টিভিতে দারুণ একটা নাটক দেখাচ্ছে। রেহনুমা খুব মন দিয়ে দেখছে সেটা। কাহিনি অনেকটা এই রকম স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কর্মজীবী। এদিকে টিন এজার সন্তানটি বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে উচ্ছন্নে চলে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় স্বামী স্ত্রীকে চাকরি ছেড়ে সন্তানের দিকে মনোযোগ দিতে বলে।
‘’তোমার জন্যই আজ ছেলের এই অবস্থা! ছেলের কোন খোঁজ খবর কি তুমি রাখো?’’ স্ত্রীও তাকে পালটা জানিয়ে দেয়, ‘’তোমার কথায় আমি কেন চাকরি ছেড়ে দেব? আমার চাকরি কি তুমি দিয়েছিলে? চাকরি যদি ছাড়তে হয়, তুমি ছেড়ে দাও। আমার আয় তোমার চেয়ে বেশি। আমার একার আয়েই সংসার ভাল চলবে। বাবা হিসেবে কি তোমার কোন দায়িত্ব নেই? আমি যদি বলি, তোমার জন্যই আজ ছেলের এই অবস্থা? ছেলের কোন খোঁজ খবর কি তুমি রাখো? ‘’ চরম এক দ্বন্দ্বমুখর অবস্থা। শেষ পর্যন্ত কী হয় কী হয় উত্তেজনা।
কিন্তু সেই উত্তেজনার গায়ে ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দিয়ে চলে গেল বিদ্যুৎ।
অন্ধকারে মন খারাপ করে না থেকে মোবাইলটা নিয়ে ফেসবুক খুলে বসে পড়ল রেহনুমা। দেখে ওর এক বন্ধু একটি ছবি শেয়ার করেছে। ছবিতে এক লোক প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তাতে লেখা ‘’ Husband is not an ATM machine’’
ছবিটাতে অন্য বন্ধুরা প্রচুর লাইক আর কমেন্ট করে অস্থির করে ফেলছে। রেহনুমা দেখে ছবিতে একজন কমেন্ট করেছে, ‘’একদল মানুষ দিয়ে আনন্দ পায়, একদল নিয়ে।
আমি প্রথমটার দলে। আমার স্বামী অনেক ডলার আয় করে। কিন্তু আমি ওর কাছ থেকে এক পয়সাও নিই না। উলটো ওকে দিই। আমি আমার স্বামীর চেয়ে ধনী।
আমি অন্য মেয়েদেরও সব সময় বলি রোজগার কর, সাবলম্বী হও। ‘’ কথাটা পড়ে হাসি পায় রেহনুমার। ওর কাজের বুয়াটাও তার স্বামীর চেয়ে ধনী। বুয়ার জামাই বেকার, গাঞ্জাখোর। বউয়ের টাকায় চলে, আবার উলটো বউকে মারধোর করে।
ভাবখানা এমন যেন লাট সাহেবের বেটা। শুধু কাজের বুয়ার কথাই বা ও ভাবছে কেন? ওর কাজিন পপি আপুকে তো শেষ পর্যন্ত চাকরি ছেড়েই দিতে হল, লোভী স্বামীর হাত থেকে নিস্তার পেতে। রেহনুমা ভাবনায় পড়ে যায়, পপি আপু চাকরি ছেড়ে দিল, তবু এই তথাকথিত সমাজ সংস্কারের কারণে ঐ পাষণ্ড স্বামীকে ছাড়তে পারল না! ঐ কাজের বুয়া আর উচ্চ শিক্ষিত পপি আপুর তাহলে পার্থক্য কোথায়? মেয়েরা কি আসলেই সাবলম্বী হতে পারে? যাক এগুলো নিয়ে ও আর ভাববে না। আবার মন দিল ফেসবুকের ঐ ছবিতে। আরো কমেন্ট এসেছে।
আরেকজন খুব মজার একটা কমেন্ট করেছে। ‘’গৃহিণীদের কাছেই শুধু স্বামীরা এটিএম মেশিন। ওরা স্বামীদের কাছ থেকে শাড়ি গয়নার জন্য অযাতিত ডিমান্ড করে। একজন আরেকজনের সাথে শাড়ি গয়নার প্রতিযোগিতা করে। আর যেসব মেয়েরা নিজেরা আয় রোজগার করে, তারা ওদের স্বামীর কাছে শুধু এটিএম মেশিনই না, কফি মেশিন, ওয়াশিং মেশিন, ডিশ ওয়াশিং মেশিন, কুকিং মেশিন, আরো অনেক মেশিন।
‘’ রেহনুমারও একটা কমেন্ট করতে ইচ্ছে করে। ও লিখে দেয়, ‘’ভার্সিটিতে আমাদের এক স্যার বলতেন, যে স্বামীকে দিয়ে রান্না করায় সে খারাপ না। বরং যে স্বামীর টাকায় শাড়ি কিনে আর পরচর্চা করে বেড়ায় ‘অমুক তার স্বামীকে দিয়ে রান্না করায়’ সে খারাপ। ‘’ কমেন্ট করা মাত্র বিদ্যুৎ চলে এলো। রেহনুমা টিভি খুলে দেখে ঐ নাটক শেষ।
লোড শেডিং এর যন্ত্রণায় হেলাল হাফিজের লাইন ক’টা ওর মনে পড়ে যায়,
‘’দিচ্ছো ভীষণ যন্ত্রণা,
বুঝতে কেন পারছ না ছাই,
মানুষ আমি, যন্ত্র না। ‘’
৩১, ডিসেম্বর, ২০১১ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।