পেশায় নাবিক নেশায় যাযাবর “জাহাজের চাকরি প্রথম চার/পাচ বছর ভাল লাগে । তার পর আর কোন ফিলিংস থাকে না” । আমাদের এক সিনিয়র মনের দুঃখে বলেছিল। কারন এর পর আর নতুন আকর্ষণ থাকে না। কিন্তু একটি জায়গায় আমি বারবার আনন্দ পাই – সেটা হল পানামা খাল ।
পৃথিবীতে যত এক্সট্রিম ইঞ্জিনিয়ারিং আছে এটি তাদের মধ্যে অন্যতম। তবে আমি বলব সুইট ইঞ্জিনিয়ারিং। পাহাড়ের মাঝ দিয়ে হ্রদের মনোরম দৃশ্য—এক কথায় অপূর্ব ।
পানামা খাল ও সুয়েজ খাল বিশ্বের অতি গুরুত্বপূর্ণ দুটি কৃত্রিম জলপথ । তবে এর মধ্যে পানামা খাল সুয়েজ খাল অপেক্ষা সমধিক গুরুত্বপূর্ণ ও বিখ্যাত।
পানামার ইসথ্মাসের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে আটলান্টিক মহাসাগরের মিলন ঘটিয়েছে।
খালটির উভয় প্রান্তে ২টি ছোট সমুদ্র সমতল ভাগ আছে। তিন জোড়া জলকপাট আছে, যেগুলো জাহাজকে সমুদ্র সমতল থেকে ৩২ মিটার উপরে তুলে দেয়। এখানে ৩২ মাইল অতি প্রশস্ত ভাগ আছে, যার মধ্যে গাট্টন লেক ও গাইলার্ডকাট নামে আট মাইল দীর্ঘ অপরিসর চ্যানেল আছে। এর ভিতর দিয়ে মাঝারি সাইজের যে কোন জাহাজ চলাচল করতে পারে।
বর্তমানের বৃহৎ আকারের কন্টেইনার জাহাজ দ্রুতগতির যুদ্ধ জাহাজ ও তেল ট্যাঙ্কার চলাচল নিশ্চিত করতে এক বছর আগে খাল টি প্রশস্ত করার জন্য তৃতীয় পর্যায়ে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ২০১৪ সালের আগস্টে খালটির ১শ’ তম বাষিকীর আগে ওই নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
সমুদ্রপথ হিসেবে আনত্মর্জাতিক বাণিজ্যে গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী পানামা খালের দৈর্ঘ্য ৬৫ কিমি. গভীরতা ১২ থেকে ১৫ মিটার এবং তলার প্রস্থ ৩০ থেকে ৯০ মিটার। পানামা খাল কৌশলগত দিক দিয়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রশান্ত মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে দূরত্ব অনেক কমিয়ে দিয়েছে।
এটি খননের ফলে ভ্রমণ দূরত্ব কমে জাহাজের চলাচল যথেষ্ট সহজ করে দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে জাহাজগুলো প্রায় ৮,০০০ নটিক্যাল মাইল হ্রাস পেয়েছে। উত্তর আমেরিকার উপকূল থেকে দক্ষিণ আমেরিকার অপর দিকের বন্দরে যেতে প্রায় ৩৫০০ মাইল দূরত্ব কমে গেছে। যেসব জাহাজ ইউরোপ, পূর্ব এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া যাতায়াত করে সেগুলো এ খাল টির সুযোগ নিয়ে প্রায় ২,০০০ মাইল দূরত্ব কমিয়ে ফেলেছে।
১৯০৪ সালে উত্তর আমেরিকা ও দৰিণ আমেরিকার মধ্যকার পানামাকে কেটে এর খনন কাজ শুরু হয় এবং দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর খনন করার পর কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করে জাহাজ চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়৷ ১৯১৪ সালের ৭ জুন "ফেডারেল" নামক একটি মার্কিন মালবাহী জাহাজ পানামা খাল পার হয়ে অটলান্টিক মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে যাওয়া প্রথম জাহাজে পরিণত হয়েছে।
১০ লাখতম জাহাজ ছিল চীনের একটি মালবাহী জাহাজ। ২০১১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পানামা খাল অতিক্রমকারী এ জাহাজটির নাম ফরটুন প্লাম। এ খালটি পার হতে প্রায় ১৫ ঘণ্টার মত সময় লাগে৷
পানামা খাল নির্মাণের ইতিহাসটি খুব চমকপ্রদ। ভাবছি ইতিহাসটি নিয়েও লিখব । আপাতত ছবি গুলো দেখুন-----------
পানামা খালের প্রবেশ ছবিটা নেট থেকে নেয়া ।
পানামা খালের অফিস।
পানামা খালের লক গেটের ছবি উপর থেকে। ( নেট থেকে নেয়া )
লক গেটে জাহাজ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।