Every emotion have a feelings. But every feelings have no emotion.
বাকরখানি রুটি। না, এটা কোন বাদশাহী খাবার নয়। কোন বিদেশী খাবারও নয়। এটি হচ্ছে এক প্রকার রুটি, যার স্বাদ অতুলনীয়। পুরনো ঢাকার বাসিন্দাদের খুব প্রিয় খাবার, মুখরোচকতো বটেই।
প্রতিদিন সকাল বেলার নাস্তায় অথবা বিকেল বা সন্ধ্যা বেলার নাস্তায় বাকরখানি না হলেই নয়। পুরনো ঢাকায় এটি একটি অন্যতম প্রচলিত খাবার। অন্য যে কোন আয়েশী খাবারের সাথে এর তুলনা মেলা ভার।
ঢাকা শহরে এখন বড় বড় রেষ্টুরেন্ট, চাইনীজ রেষ্টুরেন্ট এমনকি নামী-দামী ফাষ্ট ফুড দোকানে সয়লাব হয়ে গেছে, যেখানে বিত্তশালী লোকেরা সামান্য কিছু খাবারের পেছনে বিস্তর টাকা পয়সা খরচ করে। অথচ তারা কি কখনো এই সু-স্বাদু, মজাদার এবং মুখরোচক বাকরখানি রুটির কথা শুনেছেন, বাকরখানি রুটি কি, এর স্বাদই বা কেমন, দামই বা কত ইত্যাদি ইত্যাদি।
কথার কোন ছল নয়, নয় লেখনীর কোন শব্দ আকর্ষন। একেবারে সহজ সাধা সিধে কথা। খেয়েই দেখুন না একবার?
ময়দা, সাথে সামান্য খাবার সোডা, ডালডা, একটি তন্দুর এবং এর মাঝে উত্তাপ ছড়ানো জ্বলন্ত কয়লা। ব্যস, হয়ে গেল যোগান। প্রথমে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় ময়দা, সামান্য পানি এবং ডালডার সমন্বয়ে খামীর তৈরী করা হয়।
এবার তৈরীকৃত খামীর থেকে কেটে ছোট ছোট গোলাকার কোয়া তৈরী করা হয়। এবার কোয়াটি বেলুনের সাহায্যে পাটার উপরে সামন্তরাল ভাবে ছোট গোলাকার কাঁচা রুটি তৈরী করা হয়। কাঁচা রুটির মাঝখানে ছুড়ি দিয়ে লম্বা করে তিনটি দাগ কেটে দেওয়া হয়। এবার এর এক পাশে পানির সামান্য প্রলেপ দিয়ে তন্দুরের দেয়ালে আটকিয়ে দেয়া হয়। ৫ থেকে ৭ মিনিট অপেক্ষা করুন।
তৈরী হয়ে গেল বাকরখানি রুটি। আবার ঘৃত দিয়েও বিশেষ যত্নের সাথে এই রুটি তৈরী করা হয়ে থাকে। তবে ক্রেতাকে ঘৃত আলাদাভাবে কিনে দিতে হয়। পনির দিয়েও এই রুটি বিশেষ কায়দায় তৈরী করা হয়ে থাকে। ঠিক একই রকমভাবে ক্রেতাকে পনির আলাদাভাবে কিনে দিতে হয়।
এখন অবশ্য প্রায় দোকানে পনির রুটি তৈরী করা থাকে। ঈদুল আযহা এর উৎসবে কোরবানীকৃত গরু বা খাশীর মাংশের ঝুড়ি দিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় এই রুটি তৈরী করা হয়ে থাকে।
বাকরখানি রুটি চায়ের সাথে খাওয়ার প্রচলন বেশী। এছাড়াও মাংসের সাথে, হোক সে গরু বা খাশীর অথবা মুরগীর, সংগে বাকরখানি রুটি এ যেন সোনায় সোহাগা। ক্ষীর এবং পায়েশের সাথেও এই রুটি পরিবেশন করা হয়ে থাকে।
ঢাকার সোয়ারীঘাট থেকে ট্রলারে করে জিঞ্জিরার পরে বরিশুর নামে একটি এলাকার বাকরখানি রুটির বেশ নাম ডাক সারা ঢাকা জুড়ে। পুরনো ঢাকার লালবাগ, নাজিমুদ্দিন রোড, সিক্সা বাজার এবং চাঁনখারপুল এলাকা বাকরখানি রুটি তৈরীর জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও জিন্দাবাহার, কসাইটুলী, নাজিরা বাজার, নবাব বাড়ী, আওলাদ হোসেন লেন, নবরায় লেন, সূত্রাপুরসহ ঢাকার নাম না জানা অলিতে গলিতে বাকরখানি রুটির দোকান রয়েছে।
বাকরখানি রুটি কেজি দরে বিক্রয় করা হয়। প্রতি কেজি রুটির মূল্য ১১০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
৩৫ টি থেকে ৪০ টি পর্যন্ত রুটি ধরে প্রতি কেজিতে। একজন সর্বোচ্চ ২ টি থেকে ৩ টি রুটি খেতে পারে। এই হিসাব মতে ৩ থেকে ৪ সদস্যের একটি পরিবারের ৪ থেকে ৬ দিনের সকালের নাস্তা মাত্র ১৩০ টাকার মধ্যে সেড়ে যাবে। বাকরখানি রুটি খুচরা হিসেবেও বিক্রয় করা হয়ে থাকে। প্রতি পিস দাম পড়বে ৩ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত।
জনশ্রুতি রয়েছে, জমিদার বাকের খাঁ ও তাঁর স্ত্রী খানি বেগমের নাম অনুসারে এর নামকরণ করা হয় বাকরখানি।
সত্যিকার অর্থে বাকরখানি রুটি পুরনো ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। বাকরখানি রুটি ঢাকার বাইরেও অর্ডার মোতাবেক সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।