আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজকে দুইটা ইন্টার্নেট-হুজুগের সম্মুখীন হলাম

I am what I am and that's how I would be. No I am not stubborn. I just want to be myself. ১. ইন্টার্নেটে বিভিন্ন ব্লগে ঘোরাঘুরি করতে শুরু করেছিলাম আমার ছোটমেয়েটা হওয়ার কিছু আগে থেকেই। ওর জন্মপূর্ববর্তী বেশ কিছু সমস্যার কারণে আমি অনেক ব্লগে সাবস্ক্রাইব করেছিলাম। সেরকমই একটা ব্লগ থেকে জানতে পারলাম ১২ই জানুয়ারি হলো ব্লগীয় ডিলার্কিং(Delurking) ডে। যেসব যেসব ব্লগে আমি যাই (বেশিরভাগই মা-গোছের মহিলাদের ব্লগ), দেখলাম বেশ সাড়া দিয়েছে তারা এই ডিলার্কিং কে মাথায় রেখে। পড়ে টড়ে যা বুঝলাম, লার্কিং (Lurking) এর উলটা কাজটাকেই এরা বলছে ডিলার্কিং।

ব্লগীয় পরিভাষায় লার্কিং মানে হচ্ছে আপনি কেবল পড়েই যাবেন, পড়েই যাবেন, কিন্তু নিজে লিখবেন না কিংবা মন্তব্য করবেন না। আপনি মূলতঃ পাঠক হিসেবেই সক্রিয়। ডিলার্কিং ডে-তে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে নিজেকে প্রকাশ করার জন্যে, মন্তব্য কিংবা পোস্টের মাধ্যমে। ডিলার্কিং ডে উপলক্ষ্যে দেখলাম ওনারা যেসব পোস্ট দিয়েছেন সেইগুলা এইরকম- “আসেন, যা খুশী মন্তব্য করে যান, চাইলে ইহা লিখতে পারেন, নাহয় উহা লিখতে পারেন। ” কৌতুহল থেকে পড়তে পড়তে এক ব্লগ থেকে আরেক ব্লগে গিয়ে একসময় প্রশ্ন জাগলো এই দিবস পালন করে কী হবে? আমার ইচ্ছা আমি লিখবোনা, আমার সময় নাই, কিন্তু আমি পড়তে ভালোবাসি।

আমাকে নিয়ে এত টানাটানি কেনো? ব্যক্তিগতভাবে দিবস-পালন জিনিসটা আমি অপছন্দ-ই করি। আমার কাছে মনে হয় সব কয়টা দিবসের পেছনেই ব্যাবসায়িক স্বার্থ আছে, সে হোক ভালবাসা দিবস কিংবা মা-দিবস। হতে পারে দিবস মনে রাখার দূর্বলতা ঢাকার জন্যেও আমি ব্যাপারটা পছন্দ করতে পারিনা। যা-হোক আমার মনে হয়েছে এই দিবসের পেছনেও কারও না কারও স্বার্থ আছে। ২. আমি ফেইসবুকে আছি, মূলতঃ কাছের লোকদের একনজর দেখার জন্যে।

বিশেষ করে দেশের বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আমার আত্মীয় এবং বন্ধুবান্ধবদের ফটো এবং আপডেট জানার জন্যে। মাঝে মাঝে নিজের বাচ্চাদের ছবি তুলে আপ্লোড করি, লিঙ্ক শেয়ার করি, কদাচিৎ নিজে স্ট্যাটাস দেই, এখানে ওখানে লাইক দেই। আজ দেখলাম এক ফেইসবুক ফ্রেন্ড আমাকে সহ আরও বেশ কয়েকজনকে একটা মেসেজ ফরওয়ার্ড করেছে, যাতে করে ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে একটা সচেতনতা তৈরী হয়। আমি যদি মেসেজটা ফরওয়ার্ড করি আমার নেটওয়ার্কের মেয়েদের মধ্যে তবে এই বিষয়ক প্রচারণা তাদের জন্যে ভালো হবে। আমি ফরওয়ার্ড করে দিলাম।

আকুতিটা যেহেতু ব্রেস্ট ক্যান্সার বিষয়ক ছিল, এবং প্রেরক এমন একজন যাকে আমার কখনই মনে হয়না আজাইরা কাজ করবে, তাই দ্বিধা ছাড়াই যা-যা করতে বলা হয়েছে তাইই করলাম। একটা স্ট্যাটাস দিলাম। আমি --- মাসের জন্যে --- জায়গায় যাচ্ছি। মাসের আগে লিখতে হবে আমার জন্মতারিখ, জায়গার বেলায় লিখতে হবে সেই মেসেজে দেওয়া লিস্ট অনুযায়ী একটা জায়গার নাম, যেটা আমার জন্মমাসের পাশে লেখা। বারো মাসের জন্যে বারোটা জায়গার নাম লেখা, সেভাবে আমি একটা স্ট্যাটাস দিয়েই দিলাম।

