আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রকৌশলী এবং রাজনীতি

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ১ টি উন্নয়নশীল দেশ। ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করে দেশটি। এদেশের স্বাধীনতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে তৎকালীন ছাত্রজনতা। যেকোন দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি নির্ভর করে সে দেশের সুশিক্ষিত ছাত্রসমাজের উপর। ১ টি দেশ তখনই উন্নয়নের দিকে ধাবিত হবে যখন দেশটি দূরদর্শী ছাত্র বের করতে পারবে।

কারন আজকের ছাত্র কালকের দেশকে জাতিকে সঠিক দিক দেখাবে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ১ টি গণতান্ত্রিক দেশ। ১৯৭১ সালে স্বাধীন হলেও এদেশের মানুষ সত্যিকারের স্বাধীনতা পায় ১৯৯১ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যখন প্রথম বারের মত জন গনের ভোটে সরকার গঠিত হয়। এর পর পর্যায়ক্রমে ৪ টি নির্বাচন এ দেশের মানুষ দেখেছে। নির্বাচিত করেছে তাদের পছন্দের দলকে এ দেশের সরকার হিসেবে।

গণতান্ত্রিক দেশ বলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা থাকে সরকারের হাতে। দেশ কে পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাও তাদের। তাই বাংলাদেশ কতটুকু উন্নয়ন আর অগ্রগতির দিকে ধাবিত হচ্ছে তার পুরোটাই নির্ভর করছে আমাদের নির্বাচিত রাজনীতিবিদদের উপর। আমাদের রাজনীতিবিদদের দূরদর্শী সিদ্ধান্ত আর সততার উপর দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। ১ টি দেশের আগ্রগতি তখনি তরান্বিত হবে যখন দেশটির নেতৃত্ব নিবে এই দেশের মেধাবি ছাত্ররা।

তাদের মেধার পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে তারা আমাদের দেশকে করে তুলবে সোনার বাংলা। এটাই হওয়ার কথা ছিল। যে সোনার বাংলার আশা নিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল, যে সোনার বাংলার আশা নিয়ে ১৯৭১ সালে বাঙ্গালির রক্তে লাল হয়েছিল এদেশের সবুজ প্রান্তর তার কত টুকু পূরণ হয়েছে, আমাদের শহীদদের কত টুকু স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছেন বার বার যারা ক্ষমতায় আসছেন আর যাচ্ছেন। স্বাধীনতার ৪০ বছর পর যখন এই হিসাব মিলাবেন তখন লজ্জায় নিজেই মাথা নিচু করে ফেলবেন যদি আপনি ১ জন বিবেকবান মানুষ হন। আমাদের দেশের সব চেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরা নিজেদের ভবিষ্যৎ হিসেবে বেছে নেয় প্রকৌশল, চিকিৎসা আর বৈজ্ঞানিক জীবনকে।

সেই আশায় তারা ভর্তি হয় এদেশের Engineering university, Medical College আর University গুলাতে। অনেক সাধনার ফলে তারা অবশেষে ভর্তি হয় এসব প্রতিষ্ঠানে। চোখে সপ্ন, দেশকে ১ দিন কিছু ১ টা দিব। এই মেধাবী চোখের সপ্ন নিয়ে খেলা করছে ১ অদৃশ্য সত্তা। সেটা আর কিছু না।

তার নাম "ছাত্র রাজনীতি"। স্বাধীনতার পূর্বকালীন সময়ে যে ছাত্র রাজনীতি আমাদের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছিল এখন সেই ছাত্র রাজনীতি আমাদের মেধাবীদের ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অতিসাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়অগুলোতে অসুস্থ রাজনীতির কিছু ঘটনা আজ বিবেককে নাড়া দেয়। ১ টাই প্রশ্ন দাড় করায়। "কোন দিকে যাচ্ছে আমাদের শিক্ষা সমাজ?" এদেশকে উন্নত দেশগুলোর সমপর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনায় প্রতিষ্ঠিত করা হয় ৪ টি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।

যদিও এসব বিশ্ববিদ্যালয় গুলা প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ স্বাধীনতার আগে। প্রথমে অনেক দিন এই প্রতিষ্ঠান গুলা তাদের academic কার্যক্রম পরিচালনা করে BIT নামে। ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী এবং চট্টগ্রামে ৪ টি BIT ছিল। পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে নাম হয় যথাক্রমে BUET, KUET, RUET, CUET. Engineering পড়ার সবচেয়ে উত্তম প্রতিষ্ঠান বলে সব student(যারা Engineer হতে চায়) এই প্রতিষ্ঠান সমূহকেই বেছে নেয়। কিন্তু অতিসাম্প্রতিক কিছু ঘটনা এই প্রতিষ্ঠান সমূহের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেয়।

RAG day উপলক্ষে concert এ প্রবেশ নিয়ে BUET এ যে ঘটনা ঘটে সেটা কখনও মেনে নেয়া যায় না। বড়দের সম্মান আর ছোটদের স্নেহ করাতো আমরা সেই ছোট বেলা থেকে শিখে এসেছি। কিন্তু যারা ঘটাল এই কাজ তাদের মানসিকতা নিয়ে আজ প্রশ্ন থেকে যায়। কতটা নিম্ন মানসিকতা হলে কিছুদিন পর বেরিয়ে যাবে এমন বড় ভাইয়ের হাত পা ভাঙ্গতে পারল। BUETianদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ফলে তাদের আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।

