বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে অবস্থানকারী সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রৰা করে যাচ্ছেন হিযবুত তাহরীরের বাংলাদেশের কর্মীরা। বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীরের খবরাখবর বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। বিভিন্ন দেশের হিযবুত তাহরীরের ওয়েবসাইটে নিয়মিত আপডেট দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশ পরিস্থিতির।
বাংলাদেশে বছর তিনেক আগে হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ হওয়ার পরও সংগঠনটির বাংলাদেশের ওয়েবসাইট বেশ কিছু দিন সচল ছিল। এ নিয়ে ব্যাপক লেখালেখির পর হিযবুত তাহরীরের বাংলাদেশ ওয়েবসাইট () বন্ধ করা হয়।
তবে বিভিন্ন প্রক্সি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দেখা যায়, তারা সাইটটি আপডেট করতেন। নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার লৰ্যে বিভিন্ন ধরনের বাণী দেয়া হতো তাতে। সেই সঙ্গে থাকতো সংগঠনটির কার্যক্রমের আপডেটও। সম্প্রতি ওই ওয়েবসাইটটি বন্ধ করা হলেও বিশ্বজুড়ে থাকা হিযবুত তাহরীরের অন্যান্য ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের খবর
নিয়মিত প্রকাশ করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, জার্মানিসহ উন্নত কিছু দেশে হিযবুত তাহরীরের কর্মকা- থাকলেও ৪০টি দেশের তালিকার বেশিরভাগই এশিয়ার।
এর মধ্যে বাংলাদেশ, কাজাখস্তান, আজারবাইজান, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার নাম সবার আগে। এসব দেশের প্রত্যেকটিরই পৃথক ওয়েবসাইট রয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে মালয়েশিয়া হিযবুত তাহরীরের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের কয়েকজন বিপথগামী সেনা কর্মকর্তাদের বিষয়ে যে ব্রিফিং করেছে তার পুরোটাই সেখানে দেয়া হয়েছে। হিযবুত তাহরীরের প্রসঙ্গও এসেছে সেখানে।
সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং করে জানিয়েছে, সংস্থাটির মেজর জিয়াউলের সঙ্গে হিযবুত তাহরীরের যোগাযোগ থাকতে পারে।
এ ঘটনা প্রচার-প্রকাশের পর শুক্রবার রাজধানীর রামপুরাসহ চট্টগ্রামে শো-ডাউন করে হিযবুত তাহরীরের কর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের সাবেক শিৰার্থী ও হিযবুত তাহরীরের একজন সমন্বয়ক নাম না প্রকাশের শর্তে ভোরের কাগজকে বলেন, সরকার আমাদের ওপর নানাভাবে জুলুম-নির্যাতন করছে। আমরা জানান দিয়েছি, অন্যায় হলে আমরাও বসে থাকবো না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক রয়েছে। আমাদের ওয়েবসাইট সরকার বন্ধ করে দিয়েছে।
কিন্তু নানান উপায়ে আমরা ঠিকই যোগাযোগ রৰা করছি। আমাদের সবার ই-মেইল অ্যাড্রেস তো আর বন্ধ করতে পারবে না।
আইটি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নানান ফ্রি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হিযবুত তাহরীর প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। এমনকি অনেক সময় বেছে নিচ্ছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুক’কেও। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির শিৰক বিএম মঈনুল হোসেন বলেন, অনলাইনে প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করা খুব কঠিন একটি কাজ।
কারণ বাংলাদেশে যে গেটওয়ের মাধ্যমে হিযবুত তাহরীরের ওয়েবসাইট পরিচালিত হচ্ছে বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি অথরিটি) হয়তো সেটি বন্ধ করবে। কিন্তু তারা তো অন্যান্য দেশের ওয়েবসাইটে তাদের তথ্য দিয়ে দিতে পারবে। হিযবুত তাহরীরের বাংলাদেশ ওয়েবসাইটের চেয়ে ওগুলো আরো বেশি জনপ্রিয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার চাইলে হিযবুত তাহরীরের সব সাইটই বাংলাদেশে বন্ধ করে দিতে পারে। এ প্রসঙ্গে একবার ফেসবুক বন্ধ করে দেয়ার উদাহরণ টানেন ওই শিৰক।
হিযবুত তাহরীর সূত্র জানায়, ফিলিস্তিনের জের্বসালেমের শরিয়াহ আদালতের বিচারপতি শায়খ তাকিউদ্দিন আন-নাবহানি ১৯৫৩ সালে এ দলের প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর মধ্যপ্রাচ্য থেকে এ দল ধীরে ধীরে আফ্রিকা, ইউরোপ, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে এর সমন্বয়ক মহিউদ্দিন আহমেদ বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে হিযবুত তাহরীরকে এরই মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আরবের কয়েকটি দেশে এটি নিষিদ্ধ।
এছাড়া রাশিয়া ও তুরস্কেও নিষিদ্ধ এই সংগঠন। মিসরে ১৯৭৪ সালে সরকার উৎখাতের চেষ্টার দায়ে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করা হয়। আর জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে বাংলাদেশে ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর এটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হিযবুত তাহরীর ২০০০ সালে বাংলাদেশে যাত্রা শুর্ব করেছিল বলে জানা গেছে। দেশে সংগঠনটির সবচেয়ে বেশি কর্মী রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।