রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির হঠাৎ অবনতি ঘটেছে। লাগামহীন হয়ে পড়েছে দুর্বৃত্তরা। সিরিজ ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। প্রকাশ্য দিবালোকে মানুষের সামনে ব্যবসায়ীকে হত্যা করে লুটে নিচ্ছে টাকার ব্যাগ। পাশাপাশি চলছে নীরব চাঁদাবাজি।
গুপ্তহত্যা ও অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার হচ্ছে যত্রতত্র। এ অবস্থায় নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ছে মানুষ। উদ্বিঘ্ন ব্যবসায়ী সমাজ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পুলিশের দুর্বল টহল ও চেকপোস্ট ব্যবস্থার কারণে জামিনে মুক্তি পাওয়া দাগী অপরাধী ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। এছাড়া পুলিশের ভেতর বদলি আতঙ্ক এবং পুলিশ প্রশাসনে তদারকির অভাব আইনশৃক্সখলা পরিস্থিতির অবনতির আরেকটি কারণ বলেও মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।
তবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বর্তমান আইনশৃক্সখলা পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, এমনিতেই শীতের সময় অপরাধ বাড়ে। এবার অপরাধীরা সেই সুযোগ ভালোভাবেই পেয়েছে বিরোধী দলের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের কারণে। তার মন্তব্য, বিএনপি-জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় যে গুপ্ত হামলা চালিয়েছে বা আবারও পাঁয়তারা করছে, সেই সুযোগটি নিয়েছে সন্ত্রাসীরা। পুলিশ যখন ব্যস্ত সেই তৎপরতা রোধ করতে, তখনই অপরাধীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তবে পুলিশ কর্মকর্তাদের এ ধরনের অপরাধ রোধে টহল বাড়ানোসহ নানা তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
লাগাতার ছিনতাইয়ের ঘটনার পরও আইনশৃক্সখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে বলে মনে করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) খন্দকার হাসান মাহমুদ খন্দকার। গতকাল তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজধানীসহ সারা দেশের আইনশৃক্সখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীতে সংঘটিত ছিনতাই ও ডাকাতির কয়েকটি ঘটনা ঘটলেও সেগুলো বিচ্ছিন্ন এবং অপ্রত্যাশিত। তবে ঘটনাগুলোর তদন্ত হচ্ছে। পুরান ঢাকার বংশালে একটি ঘটনা ঘটেছে বলে অবনতির প্রশ্ন উঠেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত দুই মাসে এক হাজারের বেশি ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা সংশ্লিষ্ট থানায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তবে রাজধানীতে সংঘটিত এ দুটি অপরাধের প্রকৃত চিত্র আরও ভয়ঙ্কর বলে জানিয়েছেন পুলিশের এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, সংঘটিত ছিনতাই ও ডাকাতির প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
এছাড়া গত নভেম্বর থেকে চলতি ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে বিভিন্ন ঘটনায় খুন হয়েছে অন্তত ১৫ জন। অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার হয়েছে চারটি।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, পুলিশের তথ্যের সঙ্গে প্রকৃত তথ্যের মধ্যে থাকে দীর্ঘ পার্থক্য। রাজধানীর ৪১টি থানা এলাকায় প্রতিদিনই চিহ্নিত কিছু স্পটে তিন শতাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এছাড়া ডাকাতির ঘটনাও ঘটছে অহরহ।
এদিকে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘটনার শিকার মানুষ সহজে থানা পুলিশ পর্যন্ত যেতে চান না। কারণ থানায় গেলে পুলিশ আগে প্রশ্ন করে ছিনতাইকারীকে চিনতে পেরেছেন? ঘটনার শিকার ব্যক্তিরা পুলিশের কাছ থেকে হরহামেশা এ ধরনের প্রশ্ন শুনে এখন আর কেউ বাড়তি ঝামেলায় পড়তে চান না।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ডাকাতির ঘটনায় মামলা করতে গেলে সেটি নেওয়া হয় চুরির মামলা হিসেবে। ফলে প্রত্যাশিত বিচার পান না ভুক্তভোগীরা। পুলিশের একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানান, প্রতি মাসে ডিএমপিতে অপরাধ পর্যালোচনা সভা বিনা কারণে বন্ধ রয়েছে দেড় বছর ধরে। এতে করে পুলিশ প্রশাসনের ওপর তদারকি কমে গেছে। সূত্র জানায়, রাজধানীতে পুলিশের টহল ও চেকপোস্ট ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
রাজধানীর ৪৯টি স্পটে চেকপোস্ট থাকার কথা থাকলেও তা এখন খুব একটা চোখে পড়ে না। এ সুযোগে চিহ্নিত অপরাধী ও মাদক ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে চলাফেরার সুযোগ পাচ্ছে। এমনকি টার্গেট করে খুন করে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই খুনিরা পালিয়ে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, রাজধানীতে কাউন্সিল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। তারাই রাজধানীজুড়ে ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবর রয়েছে।
সূত্র মতে, রাজধানীর ৪১টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অধিকাংশই দুই থেকে আড়াই বছরের বেশি সময় ডিএমপিতে চাকরি করছেন। দুই বছরের বেশি চাকরি হওয়ায় বর্তমানে অনেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছেন বদলি আতঙ্কে। এরা আইনশৃক্সখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেয়ে নিজেদের কাজেই ব্যস্ত রয়েছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের মুখপাত্র ডিসি ডিবি মনিরুল ইসলাম বলেন, রাজধানীতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি অপরাধমূলক ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। গোয়েন্দা পুলিশের টহল জোরদার করা হচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।