নয়া যামানার নয়া পথিক,পথ হারিয়ে ছুটনা দিক্বিদিক
একসময় কান পেতে পশ্চিমের আর্তনাদ শুনতে হতো, এখন আর কান পাততে হয় না, বাতাসে আজ সচারচর ভেসে আসে তাদের আর্তনাদ। এ আর্তনাদ বাঁচাও বাঁচাও রবের কোন চিৎকার ধ্বনি নয়, হতাশা থেকে জন্ম নেয়া কোন ডাক-হাহাকারও নয়, এই আর্তনাদ হলো চোরাবালিতে ডুবতে থাকা এক অশুভ দানবের বিশ্বকে গ্রাস করার চিৎকার ধ্বনি। হাত পা ছুড়ে দানব এখন নিরন্তর চিৎকার করেছে। ধ্বংসের ভগ্নস্তূপ থেকেও তার পাশবিক জিহ্বা শান্তিপ্রিয় মানুষের দিকে লকলকিয়ে এগিয়ে আসছে। বিশ্বকে ধ্বংস করেই যেন সে ক্ষান্ত হবে।
পশ্চিম মানেই এক ভিন্ন জগত। পশ্চিম মানেই সভ্যতার নামে নগ্নতার বেসাতি আর সমকামিতার ছড়াছড়ি। পশ্চিম মানেই বিস্ময়কর এক জগত , এক জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড।
ধর্মালয় মানুষের অন্তরের শুদ্ধতা আর সুস্থতা লালন কেন্দ্র। অস্থির আত্মা সেখানে যায় শান্তির খুঁজে, পাপী যায় পাপ হতে মুক্ত হতে।
কল্যাণ, শুদ্ধতা ,পবিত্রতা ,সম্প্রীতি এসবের চর্চা করে ধর্ম,চর্চা হয় ধর্মাঙ্গনে। কিন্তু সেই ধর্মালয় যদি পরিণত হয় বেশ্যালয়ে,রূপান্তরিত হয় পতিতাপালন কেন্দ্রে,তাহলে সেই সভ্যতায় ধর্মের কি বাকি থাকে? কি পরিণাম তাদের জন্য অপেক্ষা করে? আমি অবাক হয়ে ভাবি, যে গির্জায় যৌন চর্চা হয়, প্রেমিক তার প্রেমাস্পদের সাথে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য গির্জাকে ভাবে নিরাপদ! তখন মানুষ শুদ্ধতা অর্জন করতে কোথায় যাবে??
ঈশ্বরের নামে পশ্চিমে যে মেয়েকে গির্জার নামে উৎসর্গ করে দেয়া হয়, পশ্চিমে তারা পরিণত হয় গির্জার ব্যক্তিগত সম্পদে। বাইরের দুনিয়া তাদের জন্য নিষিদ্ধ! তাদের আছে বিশেষ সামাজিক মর্যাদা। তাদের দিকে বাঁকা চোখে তাকানো অন্যদের জন্য নিষিদ্ধ। তারা বাইরের কারো সাথে অবাধে মিশতে পারে না।
কিন্তু ভিন্ন জগতের জন্য নিষিদ্ধ এই নারীগুলো নিজেরাই বাস করে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন নিষিদ্ধপল্লীতে। মার্কিন উচ্চ আদালতে দায়ের করা এক 'নানের' আর্জিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কিভাবে কামুক পাদ্রীরা কুমারী নানদের উপর পাশবিক আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাশ্চাত্যের আদালতে এরকম হাজারো আর্জি পরে আছে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।
পশ্চিমের গির্জার অন্ধকার দিক বাইরের দুনিয়া কমই জানে,কারণ তা সচেতনভাবে বাইরে আসতে দেয়া হয় না। ওস্তাদ সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ (রহ) তাঁর 'আমার দেখা আমেরিকা'(আমেরিকা আললাতি রায়াইতু) যা ছাপা হয় নি, বলা হয় বৈরুত প্রেস থেকে আমেরিকার এম্বাসীর লোকেরা বইটির পাণ্ডুলিপি চুরি করে পুড়িয়ে ফেলেছে।
কিন্তু 'রিসালা' সাময়িকীতে তার কিছু অংশ ছাপা হয়েছিলো, তাতে তিনি লিখেছেন,(উল্লেখ্য, সাইয়্যেদ কুতুব মিশর সরকারের শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে দুই বছর আমেরিকাতে ছিলেন)"পাশ্চাত্যের যুবকরা তাদের প্রেমিকার সাথে,প্রেমাস্পদের সাথে নিরাপদ সাক্ষাতের জন্য গির্জায় মিলিত হয়। গির্জা হলো প্রেমের অভয়ারণ্য । "
