নাস্তিকতা কোন ফৌজদারি অপরাধ হতে পারে না, এটা একটা ভিন্ন মত। বিভিন্ন ধর্ম বিশ্বাস চর্চা করার অধিকারের মতোই ধর্ম অবিশ্বাস চর্চা করাও নাগরিক অধিকার। কাজেই কে নাস্তিক কে আস্তিক এটা নিয়ে রাষ্ট্রের মাথা ঘামানোর কিছু নাই, নাস্তিকতা আস্তিকতা রাজনীতির এজেন্ডা হতে পারে না, নাস্তিকতার জন্য রাষ্ট্র কাউকে শাস্তি দিতে পারে না, কেউ শাস্তির দাবীও তুলতে পারে না। আফসোস, মুক্তিযুদ্ধের ৪২ বছর পরেও এই রাষ্ট্র ও সমাজে নাস্তিকতা-আস্তিকতা নিয়ে ধর্মব্যাবসায়ীরা রাজনীতি করার সুযোগ পায়, নাস্তিকতার ‘অপরাধে’ ব্লগারদের ডিবি অফিসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, নির্যাতন করা হয় যদিও বড় বড় ফৌজাদারি অপরাধ ওয়ালারা গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায়,দিনের পর দিন জঙ্গিবাদি অন লাইন এক্টিভিজম জারি থাকে।
আওয়ামী লীগ একই সাথে মুক্তিযুদ্ধ ব্যাবসায়ী ও ধর্ম ব্যাবসায়ী দল।
এই দুইটি ইস্যু ব্যাবহার করে ব্যাবসায় মুনাফা সর্বোচ্চ করণের মতোই আওয়ামী লীগ ভোট সর্বোচ্চ করণের রাজনীতি করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যাবহার করে ব্লগারদের কাধে ভর দিয়ে আওয়ামী লিগ যুদ্ধাপরাধ বিচারের সংকট পার হয়েই ব্লগারদের ছুড়ে ফেলতে শুরু করেছে: গাঙ পার হইলে মাঝি শালা। আওয়ামী লীগের সামনে এখন নির্বাচনী গাঙ। এই নির্বাচনী গাঙ পার হইতে তার এখন ধর্মব্যাবসায়ী মাঝিদের দরকার। এরকম একটা প্রেক্ষাপটেই ৬ এপ্রিলের লংমার্চ উপলক্ষে হেফাজতে ইসলামের সাথে দেনবার করছে সরকার।
এই দেনদরবারে সরকার যে আসলেই ধর্ম রক্ষায় অঙ্গিকারাবদ্ধ তার প্রমাণ হিসেবে কথিত নাস্তিক ব্লগারদের রাতের আধারে ডিবি অফিসে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কমিউনিটি হিসেবে দুর্বল, অসংগঠিত এবং বিভিন্ন ভাবে বিভক্ত ব্লগারদেরকে নির্বাচনী হিসাবের খাতায় খরচের অ্যাকাউন্টে ফেলে দেয়া হচ্ছে। রাজাকার আলবদরদের স্টাইলে তালিকা প্রস্তুত এবং প্রকাশ করে কথিত নাস্তিক ব্লগারদের সম্ভাব্য ঘাতকদের কাছে সহজ লভ্য টার্গেট হিসেবে দাড় করিয়ে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যাবসায়ী সরকার, নিজেও আলবদর স্টাইলে রাতের আধারে তুলে নিয়ে যাচ্ছে ব্লগারদের।
সমাজের সকল প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তির সম্মিলিত ভাবে সরকারের এই ধর্ম নিয়ে রাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানো জরুরী। আমরা অবিলম্বে ব্লগার মশিউর রহমান বিপ্লব , রাসেল পারভেজ ও সুব্রত শুভর মুক্তি চাই।
[নোট: একটা বিষয়ে সবার পরিস্কার থাকা দরকার: কোন সমালোচান বা ভিন্ন মত ধর্ম অবমাননা আর কোনটা না- এর কোন সার্বজনীন সংগা নাই। ধর্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাঠ খোট্টা যুক্তি দিয়ে সমালোচনা করলেও সেটাকে ধর্ম অবমাননা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, ধর্ম বিদ্বেষ হিসেবে দেখা হয়। ফলে এই হিসেবে নাস্তিকতা মানেই ধর্ম অবমাননা – এরকম একটা ব্যাপার দাড় করিয়ে যেতে পারে। ফলে আইনে যদি থাকে যে নাস্তিকতা বা ধর্ম অবিশ্বাস গ্রহণযোগ্য কিন্তু ধর্ম অবমাননা অগ্রহণ যোগ্য তখন যে কোন অবিশ্বাসকেই ধর্ম অবমাননা হিসেবে চালিয়ে দেয়া যাবে। কাজেই নাস্তিকতা বা ধর্ম অবিশ্বাস, ধর্ম অবমাননা এই সব ফৌজদারি আইন দিয়ে মোকাবিলা করার বিষয় নয়, ধর্ম বিষয়ে নাস্তিকদের লিখিত বক্তব্যকে লেখার মাধ্যমেই জবাব দেয়া ছাড়া আর কোন পন্থা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
ব্লগে কোন পোষ্টে ধর্ম বিষয়ে গালিগালিজ থাকলে ব্লগ মডারেশনের মাধ্যমেই সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, এর জন্য ডিবি অফিসে নিয়ে নির্যাতন করার কোন যুক্তি নাই। ] ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।