ঃঃঃঃ চল বহুদূরে...নির্জনে আড়ালে লুকোই...ঃঃঃ ২০০৬ সাল। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে একাকী কাঁদছিল ছয়-সাত বছরের একটি মেয়ে। দেখে মায়া হয় চট্টগ্রামের পশ্চিম পটিয়ার শিকলবাহা এলাকার আদর্শ গ্রামের মো. সাহেদের। এগিয়ে গিয়ে শিশুটির সঙ্গে কথা বলেন তিনি। শিশুটি জানায়, তার নাম ইয়াসমিন আক্তার ওরফে শান্তা।
এ ছাড়া আর কিছু বলতে পারেনি সে। অসহায় শিশুটিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান সাহেদ।
এরপর কেটে গেছে প্রায় ছয় বছর। ইয়াসমিন আছে সাহেদের পরিবারে। এত দিন মা-বাবা বা অন্য কারও স্মৃতিই তার মনে পড়েনি।
গত ডিসেম্বরে একটি ঘটনার পর সে তার স্মৃতি ফিরে পেয়েছে। শান্তা এখন মা-বাবার নামসহ চেনাজানা অনেকের কথাই বলছে।
ইয়াসমিন জানায়, তার বাবার নাম রাকিবুল হাসান ওরফে রকি। তিনি সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। তার মায়ের নাম রিয়া মুন্নী।
তিনি ছিলেন চিকিৎসক। তাঁরা নৌ দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। সে জানায়, তাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। তারা থাকত ঢাকায়। সে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ত।
ইয়াসমিন আরও জানায়, কিরণ নামে তার এক বন্ধু ছিল। তার বাবার নাম সুমন।
কী ঘটেছিল—জানতে চাইলে ইয়াসমিন থেমে থেমে স্মৃতি আওড়ে জানায়, ‘একটি লঞ্চ দুর্ঘটনা। এরপর হাসপাতালে একজন পুলিশ আংকেল সাদা কাপড়ে মোড়ানো আমার মা-বাবাকে দেখালেন। ওই আংকেল আমাকে নিয়ে রাস্তায় আসেন।
পরে তিনি মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে আমাকে রাস্তায় রেখে চলে যান। ’ ইয়াসমিন জানায়, সে সময় লঞ্চে করে মা-বাবার সঙ্গে সে চাঁদপুর যাচ্ছিল। হারানো স্মৃতি ফিরে পাওয়ার পর থেকে ইয়াসমিন এখন সাহেদ ছাড়া আর কাউকে চিনতে পারছে না।
সাহেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানান, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আনার পর তাঁরা ইয়াসমিনকে পরিবারের সদস্যের মতো করে লালন-পালন করছেন। সাহেদকে সে মেজ ভাইয়া বলে ডাকে।
সাহেদের মাকে ডাকত আম্মু। ইয়াসমিন পশ্চিম পটিয়া এজে চৌধুরী স্কুলের সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে।
সাহেদের পরিবারের সদস্যরা জানায়, গত ডিসেম্বরে সাহেদের দুই বছরের ভাইপো পুকুরের পানিতে ডুবে যাচ্ছিল। এ সময় ইয়াসমিন দৌড়ে গিয়ে তাকে পুকুর থেকে তুলে নেয়। শিশুটিকে পানি থেকে তোলার পর ইয়াসমিন অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
এরপর জ্ঞান ফিরলে সে তার মা-বাবার নাম ও পেশা এবং এক স্কুলের এক সহপাঠীর কথা জানায়। পরে মানসিক রোগবিশেষজ্ঞের পরামর্শে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ইয়াসমিন গত বছরের ১৭ থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগে চিকিৎসাধীন ছিল। বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মহিউদ্দিন আহমেদ সিকদারের তত্ত্বাবধানে ছিল ইয়াসমিন।
এ প্রসঙ্গে মহিউদ্দিন সিকদার বলেন, ‘মেয়েটি নৌ দুর্ঘটনায় মা-বাবাকে হারানোর পর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
তার পর থেকে সে তার অতীত ভুলে যেতে থাকে। আমরা এটাকে ডিসোসিয়েটিভ আইডেনটিটি ডিসঅর্ডার বলি। চিকিৎসা করলে এটা ভালো হয়ে যায়। ’ তিনি বলেন, ‘আগের ঘটনা মনে পড়ার পর সে মাঝখানের কিছু স্মৃতি ভুলে যেতে পারে। ’
সাহেদ একসময় ট্রাকচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করলেও এখন তিনি সিএনজি অটোরিকশা চালান।
সাহেদ জানান, ২০০৬ সালের ঠিক কোন মাসে তিনি ইয়াসমিনকে পেয়েছেন, তা তাঁর মনে পড়ছে না। সাহেদ জানান, ইয়াসমিন এখন চাঁদপুর ও ঢাকায় যেতে চায়। সে বার বার মাতব্বর বাজারে যেতে চাইছে।
...অনলাইন নিউজ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।