স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক বলেছেন, ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা রেলগাড়িতে চড়ে কর্মস্থলে যান, আবার নৌকায় করে ফিরে আসেন। অনেককে পরে আর খুঁজেও পাওয়া যায় না। ’
আজ বুধবার বিকেলে ‘স্বাস্থ্যসেবায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অভিজ্ঞতাভিত্তিক দিনব্যাপী এক পরামর্শসভার সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) আয়োজনে রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সভার আগে দিনব্যাপী এক কর্মশালায় স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন সমস্যা ও করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। পরে মন্ত্রীর সামনে সেসব উপস্থাপন করা হয়।
সভায় উত্থাপিত প্রায় সব সমস্যার সঙ্গেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী একমত পোষণ করেন। তিনি এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতে নজরদারির অভাব এবং চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতার অভাবকে বেশি দায়ী করেন।
পদায়নের পরও কর্মস্থল থেকে চিকিৎসকদের চলে আসাকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ সমস্যা সমাধানে চিকিৎসকদের নিয়োগ-ব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রীকরণ করার ওপরও জোর দেন তিনি।
রুহুল হক বলেন, নওগাঁর চিকিৎসক যাতে নওগাঁয় থাকতে পারেন সে ব্যবস্থা করতে হবে।
কেউ চাইলে অন্য এলাকায়ও যেন যেতে পারেন, সে ব্যবস্থাও রাখতে হবে। তিনি বলেন, চিকিৎসকদের নিয়োগ দেওয়া হলে তাঁরা মামা, চাচা ধরে চলে আসেন। এটা প্রশাসনের ব্যর্থতা। এ সমস্যা সমাধান করা গেলে স্বাস্থ্য খাতের ৬০ শতাংশ সমালোচনা থেমে যাবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কমিউনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিকে চিকিৎসকের পদ নেই বলেই সেগুলো ভালো চলছে।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় জনবল স্বল্পতা আছে। প্রায় সাত হাজার পদ শূন্য আছে। ক্ষমতা থেকে যাওয়ার আগে যেভাবেই হোক এ পদ পূরণ করে যাওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
সভায় টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। সভায় জানানো হয়, দেশের ৪৫টি অঞ্চলে টিআইবির উদ্যোগে গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্টের (ইয়েস) সদস্যরা সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে।
পরামর্শ সভায় সনাকের স্বাস্থ্য উপকমিটির সভাপতি ও প্রতিনিধি ছাড়াও সাতটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৩৪টি জেলা সদর হাসপাতাল/জেনারেল হাসপাতাল ও তিনটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪৪ জন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা ছয়টি দলে বিভক্ত হয়ে দিনব্যাপী দলীয় আলোচনায় অংশ নেন।
সমাপনী অধিবেশনের বিশেষ অতিথি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক খন্দকার মো. সিফায়েত উল্লাহ বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দেশের মোট বাজেটের ১৪ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দিতে বলেছে। বাংলাদেশে ২০১২-১৩ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। চলতি বছরে এ খাতে বরাদ্দ আরও কমেছে।
জনবল স্বল্পতাসহ অন্য সমস্যাও আছে। বলতে গেলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে হাত পা বেঁধে দিয়ে সাঁতার কাটতে দেওয়ার মতো অবস্থা। তার পরও দেশের স্বাস্থ্য খাত ভালো করছে।
সভায় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান স্বাগত বক্তব্য দেন। সভায় দিনব্যাপী দলীয় আলোচনার সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান ও ফরিদপুর জেলার সিভিল সার্জন সিরাজুল হক তালুকদার।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপনির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া খায়ের। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।