প্যাটে ক্ষিদা, খাওন দে রেডিও তেহরান : জনাব সিরাজুর রহমান, বাংলাদেশে সেনা অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা বানচাল করে দেয়া হয়েছে বলে আজ (বৃহস্পতিবার) সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে সেনা অভ্যুত্থান অত্যন্ত কঠিন কাজ। তারপর বাংলাদেশের মত একটি গরীব দেশে তো শক্তিশালী কোন দেশের মদদ ছাড়া সেনা অভ্যুত্থান অসম্ভব বলেই মনে করা হয়। তো বাংলাদেশ সেনবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ যা বলা হলো, সে সম্পর্কে আপনি কী ভাবছেন ?
সিরাজুর রহমান : দেখুন, সেনা অভ্যুত্থান বিষয়ে প্রকৃত কি ঘটেছে সেটা আমি জানি না। তবে আমি আপনাদের এর পটভূমি সম্পর্কে কিছু বলতে পারি।
এ বিষয়ে কতগুলো জিনিস মনে রাখা দরকার। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী -পাকিস্তান, ভারত কিংবা অন্য দেশের সেনাবাহিনীর মত নয়। পাকিস্তানে এবং ভারতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সাধারণতঃ একটা মার্শাল রেস থেকে আসে; বিশেষ গোষ্ঠী থেকে আসে । আর সেটা তাদের সেনাবাহিনীর ঐতিহ্য। আর সেজন্য ঐসব দেশের সেনাবাহিনী তাদের দেশের অভ্যন্তরে কি ঘটছে তা থেকে পৃথক থাকতে পারে।
কিন্তু বাংলাদেশে কোন মার্শাল রেস নেই, সাধারণ পরিবারের ছেলেরা বা তাদের ভাইয়েরা সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। যেহেতু তারা দেশের সাধারণ পরিবার থেকে সেনাবাহিনীতে আসে ফলে তাদের সাথে সারা দেশের সঙ্গে এবং প্রতিটি সমাজের সঙ্গে খুবই গভীর বা ওতপ্রোত যোগাযোগ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বলা যায়- বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভাবনার সাথে সেনাবাহিনীর ভাবনার কোন পার্থক্য নেই। অর্থাৎ মোটামুটি মনে করা যেতে পারে দেশের মানুষ যা ভাবছে সেনাবাহিনীও তাই ভাবছে। মোটামুটিভাবে এই হচ্ছে প্রাথমিক পটভূমি।
দেখুন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে নিয়ে নানারকম তোলপাড় হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। যেমন ধরুন- রক্ষীবাহিনী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে ছিল মস্ত বিরোধ । পাকিস্তান থেকে সেনাবাহিনীর যারা ফিরে এসেছিলেন তাদের সাথে মুক্তিবাহিনী থেকে আসা সেনা সদস্যদের বিরোধ হয়েছে । ভারত তার স্বার্থে বাংলাদেশের সেনবাহিনীতে একটি মহল গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে।
এ প্রসঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আমি আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই -আর সেটি হচ্ছে , ১৯৭১ সালে তাজউদ্দীন সরকার ভারত সরকারের সাথে ৭ দফা চুক্তি করেছিলেন।
সেই চুক্তিতে ছিল - বাংলাদেশের নিজস্ব কোন সেনাবাহিনী থাকবে না; বাংলাদেশের নিজস্ব কোন পররাষ্ট্রনীতি থাকবে না । ভারত বাংলাদেশের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব নেবে। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তখন থেকেই ভারত বলাবলি করে আসছে। তারা তখন থেকেই বলছিল-সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরকে তুলে দেয়া হবে এবং সীমান্ত রক্ষার জন্য বিএসএফের পরামর্শে একটি সীমান্ত রক্ষাবাহিনী গড়ে তোলা হবে।
এছাড়া বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেনাবাহিনীর মধ্যে অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে।
