আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একাত্তরের ১০টি তারিখ

খুবই সাধারন মানুষ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একাত্তরের প্রতিটি দিনই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি দিবসই রক্তের অক্ষরে লেখা। তার পরও কোনো কোনো তারিখ ত্যাগে, আত্মদানে ও গৌরবের মহিমায় হয়ে ওঠে সমুজ্জ্বল। একটি তারিখ পরিণত হয় সংগ্রামের প্রতীকে, শ্রদ্ধা ও বিজয়ের অবিনাশী স্মারকে। একাত্তরের এ রকমই ১০টি তারিখ নিয়ে প্রথম আলোর স্বাধীনতা দিবস সংখ্যাটি সাজানো হয়েছে—৭ মার্চ, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ; ২৬ মার্চ, স্বাধীনতা ঘোষণা; ১৭ এপ্রিল, মুজিবনগর সরকার গঠন; ১১ জুলাই, সেক্টর কমান্ডারদের বৈঠক; ১ আগস্ট, দ্যকনসার্ট ফর বাংলাদেশ; ৩ ডিসেম্বর, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ; ৭ মার্চ ১৯৭১ রমনার রেসকোর্স ময়দানে সেদিন অপরাহ্নের এক অলৌকিক ভাষণে অবগাহন করে একটি জাতি নবজন্ম লাভ করেছিল।

সাতই মার্চের ভাষণটি ধর্ম-বর্ণ-বয়স-লিঙ্গনির্বিশেষে সব বাঙালিকে জয় বাংলার সৈনিকে রূপান্তরিত করেছিল। বাঙালি জাতির অনন্ত প্রেরণা বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণটি বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের ইতিহাসে অনির্বাণ-শিখার মতো। ৪০ বছরের ব্যবধানে এটি আজও তাজা, প্রাসঙ্গিক এবং একইভাবে উদ্দীপনাময়। এটি এমন এক অমর-কথা, যার ভূমিকা ও অবদান জাতির জীবনে এখনো ফুরোয়নি। যেন এটি এক কল্পতরু—জাতির প্রয়োজনে সংগ্রামের প্রেরণা-পুষ্টি জোগাতে সদাই প্রস্তুত, সদাই সক্ষম।

এই ভাষণটি শোনা যেকোনো বাঙালির জীবনে অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। ৭ মার্চ কেন গুরুত্বপূর্ণ ৭ মার্চের যে সভা, তা নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। আমার সৌভাগ্য যে সেদিন আমি মঞ্চে ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর কর্মী হিসেবেও, এবং একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবেও। বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনী এজেন্টও ছিলাম আমি।

আমি ঢাকা মহানগরের পুরো নির্বাচনে টঙ্গী থেকে নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলাম। তিনি দুটো আসন থেকে নির্বাচিত হলেন। ঢাকার পুরোনো শহর ও তেজগাঁও-টঙ্গী। রেসকোর্স ময়দান থেকে সমস্ত ইন্দ্রিয় তখন একটা বাক্য শোনার জন্য আকুল বঙ্গবন্ধু কী বলবেন ৭ মার্চে, এ নিয়ে সর্বত্র ছিল উৎকণ্ঠা, জিজ্ঞাসা। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত, সৈন্যরা মিছিলে গুলি করে মানুষ মারছে।

পরিস্থিতি এমন জায়গায় চলে গেছে, পেছনে ফেরার আর উপায় নেই। আমরা, আর্ট কলেজের শিক্ষক আর ছাত্ররা তো সেই ষাটের দশক থেকেই স্বাধিকার আন্দোলনের সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত হয়ে পড়েছি। আমরা ছিলাম সংস্কৃতি সংসদের কর্মী। ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে ছিলাম সরাসরি যুক্ত। এমন চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা আর কিছু হতে পারে না ৭ মার্চ আর্ট কলেজে বসেই দেখেছি, সকাল থেকেই রেসকোর্স ময়দানে দলে দলে লোক জড়ো হচ্ছে।

এ রকম জনস্রোত, যেন সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ছে রেসকোর্সে। একেকটা ভিন্ন ভিন্ন ঢেউ আসছে আর মিশে যাচ্ছে অন্যান্য ঢেউয়ের সঙ্গে। কোন ঢেউ আগের, কোনটা পরের, তা বোঝার আর উপায় থাকছে না—যেন একটাই সত্তা। কারও হাতে লাঠি, ফেস্টুন, লগি। বিভিন্ন চেহারা-শ্রেণী-চরিত্রের মানুষ।

কেউ হেঁটে আসছে, কেউ রিকশায়, কেউ... স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো একটি কবিতা লেখা হবে, তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে: ‘কখন আসবে কবি?’ এই শিশু-পার্ক সেদিন ছিল না, এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না, এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না। তা হলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি? তা হলে কেমন ছিল শিশু-পার্কে, বেঞ্চে, বৃক্ষে, ফুলের বাগানে ঢেকে... বিস্তারিত সেই বিকেলের গল্প বাইরে একটা কোকিল ডেকে উঠল। দক্ষিণের জানালা দিয়ে বাতাসও আসছে ঘরে, বসন্তের বিখ্যাত সমীরণ। আমের গাছে মুকুল এসেছে নাকি! আজকাল বাতাসে কেবল বারুদের গন্ধ, টায়ার পোড়ানোর গন্ধ। এর মধ্যে হঠাৎ করে এক ঝলক বসন্ত বাতাস শেখ মুজিবের শরীরে একটু যেন শান্তির স্পর্শ বুনে দিল।

তাঁর মনে হলো, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় তাঁদের বাড়ির সামনের ছোট্ট খালটার পাশে আমগাছের নিচে এমনই গন্ধ লেগে থাকত। ২৬ মার্চ ১৯৭১ হাজার বছরের সংগ্রাম পেছনে ফেলেজাতির জীবনে নেমে এল ২৫ ও ২৬ মার্চ। দুঃস্বপ্ন, স্বপ্ন ও সম্ভাবনার অভাবনীয় সংমিশ্রণ ঘটল বাঙালির জীবনে। পাকিস্তানিদের লক্ষ্য ছিল বাঙালির জাতিসত্তা নিশ্চিহ্ন করা। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডাক দেন স্বাধীনতার।

তবে দুঃখজনকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়েরাজনীতিতে বিতর্ক চলছে। ঐতিহাসিক দলিলপত্র সাক্ষ্য দেয়, মুজিবই স্বাধীনতার ঘোষক। জিয়াউর রহমান তাঁর নামে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।