জনপ্রশাসনে বর্তমানে সচিবসহ ২৯০ জন বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) রয়েছেন। এদের অধিকাংশই রাজনৈতিক নিগ্রহের শিকার বলে অভিযোগ আছে। সরকার এদের বসিয়ে রেখে একদিকে যেমন তাদের কর্মক্ষমতা নষ্ট করছে, অপরদিকে বেতন ভাতা বাবদ প্রতিবছর প্রায় ৫০ কোটি টাকার অপচয় করছে। অনেক মেধাবী কর্মকর্তা ওএসডি হয়ে মানসিক যন্ত্রণায় নিজেদের কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ২৯০ জন ওএসডি কর্মকর্তার মধ্যে ৩ জন সচিব, ৪০ জন অতিরিক্ত সচিব, ১২০ জন যুগ্ম-সচিব, ৮৫ জন উপসচিব, ৩৭ জন সিনিয়র সহকারী সচিব ও ৫ জন সহকারী সচিব রয়েছেন।
এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুস সোবাহান সিকদার যায়যায়দিনকে বলেন, প্রকৃত ওএসডি কর্মকর্তার সংখ্যা কম। পদের অভাবে পোস্টিং দেয়া যাচ্ছে না অনেক কর্মকর্তাকে। আবার যারা বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য গেছেন তারাও ওএসডি হয়ে আছেন। যারা বিদেশে পড়তে যান তাদের তালিকা আলাদাভাবে রাখা হলে ওএসডি নিয়ে এত কথা হতো না। ওএসডি কর্মকর্তাদের অধিকাংশ রাজনৈতিক নিগ্রহের শিকার বলে যে অভিযোগ রয়েছে তা অস্বীকার করে তিনি বলেন, খুব অল্পসংখ্যক কর্মকর্তা রাজনৈতিক কারণে হয়তো ওএসডি হয়েছেন।
কিন্তু পড়াশোনার কাজে বিদেশে গিয়ে ওএসডি হয়ে আছেন এমন কর্মকর্তার সংখ্যা অনেক। এছাড়া অতিরিক্ত সচিব ওএসডি কর্মকতার সংখ্যা বেশি নয়। উপসচিব পদেই এর সংখ্যা বেশি। এদের বেশিরভাগই উচ্চতর পড়াশোনার কাজে বিদেশে আছেন। সূত্র জানায়, জনপ্রশাসনের ৬৫ সচিবের মধ্যে ৩ জন ওএসডি সচিব হলেন মো. এবাদত আলী, সাহাব উল্ল্যাহ এবং মাহাবুবুর রহমান।
এর মধ্যে ইবাদত আলী রেলপথ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব ছিলেন। গত ১০ অক্টোবর তাকে ওএসডি করা হয়। ২০১০ সালের ১১ অক্টোবর ওএসডি হন মাহাবুবুর রহমান। গত বছরের ২৩ আগস্ট ওএসডি হন মো. সাহাব উল্লাহ। ১৪১ জন অতিরিক্ত সচিবের মধ্যে ৪০ জন ওএসডি হয়ে আছেন।
এদের মধ্যে আছেন- মোস্তাক হাসান মো. ইফতেখার, মাহমুদুল করিম, সুকৃতি রঞ্জন চাকমা, মো. আবুল কাসেম, ডা. এস কে আব্দুর রশিদ, মাকসুমুল করিম চৌধুরী, আফতাব হাসান, এ কে এম আজিজুল হক, মো. ফজলুর রহমান, আবু বকর মো. শাজাহান, মো. মাহবুবুল আলম, মো. ফিরোজ কিবরিয়া, মো. মামুনুর রশিদ চৌধুরী, মো. এহসানুল হক, আসলাম ইকবাল, এম এ কামাল হোসাইন আজাদ, মো. আবুল কাসেম, মো. আজিজুর রহমান, জালাল আহমেদ, মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মো. আফতাবউদ্দিন তালুকদার, মজিবর রহমান, ডা. মো. মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া, মো. সারোয়ার খান, আনোয়ারুল করিম, মো. মাহফুজুল হক, খুরশিদা খাতুন, নাসিমুল গনি, মো. মাসুদ এলাহী, মো. সফিকুল ইসলাম, মো. হুমায়ুন কবীর, মো. মোকলেছুর রহমান এবং মো. মফিজুল করিম। ৪৯৪ জন যুগ্মসচিবের মধ্যে ১২০ জন ওএসডি। পদোন্নতির পর কমপক্ষে ৮০ জনের কপালে পদায়ন জোটেনি। এদের পদায়নের ব্যাপারে অবিশ্বাস কাজ করছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এদের মধ্যে আছেন- বি এম কামাল, এফ এম আব্দুল মুনেম, এ কে এম মুর্তজা, তপন কুমার দাস, রিতা সেন, আখতার আহমেদ, বিশ্বাস মো. আজিম উদ্দিন, এওয়াইএম