ইমাম আব্দুল্লাহ ইউসুফ আযযাম শহীদ (রহ) লিখেছেন,"যে সমাজে ঘুণ ধরেছে, ধ্বংসের উপক্রম হয়েছে, সে সমাজের অবস্থা এমনি ভয়াবহ হয়। "
পাশ্চাত্যের নগ্নতা,অশ্লীল যৌনাচার যা মানব স্বভাবের স্বাভাবিক রীতি বিরুদ্ধ ; এ কালচার এত বিস্তৃত যা পশুপ্রবৃত্তিকে অতিক্রম করেছে বহু কাল আগে। পাশ্চাত্যের সাথে কোন পশুর সাথে তুলনা করলে বাক সম্পন্ন পশু চিৎকার করে বলবে, না না আমাকে দয়া করে পাশ্চাত্যের সাথে তুলনা করো না, আমি পশু বটে কিন্তু পাশ্চাত্য নই।
সেসব দেশে বিবাহিত ও অবিবাহিত নারী-পুরুষ তথাকথিত স্বাধীনতার উত্তাল তরঙ্গে ভেসে চলছে। অধঃপতিত জাতি নিপতিত হচ্ছে ধ্বংসের অতল গহ্বরে । পাশ্চাত্য আর পাশ্চাত্যনুসারী দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিন্ন যৌবনা যুবতীরা অদ্ভুত এক খণ্ড কাপড় পরে, যা হাঁটুর ওপরেও দশ সেন্টিমিটার উন্মুক্ত। অথচ এরা নারী,এরা উদ্ভিন্ন যৌবনা, এরা রূপসী।
উস্তাদ শায়খ আযযাম(রহ) লিখেছেন,'একদা আমি East University তে গেলাম।
আসরের ওয়াক্ত। বাথরুমে গেলাম অযু করতে। দেখলাম কোন বাথরুমেই দরজা নেই। না পুরুষের না নারীদের বাথরুমে। সবগুলোতেই একই অবস্থা।
এটা কিভাবে হতে পারে? কিভাবে সম্ভব??'
পাশ্চাত্যে কিনা হয়? পুরো পশ্চিম জুড়ে অবাধ যৌনাচার, নেশা, মদ-মাদকতা আর নোংরামির ছড়াছড়ি। পাশ্চাত্যে ২ কোটি ৫০ লাখ সমকামী আছে। শুধু নিউইয়র্কের এক তৃতীয়াংশ লোক সমকামী। আহমাদ দীদাত লিখেছেন,'তাদেরকে সুভাষিত করে আখ্যায়িত করা হয় 'গে' নামে। Gay মানে আনন্দ।
অথচ শব্দটি আজ নোংরা-অশ্লীলতায় ভরা, ভদ্র সমাজে উচ্চারণের অযোগ্য।
পাকিস্তানের প্রাক্তন চীফ জাস্টিস আল্লামা মুহাম্মাদ তকী উসমানী তার ভ্রমণবিষয়ক গ্রন্থ 'জাহানে দিদাহ'য়ে ও তুলে ধরেছেন পাশ্চাত্য জগতের চারিত্রিক,সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের এক নিকষকালো অন্ধকার চিত্র।
মুফতি সাহেব লেখেন,"শুধুমাত্র বিনোদন কেন্দ্র গুলোতেই নয়, বরং আলোকিত সড়ক, লোকারণ্য বাজারে,বাসে,ট্রেনে ও জনসমাগমের স্থানে জনসাধারণের সম্মুখে চুম্বন, আলিঙ্গন, জৈবিক স্বাদ আস্বাদন করা তাদের এক সাধারণ ব্যাপার। সারাদিনে এমন পাঁচ-সাতটা দৃশ্য ইচ্ছায় অনিচ্ছায় চোখে পড়বেই। নারীদের নগ্নতা দোষের হওয়া দূরের কথা, হয়তোবা গর্বের বস্তু বলে মনে করা হয়।
তাদের দেহে কাপড় নামে যা আছে, লজ্জা নিবারণের দৃষ্টিতে তার কোন যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায় না। "
বিশেষ বিশেষ স্থানে উলঙ্গ হওয়াতেও কোন দোষ মনে করা হয় না। জায়গায় জায়গায় Nude Dancers (উলঙ্গ নর্তকী)-র সাইনবোর্ড সগর্বে ঝুলতে দেখা যায়। পোস্টার ও হ্যান্ডবিল Beauty Parlous (রূপসী সমাবেশ) নামে খোলাবাজারে প্রকাশ্যে বিতরণ করা হয়। নিউইয়র্কের একটি বাজার অতিক্রম করার সময় হ্যান্ডবিল আমাদের মতো মৌলবীদের হাতেও গুঁজে দেওয়া হয়।
তাতে কয়েকটি নগ্ন ছবির সাথে বোল্ড টাইপে রেডমার্ক করা ছিলো- Play with our bodies!
