শহীদের খুন লেগে, কিশোর তোমার দুই হাতে দুই, সূর্য উঠেছে জেগে। -------হাসান হাফিজ একটি দেশের উন্নয়ন নির্ভর করে ঐ দেশের জনগণের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উপর। অশিক্ষিত এবং অসুস্থ, রোগাক্রান্ত মানুষ দিয়ে উন্নয়ন অসম্ভব। রোগাক্রান্ত মানুষ পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য বোঝাস্বরুপ। দেশকে দক্ষ জন-সম্পদে সমৃদ্ধ করতে হলে শিশুর সুষ্ঠু বৃদ্ধি ও সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করতে হবে।
বিশেষ করে শূন্য থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুর অকালমৃত্যু রোধ করতে হবে। তাই বাংলাদেশকে একটি সুস্থ রোগমুক্ত জাতিহিসেবে গড়ে তুলতে সরকারের সাথে সাথে আমাদের সকলেরই সচেতন হতে হবে।
বাংলাদেশে বিদ্যমান কিছু সংক্রামক হলোঃ ধনুষ্টংকার, ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, পোলিও, হাম, যক্ষ্মা, হেপাটাইটিস -বি, হেমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা । এক বৎসরের কম বয়সের শিশুদের এগুলো অত্যন্ত মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করে। এই সবকটি রোগই টিকাদানের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
তাই বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ একটি কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে আসছে। তা হলো সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী (Expanded Programme on Immunization) বা EPI । EPI-এর মাধ্যমে উপরিউক্ত ৮টি সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব এবং এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগ সফল বলা যায়। EPI-এর পাশাপাশি বাংলাদেশকে পোলিওমুক্ত রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার জাতীয় টিকা দিবস (NID) পালন করছে ।
পোলিও নির্মূলে সফলতাঃ
বাংলাদেশ পোলিও নির্মূলের ক্ষেত্রে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের অন্যান্য দেশের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে।
২০০৬ সালের ২২ নভেম্বরের পর বাংলাদেশে কোন পোলিও রোগী পাওয়া যায়নি। তবুও বাংলাদেশকে পোলিও মুক্ত দেশ ঘোষণা করা হয়নি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কারণে। ভারত এখনও পোলিও মুক্ত হতে পারেনি। তাই বাংলাদেশে পোলিও সংক্রমণের পুরো ঝুঁকি রয়েই গেছে। দীর্ঘ এক দশক পর ২০১০ সালে চীনে পুনরায় পোলিও রোগ ধরা পড়েছে ।
তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বলেছে আশপাশের দেশগুলোর পোলিও রোগের অবস্থা পরপর ৩ বছর শূন্যের কোঠায় থাকলে বাংলাদেশ পোলিও নির্মূলের সনদ পাবে। সনদ না পাওয়া পর্যন্ত চলবে পোলিও টিকা দান কর্মসূচি।
২০তম জাতীয় টিকা দিবস-২০১২
০-৫৯ মাস বয়সী সকল শিশুকে ২ ফোঁটা পোলিও টিকা খাওয়ানো জাতীয় টিকা দিবসের উদ্দেশ্য । পোলিওমুক্ত অবস্থা বজায় রাখতে দেশে এ বছর ৭ জানুয়ারি ও ১১ ফেব্রুয়ারি ২০ তম জাতীয় টিকা দিবস পালন করতে যাচ্ছে সরকার। এবারের লক্ষ্যমাত্রা- ৫ বছরের কম ২ কোটি ২০ লাখ শিশুকে টিকা খাওয়ানো ।
৭ জানুয়ারি যেসকল শিশু টিকাগ্রহণ করতে অসমর্থ হবে পর্যায়ক্রমে তাদেরকে ৮ হতে ১১ জানুয়ারি অনুসন্ধান করে টিকা খাওয়ানো হবে।
