আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব। ০ গার্মেন্টসে ট্যাপের পানি খেয়ে বার বার অসুস্থ হচ্ছে শ্রমিকরা
০ অথচ পানি পরীক্ষায় সাধারণ ব্যাকটেরিয়া ছাড়া অন্য কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি
পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের পানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনাকে স্যাবোটাজ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। চিকিৎসকরা একে উল্লেখ করছেন ভীতিজনিত মানসিক অসুস্থতা হিসেবে। আর ফেসবুকে অসংখ্য মতামতে এ ঘটনাকে বলা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে দেশের গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংস করার জন্য একটি পাঁয়তারা। স্যাবোটাজ! পোশাকশিল্পের মালিকরা বলছেন, গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে দিতেই একটি মহলের ইন্ধনে এ রকম ঘটনা ঘটছে।
তবে এ ঘটনা তদন্তে আজ সোমবার সরকারের রোগতত্ত্ব বিভাগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর’র একটি প্রতিনিধি দল সাভার যাচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ডা. মাহমুদুর রহমান জানিয়েছেন, আমরা এ পর্যন্ত যতগুলো ইনভেস্টিগেশন করেছি তাতে সবই মনস্তাত্ত্বিক রোগ হিসেবে এসেছে। বিশেষ করে অল্প বয়স্ক মেয়েদের ক্ষেত্রে এ ঘটনা বেশি ঘটছে। পোশাকশিল্পে এরকম ঘটনা নতুন হলেও আগে স্কুলে এ ঘটনা বেশি ঘটতো। গত ২০০৬-০৭ সালে বাংলাদেশের অনেক স্কুলে এ সমস্যায় স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
রবিবার বিবিসির খবরে এ কথা জানানো হয়।
খবরে আরও বলা হয়, রানা প্লাজা ধসে এগারো শ’রও বেশি শ্রমিক নিহত হওয়ার পর বিভিন্ন কারখানায় প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। পানি পরীক্ষা করে, ব্যাকটেরিয়া ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় এমন গণহারে অসুস্থ হয়ে পড়বার ঘটনা বেশ দেখা গেলেও রবিবার এমন একটি কারখানায় ঘটল যেটির মালিক স্বয়ং বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ আতিকুল ইসলাম। অসুস্থ হওয়া এরকম প্রায় এক শ’র মতো শ্রমিকের চিকিৎসা চলছে স্থানীয় এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
আশুলিয়া থানার পুলিশ কর্মকর্তা মোঃ বদরুল আলম বলছেন, পানি খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়লে ৪০০ থেকে সাড়ে চার শ’ শ্রমিককে স্থানীয় তিনটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সাভারে এনাম হাসপাতালের চিকিৎসক এনামুর রহমান বলেছেন, ভীতির কারণে শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন। রোজ ড্রেসেজ নামক এই কারখানার এক শ্রমিক মনিরা খাতুন বলেন, পানি খাওয়ার পরেই তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। তিনি বলেন, সকালে কারখানায় যাই। তারপর পানি খাওয়ার পর পেটের মধ্যে খুব যন্ত্রণা হয়।
কিন্তু তারপর আমার কিছু মনে নেই। পরে আমি দেখি, আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একই কারখানার আরেক শ্রমিক সাহানা। তিনিও অসুস্থ। তার অবশ্য পেটে ব্যথা নয়, তীব্র মাথা যন্ত্রণা।
কারখানায় পানি পান করার পর থেকেই শুরু এই যন্ত্রণা, বলছিলেন সাহানা।
সাহানা এবং মনিরার মতো রোজ ড্রেসেজের এক শ’রও বেশি শ্রমিক রবিবার চিকিৎসা নিচ্ছিল এনাম সাভারের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
ঠিক কী ধরনের অসুস্থতা তাদের, রোগের উপসর্গই বা কী?
এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী ডাক্তার এনামুর রহমান বলছেন, এটা এক ধরনের প্যানিক ডিসঅর্ডার। পানিবাহিত কিছু হলে হতো ডায়রিয়া বা বমি হতো। কিন্তু সেরকম কিছু হচ্ছে না।
এটা এক ধরনের প্যানিক ডিসঅর্ডার। পানিবাহিত কিছু হলে হতো ডায়রিয়া, বা বমি হতো। কিন্তু সেরকম কিছু হয়নি।
এ প্রতিবেদন তৈরি করা পর্যন্ত মিস্টার ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি, তবে বিষয়টি নিয়ে বিজিএমইএর একজন সহসভাপতি এসএম মান্নান কচি বলেন, এই পানি পরীক্ষা করে তাতে বিষাক্ত কিছু পাওয়া যায়নি। বরাবরই যারা বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট হয়েছেন তাদের কারখানায় এ রকম ঘটনা ঘটিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা হয়েছে।
এবার আমার প্রেসিডেন্টের কারখানায় করা হলো। এর আগে সালাম মুর্শেদী ও একে আজাদের কারখানায় এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি শ্রমিকের সবাই এখন সুস্থ। সন্ধ্যানাগাদ তাদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়ার কথা। এর আগে গত শুক্রবারও এই কারখানার পানি খেয়ে কয়েক শ’ শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং গতকাল শনিবার কারখানাটি বন্ধ রাখা হয়।
ঘণ্টাদেড়েক পর কর্তৃপক্ষ বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তাদের কাজে পাঠান এবং এরপরই শুরু হয় গণহারে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা।
এর আগে গত শুক্রবারও এই কারখানার পানি খেয়ে কয়েক শ’ শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং গতকাল শনিবার কারখানাটি বন্ধ রাখা হয়।
ঘণ্টাদেড়েক পর কর্তৃপক্ষ বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তাদের কাজে পাঠান এবং এরপরই শুরু হয় গণহারে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা।
সৌমিত্র মানব, সাভার থেকে জানান, রাতের বেলার নাস্তা খেয়ে অসুস্থ হওয়ার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে এবার কারখানার ট্যাপের পানি পান করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ‘বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন’ (বিজিএমইএ) সভাপতি আতিকুল ইসলামের মালিকাধীন আশুলিয়া থানাধীন জামগড়া এলাকার ‘দি রোজ ড্রেসেস লিমিটেড’র কয়েক শ’ শ্রমিক। রবিবার সকালে তারা কাজে যোগ দিতে এসে কারখানার পানি পান করে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
অসুস্থ হয়ে পড়া শ্রমিকদের স্থানীয় নারী ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র, নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সাভার এনাম মেডিক্যাল কলেজ এ্যান্ড হাসপাতালসহ বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। অসুস্থ শ্রমিকদের বহনে একপর্যায়ে পরিবহন সঙ্কট দেখা দিলে উত্তেজিত শ্রমিক ও জনতা কারখানায় ভাংচুর চালায়। এ সময় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও রবার বুলেট ছোড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হয় এক শ্রমিক।
জানা গেছে, ‘দি রোজ ড্রেসেস লিমিটেড’ কারখানার কয়েক শ’ শ্রমিক দিনের কাজ শেষে শুক্রবার রাতে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছিলেন।
রাত সাড়ে আটটার দিকে রাতের নাস্তা হিসেবে তাদের কলা, কেক ও ডিম খেতে দেয়া হয়। নাস্তা খাওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যেই শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ঘটনার পর শনিবার ওই কারখানা একদিনের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। ছুটি শেষে রবিবার সকালে কাজে যোগ দিয়েছিলেন শ্রমিকরা। এবার কারখানার ট্যাপের পানি পান করে কয়েক শ’ শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ায় এদিন আবারও কারখানাটি ছুটি ঘোষণা করা হয়।
