আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারে বৌদ্ধদের টার্গেট মুসলমানরা

শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় বৌদ্ধভিক্ষুদের নেতৃত্বে শত শত মানুষ মুসলিমদের মালিকানাধীন পোশাকের দোকানে হামলা চালিয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অনেকে। বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে বলে বিবিসি জানিয়েছে। ধারণ করা ছবিতে দেখা গেছে, বৌদ্ধভিক্ষুরা কলম্বোর একটি জনপ্রিয় পোশাক কেন্দ্রের মুসলিম মালিকানাধীন বিভিন্ন দোকানে পাথর ছুড়ছে। পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় এ অঞ্চলে বসবাসরত অনেক মুসলিম বাসিন্দাই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। মুসলিমদের জীবনধারার বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার কট্টরপন্থী বৌদ্ধদের আন্দোলনের ডাক দেয়ার ধারাবাহিকতায় এ হামলা চালানো হয়েছে। এ হামলার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিতে মুসলিমদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আলোচনার জন্য আইনমন্ত্রী রউফ হাকিম প্রধানমন্ত্রীর কাছে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন। রউফ হাকিম নিজে একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করার চার বছর পর দেশটিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটল।

শ্রীলঙ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। দেশটির তিক্ত গৃহযুদ্ধের সময় থেকেই তামিল ভাষাভাষী সংখ্যালঘু মুসলিমদের নিম্ন মর্যাদায় জীবনযাপন করতে হচ্ছে। সংখ্যায় তারা দেশটির মোট জনসংখ্যার ৯ শতাংশ। কিন্তু এখন কট্টর আদিবাসী বা গোত্রীয় সংখ্যাগরিষ্ঠরাও তাদের হামলার লক্ষ্যে পরিণত করছে। কলম্বোয় বিবিসির প্রতিবেদক চার্লস হ্যাভিল্যান্ড বলেন, বৌদ্ধভিক্ষুদের নেতৃত্বে বিক্ষুব্ধ প্রায় ৫শ’ মানুষ চিত্কার করে পোশাকের দোকানের মুসলিম মালিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও নাজেহাল করে।

এ সময় দায়িত্বরত সাংবাদিকদেরও তারা হুমকি-ধমকি দেয়। হামলার এ ঘটনায় ৫-৬ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন ক্যামেরাম্যানও রয়েছেন, যার শরীরে সেলাই দিতে হয়েছে। পুলিশ শুরুতে এ ঘটনায় দর্শকের ভূমিকা পালন করলেও পরে এটি ছড়িয়ে পড়ার মুহূর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। পুলিশের মুখপাত্র বুদ্ধিকা সিরিওয়ার্দেন বলেন, ‘আমরা বিশেষ বাহিনীর বাড়তি সদস্যদের পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিয়োজিত করেছি।

’ তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। ’ তবে এতে কাউকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি বলেও তিনি জানিয়েছেন। টেলিভিশন ফুটেজে দেখা গেছে, পোশাকের দোকানের কাচের দেয়াল ভেঙে কাপড়চোপড় রাস্তায় এনে ফেলে দেয়া হয়েছে। শ্রীলঙ্কার নববর্ষকে সামনে রেখে চলতি সপ্তাহে কট্টর বৌদ্ধগোষ্ঠী মোবাইলে ক্ষুদ্রবার্তায় মুসলিমদের মালিকানাধীন দোকান থেকে পোশাক না কেনার আহ্বান জানায়। শ্রীলঙ্কায় মুসলিমদের জীবনধারা ও হালাল খাবার সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে বৌদ্ধ উগ্রবাদীদের চালানো প্রচারণা ও আন্দোলনের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মুসলিম গোষ্ঠী ধর্মঘটের ডাক দেয়ার পর দেশটির সরকারে শরিক কট্টরপন্থী বৌদ্ধ রাজনৈতিক দল এক বিবৃতিতে জানায়, ‘সিংহলি বৌদ্ধদের এ ধরনের মুসলিম উগ্রবাদীদের এমন শিক্ষা দেয়ার সংকল্প গ্রহণ করা উচিত, যেন তারা (মুসলিম) কখনও তা ভুলে যেতে না পারে।

’ মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় এ অঞ্চলে বসবাসরত অনেক মুসলিম বাসিন্দাই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। গুজবে উত্তেজিত বৌদ্ধরা দলবেঁধে হামলা চালাচ্ছে দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উপাসনালয়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়ি-ঘরে। মধ্যাঞ্চলের সিত কউয়িন গ্রামের দুই হাজার বাসিন্দার মধ্যে মাত্র একশ’ জনের মতো ইসলাম ধর্মাবলম্বী ছিল। হামলার পর এদের অধিকাংশই এলাকা ছেড়ে অজানার পথে পা বাড়িয়েছে। তাদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট এবং ধর্মীয় উপাসনালয় (মসজিদ) ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।

ঘর-বাড়ি ছেড়ে কেউ শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে, কেউবা বন্ধু বা আত্মীয়দের বাড়িতে আত্মগোপন করেছে। তবে তাদের মধ্যে অনেককেই হত্যাও করা হয়েছে। শুক্রবার গ্রামের অবশিষ্ট মুসলিমদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এমনই এক মুসলিম দোকানির কথা বলতে গিয়ে সিত কিউয়িনের ২৪ বছর বয়সী ট্যাক্সিচালক অং কো মাইন্ত বলেন, ‘তারা কোথায় আছে আমরা জানি না, হামলাকারীরা আসার আগ মুহূর্তে সে পালিয়ে যায়। ’ ২০ মার্চ কট্টর বৌদ্ধরা মধ্যাঞ্চলীয় মেইখতিলা টাউনে দাঙ্গার সূত্রপাত করার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪২ জন নিহত হয়েছে।

এরপর আরও অন্তত ১০টি শহর ও গ্রামে তারা দাঙ্গা বাঁধিয়েছে। মুসলিমবিরোধী উস্কানিতে উত্তেজিত হয়ে ওঠে সাধারণ বৌদ্ধরা। টেলিফোন, ফেইসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিচালিত ‘৯৬৯ আন্দোলন’ এসব গুজব সাধারণ বৌদ্ধদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। বুদ্ধ থেকে নেয়া এই তিনটি সংখ্যা বুদ্ধের বিভিন্ন রূপ প্রকাশ করে, এর মধ্যে তার শিক্ষা ও ভিক্ষুত্ব অন্যতম। কিন্তু মিয়ানমারে এটি মুসলিমবিরোধী জাতীয়তাবাদী উগ্রপন্থার প্রতিনিধিত্ব করছে।

এই আন্দোলন বৌদ্ধদের মুসলিম পরিচালিত দোকানপাট ও সেবা বয়কট করার আহ্বান জানায়। চারদিন আগে থেকে সিত কউয়িনে সমস্যা শুরু হয়। ৩০টি মোটরসাইকেলে চড়ে বহিরাগত কিছু লোক গ্রামের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে মুসলিম প্রতিবেশীদের বয়কট করার আহ্বান জানায়। এরপর তারা একটি মসজিদ ও মুসলিম মালিকানাধীন একসারি দোকানপাট ও ঘরবাড়ি ধ্বংস করে। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, ‘গুজবে উত্তেজিত হয়ে তারা এখানে আসে।

’ তিনজন বৌদ্ধভিক্ষুর নেতৃত্বে ত্রিশটি শক্তিশালী গোষ্ঠী শুক্রবার একটি মসজিদের দিকে রওয়ানা হয় হলে পুি্লশ বাধা দেয়। পুলিশি বাধার মুখে লাঠিধারী এসব দাঙ্গাকারী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ‘এরপর এ ধরনের আর কিছু হতে দেব না আমি,’ বলেন পুলিশ কমান্ডার ফোনি মিন্ত, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য গতকাল পুলিশকে কর্তৃত্ব দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। তবে মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি বৃহস্পতিবার বলেছেন, মেইখতিলার সামপ্রতিক সহিংসতায় রাষ্ট্রীয় যোগসাজশ থাকার অভিযোগ পেয়েছেন তারা এখানে ক্লিক করুন ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।