লেখাটি কি একজন ভদ্রলোকের পাঠযোগ্য? জৈবিক চাহিদা পূরণের পদ্ধতিতে এ জাতি নিঃসন্দেহে কুকুর-বিড়ালের পর্যায় অতিক্রম করে গেছে। উপরন্তু বিস্ময়কর ও চূড়ান্ত শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, যে সমাজে নারী এত সস্তা,তাকে ভোগ করা এত সহজ, অনৈতিক যৌনাচারের জন্য নির্জনতাও প্রয়োজনীয় নয়,যেখানে স্বেচ্ছায় ব্যভিচার শুধু আইনগতভাবে তো নয়ই, সমাজ কিংবা বিবেকের দৃষ্টিতেও কোনরূপ দূষণীয় নয়,সে সমাজেই আবার বলপূর্বক ধর্ষণের ঘটনা এত অধিক পরিমাণে ঘটে,তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। "
আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মাইকেল প্যারেণ্টি(Michael Parenti) যাকে মার্কিন শাসক শ্রেণীর দ্বিমুখী কপটনীতির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট মতামত প্রকাশের অপরাধে(!) বাকস্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মানবাধিকারের স্বঘোষিত নিশানবরদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে দেয়া হচ্ছে না। তিনি তার বিখ্যাত গ্রন্থ 'Dirty Truths' গ্রন্থের Hidden Holocaust, USA অধ্যায়ে পাশ্চাত্যের কিছু কিছু গাণিতিক পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ৭ লাখ মহিলা ধর্ষিতা হয়।
অর্থাৎ,প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে একজন মহিলা ধর্ষিতা হয়। এ হচ্ছে সরকারি হিসাব,যারা অভিযোগ পেশ করেন তাদের সংখ্যা। এমন কতজনই তো আছে,যারা এসব তিক্ততা হজম করেন গোপনে-নীরবে।
পশ্চিমে যা কিছু করে বড় করেই করে। ঈশ্বরকে যতটুকু তুলে ধরে,শয়তানকেও ততো ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে তাদের দ্বিধা ও সংকোচ হয় না।
জিমি সোয়াগাট(Jimmy Swaggart) নামের একজন যাজক সাহেব তার গবেষণা গ্রন্থ 'Homo Sexuality' -তে লিখেছেন,'আমেরিকা ! ঈশ্বর একদিন আল্লাহ তোমার বিচার করবেন,তোমাকে ধ্বংস করবেন। তিনি যদি তোমার বিচার না করেন, তবে তাকে সেইসব সমকামী দুশ্চরিত্রদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে,একসময় বিকৃত রুচি ও সমকামিতার জন্য তিনি তাদের ধ্বংস করেছিলেন। '
ইংল্যান্ডে কি হয়? লিখেছেন এক ইংরেজ লেখক-জর্জ র্যালি স্কট(George Ryley Scott),'বেশ্যাবৃত্তির ইতিহাস'(A history of prostitution from antiquity to the present day) গ্রন্থে। "পেশাদার নারীদের বাদ দিলেও আরেক শ্রেণী আছে,যাদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। তারা তাদের আয়-উপার্জন বাড়ানোর জন্য ব্যভিচারে লিপ্ত হয়।
তারা হয়ে পড়ে যৌন উন্মাতাল। এটা এখন মেয়েদের ফ্যাশন। বিবাহের পূর্বে নিঃসঙ্কোচে অপরের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন তাদের দৃষ্টিতে কোনরূপ সঙ্কোচের বিষয় নয়। "