যা সত্যি দৃষ্টান্ত স্থাপন করার মত। এখন কথা হচ্ছে কোন ক্ষমতার বলে ১ টা ছাত্র তার থেকে ২ বছর seniorকে পেটাতে পারে। সেটা আর কিছু না এটা হচ্ছে রাজনৈতিক ক্ষমতা। আজ ছাত্র রাজনীতি আমাদের কিছু তরুণ মেধাবীদের এতটাই নীচের দিকে নিয়ে গেছে যে ছোট খাট issueতেও তারা রাজনীতির বলকে ব্যাবহার করছে। ছাত্র রাজনীতির আবির্ভাব হয়েছিল দেশের উন্নয়নে ছাত্রদের মেধাকে কাজে লাগানোর জন্য।

অথচ আজ এই ছাত্র রাজনীতি কিছু মেধাবী নামধারীদের দিয়ে সত্যিকার মেধাবীদের পঙ্গু করে দিচ্ছে। বহিষ্কারই কি এই সব নামধারী মেধাবীদের শেষ শাস্তি। এর চেয়েও কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত। পরের দিন ২ জানুয়ারী, KUET এ ঘটে আরেকটি ঘটনা। 31st night উপলক্ষে special খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় ক্ষমতাসীন দলের নাম নিয়ে campus উত্তপ্ত করে তোলে গুটি কয়েক নামধারী মেধাবী।

সাধারণ studentদের থেকে শুরু করে শিক্ষক কেও বাদ দেয় নি। যে ছাত্র এই কাজ করতে পারে তাকে মেধাবী বলে সাধারণ ছাত্রদের অপমান করতে চাই না। এরা কুয়েটের student না। KUET এর মত প্রতিষ্ঠানে এইসব জানোয়ার প্রকৃতির প্রাণী কিভাবে ভর্তি হল? কি অন্যায় ছিল, যারা শুধু এটুকু জানতে চেয়েছিল যে তাদের টাকা কোথায় গেছে। বর্তমানে যেখানে জবাবদিহিতা নিয়ে এত কথা সেখানে সামান্য দলীয় সমর্থনে এমন কাজ।

হায়ঃ আমরা এদের উপরেই নির্ভর করছি। আমরা স্বপ্ন দেখছি ১ দিন এরা দেশের ভার বহন করবে। সামান্য টাকার লোভ যারা সামলায় নি, সত্যকে চাপা দিতে যারা দলীয় অপক্ষমতাকে কাজে লাগায়, শিক্ষকদের উপর হাত তোলার মত জঘন্য কাজ করতে পারে, তারা কি করে দেশের দায়িত্ব নিয়ে জনগনের কোটি কোটি টাকা সামলাবে। তাদের জন্য আমরা চিরকালই দুর্নীতির দেশ হয়েই থাকব। কুয়েট বন্ধ করে দিয়ে সমস্যা কখনই চাপা দেয়া যাবে না।

আজ কুয়েট বন্ধ, কাল চুয়েট, পরদিন রুয়েট, এরপর বুয়েটে তারপর জগন্নাথ, তারপর ঢাকা ইউনিভার্সিটি পরে রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে দেখা যাবে আরেকটি নতুন কোন মারামারি। আগে ছাত্রদল করেছে, এখন ছাত্রলীগ করছে। আগামীতে করবে নতুন কোন দল, নয়তবা এদেরই ১ দল। আহত, নিহত হবে এদেশের সূর্যসন্তানেরা। কিছুদিন বন্ধ থাকবে ক্যাম্পাস, পরে আবার হবে।

শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলাতে যদি এমন হয়, যেখানে দেশের সবচেয়ে মেধাবীদের পদচারণা, তাহলে অন্য যে সব ক্ষেত্র গুলাতে অশিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত মানুষেরা আছে তারা কিভাবে দেশের অর্থখোর নেতাদের(সবাই না) হাত থেকে বাঁচবে?? এখনই যদি সরকার লাগাম টেনে ধরতে না পারে এর পরিনতি কতটা ভয়াবহ হবে তা কল্পনাতীত। Campus গুলাতে রাজনীতি থাকবে এটা স্বাভাবিক। তবে সেই রাজনীতি কোন মেধাবী ছাত্রের মেধাকে ধ্বংসাত্মক করে তুলবে সে রাজনীতি কারো কাম্য না। অবাক লাগে যখন medicalএর স্টুডেন্টের হাতে নির্মমভাবে মানুষ মারা যায়, যখন খবরের পাতায় দেখি Engineeringএর স্টুডেন্টের হাতে mechanics, laptop এর বদলে পিস্তল, যখন শুনি Universityএর সবুজ প্রান্তর রণক্ষেত্র। আমরা কখনই চাই না রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য ১ টা মেধাবীর প্রাণ যাক।

এক জন ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট ১ দিনে তৈরি হয় না। দিনের পর দিন রক্ত আর ঘাম কে মাটিতে মিশিয়ে এক একটা মেধাবী তৈরি হয়। তার পিছনে থাকে মা বাবার অপূরণীয় আশা, তার উপর থাকে দেশের দায়িত্ব। রাজনীতির ক্ষুদ্র সার্থকে রুপ দিতে যেয়ে এই মেধা গুলাকে নষ্ট হতে দেয়া যায় না। আমাদের সরকার আর বিরোধী উভয় দলকে শুধু এটুকুই বলার আছে, দেশের উন্নয়নের জন্য যদি ছাত্র সমাজকে রক্ষা করতে না পারেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছ থেকে আপনাদের কি পাওনা আছে?? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.