স্বাধীনতা, সে তো আমার প্রিয় মানুষের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে কেনা ইসলামে যতগুলো ফ্যাকশন আছে যেমন হানাফি, শাফেয়ী, হাম্বলী, মালেকী। এদের মধ্যে হানাফি মাজহাব তুলনামুলক সহজ । এর মুল কারন হল ইমাম আবু হানিফা একজন আরব নন। তিনি কোরান-হাদিসের ব্যাখ্যা অনেক সহজ সরলভাবে দিয়েছেন কিন্তু ইদানিং হানাফি মাজহাবের প্রভাব কমে যাচ্ছে সৌদি পেট্রোডলারের কল্যাণে । এর ফলে উগ্রবাদের প্রসার ঘটতেছে আমাদের সমাজে।
এর বিপরীত প্রতিক্রিয়া অনুসারে সমাজে উগ্র নাস্তিকতার আর্বিভাব ঘটেছে । তো এর মুল কারন গুলো আমাদের খুজে দেখা দরকার । আমাদের হুজুরদের মুল ব্যার্থতা হল তারা ইসলাম ধর্মকে বাঙ্গালীকরণ করেনি বা করতে পারেনি । বরং আমাদের ইসলাম সৌদিকরণ হয়েছে বা রয়ে গেছে । এর ফলে অনেক বাঙ্গালী জাতীয়বাদে বিশ্বাসী ইসলামকে পালন করতে ভয় পায় ।
কারন এতে ইসলামকে না হলে বাঙ্গালীত্বকে যে কোন একটা বেছে নিতে হয়।
মাদ্রাসা শিক্ষায় গলদ আছে কিন্তু সেই গলদটা দুর করার দায়িত্ব কে নিবে ? সরকারের কবে পরিবর্তন করবে সেই আশায় বসে থাকা ? আবার কওমী মাদ্রাসারা তো সরকারের ধার ধারে না । দেখবেন, হাফেজীয়া ও কওমী মাদ্রাসাগুলো চলে দান বা ভিক্ষার টাকায় । তো ইসলামে ভিক্ষা করা কতটুকু গ্রহনযোগ্য সেটা তাদের জানতে হবে কিন্তু তারা জানে না । ভিক্ষা যে কোন আত্মসম্মানের কিছু নয় সেটা তাদের উপলব্ধিতে নেই ।
তাহলে ঐ যে আবু হানিফার কথা বললাম তিনি কিভাবে তুলনামুলক সহজ ব্যাখ্যা দিলেন ? নিশ্চয় নিজের বুদ্দিমত্তায় । তো আমার মনে হয় আমরা এরকম সর্বজনীন হুজুর পাইানি বা তিনি গ্রহনযোগ্য হয়ে উঠতে পারেননি।
বাঙ্গালীত্ব ও ইসলামের মধ্যে দ্বন্দ্ব দুর করতে হবে । যেমন নববর্ষ আসলে আমাদের হুজুররা ফতোয়া দেয় নববর্ষ পালন করা হারাম, বৈশাখি মেলা হারাম , অমুক হারাম তমুক হারাম, কনসার্ট হারাম । শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া হারাম ইত্যাদি বলা বর্জন করতে হবে।
ইসলামকে সবার কাছে গ্রহনযোগ্য করতে চাইলে এইসব বাঙ্গালী উৎসবকে ইসলামের মাধ্যমে নতুন ব্যাখ্যা দাড় করাতে হবে। হুজুরেরা নিজেরাও সেইসব উৎসবে যোগ দিতে পারেন । ইরানে ১৪ দিন ধরে নওরোজ পালন করা হয় যেখানে তাদের ঈদের ছুটি থাকে মাত্র ৩/৪ দিন সেখানে নওরোজের ছুটি নাকি থাকে ১৪ দিন ! আর ইরানের মোল্লারাও নওরোজ জাকজমকভাবে পালন করেন তাদের আপামর জনগণের সাথে। সেখানে কোন হুজুর এখনো ফতোয়া দেয়নি নওরোজ হারাম !
কিছুদিন আগে সিলেটে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধে তুমুল আন্দোল হল। শেষ পর্যন্ত সেই ভাস্কর্য নিমার্ণ করতে দেওয়া হয়নি ।
কেন সেই ভাস্কর্য নিমার্ণ করলে কি ইসলাম বিলুপ্ত হয়ে যাবে ? নাকি ঘরে ঘরে মুর্তি পূজা শুরু হয়ে যাবে ? এটা তো বুঝা সহজ দেব দেবীর মুর্তি আর ভাস্কর্য এক নয় আর দেশে বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধেরসহ ঐতিহাসিক বিভিন্ন ভাস্কর্য আছে । কই সেখানে তো কেউ কোন পুজো করতে যায়নি ? যায়নি সেই ভাস্কর্যের কাছে কিছু চাইতে ? তাহলে সমস্যাটা কোথায় ?
এই তালেবানী ইসলাম আমদানী বন্ধ করতে হবে। যদি পারেন ইসলামকে বাঙ্গালীকরণ করেন না হলে এই কয়েকজন উগ্র নাস্তিকই শেষ কথা নয় । সামনে আরো ইসলাম বিদ্বেষীতা বাড়বে । তখন দেশে আস্তিক-নাস্তিক যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে যা হবে সত্যি এক ভয়ংকর ব্যাপার !!!
তো আমাদের পিছিয়ে থাকার কারনে আমরা ইসলামেকে এখনো সর্বজনীন করতে পারিনি ।
সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় যারা আজকে উগ্র নাস্তিক তাদের বেশিরভাগই কিন্তু মুসলিম পরিবারে জন্ম !!! তো তাহলে এ ব্যার্থতা কাদের ? হুজুরদেরও নয় কি ?
আজকে যে হুজুরেরা নাস্তিকদের বিচারে দাবিতে আন্দোলন করতেছে, যারা আজকে নাস্তিকদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার তারাও কি দায়ী নয় বাঙ্গালী মুসলিম পরিবারের সন্তান উগ্র নাস্তিক হওয়ার ? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।