কয়েক বছর আগে ক্যামেরুনের ইউয়াণ্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগের এক প্রফেসর জার্মানিতে থেকে পাশ্চাত্যকে অভিহিত করেছেন"কুকুর সভ্যতা" বলে। কুকুরের মাঝে সভ্যতা না থাকুক তারা পাশ্চাত্য নয়।
পাশ্চাত্যে যৌনতা এক ধরণের শিল্প। একে বলা হয় Art । সামাজিক উন্নতি নির্ভর করে এই শিল্পকলার বিকাশের উপর। তাই পাশ্চাত্য অকৃপণভাবে, উদারভাবে বিকশিত করছে তার যৌন শিল্পকলাকে। মানুষের সুস্থ স্বাভাবিক চিন্তা-চেতনার ধারণাতীত উপায় ও কলা-কৌশলে বিস্তৃত হয়ে চলছে তার বিকৃত রুচির নগ্ন যৌনতা।
আটলান্টিক পেরিয়ে তা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের দিকে দিকে-কালো আফ্রিকায়, মরুর বালুর দুবাই কিংবা আরব সীমানাঘেঁষা মিশর অথবা আমাদের ছোট ক্যানভাসের অজপাড়া গাঁয়েও। ইন্টারনেটের বেতারে ছড়িয়ে পড়ছে তা ইথারে -ইথারে ,মানুষের হাতে-হাতে।
যৌন মাতলামির সাথে যুক্ত হয়েছে মরণ নেশার ভয়াল থাবা। পাশ্চাত্যের বান্ডি কিংবা হুইস্কি, রাশিয়ার ভদকা মানুষের রক্তধারায় মিশে যাচ্ছে মুক্তবাজার অর্থনীতি কিংবা বিশ্বায়নের ডামাডোলে । পশ্চিমে আজ সেগুলো হলো কালচার, উন্নতির সোপান ।
টেবিল সাজানোর সোপান । টেবিলে সাজানো মদের বোতল, আশেপাশে দু'চারটে গার্লফ্রেণ্ড বা বয়ফ্রেণ্ড;পশ্চিমে এগুলো জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। পরিবারের ধারণা সেখানে সেকেলে। কী দরকার অযথা কোন নারীর কিংবা কিছু বাচ্চা-কাচ্চার দায় গ্রহণ করার। চাইলে যা এমনিই পাওয়া, তা দায়িত্ববোধের মধ্যে টেনে আনার কোন মানে হয় না ?!
বলা হয় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আফিম,হেরোইন ও নেশাজাত দ্রব্যের চোরাচালানের সাথে সিআইএ জড়িত।
হাজার হাজার কোটি ডলারের এই মার্কেটে নাকি বেনামে আছে সিআইএর আধিপত্য। আফগানিস্তানে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পপিচাষের পরিমাণ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পপি থেকে উৎপন্ন হয় ভয়াল নেশা হেরোইন,আফিম ইত্যাদি। কর্তারা এগুলো কালোবাজারি করে আয় করে লাখ লাখ ডলার। পরে এসব অর্থ ছড়িয়ে দেয়া হয় লাতিন আমেরিকার সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর পাশ্চাত্যপন্থী বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর মাঝে।
যারা মার্কিন স্বার্থে কাজ করে। এছাড়া ব্যয় হয় ইরাক ও আফগানিস্তানে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নির্মূলে। পেন্টাগনের আর্কাইভ থেকে নানা সময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন নথি ঘেঁটে পাওয়া গেছে ভয়াবহ এই তথ্য।
পশ্চিম কি? পশ্চিম কেন রক্তের গন্ধে মাতাল হয়ে যায়? ৯/১১-এর পর সে তার ধারালো দন্ত-নখর দ্বারা ক্ষতবিক্ষত করতে লাগল উম্মাহর হৃদপিণ্ডকে। কখনো আরবে,কখনো আজমে, পশ্চিমের থাবা বিস্তৃত হয়ে চললো।
অরক্ষিত হয়ে পড়লো মুসলিম বিশ্বের প্রতীকী মানচিত্রগুলো। ইসলাম থেকে বঞ্চিত হয়েও মুসলমানরা তখনো পর্যন্ত স্বস্তির শ্বাস ফেলার অবকাশ পেতো!