২০০৯ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা ঘটল। আর এই বিডিআর বিদ্রোহের ফলে এক ঢিলে অনেক পাখি পড়ে গেল। এতে বিডিআর পুরোপুরি শেষ হয়ে গেল। বিডিআরের মধ্যে যারা খুবই অ্যাকটিভ কর্মকর্তা ছিলেন বা নন কমিশন্ড অনেক অফিসার ছিলেন তাদের মধ্য থেকে অনেকেই ঐ বিদ্রোহের সময় মারা গেলেন । ক্যাপ্টেন থেকে শুরু করে মেজর জেনারেল পর্যন্ত ৫৭ জন সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা মারা গেলেন ঐ বিদ্রোহে।
এই ঘটনার পর আপনারা দেখেছেন কীভাবে বিডিআরকে ধ্বংস করে বিজিবি করা হল। আর এই বিডিআর ধ্বংস করে বিজিবি করার ঘটনায় বাংলাদেশের বহু মানুষ অসন্তুষ্ট। কারণ, আপনারা নিশ্চয়ই দেখছেন যে, ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এখন কথায় কথায় এবং কোন কারণ ছাড়াই বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যা করছে, বাংলাদেশিদের জায়গা জমি দখল করে নিচ্ছে। বিডিআর থাকা অবস্থায়- বিডিআরের অনেক যোগ্য অফিসার ও সদস্য ছিল যাদের কারণে তখন এতোটা ঘটেনি। তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন বহুবার।
আমি আগের ঐ কথার প্রসঙ্গে আবার যাবো- ভারত যে কথা বলেছিল যে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী রাখার কোন দরকার নেই। সে সময় শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের সেকথা মানেননি । আর আজকের প্রেক্ষাপটে প্রকারান্তরে বাংলাদেশের সেই সেনাবাহিনীকে দুর্বল করে দেয়া হয়েছে। বিডিআর বিদ্রোহের সময় থেকে সে বিষয়টি খুব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
এখানে আরেকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- মর্মান্তিকভাবে সেনাবাহিনীর যে ৫৭ জন দক্ষ অফিসারকে মেরে ফেলা হলো - সেই ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তার জায়গায় কাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে? তারা কোন মতাবলম্বী সে বিষয়টি দেশের সাধারণ মানুষ জানে না।
আমি এ সম্পর্কে যা শুনেছি -সেটা হচ্ছে সেনাবাহিনীর যে ৫৭ কর্মকর্তার পদ খালি হয়েছিল সেখানে আওয়ামী লীগ এবং ভারতপন্থীদের দিয়ে ভরাট করার চেষ্টা হয়েছে। তবে ঠিক সবগুলো হয়েছে কিনা তা জানি না। একই সাথে বিজিবিকে যেন পর্দার মধ্যে রাখা হয় সে ব্যবস্থাও কিন্তু করা হল। এভাবে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গেল অলক্ষ্যে।
আপনারা একটা জিনিস লক্ষ্য করে থাকবেন - সেটি হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবসে বিডিআর কুচকাওয়াজ করেছে।
আর বিডিআরের এই কুচকাওয়াজ যে শুধু রং তামাশা তা কিন্তু নয়। এটা দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সাথে সাধারণ মানুষের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির একটা অন্যতম উপায় ।
কিন্তু বিডিআর বিদ্রোহের সময় থেকে বর্তমান সরকারের আমলে দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে এখন দুর্বল অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে এখন বিদেশে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষীবাহিনীর নামে একটি ভাড়াটিয়া বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে এমন বহু দেশপ্রেমিক সদস্য রয়েছেন - যারা মনে করেন- জাতীয় জীবনে সেনাবাহিনীর একটি পূর্ণ ভূমিকা থাকা উচিত।
