আমি অনেক ছোট একটা মানুষ। ১.
ক্যাম্পাসের এককোনায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল আমগাছটার নিচে বসে আনমনে ঘাসের মাথাগুলো দুই আঙ্গুলে ছিড়ছিল রাশেদ।
পড়ন্ত বিকেল, ক্যাম্পাস ছুটি হয়ে গেছে অনেক আগেই। শুধু কয়েকটা ঘরে না ফেরা জুটি বসে আছে এদিক ওদিক, কখনও দুয়েকটা দলছুট হয়ে পড়া পড়ুয়া ছাত্র, মাঠে বসে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সামনেই সেমিস্টার ফাইনাল।
দুনিয়ার কারো দিকে খেয়াল নেই তাদের।
রাশেদ একটু একলা থাকতেই পছন্দ করে। চুপচাপ হওয়ায় তেমন বন্ধু-বান্ধবও নেই তার। তবে বন্ধু-বান্ধবের অভাবও সে বোধ করে না। একলা একলা নিজের দুনিয়ায় বিচরন করাতেই ওর আনন্দ।
কিরে, এখানে কি করিস?
ঘাড় ঘুরিয়ে রাশেদ দেখল ফারিয়া দাঁড়িয়ে আছে পিছনে। যে অল্প দুএকটা মেয়ের সাথে রাশেদের সম্পর্কটা মোটামুটি ভাল, ফারিয়া তাদের একজন। মেয়েটার চেহারায় কি যেন একটা আছে, যতবার দেখে ততবারই রাশেদের বুকে হাতুড়ির বাড়ি পড়তে শুরু করে। দুই বছর হয়ে গেল এই ক্যাম্পাসে, অথচ আজ ও সেই প্রথম দিনের মতই অবস্থা ওর।
কিছু করি না।
মুখে একটা মৃদু হাসি টানে রাশেদ।
আমি তোকে খুজছিলাম। বলে রাশেদের পাশে ধপাস করে বসে পড়ে ফারিয়া।
কেন?
বলব। আগে আমার কিছু প্রশ্নের জবাব দে তো।
অবাক হয় রাশেদ। কি প্রশ্ন?
ফারিয়া কোন কথা বলে না। আরও অবাক হওয়ার পালা রাশেদের। এবার ভাল করে কাছ থেকে ফারিয়ার মুখের দিকে তাকায় ও। একটু লাল হয়ে আছে ফারিয়ার মুখ, অল্প অল্প যেন হাপাচ্ছেও।
ব্যাপারটা কি?
আমাকে তোর কেমন লাগে বল তো?
ভ-ভালই তো লাগে। রাশেদ বুঝতে পারে ওর বুকের ভিতর সেই পুরনো হাতুড়ির বাড়ি দ্রুত হচ্ছে।
হুম। ভাল লাগলেই ভাল।
এই কথা জিজ্ঞেস করলি কেন?
ফারিয়া চুপ।
রাশেদ বুঝতে পারে এখন ফারিয়া কোন কথা বলবে না। একটু মুডি এই মেয়েটার আগা-মাথা কিছু বুঝতে পারে না সে। তাই আপাতত বোঝার চেস্টা বাদ দিয়ে নিজেও চুপ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ।
রাশেদ।
কিছুক্ষণ পরে মৃদুস্বরে ডাকে ফারিয়া।
বল।
তুই কি জানিস, একজন তোকে অনেক ফিল করে?
কি বলবে বুঝতে পারে না রাশেদ।
সেই মানুষটার সবকিছুতে আস্তে আস্তে তুই মিশে যাচ্ছিস। তোকে ছাড়া সে এখন কিছুই ভাবতে পারে না।
কে সে? সুমি? বলে রাশেদ, একটু ফাজলামি করে।
তোর তাই ধারনা?
তাহলে? নিশ্চয় ফারজানা? আমি জানতাম, ও আমার জন্যে ফিদা। তোকে দিয়েই বলাল, নিজে বলতে পারল না?
ধুর ছাগল। তুই ছাগল জানতাম, তবে এত বড় রামছাগল এইটা জানতাম না। আচ্ছা, একটা ক্লু দেই।
তাও যদি ধরতে না পারিস তবে সামনের কোরবানির হাটে সিওর তোকে বিক্রি করে দেব।
আচ্ছা দিস। ক্লুটা কি?
সে এখন তোর পাশেই বসে আছে।
রাশেদের মনে হয় সে ভুল শুনেছে। মাথার ভেতর কেমন ফাকা ফাকা লাগে তার।
কি বললি?
কিছু না। থাক, আমি গেলাম।
যেন কিছুই হয় নি এমন একটা ভাব নিয়ে উঠে দাঁড়ায় ফারিয়া। সে যে একটু আগে রাশেদের পুরো অস্তিত্তে আর পৃথিবীতে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে, কে বলবে?
সামনে একটা রিকশা দেখে ফারিয়া ডাক দেয়, মামা যাবেন? রিকশা দাঁড়িয়ে পড়ে।
ফারিয়া দাড়া, শোন।
ফারিয়া দাঁড়ায় না, রিকশায় উঠে চলে যায়। রাশেদ আবার ডাক দেয়, ফারিয়া!
২.
ধীরে ধীরে ঘুম ভাঙ্গে রাশেদের। ঘুম ভাংতেই লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসে ও। মুখের কোনে মৃদু হাসি ঝুলে আছে ওর, দিনটা মনে হচ্ছে অন্যান্য দিনের চেয়েও বেশি উজ্জ্বল।
(পরবর্তী পর্বে সমাপ্য)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।