আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুতো।

আমার ভিতরে আমি স্বতন্ত্র জীবন যাপন করি। শহরের জিরো পয়েন্টে একটি লম্বা সুতো ঘুরে গেছে। ঘুরে বেড়াচ্ছে শহীদ মিনার, নিথর পার্ক, শোরগোল সংসদ চত্বরে। মাঝে মাঝে সুতোয় প্যাঁচ দেয় পল্টনের চারপাশে,কখনওবা থমকে যায় গুলশানের কোন একটি বাড়ীতে। সুতো ফিরে ফিরে ধানন্ডিতে কোন গুরুত্বপূর্ণ সুন্দর দালানে নিচে চরকি কাটে।

সুতোটি বেয়াড়া,সুঁই সুতো খুজে বেড়ায়,সুতো সুঁই লুকোয়। সুতো থমকে যায় কমলাপুরের বিস্তীর্ন দশ ফুট বাই দশফুট ঘরের স্যাঁতস্যাঁতে মেঝেতে। সুতোর মসৃন শরীরে আঠা লেগে যায়। সুতো ফিরে আসে। চরকায় সুতো কাটে এক তরতাজা বুড়ি,আরেক চরকায় সুতো বুনে আরেক বুড়ি।

চাদেঁর বুড়ির গল্প যেদিন থেকে মায়ের কাছে শুনেছি, সেদিন থেকে বুড়ি বলতে সাদা শাড়ী পড়া এক তরুনী ভেবেছি। যে ফোকলা দাঁত বের করে হাসে,রাজা-রাণীর গল্প শোনায়। আমার দাদী বুড়িটাও দৈত্যের গল্প শোনাত,চুড়ুই পাখীর ভাত রান্নার গল্প শোনাত। দাদী বুড়িটা বেঁচে আছে। বড় হয়ে যাবার কারনে হয়ত গল্প শোনা হয় না।

চোখের সামনে কেবল চরকি কাটা দুটি বুড়ি,চাঁদের বুড়ি না। বুড়ি নিয়ে এতদিন যে জাবর কেটেছিলাম, সে সংজ্ঞা নিতান্তই সংজ্ঞাবিহীন এক বোকামির দন্ড। সুতোটা হতাচ্ছাড়া ভীষন। আমার হাতে নেই,তোমার কিংবা তোমাদের হাতেও নেই। সুতো অভিলাসি পর্যটক।

পতাকার লাল পাজেরো চড়ে ঘুরে বেড়ায় দেশ কিংবা দেশান্তরে। আমি বা আমরা তো সুঁই। কখনো কোন অন্তিম মুহূর্তে নিজেকে কুড়োল ভাবি। আমরা অদৃশ্য সুঁই। নিস্তেজ রেখার উপর নিস্তেজ পেন্সেলের আমড়া কাঠের ঢেঁকির আঁকাআকিঁ।

প্রাচীন অন্ধকারের ঘরে জন্ম নেয়া সুতো ক্রমশই নতুন করে ঘুরছে। প্রাচীন অন্ধকার নতুন আলোর প্রতিফলিত রুপ। আলো যদি অন্ধকার হয় তবে সেখানে অন্ধকারের জন্ম নয়,অন্ধকার একটি রুপ মাত্র। সুতো এভাবে ছুয়েঁ যাবে গুলশান ধানমন্ডির সীমাবদ্ধ ভৌগলিক রেখা। সুতো হাসবে সংসদের সিড়ি হয়ে কোরাম সংকটে পড়া ফোমের চেয়ারে ।

সুতো সীমাবদ্ধ যৌন মিলন করবে লাল-সাদা বিল্ডিংয়ের সাজানো অফিসে। ঘুরবে কেবল ঘুরবে। ঘুরবে আলোক নগরীর বিলাসী বিছানায়। হুইস্কির বোতলে সুতো শর্য্যা পাতবে। সুতো সুখী হোক দৈহিক কাম উত্তেজনায়।

ফুটপাতের বিচ্ছিন্ন হতাশায় সুতো ছিড়ে যায়। ছিড়ে যাক সুতো, আমার মনের মসজিদ,মন্দির অথবা গোয়াল ঘরে। খুনতো চাকুতে নয় মনে হচ্ছে। যে মনে খুন হয় তা মসজিদ,মন্দির হয় না। আমার মনের পতিতাকে আমি ধর্ষন করছি।

ধর্ষন করছি ক্রমশই রোগা হতে থাকা মাতৃভুমির সবুজ পথ ঘাট সম্ভবনা। সুতো সেখানে অস্তিত্বহীনতার ধর্মঘটে অনশন করছে। আমার সুতো ,আমাদের সুতো ঘুড়ির সুতো হয়ে বুড়িদের স্বপ্ন উড়াচ্ছে। যে সুতো আমার মায়ের লজ্জা ঢাকার কাপড় রিপু করতে পারে না,সে সুতো আকাশে ঘুড়ি উড়ায়। আমরা অশ্রু সজল চোখে চেয়ে থাকি।

প্রতিবাদী হতে চাই। গোপন নিঃশ্বাসটাকে আরও গোপন করে খাদ্যলোভী কুকুরের সঙ্গী হই। একটি কুকুর ফুটপাতে শুয়ে আছে। এক পাঁয়ে বিশ্রী ক্ষত। পোকামাকড় ছিড়ে খাচ্ছে পাঁয়ের উঠে যাওয়া ক্ষত,মাংশের কিছু ঘ্রানে পোকামাকড় লাইন ধরে সামিল হচ্ছে।

কুকুরের অন্য আরেকটি পাঁ ভেঙ্গে ফেলেছে পৌর শাসকদের কেউ একজন। শহরে প্রায়শ কুকুর নিধন অভিযান চলে। নিস্তেজ শুয়ে আছে দুপেয়ে একটি কুকুর। আমি তখন সুতোর রংচটা হিসাব করছি। সুতো বোধহয় ফিরে আসবে সে কুকুরের মুখ হয়ে ১৬ কোটির এই বাংলাদেশে।

ছবি: ইন্টারনেট থেকে লেখাটি একই সাথে চতুরে প্রকাশিত। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।