স্ট্যাটাস দেওয়ার পর খেয়াল হলো, ওরে বাপরে আমি ইউ-এস চলে যাচ্ছি? তাওও আবার এতগুলা মাসের জন্যে? ফাইজলামি নাকি?? মেসেজটা দ্রুত পড়লাম আবার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। কেমন যেনো মেয়েলি গোপন কথার মত ব্যাপার মনে হলো, এক পর্যায়ে লেখা হয়েছে, “দেখো আবার, ভুলেও ছেলেদের কিচ্ছু বলবানা!” ক্যান ভাই, বলবোনা ক্যান? ছেলেদের নাহয় ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়না, কিন্তু তাদের পরিবার/বন্ধু সার্কেলে কি কারও হয়না? ছেলেরা জানলে ক্ষতি কী? এর মধ্যে আমার স্ট্যাটাসে মন্তব্য পড়ে গিয়েছে। বিব্রতকর অবস্থা, না পারি গিলতে না পারি সইতে, তাড়াহুড়া করে সেই স্ট্যাটাস ডিলিট দিলাম। নতুন স্ট্যাটাস দিলাম ক্ষমা চেয়ে, ভাই ভুল হয়ে গিয়েছে আর করবোনা টাইপ কথাবার্তা লিখে। (অ)প্রাসংগিক পাদটীকাঃ ফোন নাম্বার, একান্তই ব্যক্তিগত ছিল একসময়ে।

কিন্তু ছাই, চাকরিটা এমনই ছিল, একসময় টের পেলাম আমার ফোন নাম্বার জনগণের হাতে হাতে। আজকে এর ফোন, কালকে তার ফোন আসে। অফিসে জানালাম, কোনও লাভ হলোনা। বরং বলা হলো ক্ষতি কী, জানিয়ে দেবেন যা জানতে চায়! অজানা নাম্বার থেকে কল রিসিভ করতামনা, একদিন সেটাও শুরু করতে হলো কাজের প্রয়োজনে। একসময়ে হোম-ডেলিভারির মুদির দোকান ও লন্ড্রী থেকে শুরু করে বুয়ার সাপ্লায়ার পর্যন্ত ফোন নাম্বার ঘুরতে থাকলো।

সেইসাথে প্র্যাংক কল, আজেবাজে এসএমএস হয়ে গেল পার্ট অফ লাইফ। প্রথম যখন ইন্টার্নেটের সাথে পরিচয় হয়েছিল তখন সবার মধ্যে বিশষ করে মেয়েদের মধ্যে অনেক ঢাক-ঢাক গুড়গুড় ছিল। এটা বলবো, তো সেটা বলবোনা, নিজেকে যতখানি লুকিয়ে ছাপিয়ে রাখা যায় এরকম। আমি নিজেও এমন ছিলাম। যতদিন গিয়েছে, বয়স হয়েছে, নিজেকে একটু একটু করে বুড়ি ভাবা শুরু করলাম।

একদিন মনে হলো হাই ফাইভে স্বামী-সহ একটা ছবি দিলে ক্ষতি কী? ফ্রেন্ড সার্কেল তো আমার পরিচিত-ই। যখন বাচ্চা হলো ফেইসবুকে আসলাম, বাচ্চা সহ ছবি দেওয়া শুরু করলাম। একসময় ফেইসবুকের প্রাইভেসি পাতলা হয়ে গেল, তখন ফ্রেন্ডলিস্ট কাট-ছাট করে ফেললাম। এটা দেখতে পাবে, তো সেটা দেখবেনা এরকম। এখন ফেইসবুক মানেই খালি ছাত্রজীবনের ফ্রেন্ড আর আত্মীয়স্বজন।

অন্যেরা তো চাইলে সাবস্ক্রাইব করতেই পারে, ক্ষতি কী? এই ব্লগিং সাইটগুলোতে গিয়ে দেখি প্রচুর মহিলা লিখছেন। আমি যদি ২০০৭ থেকে ধরি, তবে বলবো মেয়েরা এখন অনেক দ্বিধাহীনভাবে নিজেদের প্রকাশ করে। কে কী বলবে, আম্মু বকা দিবে গোছের সংকোচ এখন কারো মধ্যেই নেই। মহিলাদের বাদ দিলাম, তরুণীদের দেখি আজকাল অনেক অবাধে নিজেদের প্রকাশ করছে। এই ব্লগিং কিংবা নেটওয়ার্কিং এর কারণে কিনা জানিনা, আজকাল “মেয়ে” বলে কাউকে ভীত হতে দেখা যায়না, যেটা তরুণী বয়সে আমি ও আমার সমবয়সীরা হতাম।

অনেক ব্যাপার একসময় মনে হতো “ব্যাক্তিগত”। কারণ লোকে জানলে এ-নিয়ে কথা বলবে, গুজব ছড়াবে। কিন্তু আজকাল ভাবখানা এমন “আমাকে নিয়ে কী বলতে চাও বরং আমার কাছ থেকেই শুনে যাও। ” এটা নিশ্চিতভাবেই একটা অসামান্য বিপ্লব। এই বিপ্লব আমার মত আরও অনেককে সাহস দিয়েছে জীবন থেকে মালমসলা নিয়ে লেখার, যেটা আরও আগে শুরু করলেও ক্ষতি কিছু ছিলনা, তবুও আমরা জানিনা কেন ভয় পেতাম।

হুজুগ গুলাকে বাদ দিলে আমি এই বিপ্লবকে সাধুবাদ জানাই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.