. আমার নাইবা হলো পারে যাওয়া...
পৌষ শেষ হয়ে মাঘ মাস শুরু হয়েছে। পৌষের শেষ দিন পালন করা হয় পৌষ সংক্রান্তি। আর সংক্রান্তি বলতেই মনে পড়ে ছেলেবেলার কথা। সুক্লা পিসি বাসায় এসে বলে যেতেন আমরা দু ভাইবোন যেন ভোরে উঠেই তাদের বাড়ী চলে যাই। আম্মা এসব পছন্দ না করলেও আব্বার কারনে আপত্তি জানিয়ে পারতেন না।
আর আপত্তি করেই কি আমাদের আটকে রাখতে পারতেন? কনকনে শীতের ভোরে দৌড়ে যেতাম পিসিদের বাড়ী। আগের রাতেই বিশাল খড়ের স্তুপ করে রাখা হতো। সেই খড়ের স্তুপের নিচে দুইটা ম্যাড়া পিঠা দিয়ে আগুন জ্বালানো হতো। আর ভাস্কর, শংকর কাকুর সাথে আমরাও চিৎকার করে গলা ফাটাতাম, “ ম্যাড়ামেড়ির ঘর জ্বলেরে”! এসব কথার অর্থ না বুঝলেও আনন্দের কোন ঘাটতি হতোনা। চিৎকারের সাথে সাথে কলাপাতার মাঝের কান্ড টুকরো করে মাঝ খানে চিরে সেটা দিয়ে এক একজনের পিঠে বাড়ি দিয়ে বলা হতো, “ ভালা ভালি দূর হ”।
সেটার অর্থও তখন বুঝতাম না। আমাদের প্রধান আকর্ষন ছিলো থালা ভরা নানা রকম পিঠে-পুলি। আলুর পিঠে, মুগডালের পিঠে, মালপোয়া, পাটিসাপটা, তিলের পিঠে, চন্দ্রপুলি ছাড়াও খই, বাতাসা আরও অনেক কিছুই থাকতো। আর ছিলো নতুন নতুন ঘুড়ি উড়ানো।
এখনও পৌষ সংক্রান্তির অনুষ্ঠান হয়।
পশ্চিমবঙ্গে এ উৎসবকে “মকরসংক্রান্তি”, “ পৌষ পার্বণ” নামে নতুন ফসলের উৎসব হিসেবে উদজাপন করা হয়। পুরনো ঢাকায় পৌষ সংক্রান্তি “ সাকরাইন” নামে পরিচিত। মকরসংক্রান্তি শব্দটি দিয়ে নিজ কক্ষপথ থেকে সূর্যের মকর রাশিতে প্রবেশকে বোঝানো হয়ে থাকে। ভারতীয় জ্যাতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী “ সংক্রান্তি” একটি সংস্কৃত শব্দ, এর দ্বারা সূর্যের এক রাশে থেকে অন্য রাশিতে প্রবেশ করাকে বোঝায়। ১২টি রাশি অনুযায়ী এরকম ১২টি সংক্রান্তি রয়েছে।
মকরসংক্রান্তি নতুন ফসলের উৎসব ছাড়াও ভারতীয় সংস্কৃতিতে ঃশুভ সুচনা” হিসেবে পরিচিত। একে অশুভ সময়ের শেষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এসব কথা বড় হয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকা পড়ে জেনেছি। আরো জেনেছি এ উৎসব শুধু ভারত, বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য দেশেও পালন করা হয়। যেমন- নেপালে এটা মাঘি নামে, থাইল্যান্ডে সংক্রোন, লাওসে পি মা লাও, মিয়ানমারে থিং ইয়ান এবং কম্বোডিয়ায় মহাসক্রান নামে।
আমাদের দেশে পুরনো ঢাকায় সংক্রান্তির দিন আমার বুড়িয়া শাহনাজ পারভীন তার ক্যামেরায় কিছু চিত্র তুলে ধরেছে। আমি তার কিছু আপনাদের জন্য দিলাম।
ঘুড়ি বাছাই করছে একটি শিশু।
কোথায় উড়াবো? সবখানেই তো ভাইয়াদের ভিড়।
আপুরাও কি কম যায়?
বাব্বাহ! টিভির মুন্নি সাহা আপুটাও দেখি আছে!
ওমা! আন্টিও দেখি ঘুড়ির মেলায়! কি খুশী!
আহা! আকাশে শুধুই ঘুড়ির মেলা!
ও বাবা! ভাইয়ারা দেখি আগুনমুখো ড্রাগন হয়ে গেছে!
থাক বাবা! আমার আর ঘুড়ি উড়াবার দরকার নেই।
আমি এগুলো খাই। আপনারাও খান।
খই, বাতাসা, আর কদমাও আছে!
চিনির ছাঁচগুলোও দারুন সুন্দর! খেতেও মজার!
*** ছবিঃ- শাহনাজ পারভীন।
তথ্যঃ- কালের কন্ঠ পত্রিকা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।