যে ভূমিকাটা তারা রাখতে পারছেন না। আর সে কারণে সেনবাহিনীর মধ্যে বহু সদস্য অশান্ত এবং ক্ষুব্ধ। সেনাবাহিনীর বহু সদস্য দেশে গণতন্ত্রের জন্য- স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও বহু মানুষ একই কারণে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। কাজেই বাংলাদেশের মানুষ যারা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে আছে বা বাইরের সাধারণ মানুষ -সকলেই গণতন্ত্রকামী একথা সবাই স্বীকার করে।
কিন্তু বাংলাদেশে গণতন্ত্র দমনের জন্য, একটি একদলীয় বাকশালীয় ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য বর্তমানে আবার যে চেষ্টা চালানো হচ্ছে -এসব বিষয় সেনাবাহিনীর লোকেরা যে জানেন না -সে কথা কিন্তু ঠিক নয়। কারণ, সেনাবাহিনীর সদস্যরা ছুটিতে বাড়িতে যায়, সেখানে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে নানা কথা শোনেন, তারা পত্রপত্রিকা বা মিডিয়া থেকে জানতে পারেন দেশের সার্বিক পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে ।
কাজেই বাংলাদেশের গোটা সমাজব্যবস্থায় যে একটা টালমাতাল ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে সে ব্যাপারে সেনাবাহিনী পুরোপুরি সজাগ রয়েছে- একথা আমরা বলতে পারি।
তাছাড়া ভারত যে কথা বলেছিল যে বাংলাদেশের কোন সেনাবাহিনী থাকবে না- এবং তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে অনেক সেনাকর্মকর্তা বা সেনা সদস্য ভাবতে শুরু করেছেন -তাহলে তাদের অবস্থাটা কি হবে! বর্তমান সরকারের সময়ের নানা কর্মকাণ্ড এবং সেনাবাহিনীর বর্তমান সামগ্রিক পরিস্থিতি সব মিলিয়ে সেনাবাহিনীর অনেকেই উদ্বিগ্ন। কাজেই সেনাবাহিনীর মধ্যে যে টালমাতাল ভাব এবং বহু অসন্তোষ আছে এটা আমরা ধরে নিতে পারি।
আমি এখানে আরো একটা উদাহরণ তুলে ধরছি। সেটি হচ্ছে, গত সপ্তাহ দুয়েক হবে-সেনাবাহিনীর জনৈক এক মেজরকে ধরে নিয়ে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা ইউনিটের কাছে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে সম্ভবতঃ তিনি বেরিয়ে এসেছেন বা আসেননি ঠিক বলতে পারছি না। কারণ আমি ইন্টারনেটে এ ব্যাপারে দেখেছি বহু কথা চালাচালি হচ্ছে। তাছাড়া ইতোমধ্যে একজন সার্ভিং মেজরকে একটি গোয়েন্দা ইউনিট অ্যারেস্ট করে অপর একটি গোয়েন্দা ইউনিটের কাছে সোপর্দ করেছে।
এ ধরনের ব্যাপারগুলো যখন হয় তখন সেটি ভিন্ন বার্তা বহন করে । তাছাড়া আরেকটি বিষয় মনে রাখবেন - সেনাবাহিনীর মধ্য থেকে যখন কোন অভ্যুত্থান ঘটে বা কোন বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় -তখন সেটি হয় মেজর থেকে কর্নেল পর্যন্ত কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে। সাধারণ অভ্যুত্থান কিন্তু জেনারেলরা করেন না, ফিল্ড মাশার্লরা করেন না বা সিপাহীরাও করেন না।
তো গত ক'দিনে আমি যে আলামতগুলো দেখেছি এই হচ্ছে তার বাস্তব চিত্র । তবে কেউ অভ্যুত্থান করার চেষ্টা করছিল কি না বা বিদ্রোহ করার চেষ্টা করছিল কি না- এ ব্যাপারে আমার কাছে কোন সঠিক খবর নেই, আমি কোন সঠিক খবর জানতে পারিনি।
রেডিও তেহরান : আজ (বৃহস্পতিবার) সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রাজ্জাক বলেছেন, কিছু প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকের ইন্ধনে সেনবাহিনীতে কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত কতিপয় কর্মকর্তা অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ইন্ধনের যে কথা বলা হয়েছে, তা তিনি স্পষ্ট করেননি। এ কারণে, এর সম্ভাব্যতা বা এর বাস্তবতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠছে। তো আপনি কিভাবে দেখছেন বিষয়টিকে?
