যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
রাহা যখন নিজের ইচ্ছায় টি-শার্টের প্রস্তাবটা দিয়েছিল সেটার খরচ ও দাম নিয়ে কোন কিছু ভাবার প্রয়োজনীয়তা আমরা কেহই বোধ করিনি। কারণ সেটা মুখ্য নয়, মুখ্য হচ্ছে এর মাধ্যমে কিছু বাড়তি টাকা সংস্থান করার সুযোগ তৈরী।
সবাই আমাদের মত নয়। কেউ কেউ উদ্দেশ্য-বিধেয় নিয়ে ভাবতে পারে। আমরা দেখেছি রাহার সংশ্লিষ্টতা টি-শার্টের মাধ্যমে, আরো অনেক ব্লগের সংশ্লিষ্টতা যেমন আমার মত কেবলই ব্লগপোস্টের মাধ্যমে।
টাকা সে যেভাবেই আসুক, প্রচার সে যেভাবেই হোক - প্রতিটা কন্ট্রিবিউশন অনন্য।
যীশুর পোস্টটি আবেগের মোড়কে সমৃদ্ধ থাকলেও একটা কনফিউশন তৈরী করে। টি-শার্টের উৎপাদন খরচ কত? তার দৃষ্টিতে ৬০ টাকা। রাহা বলেছে ১০০টাকা। এটা রাহার সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
সুতরাং এ বিষয়ে রাহা সম্বন্ধে আমার ধারণা প্রকাশ করা কর্তব্য মনে করি।
প্রথমেই ভাবতে হবে, এই বিষয়টা আদৌ উত্থাপন করা সংগত হয়েছে কিনা। ব্যক্তিগতভাবে আমি এমন বিষয় উত্থাপন করতাম না। কিন্তু কেউ যখন একটা কনফিউশন তৈরী করে তখন সেটা নিশ্চিত করে যে এ অপ্রীতিকর প্রসংগ উত্থাপিত হওয়াটা এক প্রকার বাস্তবতা, এড়ানো যায় না। এবং সেটা যদি এমন একটা মানবীয় কাজের উদ্যোক্তার আন্তরিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তবে তা আমাদের মধ্যে বিভেদ তৈরীতে সাহায্য করতে পারে।
এ বিষয়ে কথা বলাটা ছোটলকী হিসাবে পরিগনিত হওয়ার আশংকা করে যীশু লিখেছে, "জানি, কথাগুলো একটু ছোটলোকি কথার মত শুনাচ্ছে। ......আর ছোটলোকি করে হলেও যদি শাশ্বতর জন্য ১ টাকাও বেশী পাওয়া যায়, আমি সে ছোটলোক হতে রাজি আছি। "
আমি যেটা বুঝি, কোন মানুষকে সাহায্যের জন্য মানুষের কাছে হাত পাতা যেটা বসুন্ধরায় করা হয়েছে এটা সবসময় করা সম্ভব নয়। ব্লগের ইতিহাসে এই প্রথম এমন একটা ঘটনা ঘটলো বলে সবাই এটাকে পজেটিভলী নিয়েছে। কিন্তু নিত্যই এমন করা যাবে না।
ব্লগাররা ক্রমশ অনাগ্রহী হবেন, বসুন্ধরা থেকে শুরু করে সর্বত্রই একদল আধুনিক ভিক্ষুক শ্রেণী হিসাবে অভিধা পেতে দেরী হবে না।
এজন্য বিশ্বের সর্বত্রই ফান্ড রেইজের জন্য নানা কায়দা কানুন বের হয়েছে। এর মধ্যে ব্যবহার্য্য সামগ্রী যেমন, টি-শাট, ক্যাপ, পেন, ব্রেসলেট থেকে শুরু করে স্টিকার, স্মারক-টিকেট, পেইন্টিং, ফটোগ্রাফ, মুমেন্টাম তৈরী ও বিক্রি উল্লেখ্যযোগ্য। এছাড়া কনসার্ট, গেমস, পথ-নাটক তো রয়েছেই।
এসব মাধ্যমগুলো ধারাবাহিকভাবে ব্যবহার করা যায় চ্যারিটির জন্য।
