আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সৌদি আরবে বাংলাদেশী সাংবাদিকদের ভুমিকা এবং কিছু কথা

আমরা হেরে যাইনি। এশিয়া কাপ না জিতলেও তোমরা আমাদের হৃদয় জয় করেছ। আমরা গর্বিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। এদেশে বৈধ-অবৈধ মিলে প্রায় ২৩ লাখ বাংলাদেশী কাজ করছেন। এখানে অধিকাংশ শ্রমিক ছোট বড় বিভিন্ন কোম্পানিতে কর্মরত।

অনেকে আছে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। বলে রাখা ভালো, সৌদি আরবে সৌদি নাগরিক ছাড়া অন্য কেউ নিজের নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে পারে না। যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চায় তাদের সৌদি নাগরিকের নামে ব্যবসা করতে হয় যার বিনিময়ে ঐ সৌদি নাগরিককে মাসিক/বাৎসরিক একটা মুনাফা দিতে হয়। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, দেওয়া হচ্ছে মিথ্যা অপবাদ তার জন্য একমাত্র বাংলাদেশি শ্রমিকরাই দায়ী এটা বলা ঠিক হবে না। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে ভারত-পাকিস্তান সহ বিভিন্ন দেশের নিজস্ব প্রিন্ট মিডিয়া আছে।

নাম মাত্র মূল্যে তাঁরা পাচ্ছে তাদের কাঙ্ক্ষিত সংবাদপত্র। সকালে হলেই তাঁরা হাতে পায় তাদের নিজের ভাষায় ছাপানো পেপার। যেখানে উঠে আসে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ছোট ছোট অপরাধগুলো বিশাল হয়ে। এক্ষেত্রে প্রতিবাদ করার মতো কোনও জায়গা বাংলাদেশীদের নাই। মুখ বুঝে সহ্য করতে হয় তাদের মিথ্যা অপবাদ।

মাঝে মধ্যে এই সব মিথ্যা খবরের প্রতিবাদ বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল এবং পত্রিকা অফিসগুলোতে পাঠানো হলেও ছাপা বা প্রচার হয় না গুরুত্বসহকারে। সৌদি আরবে থাকার সুবাদে দেখেছি এখানে বাংলাদেশী প্রায় সব টেলিভিশনের সাংবাদিক এখানে আছে। সাথে কিছু কিছু বাংলাদেশী প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকও কর্মরত আছেন। সৌদি আরবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাংলাদেশী শ্রমিকরা তাদের কর্মক্ষেত্রে ব্যাপক সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এ বাংলাদেশী শ্রমিকদের এই সাফল্যের কথা সৌদি সরকারের নজরে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন আমাদের প্রবাসী সাংবাদিক সমাজ।

সাংবাদিকতার পরিচয় দিয়ে পয়সা কামানোই এখানকার সাংবাদিকদের প্রধান লক্ষ বলে মনে হচ্ছে। তারা শুধু অপেক্ষায় থাকে কবে কোন সংগঠনের সভা-সমাবেশ হবে এবং সেখানের নিউজ কভার করে কিভাবে টাকা ইনকাম করা জায় সেই চিন্তায়। সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশীরা প্রায়ই বিভিন্ন সামাজিক এবং রাজনৈতিক অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করে থাকে আর সেই খবর টিভিতে কাভারেজ পেতে হলে আয়োজক কমিটির গুনতে হয় শত শত রিয়াল। যেকোনো অনুষ্ঠানের দাওয়াত দিলে সাংবাদিকরা সময়মত এখানে হাজির হয় এবং ভিডিও চিত্র ধারণ করে। কিন্তু সেই ভিডিও চিত্র থেকে যায় সাংবাদিকের ক্যামেরাতেই।

সেই খবর কাভারেজ পাবার সম্ভাবনা থাকেনা ১%ও। কোনো অনুষ্ঠানের খবর টিভিতে কাভারেজ দিতে হলে অনুষ্ঠার পরে আয়োজকদের সাংবাদিকদের সাথে দেখা করতে হয় তার অফিসে। ১৫থেকে ২৫সেকেন্ডের একটি সংবাদ কাভারেজ দিতে হলে আয়োজকদের গুনতে হয় ২০০ থেকে ৫০০ রিয়াল পর্যন্ত (বাংলাদেশী টাকায় ৪ হাজার থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত)। টাকা পেইড হওয়ার পর শিউর হওয়া যায় যে সংবাদটি অমুক সময় অমুক চ্যানেলে প্রচার হবে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশী শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যার খবর তারা রাখেনা বললেই চলে।

কয়েকদিন আগে বাংলাদেশী একটি টিভি চ্যানেলে খবর দেখে চমকে উঠলাম। সেখানে বলা হয়েছে সৌদি সরকার নাকি ১৮ বছরের বেশী যে সমস্ত বাংলাদেশী শ্রমিক সেখানে আছে তাদের আকামা আর নবায়ন করা হবেনা। খবরটি সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের মঝে নেমে আসে হতাশার ছাপ। খবরটা শুনার পর এর সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে সম্ভাব্য কয়েক জায়গায় ফোন দিলাম। কিন্তু যা শুনলাম তার সাথে ঐ চ্যানেলটির খবরের সাথে কোনো মিল নেই।

