Student : B.Sc in EEE ঢাকাসহ অন্যান্য বড় শহরে প্রতিদিন অসংখ্য গ্রাহক স্মার্ট মোবাইল ফোনের নামে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। সাধারণত স্মার্টফোনে ভিডিও কল, গ্গ্নোবাল পজিশনিং, ওয়েব টিভি দেখাসহ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের যাবতীয় সুবিধা সনি্নবেশিত থাকে। চীন এবং আরও কয়েকটি দেশ থেকে আসা নামমাত্র স্মার্টফোনে এর কিছুই পাচ্ছেন না গ্রাহক।
চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে নানা আধুনিক সুবিধার কথা বলে বিক্রি করা স্মার্টফোন পাওয়া যায় মাত্র কয়েক হাজার টাকায়। ব্যবহার করতে গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছেন গ্রাহক।
নামিদামি ব্র্যান্ডও গ্রাহক ঠকানোর ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। ২০ হাজার টাকায় কেনা নকিয়া, স্যামসাং, এলজি প্রভৃতি ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোনেও স্মার্টফোনের পূর্ণাঙ্গ সুবিধা নেই। সম্প্রতি বাজারে আসা স্যামসাং ব্র্যান্ডের ‘গ্যালাক্সি ইয়ং’ হ্যান্ডসেটে ভিডিওকলের ফ্রন্ট ক্যামেরা নেই। ওয়ার্ড, এক্সেল প্রভৃতি দেখার অপশন থাকলেও এডিটিং অপশন নেই। চাইলেও ওয়ার্ড ফাইলে কিছু লিখতে পারবেন না।
কেউ ওয়ার্ড ফাইল ই-মেইলে পাঠালে তা দেখতে পাবেন না। এর সিপিউর গতি এক গিগাহার্টজের কম। ব্রাউজারের সঙ্গে ফ্লাশ প্লেয়ার অপশনটিও আপডেটেড নয় বলে ওয়েব টিভি কিংবা ইউটিউব ভিডিও দেখার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রাহকদের নিত্যদিনের এ প্রতারণা থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব সরকারের। একই সঙ্গে তারা গ্রাহকদের সচেতনতার ওপর জোর দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তুমুল জনপ্রিয়তা এবং অনেকটাই উন্মুক্ত থাকায় অ্যানড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারের কথা বলে সবচেয়ে বেশি প্রতারণা হচ্ছে। নিউইয়র্কভিত্তিক প্রযুক্তিবিষয়ক ম্যাগাজিন ‘ইন-ফরমেশন
উইকে’র সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, অন্তত ২৭ শতাংশ স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেম চলছে পাইরেটেড অ্যানড্রয়েড দিয়ে। পাইরেসির কেন্দ্রস্থল চীন। এখান থেকেই পাইরেটেড অ্যানড্রয়েড ব্যবহার করে তৃতীয় বিশ্বের স্বল্পোন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যাচ্ছে স্মার্টফোনের সুদৃশ্য মোড়কে নিম্নমানের ফোন।
ঢাকার অনেক বড় বড় মার্কেট এবং শপিং মল ঘুরে এমন স্মার্টফোনের উপস্থিতি দেখা গেছে।
মাত্র আড়াই-তিন হাজার টাকায়ও মেলে চায়নার সস্তা স্মার্ট হ্যান্ডসেট। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তামিম সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেখে বসুন্ধরা সিটিতে গিয়ে ‘কিংটেল কে ১০’ নামে একটি দৃশ্যত স্মার্ট হ্যান্ডসেট কেনেন সাড়ে চার হাজার টাকায়। সে সময় দোকানি দাবি করেন, এটিই বিশ্বের সবচেয়ে কম দামের স্মার্টফোন। ব্যবহার করতে গিয়ে তামিমের আক্কেল গুড়ূম। বিজ্ঞাপনে ফোনটির অপারেটিং সিস্টেম গুগলের অ্যানড্রয়েড টু পয়েন্ট টু উল্লেখ ছিল।
বিক্রেতাও টাচস্ক্রিনে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন চমৎকার সব আয়োজন। পরে দেখা গেল, অ্যানড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন স্টোরটি ওপেন হয় না। এমনকি সাধারণ ব্রাউজারটিও অত্যন্ত ধীরগতির। এর জাভা অ্যাপ্লিকেশনও পুরোপুরি সচল নয়। টাচস্ক্রিন যেটা আছে সেটাও মাঝে মধ্যে তুমুল চাপেও কাজ করে না।
এখন পর্যন্ত বাজারে পাওয়া সবচেয়ে কম দামের স্মার্টফোন মাইক্রোম্যাক্স সিরিজের এ-৭০। এ ফোনেরও সিপিইউ মাত্র ৬০০ মেগাহার্টজ গতির। এতে স্মার্টফোনের সব অপশন আছে; কিন্তু প্রসেসরের গতি এত কম যে বেশিরভাগ অপশনই ব্যবহার করা দুঃসাধ্যপ্রায়।
দামি ব্র্যান্ডগুলোতেও চমৎকার সব প্রতারণা রয়েছে। নকিয়া সিমবিয়ান ৩ অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে সি-৬-০১ কিং সি-৭ স্মার্টফোনেও ডকুমেন্ট এডিটিং অপশন নেই।
এসব হ্যান্ডসেটে ডকুমেন্ট এডিটিং সফটওয়্যার ডাউনলোড করা যেতে পারে। তার জন্য ব্যয় হবে অতিরিক্ত ৪০ ডলার। সি-৬-০১-এর ব্যাটারি মাত্র এক হাজার ৫০ এমএএইচ ক্ষমতাসম্পন্ন। ফলে ফোনের স্মার্ট অপশনগুলো ব্যবহার করতে গেলে ব্যাটারির দ্রুত চার্জ ফুরিয়ে যায়। সম্প্রতি বাজারে আসা লুমিয়া সিরিজের দামি স্মার্টফোনেও ভিডিও কলের জন্য সেকেন্ডারি ক্যামেরা অপশন নেই।
এ হ্যান্ডসেটগুলোতে ডকুমেন্ট এডিটিং অপশন আছে। এ সিরিজের ফোনে ফ্ল্যাশ প্লেয়ার সফটওয়্যার থাকলেও তা চালু হতে সময় নেয়। ফলে ইউটিউব ভিডিও দেখার অভিজ্ঞতাও খুব বেশি সুখকর নয়।
স্মার্টফোনের নামে এসব প্রতারণা সম্পর্কে প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার বলেন, সরকার যেহেতু প্রতি বছর হ্যান্ডসেট ক্রেতাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করে সে কারণে প্রতারণা প্রতিরোধের দায়িত্বও সরকারের ওপর বর্তায়। ক্রেতারা যেন প্রতারণার শিকার না হন সে জন্য হ্যান্ডসেট বিক্রির সময় প্রতিটি সেটের সামনে অন্ততপক্ষে ফুল স্পেসিফিকেশন প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা উচিত।
তা ছাড়া বাংলাদেশে আসা স্মার্টফোনগুলোয় বাংলা সফটওয়্যার বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান তিনি।
প্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, গ্রাহক সাশ্রয়ী দামে স্মার্টফোনের স্বাদ পেতে চাইবে_ এটাই স্বাভাবিক। তবে ‘চায়না ফোন’ নামে যে পাইরেটেড অ্যানড্রয়েড সফটওয়্যার দিয়ে নিম্নমানের ফোন বিক্রি করা হচ্ছে, তা প্রতারণা। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবার সচেতন থাকা দরকার। সরকারের এতে দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।