যুক্তরাষ্ট্র-মিশর সম্পর্ক উন্নয়নে মুরসি
মোবারক পরবর্তী মিশরে সাধারণ জনগণ ইসলাম দিয়ে দেশ শাসনের জন্য ও শরীয়াহ আইন চালু করার জন্য ভোট দেয় মুহাম্মদ মুরসিকে। মুরসি জনগনের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসে এক বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের চাপ অন্যদিকে জনগণের প্রত্যাশা ও তা পূরণে তার কৃত অঙ্গীকার। মুরসির ক্ষমতা গ্রহনের সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল শংকার মধ্যে ছিল যে মুরসি দখলদার যায়নবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী প্রেরণ করে কিনা। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সেনা প্রধান তানতাওয়ীর সাথে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে তৈরি হয় উত্তেজনা।
সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ জনতা আবারও নেমে আসে তাহরীর স্কয়ারে। ওয়াশিংটনের পরামর্শে মুরসি উচ্চপদে রদবদলের মাধ্যমে বিষয়টি নিরসন করেন। শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন মুরসি।
মুরসি ক্ষমতা গ্রহণের কিছুদিন পর ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইলের সাথে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে ইসরাইলকে চিঠি পাঠায়। ইসরাইলের রাষ্ট্রপতি সিমন পেরিসকে লেখা চিঠিতে মুরসি উল্লেখ করেন, “I am looking forward to exerting our best efforts to get the Middle East Peace Process back to its right track in order to achieve security and stability for all peoples of the region, including that Israeli people.” মুরসির প্রতিনিধি এ চিঠির সত্যতা অস্বীকার করলেও ইংরেজী দৈনিক দ্যা গার্ডিয়ান-এ প্রকাশিত রিপোর্টে এর সত্যতা নিশ্চিত হয়, যেখানে উল্লেখ করা হয়, ইসরাইলে অবস্থিত মিশরের দূতাবাস থেকে রেজিষ্টার্ড চিঠি ও ফ্যাক্সের মাধ্যমে বার্তাটি পাঠানো হয়েছে।
মুরসি ইসরাইলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক রক্ষায় বদ্ধপরিকর এবং তিনি এখনও ইসরাইল থেকে তার রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করেননি। ১৯৭৯ সালে ইসরাইল ও মিশরের মধ্যে স্বাক্ষরিত ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি অনুযায়ী সিনাই উপত্যাকায় হামলা চালায়। এই চুক্তি অনুযায়ী সিনাই ছিল সেনামুক্ত এলাকা। এই এলাকায় জঙ্গি দমনে মিশরের সেনাবাহিনীর হামলা ছিল ইসরাইলের স্বার্থে যা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরাইলের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার কথায় স্পষ্ট, "there are ongoing communications between the two sides (Israil and Egypt).
ফিলিস্তিন ইস্যুতে মুরসি কোন পরিস্কার বক্তব্য না দিয়ে হামাসের রাজনৈতিক নেতা খালেদ মিশেল ও ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সাথে বৈঠকের পর তিনি ঘোষনা দেন, “We have said before that we stand at equal distance from all Palestinian factions. We support and aid them and are always happy to help in reconciliation.”
