আমার পরানে যে সুর বাজিছে ...............
অনেক আগে কোথাও পড়েছিলাম প্রথমবার সমুদ্র-দর্শনে সমুদ্রের জন্য উপহার নিয়ে যেতে হয়। সমুদ্রের পাড়ে এসে সেই উপহার তার পানিতে ভাসিয়ে দিতে হয়। এটা যেদিন পড়ি সেইদিনই ঠিক করে রেখেছিলাম আমি কোন উপহার নিয়ে যাব। আমি ভেবেছি সমুদ্র এর জন্য নিয়ে যাব একমুঠো এটেল মাটি। যেহেতু সমুদ্র কখনো এটেল মাটি দেখিনি তাই ভেবে রেখেছিলাম উপহারটা খুব চমৎকার হবে।
সম্প্রতি আমি কক্স-বাজার ঘুরে এলাম। বেশ বিশ্রী লাগল। যাওয়ার সময় তাড়াহুড়ায় মাটি নিয়ে যেতে মনে ছিল না। সমুদ্রের জন্য উপহার নিয়ে যাইনি বলেই হয়ত সমুদ্র আমাকে তার আসল রুপ দেখায়নি।
অনেকদিন আগে বুড়ি একবার বলেছিল তার কিছুই ভালো লাগছে না।
আমি সেইদিন তাকে বুদ্ধি দিয়েছিলাম তুমি মোবাইল বন্ধ করে কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে যাও। বাসা থেকে বের হবার সময় নিজেও ঠিক করবে না কোন দিকে যাবে। শুধু বের হবে কিছু টাকা নিয়ে এরপর যেদিকে মন চাবে চলে যাবে। দুই-তিন্দিন পর ফিরে আসবে –দেখবে মুড অন হয়ে গেছে।
বুড়িকে দেয়া বুদ্ধিটাই আমার নিজের খুব মনে ধরেছিল।
বাসায় আমার চাহিদার সাথে বাবা-মার চাহিদার একটা গোলমাল হয়েছিল। বাবা-মার ইচ্ছে ছেলে সরকারি চাকুরি করুক আর আমার ইচ্ছে মরে গেলেও সরকারি চাকুরি করব না। সরকারি একটা চাকুরি যখন আমি পেয়ে গেলাম তখন আমার সাথে বাবা-মার গোলমালটা চরমে উঠল। একদিন সকালে আমি বাসায় বেশ কাব্যিক-রূপক সম্বলিত চিঠি লিখে বের হয়ে আসলাম। কোথায় যাব আমি নিজেও জানি না।
মোবাইলটা বন্ধ করে পকেটে রেখে দিয়েছি।
সায়েদাবাদ এসে দেখি হানিফের একটা বাস ছাড়িছাড়ি করছে। আমি তাড়াতাড়ি কাউন্টারে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
” যাবে কোথায় এইটা? “
“ চট্টগ্রাম”
আমি টিকেট কিনে উঠে বসলাম। ঘুরে আসি চট্রগ্রাম। শহরটা ঘুরলাম।
দুপুরে খেতে গিয়ে দেখি রান্না ভালো লাগছে না। আমার নিজের বোকামি এটা। খাসির গোশত অর্ডার দেয়া ভুল হয়েছে। এরা পুরা রান্নাটা নষ্ট করেছে। ঠিক করলাম এই রান্না খেয়ে থাকা যাবে না।
কাছেই কক্সবাজার। সেখানে চলে যাই। যাভাবা সেই কাজ। চলে এলাম কক্স-বাজার। যেহেতু প্লান করে আসিনি- সমুদ্রের জন্য এটেল মাটি আর আনা হল না।
আমি রাতে এসে পৌছেছি। ভাবলাম রাতে সমুদ্র দেখে আর প্রথম সমুদ্র দর্শনটা নষ্ট করব না। সাথে করে জামা কাপড় কিছুই নেইনি। বার্মিজ মার্কেট থেকে তোয়ালে কিনলাম- বাটা থেকে স্পঞ্জ। সাবানও কিনে আনলাম।
কেননা সমুদ্রস্নান শেষে নাকি আবার রুমে ফিরে গোসল করতে হয়!
সকাল-বেলা ঘুম থেকে উঠেই দৌড়ে গেলাম বীচে। গিয়ে হতাশ হলাম খুব। সমুদ্রকে মোটেও চমৎকার মনে হল না।
মানুষের ভিড় আমি খুব একটা পছন্দ করিনা। মোটা-সোটা মেয়েগুলোর ভেজা জামা-কাপড় আমার চোখকে বেশ পীড়া দিচ্ছিল।
পাড় ধরে হাটা শুরু করলাম। একসময় মানুষদের ভিড়ের বাইরে চলে এলাম। এরপর বসে ছিলাম অনেকক্ষন সমুদ্র পাড়ে। অতি বিচিত্র কারনে আমার নগ্ন হয়ে সমুদ্রের পাড়ে বসে থাকতে খুব ইচ্ছে করছিল। এই প্রথম আমার মনে হল কক্সবাজারে nude বীচ না থাকাটা বিরাট একটা ক্ষতি।
একটা nude বীচ থাকলে আমার কক্সবাবাজার ভ্রমন আনন্দদায়ক হত।
সকালে সমুদ্র দেখে হতাশ হয়ে আমি ১১ টার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্য রওয়ানা দেই...
সবশেষে বলি সুন্দর একটা দৃশ্যের কথা। সমুদ্রে নেমে একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা গোসল করছে। যখনই একটা বড় ঢেউ আসে মেয়েটা ছেলেটা হাত শক্ত করে ধরে। আবার ঢেউ চলে গেলে হাতটাও ছেড়ে দেয়।
এই দৃশ্যটা আমি বহুক্ষন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছি। আমার ভালো লেগেছে। প্রেমের দৃশ্য দেখতে আমার ভালো লাগে। যদিও বুড়ির মতে আমি একধরনের pervert.
(ব্লগটা কেমন জানি এলোমেলো লিখলাম। হয়ত সমুদ্রের রাগ এখনো কমেনি।
তাকে নিয়ে একটা ভালো কিছুও লিখতে দিবে না)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।