ও কন্যা শিশু ধর্ষণ, খুন এসিড নিপে, ফতোয়াবাজি, প্রতারণা ও লাঞ্চনার খবর পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ সরকার এসব বিষয পতিরোধে সিডও সনদে অঙ্গীকারবদ্ধ। দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং নারী পাচার দমন আইনও আছে। কিন্তু এসব আইনের বাস্তবায়ন খুবই দুর্বল ও প্রায় অকার্যকর। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৫ হাজার নারী ও শিশু বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়। এদের অধিকাংশই পাঠানো হয় ভারত, পাকিস্তান, মালোশিয়া ও আরব আমিরাতে।
তাদেরকে বাধ্যতামূলক পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত করা হয়। শুধু কলকাতার গণিকালয়ে ১৪% নারী বাংলাদেশী। সর্বপোরি প্রতিতাবৃত্তি বিষয়টা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। এটি যেমনি পেশা হতে পারে না, তেমনি এটি শুধু ভোগ্য বিয়ষবস্তুও হয়ে থাকাটা কাম্য নয়।
মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
আইন বিভাগ (৪র্থ বর্ষ)
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
রিপো্র্টার: সাপ্তাহিক "দুর্নীতি চিএ"
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।