শ্রমিকরা জানান, পানি খাওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যেই বমি, মাথা ঘোরা, খিঁচুনিসহ কারখানার ভিতরেই অচেতন হয়ে পড়তে থাকে একের পর এক নারী ও পুরুষ শ্রমিক। অসুস্থদের দ্রুত স্থানীয় নারী ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র, নাইটিংঙ্গেল হাসপাতালসহ আশপাশের বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। যাদের অবস্থা অবনতির দিকে, তাদের সাভার এনাম মেডিক্যাল কলেজ এ্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এক সঙ্গে এত শ্রমিক অসুস্থ হওয়ায় তাদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে আশপাশের কারখানার শ্রমিক, স্থানীয় জনতা ও কারখানা কর্তৃপক্ষ অসুস্থ হয়ে পড়া শ্রমিকদের হাসপাতালে ভর্তি করে।
তবে কয়েক শ’ শ্রমিক এক সঙ্গে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদের বহনে এ্যাম্বুলেন্স ও যানবাহন সঙ্কট দেখা দেয়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত অসুস্থ শ্রমিকদের বহনে বাস, পুলিশ, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ব্যবহার করা হয়। এক পর্যায়ে সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে অসুস্থ শ্রমিকদের বহনে গাড়ি না পাওয়ায় শ্রমিক ও স্থানীয় উত্তেজিত জনতা কারখানায় ভাংচুর চালায়। পুলিশ বাধা দিলে এক পর্যায়ে জনতা ও শ্রমিকের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বেধে যায়। চলে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও রবার বুলেট ছোড়ে। এতে এক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হলে তাকে এনাম মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়।
আশুলিয়া নারী ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. হারুনুর রশিদ জানান, শ্রমিকরা সকালে এসে ট্যাপের পানি খাওয়ার পরপরই তাদের প্রচ- পেট ও শরীর ব্যথা শুরু হয়। এভাবে শ’ শ’ শ্রমিক অসুস্থ হতে থাকে।
শিল্প পুলিশ-১ এর পরির্দশক (নি.) আব্দুস সাত্তার জানান, জামগড়ার ‘দি রোজ ড্রেসেস লিমিটেড’-এর কয়েক শ’ শ্রমিক কারখানায় ট্যাপের পানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
পানি খাওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যেই বমি, মাথা ঘুরানো, খিঁচুনিসহ অজ্ঞান হতে থাকে শ্রমিকরা। অসুস্থ শ্রমিক বহনে গাড়ি সঙ্কট দেখা দেয়ায় শ্রমিক ও স্থানীয় উত্তেজিত জনতা কারখানায় ভাংচুর চালায়। পুলিশ বাধা দিলে এক পর্যায়ে তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বেধে যায়। পরে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও রবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। কারখানাটি এদিন ছুটি ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোশারফ হোসেন দেওয়ান জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. রওনক জাহান উর্মিকে প্রধান করে বিষয়টি তদন্তের জন্য ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দু’ সদস্য হলেন- সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ডা. সেলিনা নাসরিন ও স্বাস্থ্য সহকারী মোহাম্মদ ওসমান। কমিটিকে আগামী সাতদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া যে পানি পান করে শ্রমিকরা অসুস্থ হয়েছেন, তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য জাতীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে ওই পোশাক কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের একই বাউন্ডারির মধ্যে দুটি ভবন।
দু’ভবনের শ্রমিকরাই অসুস্থ হয়েছে। অথচ ওই দু’ভবনের পানির ট্যাঙ্কি, মোটর ও পানির লাইন সম্পূর্ণ আলাদা। বিষয়টি বেশ রহস্যজনক মনে হচ্ছে।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও রবার বুলেট ছুড়েছে। এতে এক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে শুনেছেন।
বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কয়েক শ্রমিক বলেন, সকাল আটটার দিকে কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে অধিকাংশ শ্রমিকই কাজে যোগ দেন। এরপর শ্রমিকদের অনেকে কারখানার ট্যাপের পানি পান করে। কিছুক্ষণ পর অনেকের গলা থেকে পেট পর্যন্ত প্রচ- জ্বালাপোড়া শুরু হয়।
এ সময় তারা বমি করতে থাকেন এবং অনেকেই কারখানার ভিতরে অচেতন হয়ে পড়েন।
এনাম মেডিক্যালের চিকিৎসকরা বলেন, পানিতে বিষক্রিয়ার কারণে শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে থাকতে পারে।
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।