আকরামুল হক, মো. ইনামুল হক, মো. আনিস উদ্দিন মনজুর, ডা. এ এইচ এম মোস্তাইন বিল্লাহ, একেএম জাহাঙ্গীর, মো. এনামুল হক, জামাল উদ্দিন আহমেদ, কেবিএম ওমর ফারুক চৌধুরী, ডা. মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ, মো. মোরাদ হাসান, মো. খালিদ মাহমুদ, মো. আমির হোসাইন, মোহাম্মদ শামসুল আলম, মো. আব্দুল হালিম, মো. আব্দুল বারী, রবীন্দ্রনাথ শর্মা, ফারুক আহমেদ, মো. সফিউর রহমান, সাফিজ উদ্দিন আহমেদ, কমলেশ কুমার দাস, মো. আবিদুল আলম, এসএম মেজবাহুল ইসলাম, এসএম শমসের জাকারিয়া ভঁূইয়া, বিজন কান্তি সরকার, মো. আহমেদ হুসাইন, মুন্সী আলাউদ্দিন আল আজাদ, সিএম ইউসুফ হোসেন, মো. আবদুল হাকিম, শিখা সরকার, মো. আবুল কালাম আজাদ, ডা. মো. আবদুল মঈন, খবিরুদ্দিন আহমেদ, মাহবুবা হাসানাত, মো. মতিউর রহমান খান, আসাদুজ্জামান, মো. সাইফুল্লাহ, আবুল মনসুর মো. ফাইজুল্লাহ, মো. শাহ আলম বকশী, ডা. মো. আমির হোসাইন, মোহাম্মদ ওসমান আমিন, মো. আবদুল মোনাফ পাটোয়ারী প্রমুখ।
এক যুগ্ম সচিব ওএসডি নাম প্রকাশ না করার শর্তে যায়যায়দিনকে বলেন, সাধারণত পদোন্নতি পরবর্তী পদায়নের জন্য কর্মকর্তাদের ওএসডি করা হয়। বিদেশ প্রশিক্ষণে যাওয়া বা ক্ষেত্র বিশেষ বদলির জন্য কর্মকর্তাদের ওএসডি করা হয়ে থাকে। কিন্তু এটাকে পুঁজি করে কর্মকর্তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। এর ফলে তাদের ভাগ্য শিকেয় উঠছে। ১ হাজার ৫৪১ জন উপসচিব কর্মকর্তার মধ্যে ওএসডি আছেন ৮৫ জন।
এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- আইজুদ্দিন আহমেদ, মো. সাইফুল ইসলাম, গৌতম কুমার, মো. শওকত আলী, খান মো. নুরুল আমিন, মোহাম্মদ ফারুক আলম, মো. আলাউল হক, ডা. মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান, মো. আব্দুল আলিম, ডা. মো. আনোয়ার উল্লাহ, মো. মোজাম্মেল হক খান, মোহাম্মদ শফিকুল করিম, জুলেখা সুলতানা, তালাফ মাহমুদ খান, জগন্নাথ দাস খোকন, আব্দুর রহিম মোল্লা, মো. জাহাঙ্গীর আলম, এআরএম খালিকুজ্জামান, মো. গোলাম ইয়াহিয়া, আবদুস সালাম খান, নিমাই চাঁদ বিশ্বাস, শিরিনা খাতুন প্রমুখ। সিনিয়র সহকারী সচিবদের মধ্যে ওএসডি আছেন ৩৭ জন। এদের মধ্যে শেখ মোহাম্মদ আখলাক আহম্মেদ, মো. সাইফুল আজাদ, এ এস এম হুমায়ুন কবীর, মো. আফজালুর রহমান, মো. কবীর হোসেন সরদার, জসিম উদ্দিন হায়দার, শামীমা ইয়াসমীন, ফরিদ আহমেদ, সালেহ আহমেদ, কাওসার আহমেদ আকন্দ, সাইফুর রহমান, শামীমা ইয়াসমীন, জিল্লুর রহিম শাহরিয়ার, মো. আবুল কাদের, মো. আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া সহকারী সচিব ওএসডি রয়েছেন ৫ জন। তারা হলেন- মো. মাইদুল হাসান, নাদিরা সুলতানা এবং হেমন্ত হেনরী কুবি।
অন্যদিকে প্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত কর্মকর্তার সংখ্যা ২০২ জন। এর মধ্যে সাবেক আমলা, সামরিক কর্মকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রয়েছেন। জনপ্রশাসনে বর্তমানে সচিব থেকে সহকারী সচিব পর্যায়ে ৩ হাজার ৬৭৩ জন কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন। এর বাইরেও বিভাগীয় কমিশনার, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা আছেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।