আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিলিভ ইট অর নট!!! যৌনবাণিজ্যে ছেলেশিশুদেরও জড়ানো হচ্ছে

১১ বছরের শিশু বেল্লাল (ছদ্মনাম), নয় বছর বয়সেই বাড়ি থেকে পালিযে আসে। সে থাকছে কমলাপুর রেল স্টেশনে। স্টেশনে আশ্রয় নেওয়ার পরপরই এক গার্ড কর্তৃক যৌন হয়রানির শিকার হয় শিশুটি। বেল্লালের দাবি, সমকামী না হয়েও তাকে যৌনসম্পর্ক গড়তে বাধ্য করা হয়েছে। স্টেশনের আরো অন্তত আটটি পথশিশুর সঙ্গে কথা বলে বেল্লালের কথার সমর্থন পাওয়া যায়।

বেল্লালের ভাষ্য, “আমি এই স্টেশনের অন্তত ১০০ জনরে চিনি, যারা ট্যাকা নিয়া এই কাম করে। ” এই শিশুদের কেউ হকার, কেউ বাদাম বিক্রি করে, কেউবা অন্য কোনো কাজ করেন; অনেকটা বাধ্য হয়ে তারা যৌনবাণিজ্যে ঢুকে পড়েছে। আর এই অর্থের পুরোটা তাদের হাতে আসে না, তার নিয়ন্ত্রণ অন্য হাতে। মেয়েশিশুদের নিয়ে যৌনবাণিজ্যের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকলেও ছেলে শিশুরাও যে ঝুঁকিমুক্ত নয়, সে চিত্র বেসরকারি গবেষণায় উঠে এসেছে। ২০১১ সালে ইউনিসেফের চালানো একটি গবেষণার সূত্র ধরে জাতিসংঘ সংস্থাটির শিশু নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ শাবনাজ জেহরিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছেলেশিশুদের যৌন নির্যাতন এবং যৌনবাণিজ্যে যুক্ত হওয়ার মতো আশঙ্কার বিষয়টি গবেষণায় প্রকাশ্য হয়, যা এর আগে সেভাবে চিহ্নিত করা যায়নি।

” তবে ২০০৬ সালে থাইল্যান্ডভিত্তিক একপ্যাট (ঊঈচঅঞ ওঘঞ.) ইন্টারন্যাশনাল এবং ইনসিডিন বাংলাদেশ পরিচালিত ‘দি বয়েজ অ্যান্ড দ্যা বালিজ : অ্যা সিচুয়েশনাল অ্যানালিসিস রিপোর্ট অন প্রস্টিটিউশন অব বয়েজ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি গবেষণায় দেখা যায়, দেশের পথশিশুদের ৮০ শতাংশ ছেলে, আর এর বেশিরভাগই কোনো না কোনোভাবে যৌনবাণিজ্যে সম্পৃক্ত। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৭৮৭টি শিশুর ওপর চালানো এই গবেষণায় দেখা যায়, এই সব শিশুদের ২৯ দশমিক ২৯ শতাংশ শিশু সিফিলিস এবং ২৯ দশমিক ২৯ শতাংশ গনোরিয়ায় ভুগছে। তবে আক্রান্ত ৯৬ শতাংশই কোনো ধরনের চিকিৎসা নেয় না। ইউনিসেফের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপরাধী একটি চক্রের নিয়ন্ত্রণে থাকছে এই পথশিশুরা। যৌনবাণিজ্যের পাশাপাশি তাদের মাদক ও অস্ত্র পাচার, চুরিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হচ্ছে।

২০০৫ সালে পরিচালিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর জরিপ অনুযায়ী, ঢাকায় পথশিশুর সংখ্যা ২ লাখ ৪৯ হাজার ২০০। সারা দেশে এই সংখ্যা ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৮। তবে ঢাকায় পথশিশুর সংখ্যা এখন চার থেকে সাড়ে ৪ লাখ, তা বলছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শিরিন শারমিন চৌধুরী। শিশুদের যৌনবাণিজ্যে যুক্ত হওয়া প্রতিরোধে সরকারের কী ব্যবস্থা- জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকার এই বিষয়ে অবগত আছে। যারা শিশুদের এইরকম কাজে (যৌনবাণিজ্যে) নামাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনগত বিধানও আছে।

” শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়ণের বিষয়ে কাজ করে আসা ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মুশতাক আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কমলাপুর, সদরঘাট, সোহরাওর্য়ার্দী উদ্যানসহ বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড বা জনবহুল এলাকায় অপরাধী চক্র এই পথশিশুদের নিয়ন্ত্রণ করে। “বয়স্ক দুটি মানুষ যদি সমকামে মিলিত হয়, সেটা একটা ব্যাপার। কিন্তু দালাল আর তাদের সহযোগীদের নিয়ন্ত্রিত এই শিশুদের খদ্দের পথের বয়স্ক মানুষ থেকে হোমোসেক্সুয়াল কমিউনিটি, ইনফর্মাল ওয়ার্ক সেক্টরের লোকজন, সবাই। এই শিশুরা শুধুই শিকার,” বলেন তিনি। কীভাবে এরা শিকার হয়- বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মুশতাক বলেন, “দালালরা কিছু সুবিধা দিয়ে এদের আটকে ফেলে।

যেমন বড় অঙ্কের অর্থ সাহায্য কিংবা থাকার জায়গা। সে ক্ষেত্রে টাকা শোধ না হওয়া পর্যন্ত কিংবা থাকার কোনো স্থান না হওয়া পর্যন্ত শিশুটির মুক্তি থাকে না। ” ইউনিসেফের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যৌনবাণিজ্যের এই দিকটিতে সব ক্ষেত্রে অর্থ মূল বিষয় থাকে না। এক বেলা খাওয়া, থাকা, কাজের সুবিধা দিয়েও এই শিশুদের এই পথে টেনে নেওয়া হয়। মুশতাক জানান, যৌনসম্পর্কের ব্যথা ও লজ্জা ভুলতে এই সব পথশিশুরা বিভিন্ন ধরনের মাদক নেয়।

পরে এই শিশুরা একইসঙ্গে পাপবোধ এবং পরিচয় সঙ্কটে ভুগতে থাকে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘অপরাজেয় বাংলাদেশ’ পরিচালিত চাইল্ড হেল্প লাইনের প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর এবং সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত পিকার প্রকল্পের মাস্টার ট্রেইনার চৌধুরী মো. মোহাইমেন বলেন, “যৌনকর্মী হিসাবে কাজ করতে বাধ্য হওয়ার পর শিশুরা নানা মানসিক টানাপোড়েনে ভোগে, নিজের প্রতি ঘৃণা বাড়ে। তখন যে কোনো অপরাধে তাদের যুক্ত করা সহজ হয়ে যায়। ” ইউনিসেফের বিশেষজ্ঞ শাবনাজ জেহরিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঢাকার বাইরে বিশেষত চট্টগ্রাম, বরিশালের মতো বন্দরপ্রধান এলাকায়ও এই ধরনের যৌনবাণিজ্য দেখা যায়। তবে ছেলেশিশুদের নিয়ে যৌনবাণিজ্যের বিষয়টি সামাজিক কারণেই আড়ালে থাকছে বলে মনে করছেন ইনসিডিন কর্মকর্তা মুশতাক।

তিনি বলেন, “আমাদের দৈনন্দিন চিন্তা-ভাবনা, আলোচনায় সমকামিতা বিষয়টি নেই, বিষয়টি ধর্মীয়ভাবেও স্পর্শকাতর। ছেলেশিশু যে এই রকম নির্যাতনের শিকার হতে পারে তা অনেকের মাথায়ই আসে না। ” ইউনিসেফের শাবনাজ মনে করেন, ছেলেশিশু নির্যাতনের এই চিত্রটি আশঙ্কার দিকে এগোলেও এ নিয়ে সরকারের যথাযথ মনোযোগ নেই। তবে প্রতিমন্ত্রী শিরিন বলেন, পথশিশুদের উন্নয়নের জন্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। “দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার রয়েছে।

যেখান থেকে নির্যাতনের শিকার সব নারী ও শিশুকে সহায়তা দেওয়া হয়,” বলেন তিনি। ইনসিডিনের নির্বাহী পরিচালকের পরামর্শ, পথশিশুদের নিরাপদ রাত কাটানোর ব্যবস্থাটিই আগে করতে হবে। তাহলে সমস্যা কিছুটা হলেও কমবে। মামুনুর রশীদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক (বিডিনিউজ ২৪ থেকে কপি পেস্ট ) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.