আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গণমিছিলে শিশু ও সিয়ামের রাজনীতি!

শিশু সিয়ামের হাতে কাঠের ফ্রেমের প্ল্যাকার্ডের উচ্চতাও প্রায় তারই সমান। সামনে দাঁড়ানো বন্ধু রাজনকে বলল, ‘সানডে-মানডে কোলজ কইরা দিমু’। বেলা ৩টায় এ শিশুর কি আসলেই কথা ছিল খালেদা জিয়াকে মগবাজারে স্বাগত জানাতে রমনা থানা বিএনপি’র মিছিলের অগ্রভাগে অবস্থান নেওয়ার। সিয়ামের হাতের প্ল্যাকার্ডে রয়েছে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের ছবি। শহীদ জিয়াকে লাল সালাম জানানো হয়েছে সেখানে।

এ লাল সালাম কী আমাদের রাজনীতির লাল লজ্জা নয়? বিএনপি’র গনমিছিলে এ ধরনের শিশুর সংখ্যা ছিল আর অনেকে। এদিকে বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতেও ঢাকা মহানগর আওয়ামীলীগের গনসমাবেশে গিয়েও দেখা মেলে ১১ বছরের রায়হান, অয়ন, ১২ বছরের শিবু, আপেলসহ অনেকের। আইনপ্রতিমন্ত্রী যখন মঞ্চে বিরোধী দলের সমালোচনা করে বক্তব্য দিচ্ছিলেন আর দেশের জঞ্জাল পরিস্কারের কথা বলছিলেন, তখন তার সামনেই স্লোগান দিচ্ছিল রায়হানরা। ভঙ্গ হচ্ছিল শিশুনীতি ২০১০ এবং জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ। খালেদা জিয়া মগবাজার মোড়ে আসার প্রায় দুঘন্টা আগেই রমনা থানা বিএনপি মোড়ে আসে।

ফুটওভার ব্রিজের নিচে ফেস্টুন ধরে দাড়ায় সিয়াম। জানতে চাইলাম ফেস্টুনের যাদের ছবি আছে সবাইকে চিনো? একে একে সবার নাম বলে দিল। খিলগাও টেম্পু স্ট্যান্ডের একটি যাত্রীবাহী লেগুনার হেলপার সিয়াম। থাকে মগবাজার বাটারগলিতে। গলির রিপন ভাই নিয়ে এসেছে আজকের মিছিলে।

৫০ টাকা দিয়ে বলেছে দুপুরে ভাতও খাওয়াবে। কিন্তু তখনো দেশনেত্রী বাড়ি ফিরেননি বলে সিয়ামের খাওয়াও হয়নি। এর আগেও আওয়ামীলীগ-বিএনপি দু’দলের মিছিল মিটিংয়েই অংশগ্রহণ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে সিয়ামের। ২০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পর্যন্ত পেয়েছে সে এসব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে। দেখা মিললো সহোদর দুই জনের সঙ্গেও।

১১ বছরের রাজনের ছোট ভাই সুজন। সুজনের বয়স ৯। তাদের বাবা কাঠ মিস্ত্রিরি কাজ করে শহীদবাগের একটি ফার্নিচারের দোকানে। দুজনেই স্কুলে যায়। প্রভাতী বনশ্রী স্কুলের ৫ম এবং ৩য় শ্রেণীর ছাত্র এ দু ভাই।

৫৪ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র ফেস্টুন নিয়ে গনমিছিলের জোয়ারে ভাসছিলো দুই শিশু। প্যাচাল পাড়ার বেশী সময় ছিল না এই দুই শিশু রাজনৈতিক কর্মীর। একটু পরেই রাজনের পেছন পেছন হাটা দিল সুজন। ওদিকে সিয়াম স্লোগান দিচ্ছে- ‘দেশ গড়েছেন শহীদ জিয়া, নেত্রী মোদের খালেদা জিয়া। ’ সন্ধ্যার আগে আগে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ছোটাছুটি করছিল রায়হান আর অয়নরা।

শিশু বয়সের লাবণ্য মুখে নেই। শক্ত মুখে কাঠিন্যেরই ছাপ। রাজনীতির নিষ্ঠুরতা তাদের মুখে ‘মায়া ভাইয়ের পক্ষ থেকে লাল গোলাপ শুভেচ্ছা’ স্লোগান ধরিয়েছে। অয়নের বাসা লালবাগে, এতিমখানার পেছনেই। তার বাবা লিটন ওয়ার্কশপে কাজ করেন।

তিন ভাই দু-বোনের মধ্যে সেই তৃতীয়। গত রাতে এলাকার বড় ভাই কাদের অয়ন এবং রায়হানকে জানায় আজ বিকেলে এখানে আসলে ১০০ টাকা করে দিবে। এ জন্যেই এখানে এসেছে বলে জানাল রায়হান। জাতি সংঘ শিশু অধিকার সনদের ১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শিশুর লালন পালন ও বিকাশের জন্য পিতামাতার উভয়ের দায়িত্বকে সক্রিয় করে তুলতে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র উদ্যোগী হবে। আমাদের রাষ্ট্রের রাজনেতিক দলগুলোর এ উদ্যেগ নেয়াটা হয়তো এই ভিন্ন ধারায়।

অনুচ্ছেদ ২৭ এ শিশুর উন্নয়নের ব্যাপারে বলা হয়েছে প্রতিটি শিশুর শারীরিক, মানসিক, আত্মিক, নৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য উন্নত জীবন মানের ব্যবস্থার প্রতি অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেবে। অনুচ্ছেদ ২৮ এ দেয়া হয়েছে শিশুর শিক্ষা লাভের অধিকার। রাজনীতিবিদদের কথা ছিল জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের ৩২ টি অনুচ্ছেদ বাস্তবায়ন করে শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করবে। অথচ তারাই নিয়ে আসছে শিশুদের ঝূকিপূর্ণ রাজনীতি প্রাঙ্গনে। যার প্রভাব পড়ছে শিশুর কোমলমতি মনে আর এর ফলে শিশুর সামাজিকিকরণ হচ্ছে ভিন্নভাবে।

বাংলাদেশের শিশু নীতি ২০১০ অনুযায়ী শিশুকে রাজনীতিতে ব্যাবহার করা যাবে না। রাজনীতিবিদরা এ নীতির অনুমোদন দিলেও মানছেনা তারা নিজেরাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বন্ধুর সঙ্গে যখন শেয়ার করছিলাম এই অভিজ্ঞতার কথা ও বলছিলো, ‘দেশের রাজনীতির অাবর্জনায় এখন আর সাধারন মানুষের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের ইচ্ছে নেই। তাই মিছিল সমাবেশে লোক বাড়িয়ে মত এবং শক্তি প্রদর্শনের জন্যে কোমমতিতে শিশুদের ব্যবহার করছেন রাজনীতিবিদরা। ’ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।