কিন্তু হাত পাতটা সম্ভব নয়। এসবের মধ্যে টি-শার্ট তৈরী, বিপনন ঢাকা শহরে সবচেয়ে সহজসাধ্য এবং এমন একটা প্রতিষ্ঠান যদি ব্লগারদের মধ্যেই পাওয়া যায় তবে তো আরো সুবিধার। সবচেয়ে বড় কথা প্রাতিষ্ঠানিক সাংশ্লিষ্টতা এই কার্যক্রমকে যতটা সুচারুরূপে সম্পাদন করতে পারে কতগুলো বিচ্ছিন্ন মানুষের ক্ষনিকের যুথবদ্ধতা তেমনভাবে সম্পাদন করা অসম্ভভ। রাহার প্রতিষ্ঠান কিংবদন্তী এই উদ্যোগটা নিয়ে প্রকৃতপক্ষে ব্লগারদের এমন মানবীয় আবেদনে সাড়া দেয়ার সুদূরপ্রসারী একটা কর্মযজ্ঞে শামিল হয়েছে। সে প্রথম থেকেই স্পষ্ট করে বলে এসেছে, খরচের টাকাটা বাদ দিয়ে বাকীটা শাশ্বতের ফান্ডে যাবে।
টি-শার্টগুলো রেডিমেড না কিনে কাপড় কিনে নিজেদের কারখানায় তৈরী হয় বলে উৎপাদন খরচও একটু বেশী পড়ে। আর সর্বোপরি এটা একটা ব্রান্ড ভ্যালু এ্যাড হয়ে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে অনেক বেশী। রাহার জবানীতে, "টি-শার্ট থেকে সর্বোচ্চ অংশই শ্বাশ্বত ফান্ডে যাবে... প্রাথমিকভাবে একটা সংখ্যা ঠিক করা হয়েছে যাতে কারো প্রশ্ন না থাকে , তারপরও আরেকটা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে খরচের টাকা বাবদ (এটা নির্ধারণ করা যাবে যখন মোটামুটি একটা আইডিয়া পাওয়া যাবে কতগুলো টি-শার্ট বিক্রি হতে পারে । ) আর যুদ্ধাপরাধীদের টি-শার্ট এবং এই টি-শার্টের একটা বেসিক পার্থক্য আছে, আমাদের নিজের কারখায় তৈরী করি । (মুধু কাপড়টা বাইরে থেকে কেনা হয়) যেজন্য শুধু টি-শার্ট বাবাদ আমাদের গড় খরচ অনেক বেশী ........."
আমি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মানবিক সাহায্যের জন্য হাত বাড়াবার পক্ষে।
শাশ্বত ক্যাম্পেইনে অংশ নেবার পেছনে উদ্যোগী ব্লগারদের আসলে একটা সুপ্ত সংগঠনের বীজ লুকায়িত ছিল। রাহার টি-শার্টও একটা প্রতিষ্ঠানিক এপ্রোচ - এর সুবিধাটাই সবচেয়ে বেশী। প্রতিষ্ঠান কার্যত পরিবহন থেকে সরবরাহের যাবতীয় খরচ বহন করে। যা একুমুলেট করলে টি-শার্টের খরচকে ন্যায্য হিসাবেই প্রতীয়মান হয়।
একজন মানুষের এই স্বচ্ছতা, আগ্রহ ও উচ্ছ্বাসকে অবমূল্যায়নের সুযোগ নেই।
রাহাকে শ্রদ্ধা করি ব্লগ-কমিউনিটিতে তার ধারাবাহিক অবদানের জন্য। এতগুলো মানুষ তোমার সাথে আছে, তুমি কোনভাবেই একজনের কথায় পিছু হটতে পারো না। তোমার প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকার জন্যই তোমার সাথে আছি, তোমার ব্লগার হিসাবে অংশগ্রহণেও সাথে আছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।