আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি।
দূষণের শিকার পর্যটন স্পটগুলো। দেশে প্রয়োজনীয় পর্যটন বর্জ্যব্যববস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। এতে পর্যটন স্পটগুলো দূষণের শিকার।
তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন দায়টা দিতে চায় স্থানীয় জেলা প্রশাসনকে। তারা তাদের নিজস্ব স্থাপনাগুলো বর্জ্যব্যবস্থাপনায় ত্রুটি রাখছে না বলেই দাবি করে।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো: হেমায়েত উদ্দিন তালুকদার বলেছেন, যেসব পর্যটন স্পট স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে সেগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বও তাদের। যেসব স্পট ও স্থাপনা পর্যটন করপোরেশনের অধীনে রয়েছে তার বর্জ্যব্যবস্থাপনা আমাদের।
তবে দায়িত্ব যারই হোক না কেন, দেশের বেশির ভাগ পর্যটন স্পট এখন দূষণের কবলে।
দেশের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ সেন্টমার্টিনের ছেঁড়াদ্বীপ, সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে বঙ্গোপসাগর, টেকনাফ সমুদ্রসৈকত, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত ও সুন্দরবনের জামতলী সমুদ্রসৈকত সবচেয়ে বেশি দূষণের কবলে। এসব স'ানে পানীয় সরবরাহ করা প্লাস্টিকের বোতল, চিপস, বিস্কুটের প্যাকেটসহ বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকছে। এতে স'ানীয় জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। আবার অন্য দিকে পর্যটন স্পটের সৌন্দর্য নষ্ট করছে।
সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা মো: ইলিয়াস বলেন, পর্যটকরা অসচেতন।
তারা যেখানে-সেখানে প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ফেলেন। এতে সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। প্রবালের ফাঁকে এসব প্লাস্টিক জমে এক ধরনের নোংরা পরিবেশ সৃষ্টি করছে। এটা প্রবাল ঘিরে যেসব জীববৈচিত্র্য রয়েছে তার জন্য ক্ষতিকর।
সেন্টমার্টিন পর্যটন মওসুমে প্রতিদিন তিন থেকে চারটি জাহাজ পর্যটকদের বহন করে থাকে।
এসব জাহাজে চড়ে যেসব পর্যটক যাওয়া-আসা করেন তাদের ৯০ শতাংশেরও বেশি খাবার পানি, পানীয়র বোতল ও চিপস এবং বিস্কুট ও খাবারের প্লাস্টিকের প্যাকেট সমুদ্রে ফেলে দূষণ করছেন। এ জন্য জাহাজগুলোতে নির্ধারিত স্থানে ময়লা ফেলার ব্যবস্থা থাকলেও পর্যটকরা তা মানছেন না বলে জাহাজের কর্মীদের অভিযোগ।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি করে সেখানে বর্জ্যব্যবস'াপনায় সাফল্য অর্জন করেছে স'ানীয় প্রশাসন। কিন' অন্যসব স্পটে তা নেই। পাহাড়ের রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলায় যান সবচেয়ে বেশি পযটক।
অথচ রাঙ্গামাটি জেলার শুভলং ঝর্ণা এবং বান্দরবানের শৈলপ্রপাত ও বগালেক প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্যের কারণে দূষণের শিকার। শৈলপ্রপাতে পানির প্রবাহ ব্যাহত ও ঝর্ণার বেশির ভাগজুড়ে ময়লা আবর্জনায় ভরে আছে। এটি মূলত পরিত্যক্ত প্লাস্টিক দ্রব্যের সাথে পানি এবং পাহাড় থেকে নেমে আসা বর্জ্য আটকে ঝর্ণার সৌন্দর্য হানি করছে। আবার পানির স্রোতধারায় ভিন্নতা সৃষ্টি করছে। একই অবস'া বগালেকে।
সেখানে পরিত্যক্ত বোতল ও প্লাস্টিকের প্যাকেটে সয়লাব। এতে লেকের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। রাঙ্গামাটির শুভলং ঝর্ণাসহ অন্যসব স্পটেরও একই অবস্থা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ রাশিদুল হাসান বলেন, এটা থেকে মুক্তির দু’টি পথ আছে। একটি হলো প্রতিটি পর্যটন স্পটেই পর্যটনবর্জ্য নির্দিষ্ট স'ানে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে; দ্বিতীয়ত, এ জন্য গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
তবে দ্বিতীয়টা বেশি জরুরি বলেই তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, পর্যটন বর্জ্য বলতে কেবল পর্যটকদের বিভিন্ন স্পটে পরিত্যক্ত পানি ও খাবারের প্যাকেটই নয়, তাদের অন্যসব আবর্জনা ও পয়ঃনিষ্কাশনও বোঝায়। আমরা এখনো দেশের সব পর্যটন স্পটে ভালো পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি।
কারা এসব বিষয় দেখবেন তা সরকারকে নির্ধারণ করে এখনই উদ্যোগ নেয়া উচিত বলেই মনে করেন তিনি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।