ধীরে-নীরবে, শত বছরে পশ্চিম যে কর্মপরিকল্পনা মুসলিম বিশ্বকে ঘেরে, মরু আরবের বালুমাটি,তার পরিবেশ-প্রতিবেশ ঘিরে এগিয়ে চলছিলো,হঠাৎ করেই তা সুনামির তাণ্ডবীয়রূপ পেলো। কিন্তু এর মূল কারণ কি? পশ্চিমে আছে একদল থিংকট্যাঙ্কার । যারা পশ্চিমের বাস করে ,পশ্চিমে খায়। চিন্তা করে পশ্চিমের মাথা দিয়ে।
আবার একদল আছে যারা পশ্চিমে বাস করে না ঠিকই,কিন্তু পশ্চিম থেকে এদের আলাদা কোন ভাবনা তাদের নেই। তাদের ভাষা ভিন্ন,সংস্কৃতি ভিন্ন,রঙ-বর্ণ ভিন্ন, তবুও তারা পশ্চিমের। চিন্তা চেতনায়, কর্মকাণ্ড কিংবা আকার-অবয়বে তারা শতভাগ পশ্চিমী তারা।
মার্কিন প্রফেসর নোয়াম চেমস্কি,বৃটেনের আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিশ্লেষক রবার্ট ফিস্ক,ক্লাস অব সিভিলাইজেশন যাকে আধুনিক ক্রুসেডের বাইবেল বলা যেতে পারে,তার প্রবর্তক ইহুদী প্রফেসর স্যামুয়েল পি হ্যাংণ্টিংটন,কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের এডওয়ার্ড সাইদ, মারওয়ান আল বাকলান, মিশরের নাগিব মাহফুজ এরকম আরো শত শত জনের রচনা বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায়, পশ্চিল কী? কী তার রূপ-অবয়ব।
পশ্চিমের সাহিত্য মানেই যৌনতা।
সেটা গল্প হতে পারে,উপন্যাস হতে পারে, হতে পারে থ্রিলার কিংবা কবিতা ,এমনকি হরর কাহিনী। তাতে যৌনতা থকবেই। নারীর দেহের বর্ণনা ছাড়া পশ্চিমের সাহিত্য অচল-নিরস। পশ্চিমের চলচ্চিত্র জগত যেন দুনিয়া থেকে ভিন্ন কিছু। পশ্চিমী চলচ্চিত্র মানে অশ্লীল কিছু।
নগ্নতা আর বেহায়াপনার ছড়াছড়ি। হলিউড এসবের আখড়া। হল্যান্ডে যে সকল ছবি নির্মিত হয়,তাতে পর্ণগ্রাফীর কোন না কোন ক্লিপ থাকবেই। পশ্চিমী টিভি চ্যানেলগুলোয় যে অবাধ যৌনাচার প্রদর্শিত হয় তা যে কোন সুস্থ বিবেক,শুদ্ধ আত্মাকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলবেই। অথচ বিশ্বায়নের অশুভ পথচলায় তা আজ বিস্তৃত আমাদের মানচিত্র পর্যন্ত।
পশ্চিমী যৌনতার উন্মত্ততা কত ভয়াবহ তা মানুষের স্বাভাবিক চিন্তার বাইরে। পশ্চিমে মানুষের পরিচয় কেবল নারী আর পুরুষে। কে পিতা-মাতা,কে ভাই-বোন, আর কে স্বামী-স্ত্রী তার কোন বাছবিচার নেই সেখানে। পশ্চিমী বর্ণবাদী বিদ্বেষের নানা কথা প্রচলিত হলেও কেবল যৌনতায় নেই সাদা-কালোর কোন ব্যবধান। আছে নারী সমকামী,পুরুষ সমকামী,আছে বহুগামী।
এরা সবাই বাস করে পশ্চিমে। সেখানে তাদের যথার্থ স্বাধীনতা আছে। আছে পশু প্রবৃত্তির সমাজ ব্যবস্থা, আছে ন্যুড পার্ক, আছে ওপেন হাউস। তবু এরা মানুষ ,ওরা মোড়ল! হায়! মানবতার পোড়া কপাল!
তথ্যসূত্রঃ
১)The America I Have Seen- Sayyid Qutb
২)The Lofty Mountain- Shaheed Dr Sheikh Abdullah Yusuf Azzam
৩)জাহানে দিদাহ- শাইখুল ইসলাম আল্লামা তাকী উসমানী (দা.বা )
৪)The choice -Ahmad Deedat
৫)Dirty Truths-Michael Parenti
৬)A history of prostitution from antiquity to the present day-George Ryley Scott
৭)Woe Unto America!
8)Wikipedia
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।