সিরাজুর রহমান : দেখুন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা কাজ করে খান। প্রবাসে গিয়ে তারা হাঁড় খাটুনি খেটে উপার্জন করেন।
তারা কেউ বেকার বসে থাকেন না। বাংলাদেশে বহু বেকার মানুষ রয়েছেন, বাংলাদেশের সরকারে, মন্ত্রীসভায় এবং সেনাবাহিনীতে বহু বেকার মানুষ রয়েছেন । আর যারা প্রবাসে থাকেন তাদের পরিশ্রমের অন্ত নেই। তারা কেউ সময় অপচয় করেন না বা বসে থাকেন না । আমি নিজে একজন প্রবাসী, আমাকে সংসারের সব কাজ করতে হয়, একইসাথে লেখালেখি করি, আমার বয়স হয়েছে; আমার পরিবারে একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেছে, তারপরও আমাকে কাজ করতে হয়।
কাজের বাইরে আমাদের অন্য কোন বিষয় থাকে না। ফলে প্রবাসে থেকে মানুষ সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান করার চেষ্টা করবে- এ কথার কি যুক্তি থাকতে পারে? তাছাড়া প্রবাসীরা কেন অভ্যুত্থানে অংশ নেবে- এ প্রশ্নটিও কিন্তু ওঠে ! আপনাদের মনে থাকার কথা, ১৯৭৫ সালে যে অভ্যুত্থান ঘটেছিল তা কি প্রবাসীরা করেছে? ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে যে সেনা অভ্যুত্থান হয়েছিল সেটি কি প্রবাসীরা করেছিল? তারপর সিপাহীরা ৭ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ করেছিল- সেটাও কি প্রবাসীরা করেছিল? ৭ ই নভেম্বর সিপাহীরা বিদ্রোহ করে নিজেদেরকে মুক্ত করেছে ; জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেছে। তো এখানে প্রাবাসীদের কোন ভূমিকা তো দেখতে পাচ্ছি না। বরং এসব অনেক ক্ষেত্রে যে বিদেশিদের ভূমিকা রয়েছে- একথা বলা যায়। বাংলাদেশে যা কিছু ঘটছে বা ঘটেছে- তাতে পাশের দেশের ভূমিকা রয়েছে।
বাংলাদেশে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা 'র' এর যে ছয় লাখ তিন হাজার এজেন্ট রয়েছে- তারা কী করছে না করছে সেগুলোর দিকে দৃষ্টি দিন, সেগুলো খুঁজে বের করুন । প্রবাসীরা খেটে খায়, অতি কষ্টের আয় তারা দেশে বাপ মায়ের কাছে পাঠায় - ফলে সেনা অভ্যুত্থান ঘটানোর সঙ্গে প্রবাসীদের কোন রকম যোগাযোগ বা সরাসরি কোনো সংযোগ আছে - একথা আমি একদম বিশ্বাস করি না।
রেডিও তেহরান : ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রাজ্জাক সংবাদ সম্মেলনে আরেকটি কথা বলেছেন। তিনি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িত সেনা কর্মকর্তাদেরকে ধর্মান্ধ বলেছেন। তো এই ধর্মান্ধ শব্দের কি তাৎপর্য থাকতে পারে?
সিরাজুর রহমান : দেখুন বাংলাদেশে আজ যারা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছে, যেমন ধরুন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী- তাদেরকে বলা হচ্ছে যুদ্ধ অপরাধী।
বাংলাদেশের মানুষ যারা মাথায় টুপি পরেন বা মুখে দাড়ি রাখেন - তারা যদি রাজনীতির কথা-বার্তা বলেন ,তখন বলা হয় ওরা যুদ্ধ অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে। আবার যদি ধর্মের কথা বলেন, টুপি পরেন, লুঙ্গি পরেন -তাদেরকে বলা হচ্ছে হিজবুত তাহরীর। এইসব নানা বিষয় ঘটছে ।
আসলে ব্যাপারটা কি জানেন? বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্র নীতি হচ্ছে নতজানু। সরকার ভারতকে খুশী করার জন্য বলছে তারা ধর্মনিরপেক্ষ।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- দেশে ফসল ভাল হয়েছে তার মা দূর্গার কল্যাণে। মা দূর্গা সদয় হয়েছিলেন, তিনি হাতিতে চড়ে এসেছিলেন বলেই বাম্পার ফলন হয়েছে।
বাংলাদেশে এখন সরকারি উদ্যোগে তোড়জোড় চলছে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠার। অন্যদিকে ভারতকে খুশী করার জন্য নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সংবিধান থেকে ইসলামকে বাদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু দেখেন ভারতের অত্যন্ত উগ্র ধর্মীয় দল হচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি ।