অর্থাৎ ধরি মাছ না ছুই পানি। প্রায় অর্ধ মিলিয়ন সেনাবাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ- মুরসি, নির্যাতিত ফিলিস্তিনি জনগনের পক্ষে কোন কথা বলেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে গিয়ে মজলুম ফিলিস্তিনের নারী-শিশুর আর্ত-চিৎকার তার হৃদয়কে নাড়া দেয়নি যদিও বিশ্বের দশম বৃহত্তম সেনাবাহিনী রয়েছে তার। তানতাওয়ী থাকাকালীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, লিওন পেনেট্টা মুরসীর ভূয়সী প্রশংসা করেছিল এই বলে, “It's my view that President Morsi and Field Marshal Tantawi have a very good working relationship and are working together for the same ends.” যার প্রতিদান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র মিশরকে ১.৩ বিলিয়ন ডলার সাহায্য দানে প্রতিশ্রুতি দেয়।
মুরসির অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য আইএমএফ এর দারস্থ হচ্ছেন। যার মানে, মুসলিম ব্রাদারহুডের এত দিনের আন্দোলনে মিশরের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কোন রোড ম্যাপ ছিলনা। এছাড়া তাদের ক্ষমতা গ্রহনের জন্য ছিলনা কোনো প্রস্তুতি।
ক্ষমতা গ্রহণ করে দারিদ্র, বেকার ও নানাবিধ অর্থনৈতিক সম্যস্যায় পড়ে মুরসি। আইএমএফ এর কাছে ৪.৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ ভিক্ষা চেয়েছেন মুরসির সরকার। মিশরের প্রধানমন্ত্রী হিশাম কানদিল ঋণ সম্পর্কে বলেন, এটি ৫ বছরের ঋণ, ১.১% সুদ, যা মিশরের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ভালো হবে। এছাড়া মিশরের আর এক বড় শিল্প গলো পর্যটন শিল্প। তারা পর্যটন শিল্প উন্নয়নে কাজ শুরু করেছে যেখানে মদ, ও অশ্লীলতা নিত্যকার ঘটনা।
মুসলিম ব্রাদারহুদ এর রাজনৈতিক শাখা ‘ফ্রিডম ্এন্ড জাস্টিস পার্টি’র এক সদস্য পর্যটন শিল্পের নগ্নতা, যা ইসলামে হারাম, সে প্রসঙ্গে এক সাক্ষাতকারে বলেন, "Yet Islamic laws also prohibit spying on private places and this applies to beaches as well...I wish 50 million tourists would travel to Egypt even if they come nude." এসবই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে মুরসির চেষ্টা।
মুরসি মূলত মুবারকের রেখে যাওয়া মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির রোডম্যাপ বাস্তবায়নের কাজে যুক্তরাষ্ট্রের সাখে একাট্টা বেঁধেছেন। এ রোডম্যাপ ওবামা নির্বাচনের পর মিশর সফরের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের কাজে হাত দেয়। যে কাজে তাকে তৎকালীন মোবারক, সৌদির বাদশাহ আব্দুল্লাহ বিশেষভাবে সহায়তা করে। এখন মোবারকের রেখে যাওয়া বাকি কাজগুলো ওবামা প্রশাসন করিয়ে নিচ্ছে মুরসির মাধ্যমে।
এর জন্যই মুরসিকে রাজনৈতিকভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে ওয়াশিংটন। ওয়াশিংটন এর ভাষ্যমতে,“Egypt's new top military officer is a known commodity in Washington.” এবং এ বিষয়ে কায়রোতে হিলারীর সাথে মুরসির বৈঠকের পর তানতাওয়িকে অপসারনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় মুরসি যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া গাইডলাইন অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করছে। মোবারক আমলে করা আন্তর্জাতিক সকল চুক্তি বহাল রাখছে এবং এর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছেন মুরসি। সিনাই উপত্যাকায় হামলা যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
জাতীসংঘের সাধারণ অধিবেসনে ওবামা তার ভাষণে ‘ইনসেন্স অব মুসলিম’ চলচ্চিত্রের নির্মাতাকে ঘৃণা জানিয়ে বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সবার যা তাদের সংবিধান দ্বারা সংরক্ষিত। এ কারনে এ বিষয়ে তাদের তেমন কিছু করার নেই। ওবামা মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে চিরন্তন ও সকলের মূল্যবোধ হিসেবে উল্লেখ করেন তার বক্তব্যে। এ সভায় মুরসিসহ মুসলিম বিশ্বের অনেক নেতাই উপস্থিত ছিলেন। তারা কেউই এর প্রতিবাদ করেনি ববং ওবামাকে সমর্থন জানিয়েছে নিশ্চুপ থেকে।
মুরসিও তার দেশের প্রতিবাদী জনগণকে ধৈর্য্যধারণের আহ্বান জানিয়েছে যাতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কে এর কোন প্রভাব না পড়ে। মুরসি এভাবে তার দেশের জনগণকে যুক্তরাষ্ট্রের আদলে ইসলামী শাসন দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু যে জনগণ বহু ত্যাগ তিতিক্ষার মাধ্যমে মুবারককে অপসারণ করেছে ইসলামী শাসনের আশায়, তারা মুরসির ওপর কতদিন আস্থা রাখতে পারবে তার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছুদিন।
১০.০১.২০১২
মনে হয় মুরসির আসল চেহারা উম্মোচিত হলো এবার। পড়ুন সুরা মুমহাহিনা: ১-২ আয়াত আর মুরসির কর্মকান্ডের সাথে মিলিয়ে দেখুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।