***৭ই জানুয়ারি ২০১২(২৪ পৌষ ১৪১৮ বাংলা) ২০ তম জাতীয় টিকা দিবসের ১ম রাউন্ড।
কোন অবস্থাতেই আপনার শিশুকে টিকা খাওয়াতে ভুলবেন না । শিশুকে টিকা খাওয়ানোর জন্য এদিন টিকাদান কেন্দ্র সকাল ৮টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ভ্রমণরত শিশুদের জন্য রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চ কিংবা ফেরীঘাট ও বিমান বন্দরেও টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
নবজাত শিশু কিংবা অসুস্থ শিশুকেও এদিন পোলিও টিকা খাওয়াতে হবে।
প্রথম রাউন্ডে ৫ বছরের কম বয়সী সকল শিশুকে ২ ফোঁটা পোলিও টিকা খাওয়ানো হবে। এছাড়া ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী সকল শিশুকে একটি নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল ও ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী সকল শিশুকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।
দ্বিতীয় রাউন্ডে ৫ বছরের কম বয়সী সকল শিশুকে ২ ফোঁটা পোলিও টিকা খাওয়ানো হবে। এছাড়া ২৪ থেকে ৫৯ মাস বয়সী সকল শিশুকে একটি কৃমি নাশক বড়ি খাওয়াতে হবে।
কোন অবস্থাতেই এক ফোঁটা পোলিও টিকা খাওয়ানো উচিত নয় ।
কি হতে পারে যদি কেউ পোলিও টিকা, ভিটামিন এ ক্যাপসুল বা কৃমিনাশক ট্যাবলেট না খায়
*** পোলিও টিকা না খাওয়ালে শিশুর এক বা একাধিক অঙ্গ অবশ হয়ে যেতে পারে। ফলে আক্রান্ত অঙ্গ দিয়ে স্বাভাবিক কাজ করতে পারবে না । আক্রান্ত অঙ্গের মাংসপেশী চিকন হয়ে যেতে পারে । শ্বাস প্রশ্বাসের পেশী অবশ হয়ে শ্বাস বন্ধ হয়ে শিশু মারাও যেতে পারে।
***ভিটামিন- এ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি কমায় । ভিটামিন -এ এর অভাবে রাতকানা রোগসহ অন্ধত্বও ঘটতে পারে ।
*** কৃমি আক্রান্ত হলে শিশু অপুষ্টিজনিত রোগে ভোগে এবং মেধা বিকাশে বিঘ্ন ঘটতে পারে ।
পোলিও আক্রান্ত শিশু
আপনি কি করবেন
--আপনি জানলেন সকলকে জানান ও আপনার শিশুকে টিকাদান কেন্দ্রে সময়মতো নিয়ে আসুন ।
--আপনার বাসায় বসবাসকারী প্রতিটি শিশু যাতে পোলিও টিকা, ভিটামিন এ ক্যাপসুল বা কৃমিনাশক ট্যাবলেট খায় তা নিশ্চিত করুন ।
--বাদ পড়া শিশুদের টিকাদান কেন্দ্রে আনতে সহায়তা করুন ।
--আপনার এলাকার টিকাদান কর্মীকে সহায়তা করুন ।
--টিকা দেয়ার পর কোন অসুবিধা দেখা দিলে শিশুকে সাথে সাথে স্বাস্থ্যকর্মী বা নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে আসুন । মনে রাখবেন সকল অস্থায়ী ও স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে শিশুর যে কোন অসুবিধা মোকাবিলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আছে ।
জাতীয় টিকা দিবস (NID) একটি জাতীয় কার্যক্রম ।
আপনার আমার সকলের অংশগ্রহনই এই কার্যক্রমের সফলতার মূল চাবি কাঠি । মনে রাখবেন আপনার এলাকার একটি শিশু পোলিও টিকা না খেয়ে থাকলে অন্য শিশুরাও পোলিও রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থেকে যাবে । তাই আসুন এই কর্মসূচী সফল করতে আমাদের সকল শিশুর টিকা পাওয়া নিশ্চিত করি ।
পোলিও নির্মূলে অভিযান
তথ্যসূত্র:
১.জাতীয় EPI সহায়িকা
২.প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, পৃষ্ঠা.৩৩, ফ্লিপচার্ট, এপ্রিল-১৯৯২,
৩. UNICEF-Bangladesh
৪.জাতীয় ই-তথ্যকোষ
***************************************************
>>>>>>নির্দিষ্ট সময়ে ৬টি টিকা দিন । আপনার শিশুকে বাঁচান।
নবজাত শিশুকে শাল-দুধ সহ মাতৃদুগ্ধ পান করান। মায়েদের স্তন-ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে বাঁচান। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।