যারা আগে ক্ষমতায় ছিল, বর্তমানে প্রধান বিরোধী দল ; যাদের একটি বড় কম্পোনেন্ট অংশ হচ্ছে শিব সেনা - যারা মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করেছিল। তারা মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করেছিলো এই কারণে যে তিনি পরমতসহিষ্ণু ছিলেন। হিন্দু-মুসলিম সকলের মতের প্রাধান্যের কথা বলতেন। কিন্তু শিব সেনাদের সেটি সহ্য হয়নি; ফলে তাকে হত্যা করা হয়। তো ভারতের মত দেশে বিজেপির মতো উগ্র রাজনৈতিক দল রয়েছে, যারা ক্ষমতায় ছিল এবং খুব সম্ভবতঃ আবার তারা আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসবে।
অথচ বাংলাদেশের সরকার দেখুন সেই ভারতকে খুশী করার জন্য বাংলাদেশের অনেককে মৌলবাদী বলছে। অনেককে সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে।
আমেরিকার ৯/১১'র ঘটনায় কোন বাংলাদেশি জড়িত ছিল একথা আমি বিশ্বাস করি না। অথচ আমেরিকার কাছেও ভালো হওয়ার জন্য বলছে আমরা সন্ত্রাস দমন করছি। আসলে সন্ত্রাস দমনের নামে বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা চলছে।
আর সরকার যত বেশী মা দূর্গা দূর্গা করবে, রামকৃষ্ণ মিশন সৃষ্টি করতে চাইবে এবং উগ্র সেক্যুলারিজম প্রতিষ্ঠা করতে চইবে- বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ তত বেশী ক্ষুব্ধ হবে। কারণ, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ মুসলমান। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ অত্যন্ত ধর্মভীরু। তাদের ধর্মের ওপর যদি কোন আঘাত আসে তবে তারা কোনমতে সহ্য করবে না। ফলে ধর্মীয় রাজনীতি ধ্বংস করার জন্য যে চেষ্টা চলছে সেটা তো বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেবে না।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বা ধর্মীয় অন্যান্য যে সব দল আছে তাদের বিরুদ্ধেই সব কিছু হচ্ছে। অথচ এইসব ধর্মীয় দলের সবাই কিন্তু গণতন্ত্র চায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটা চান না। শেখ হাসিনা যেভাবে ফ্যাসিস্ট পন্থায় ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার চেষ্টা করছেন, সেটি বাকশাল হোক বা অন্য কোন নামে হোক -এখানে তিনি সকল গণতন্ত্রপন্থীদের শক্র বলে মনে করেন।
রেডিও তেহরান : জনাব সিরাজুর রহমান, আপনার কথার সূত্র ধরেই আরেকটি প্রসঙ্গের অবতারণা করতে চাই।
বাংলাদেশে আমরা লক্ষ্য করেছি, প্রশাসনের সব বিভাগে ইসলামপন্থীদের ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী বহু কর্মকর্তা ওএসডি হয়ে আছেন। ঠিক এ কারণেই সেনাবাহিনীতে যারা ইসলামী জীবন বিধানের প্রতি যত্নবান তাদের বিরুদ্ধে এক ধরনের অভিযান শুরু হয়ে গেছে। অনেকে 'ধর্মান্ধ ' শব্দটিকে তারই আলোকে ব্যাখ্যা করছেন। আপনি এ বিষয়ে কি মনে করেন ?
সিরাজুর রহমান : আসলেও তো তাই ।
আপনারা কি লক্ষ্য করেছেন বাংলাদেশের পুলিশে বা সরকারি চাকুরির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে- আর সেটি কখনও ডাবল আবার ট্রিপল প্রমোশন দিয়ে? আর সেই সব জায়গায় অভিজ্ঞ যেসব সংখ্যাগুরু কর্মকর্তা বা কর্মচারী ছিলেন তাদেরকে বাধ্যতামূলক অবসর বা ওসডি করা হয়েছে। এর পেছনে কারণ হচ্ছে ,বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মনে করে যে, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ হচ্ছে বাংলাদেশে তাদের রক্ষক । আর তাদেরকে তোয়াজ করার জন্য শেখ হাসিনা ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে বলেন, তার মা দূর্গা।
আমি বলব বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের যেসব অফিসার আছেন তাদের মধ্যে কিছুটা ন্যায়নীতি আছে, তারা ন্যায়পরায়ণ হতে পারেন। তারা ন্যায়পরায়ণ বলেই আওয়ামী লীগ সরকার যেটি বলবেন সেটি তারা করবেন এমনটি নয়।
কিন্তু সংখ্যালঘু যারা রয়েছেন - তারা হাসিনার জোরে ডাবল বা ট্রিপল প্রমোশন পেয়ে বড় বড় পদে রয়েছেন- তাদেরকে যে নির্দেশ দেবে সরকার তারা তা মানবে। তাদেরকে যদি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ জয়নুল আবদিনকে লাঠিপেটা কর, তাকে ন্যাংটা কর -তাহলে তারা করবে এবং করছে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।