আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৃষ্টিস্নান

১. তাদের দুজনের দীর্ঘদিনের শখ বৃষ্টিতে ভেজার। দুজন একসাথে ভিজবে বৃষ্টিতে। অনেকদিনের এই অেপক্ষা তাদের আজ বোধহয় পূরণ হতে চলেছে। আকাশ মেঘে ঘন হয়ে এসেছে। দুজন রিক্সাতে।

দুজনের মন আজ তুমুল আনন্দে আচ্ছন্ন। আজ যে তারা বৃষ্টিতে ভিজবে! গন্তব্যে পৌঁছেও তাই তারা রিক্সা থেকে নামে না। রিক্সা চলতে থাকে। তারা অেপক্ষা করতে থাকে কখন আসবে বৃষ্টি। ছেলেটা বলে, বৃষ্টি আসলে রিক্সার হুড ফেলে দেব।

’ মেয়েটা রাজী হয় না। কেউ যদি দেখে ফেলে! ছেলেটা আপে করে কেন তার পরনে আজ ব্ল্যাজার আর টাই নাই, মেয়েটার পরনে নাই শাড়ী! তার মতামত, রমনার খোলা ময়দানে বসে বাদাম খেতে খেতে কাকভেজা হবার আনন্দ অন্যরকম হত! মেয়েটা সেই কল্পনায় মজা পেয়ে খিলখিল করে হেসে উঠে। ছেলেটাও। আকাশে মেঘের দল উথাল পাথাল হতে থাকে। ঝড়ো বাতাসের ঠেলায় মেঘের দল ছুটতে থাকে সুদুরের দিকে।

ধীরে ধীরে একসময় আকাশ পরিষ্কার হয়ে আসে। ছেলেটার, মেয়েটার মনের ভেতর তখন মেঘেদের আনাগোনা। ২. তারও অনেকদিন পরের কথা। আষাঢ়ের প্রথম দিন। তুমুল বৃষ্টি।

ছেলেটা মোবাইল ফোনটা হাতে তুলে নেয়। মেয়েটাকে কল দিয়ে বাইরে বেরুতে বলে। ঠিক হয় আধাঘন্টা পর ছেলেটা মেয়েটাকে তাদের পাড়ার মোড় থেকে এগিয়ে নিয়ে আসবে। ছেলেটা চটজলদি তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়ে। ভিজতে ভিজতে এগুতে থাকে।

আজ কোনোভাবেই সুযোগটা হাতছাড়া করতে রাজী না সে। বৃষ্টির বেগ বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে তার হার্টবিটও বাড়তে থাকে। আর তখনি পকেটে রাখার মোবাইলের মেসেজ টোনটা বেজে উঠে। বৃষ্টির মধ্যেই সে মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে মেসেজ বাটনে কিক করে জানতে পারে মেয়েটার মা মেয়েটিকে এই বৃষ্টিতে বাইরে যেতে মানা করেছেন! ছেলেটার হার্টবিট স্বাভাবিক হতে থাকে। ৩. আরো কয়েকদিন পর এক সকালে যখন মেয়েটার ঘুম ভাঙলো, যখন মেয়েটা বুঝতে পারলো বাইরে বৃষ্টি, মেয়েটার মন বিষন্নতায় ভরে গেল।

তাদের দু’জনের বৃষ্টিতে ভেজার সাধ কবে পূরণ হবে! কবে দু’জন প্রাণ ভরে বৃষ্টিতে ভিজতে পারবে! ভাবতে ভাবতেই মেয়েটা একটা বুদ্ধি পেল। পাশে রাখা মোবাইলটা হাতে তুলে নিয়ে ছেলেটার ঘুম ভাঙালো। ছেলেটাকে ছাদে উঠতে বলে নিজেও তার বাসার ছাদে উঠে গেল। চারিদিকে বৃষ্টি, বৃষ্টি আর বৃষ্টি। বোকা ছেলেটার কানে মোবাইল! মেয়েটারও! দুজন হাসছে, আর বৃষ্টির জলে স্নান করছে! দু’জনের অবস্থানগত দূরত্ব অনেক হলেও আমরা হতভাগ্যরা যদি তাদের বৃষ্টিস্নান দেখতে পেতাম, আনন্দে উদ্বেলিত হতে দেখতে পেতাম বুঝতে পারতাম দূরে থেকেও অতোটা কাছাকাছি হবার আনন্দ! এই কিশোর-কিশোরী যেদিন একসাথে বৃষ্টিতে ভেজার সুযোগ পাবে সেদিনও তারা যাতে এখনকার মতো কাছাকাছি থাকে বোকা থাকে - এই কামনা করি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।