নূরুজ্জামান: মডেল কন্যা সুমাইয়া আজগার রাহা (২২) হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানা রহস্য। পুলিশের সন্দেহ এটি হত্যাকাণ্ড। এ সূত্র ধরেই তারা এগুচ্ছে তদন্তে। পুলিশের ধারণা এর নেপথ্যে হাই প্রোফাইলের ক্রিমিনালরা জড়িত। রাহার সঙ্গে তাদের এমন কোন সম্পর্ক ছিল যা চাপা দিতেই উদীয়মান এ মডেল কন্যার অকাল পরিণতি ঘটেছে।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি মো. আজিজুল হক বলেন, রাহার অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের বেশ কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এটি হত্যাকাণ্ডও হতে পারে। এ কারণে কবর থেকে রাহার লাশ উত্তোলনের পাশাপাশি নানা কৌশলে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সূত্রমতে, রাহা আর্থিক প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়েছিলেন। সম্পর্কের দুর্ভেদ্য
জালে জড়িয়ে ছিলেন রাহা।
বিচরণ শুরু করেছিলেন অন্ধকার জগতে। বাসায় ফিরতেন মধ্যরাতে। কিন্তু গোপন খবরটি বেশি দিন গোপন থাকেনি। ধরা পড়ে প্রেমিক সাকিবের চোখে। এরপরই দ্বন্দ্ব শুরু হয় দু’জনের।
কাকে ছেড়ে কাকে রাখবেন, কিভাবে সামলাবেন। এ নিয়ে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে থাকেন। দ্বন্দ্বে-মুখর এমন দোলাচলে শেষ পর্যন্ত সাকিবের দিকেই ঝুঁকে পড়েন তিনি। এতে বাধ সাদে সুযোগ-সন্ধানী ওই প্রভাবশালী গ্রুপ। একে একে রাহার কাছ থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেন।
বন্ধ করে দেন আর্থিক সুযোগ-সুবিধা। শুধু তাই নয়, রাহাকে দেয়া দামি গাড়ি ফিরিয়ে নেন এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। আরেক প্রভাবশালী ফেরত নেন তার জাপান গার্ডেন সিটির একটি ফ্ল্যাট। এ নিয়ে রাহার সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব যখন চরমে তখনই রাহার রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ২৩শে মার্চ সকালে মোহাম্মদপুর চানমিয়া হাউজিংয়ের ২ নম্বর সড়কের ৪১/সি নম্বর ভবনে চতুর্থ তলার বি-১০ ফ্ল্যাটে তার লাশ পাওয়া যায়।
এরপরই স্থানীয় প্রভাবশালী একাধিক লোক রাহার ফ্ল্যাটে যান। রাহার অসহায় পিতা-মাতাকে গোপনে লাশ দাফনের পরামর্শ দেন। বিনিময়ে খরচাপাতি সরবরাহ করেন। তাদের প্রভাবেই রাহার পিতা-মাতা লোকচক্ষুর আড়ালে আজিমপুর কবরস্থানে পরিচয় গোপন করে লাশ দাফনের কাজ সম্পন্ন করেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, শেষের দিকে রাহার চলাচল ছিল হাই প্রোফাইলের লোকজনের সঙ্গে।
প্রায় প্রতি রাতেই অভিজাত এলাকার বিভিন্ন বার, রেস্টুরেন্ট ও ক্লাবে তার উপস্থিতি দেখা গেছে। বিভিন্ন মাদক দ্রব্যে আসক্ত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, প্রযুক্তির সহায়তায় রাহার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন বিশ্লেষণ করে অস্বাভাবিক তথ্য পাওয়া গেছে। তাতে দেখা গেছে, তিনি দু-একজন ঘনিষ্ঠ লোক ছাড়া কারও ফোনে কথা বলতেন না। এমনকি মৃত্যুর আগে রাজধানীর উত্তরা ও ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় তার লোকেশন পাওয়া গেলেও ফোনে কথা বলেননি।
যে তরুণীর ডাকে রাতে বাসার বাইরে বের হয়েছিলেন তার কলও পাওয়া যায়নি। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে- তিনি একাধিক মোবাইল ফোন সেট ব্যবহার করতেন। পৃথক শুভাকাঙক্ষীর জন্য পৃথক সেটে কথা বলতেন। লাশ উদ্ধারের আগেই ওই ফোনসেটগুলো কেউ সরিয়ে ফেলেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, রাহার মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না।
এটি অস্বাভাবিক মৃত্যু। তদন্তে হত্যাকাণ্ডের আলামতও বেরিয়ে আসতে পারে। এ কারণে পুলিশের সিআরপিসি’র ১৭৪ ধারা অনুসরণ করে মডেল কন্যার লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ অনুসন্ধানের জন্য রাহার লাশের তিন ধরনের পরীক্ষা করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল, কেমিক্যাল ও মাইক্রোবায়োলজিক্যাল।
এসব পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে আসার পরই বলা যাবে রাহা আত্মহত্যা না হত্যাকাণ্ডের শিকার। রাহার ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক সোহেল মাহমুদ বলেন, মৃত দেহের শরীর থেকে জরায়ু, শ্বাসনালী, পাকস্থলী, হাই ভ্যাজাইনাল সফ, রক্ত, লিভার, কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই নমুনাগুলো সিআইডির পরীক্ষাগার সহ বিভিন্ন ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, মৃত্যুর আগে তিনি ধর্ষণের শিকার ও বিষাক্ত খাবার খেয়েছিলেন কিনা সবই পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর আগে মডেল কন্যার পিতা আলী আজগার মোহাম্মদপুর থানায় অপমৃত্যু মামলা করেন।
যদিও মামলা করার আগে তিনি তার কন্যার মৃত্যু নিয়ে নানা লুকোচুরির আশ্রয় নিয়েছিলেন। একেকবার একেক রকম তথ্য সরবরাহ করেছিলেন। গোপনে লাশ দাফনের সময় রাহার পরিচয় পর্যন্ত আড়াল করেছিলেন। পরে কবরস্থান থেকে এ তথ্য ফাঁস হওয়ার পর তিনি বাধ্য হয়ে থানায় অপমৃত্যু মামলা করেন। এতে উল্লেখ করেন, কয়েকদিন ধরে তার কন্যা রাহা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ছিলেন।
তাকে ‘অন্যমনা’ মনে হয়েছে। পরে শনিবার সকালে রাহার বেডরুমে গিয়ে তাকে ফ্যানের সঙ্গে বাঁধা ওড়নায় ঝুলতে দেখা গেছে। তখন তড়িঘড়ি করে নামিয়ে চিকিৎসক ডেকে আনা হয়। ওই সময় চিকিৎসক তার শরীর পরীক্ষা করে জানান, কয়েক ঘণ্টা আগে মৃত্যু হয়েছে। মোহাম্মদপুর থানার ওসি আজিজুল হক বলেন, মৃত্যু নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য সরবরাহ করার কারণে রহস্য ঘনীভূত হয়েছে।
এরপরই তা তদন্তের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হয়। এখন মৃত দেহ থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন নমুনার পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে আসার পরই মৃত্যু রহস্য উদঘাটন হবে। তিনি বলেন, হত্যার আলামত পাওয়া গেলে অপমৃত্যু হত্যা মামলায় রূপান্তর হবে।
Ref: Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।