আমার শ্রদ্ধেয় স্যার সাবেক বিএমএ এর সভাপতি প্রফেসর রশিদ ই মাহাবুব আমাকে ডেকে বললেন তুমি আমাকে কিছু মেসেজ দিয়েছ ঢাকা মেডিকেল কে ইউনিভার্সিটি করার বিষয়ে, আচ্ছা এ বিষয়ে তোমার ভিউটা বল। আমি বললাম স্যার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হল নিঃস্ব মানুষের চিকিথসার শেষ আশ্রয়, এখানে ব্যাড এর তুলনায় ৩-৪গুন রোগী থাকে, সব অপারেশান বিনা মূল্যে হয়, সমস্ত জরুরী রোগীর একমাত্র ভরসা ইউনিভার্সিটি হলে এইসব রোগী কোথায় যাবে? স্যার ঢাকা মেডিকেল হল ডাক্তার তৈরির কারখানা এখানে হাতে কলমে যে শিক্ষা হয় তার সমতুল্য সারা দুনিয়ায় আর একটিও হাসপাতাল নাই । কোন ডাক্তার যদি ওখানে ট্রেনিং নিতে না পারে তাহলে সে নিজেকে অসম্পূর্ণ ডাক্তার হিসেবে মনে করে। অধিকাংশ ডাক্তার ঢাকা মেডিকেল এ জীবনের কিছু সময় এই জন্যই কাটাতে চান যে এখানের শিক্ষার কিন বিকল্প নাই। দেশ বিদেশের হাজার হাজার ডাক্তার তৈরির সূতিকাগার এই ঢাকা মেডিকেল।
ইউনিভার্সিটি হলে সরকারী ভাবে এখানে আর কেউ ট্রেনিং নিতে আসতে পারবেনা। অনেকে হয়ত বলবেন কেন এমএস/ এমডি কোর্স করবে। কোর্স আর কয়জন করবে আর আসল শিক্ষা হল কোর্স শেষ করার পর। আর ডাক্তারদের শিক্ষা হল সারা জীবনের জন্য। তাই ধাপে ধাপে সব ডাক্তারকে শিখতে হয়।
সেই শিক্ষা বন্ধ হয়ে যাবে। তাহলে মান সম্মত ডাক্তার তৈরি হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। ঢাকা মেডিকেল থেকে পাশ করা হাজার হাজার ডাক্তার যারা এখন দেশে-বিদেশে বিভিন্ন যায়গায় পড়াশুনা করছেন তাঁরা এক বিশাল সমস্যার সম্মুখীন হবেন। এটার নাম পরিবর্তন হলে সব দিক দিয়ে তাঁরা হয়রানির শিকার হবেন। কোথাও ঢাকা মেডিকেল এর অস্তিত্ব খুজে পাবে না , যেকোনো পেপার এর প্রয়োজন হলে তাও খুজে পাবে না।
তাঁরা যে কি একটা মসিবতে পড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্তমানে মেডিকেল শিক্ষার যে ভীত এমবিবিএস তার অবস্থা খুবই নাজুক। ঢাকা মেডিকেল ইউনিভার্সিটি হলে এর অবস্থা আরও শোচনীয় হবে। ইউনিভার্সিটি করে ওখানে সব দলীয় লোকের নিয়োগ দিবেন। ক্ষমতার হাত বদল হলে তাঁরা আবার নুতন লোক নিয়োগ দিবেন, নাম পরিবর্তন করবেন।
এই যদি অবস্থা হয় তাহলে দেশের প্রথম মেডিকেল বিদ্যাপীঠ, জনগণের শেষ আশ্রয়, ডাক্তার তৈরির সূতিকাগার, বিশ্ব বরেণ্য এই প্রতিষ্ঠানের কি হবে একবার ভেবে দেখুন? আমি স্যারকে বললাম স্যার এতো ঝামেলা না করে কেন নুতন করে কিছু করসেন না? তিনি বললেন সরকার স্বাস্থ্য খাতে নুতন করে এই ব্যাপারে ব্যয় করতে চাবে না। তাহলে এইটা করে কি কোন লাভ হবে? স্যার বললেন কিছু লোকের ব্যক্তিগত লাভ ছাড়া কারো কোন লাভ নাই। তাহলে স্যার এটা করার কোন প্রয়জনিওতা আছে কি? স্যার অপকটে শিকার করলেন আসলে কোন প্রয়োজন নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রির কাছে আমার প্রশ্ন আপনি কি কিছু সুবিধবাদি লোকের সুবিধার জন্য সারা দেশের সাধারন মানুষের চিকিথসার শেষ ঠিকানা, হাজার হাজার ডাক্তার তৈরির কারখানা , বিশ্ববরেণ্য এই মেডিকেল কলেজটাকে ইউনিভার্সিটি নাম দিয়ে একটা দলীয় আস্তানায় পরিণত করে রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে ঢেলে দিতে চান? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি নুতন করে করতে সরকারের টাকা না থাকে তাহলে আমরা সাধারন জনগন, দেশের আপামর ডাক্তার সমাজ, সুধী সমাজ সবাই মিলে চাঁদা তুলে আপনাকে দিব, যাতে নুতন করে একটা মেডিকেল ইউনিভার্সিটি করতে পারেন। আর সেটা হলে দেশের অগুনিত রোগী উপকৃত হবে, ডাক্তারের উপকার হবে, কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দয়াকরে আমার দেশের এই সম্পদকে আপনি রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মাঝে ঢেলে দিয়েন না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।