প্রকৃত ঘটনা হলো এই সৌদি সরকার ২০০৮ সালের শেষের দিকে একটি আইন পাশ করে। আইনটি হলো এই যে সমস্ত শ্রমিক স্ব-পরিবারে সৌদি আরব অবস্থান করছেন তাদের সন্তানের বয়স ১৮বছরের বেশী হলে ঐ শ্রমিকের সন্তানকে ছাত্র হিসাবে এখানে না রেখে দেশে ফেরত পাঠাতে হবে অন্যথায় ঐ সন্তানকে শ্রমিক হিসাবে কর্মক্ষেত্রে নিয়োগ দিতে হবে। এই আইন সৌদি নাগরিক ছাড়া অন্য সবদেশের শ্রমিকদের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো সেই চ্যানেলটি প্রায় তিন বছর আগের একটি সংবাদকে অতিরঞ্জিত করে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছে। যা আমরা প্রবাসী শ্রমিক হিসাবে চ্যানেলটির কাছে আশা করিনি।

মিডিয়া গুলোর কাছে বাংলাদেশী শ্রমিকদের প্রত্যাশা তারা যেনো প্রবাসী শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্টের বিষয়গুলি সরকারের নজরে এনে তা সমাধান করার চেষ্টা করা হয়। বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদুত ড. আবদুল্লাহ-বিন নাসের আল বুশাইরির গত ১৭/১২/২০১২ তারিখের একটি বক্তব্য থেকে চ্যানেলটি যে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করেছে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। বিভিন্ন পত্রিকায় এবং একটি টিভি চ্যানেলে প্রকাশিত সংবাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে খালেদা জিয়া সৌদি রাষ্ট্রদূতের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সেদেশে ১৮ বছরের অধিক সময় অবস্থানকারী বাংলাদেশী শ্রমিকদের যেন দেশে ফেরত না পাঠানো হয়। জবাবে আবদুল্লাহ বুশাইরি খালেদা জিয়াকে নিশ্চিত করেন ১৮ বছরের অধিক সময় সৌদিতে অবস্থান করা শ্রমিকদের দেশে ফেরত পাঠানো নিয়ে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা সঠিক নয়। বরং যারা ১৮ বছর বয়সী বাংলাদেশী সৌদি আরবে অবস্থান করছে তারা ছাত্র হিসেবে না থেকে যেন কর্মী হিসেবে সেখানে অবস্থান করে।

এ আইন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ১৮ বছরের মহিলাদের পিতার অধীনে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। সৌদি আরবে নিয়োগকৃত বিভিন্ন টেলিভিশনের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও অনেকের সন্দেহ আছে। সেই সাথে আছে যোগ্যতা এবং পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব। বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোর বৈদেশিক রিপোর্টারদের জ্ঞানের বহর দেখে আমি মাঝে মধ্যে টাস্কিত হই।

তাদের রিপোর্ট হলো অন্ধের হাতি দেখার মত আর খবরের সোর্স হলো বাংলাদেশী অধ্যুষিত হারা-বাথার অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত কিছু গুজব প্রিয় মানুষ। ফলে এসকল রিপোর্টারদের প্রতিবেদনে প্রকৃত বিষয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়না আর পাওয়া গেলেও তা অসম্পূর্ণ। একবার এক পত্রিকায় দেখেছিলাম "তানাজ্জুল" শীর্ষক ভুলে ভরা এক প্রতিবেদন, কিন্তু তানাজ্জুল টা কি তার কোন ব্যাখ্যা নাই, ফলে সৌদি প্রবাসী ছাড়া আর কারও এর রহস্য উদ্ভাবন করা অসম্ভব। আরেকবার এক অনলাইন পত্রিকায় দেখেছিলম "রিয়াদে লিফটের তার ছিড়ে বিল্ডিং ধ্বস", লিফটের ভারে যে বিল্ডিং পড়ে যায়না তা সম্ভবতঃ সেই রিপোর্টারের মাথায় ঢোকেনি। তার রিপোর্টটা মশার ধাক্কায় বিমান পড়ে যাবার মত।

পরিশেষে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্তাব্যাক্তিদের কাছে অনুরোধ আপনার সব জায়গায় বাণিজ্যিক চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে সৌদি আরবের মতো একটি বিশাল দেশে যেখানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশী শ্রমিক বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত সেখানে সৎ এবং যোগ্য প্রতিনিধি নিয়োগ করেন যাতে তারা প্রবাসী শ্রমিকদের বিভিন্ন সুখ-দুঃখের ভাগীদার হয়ে দেশ ও জাতীর ভাগ্য উন্নয়েনে ভুমিকা রাখতে সক্ষম হয়। সৌদি আরবে বাংলাদেশী সাংবাদিকদের ভুমিকা এবং কিছু কথা ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.