সাদ আহাম্মেদ আম্মা সকালে যখন আমার জন্য কলা নিয়ে আসলো আমি হা করে আম্মার কলার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আম্মাকে অনেক কষ্ট করে হাসি হাসি মুখ করে বললাম, “আম্মা আমি তো চম্পা কলা খাইনা। বমি আসে”।
আম্মা আমার দিকে রাগ রাগ চোখে তাকিয়ে বলে, “ঢাকা শহরে কোথাও সাগর কলা এখন আর পাওয়া যায়না। যা পাওয়া যায় তার নাম নেপালী কলা।
ওই কলা খেলে বল, প্রতিদিন দুই ডজন নিজে আদর করে খাওয়াবো”।
আমি কিছু না বলে মুখ হাসি হাসি রেখে মার দিকে তাকিয়ে থাকি। আমার কিছুই বলতে ইচ্ছা করছিলোনা। মা কে দেখলে খুব মায়া লাগে। মা যখন এক হাতে কলা আর এক হাতে রুটি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তখন খুব কষ্ট হয়।
আহারে আমার জন্য মা কত কষ্ট করে সেই মিরপুর থেকে ধানমন্ডি দৌড়িয়ে দৌড়িয়ে আসে। আমি প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে পড়ে আছি। মা প্রতিদিন ভোরবেলা হাসপাতালে এসে পড়ে। আমাকে খাওয়া দাওয়া করিয়ে আবার চলে যায়। কিছুক্ষণ পর পর আসে, দরজায় উকি দিয়ে যায়।
আমি একটু ঘুমিয়ে গেলে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আমি তখন চোখ খুলিনা, আম্মুর স্পর্শগুলোখুব অনুভব করি, চোখ বুজে অনুভব করি।
আজকে অবশ্য একটা নতুন ব্যাপার হয়েছে, হাসপাতালে আমি যে ওয়ার্ডে বসবাস করছি তার পাশের বেডটা সবসময় খালি থাকে। আজকে একজন নতুন ভর্তি হলো, যে ভর্তি হলো তার নাম মুনা। আমি আড়চোখে অনেকবার মুনাকে দেখার চেষ্টা করেছি।
আমার মনে হয় মেয়েটা ক্লাশ এইট কি নাইনে পড়ে। মেয়েটার মা মেয়েটার মাথায় ক্রমাগত দোয়া পড়ে ফু দিচ্ছেন। ভদ্রমহিলা খুবই পর্দানশীল বোঝা যাচ্ছে। একটু পরপর নফল নামাজ পড়ছেন। মাঝে মাঝে নাঁকি সুরে কাঁদছেন বলেও মনে হচ্ছে।
এসব দেখতে দেখতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম। আমি টের পাচ্ছিলাম মা আমার মাথায় তখন হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।
পায়ে সুড়সুড়ির বিরক্তিকর অনুভূতিতে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আমি চোখ মেলে দেখি বজলু ভাই আমার পায়ের কাছে বসে আছে। বজলু ভাই এই হাসপাতালের একজন স্থায়ী অধিবাসী।
উনার বয়স ১১ বছর এবং উনি চুরি করতে ভালোবাসেন। হাসপাতালে প্রতিদিন যে খাবার দেয়া হয় রোগীদের সেটা চুরি করে খাওয়াই হালিম ভাইয়ের পেশা। হালিম ভাই অবশ্য নীতি মেনে চলেন। এক রোগীর কাছ থেকে একবারের বেশি সে চুরি করে খায়না। আমি হালিম ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলি, “হালিম ভাই আজকে তো পকেটে কোন টাকা নাই।
আপনাকে কিছু দিতে পারলাম না”।
হালিম ভাই তার হলদে দাতটা বের করে বলে, “আইজকা টাকা লাগবোনা। চুরি করি খায়া ফালাইছি”।
আমি হালিম ভাইকে প্রতিদিন ৫০ টাকা করে দেই যেন সে আর চুরি না করে। আমি একটু বিরক্ত হয়ে বললাম, “আপনাকে না আমি প্রমিজ করাইলাম যেন আর চুরি না করেন?”
হালিম ভাই কিছু না বলে শিস বাজায়।
তারপর বলে, “খাসির বিরানী আছিলো। মাথা ঠিক রাখতে পারিনাই। প্রায় দুই বচ্ছর পর বিরানী খাইছি। হাত ধুইনাই এহনো। একটু পরপর গন্ধ শুকতাছি।
দিলটা ভইর্যা যায়”।
আমি খুব কষ্ট পেয়ে হালিম ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকি। ওর মা এই হাসপাতালেই ভর্তি ছিলো। ওর তখন বয়স চার বছর ছিলো হয়তো। মহিলা মারা যান কোন এক কাকডাকা ভোরে, সেই লাশ মেডিকেলের মর্গে দিনের পর দিন পড়ে ছিলো।
সাথে হালিমও থাকতো। একসময় লাশটা মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীরা নিয়ে যায়, হালিমকে কেউ নেয় না। এরপর থেকে সে এই হাসপাতালেই পড়ে থাকে। আমি প্রায়ই ওকে জিজ্ঞাসা করি, “আপনি এখানে সারাদিন পড়ে থাকেন কেন? বাড়ি ঘর নাই”।
সে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকে।
একদিন মনের কথা বলে ফেলে, “মার জইন্য অপেক্ষা করি। মা আমারে কইছিলো বাহিরে খাড়ায় থাকতে, আয়্যা পড়বো”।
আমার বন্ধু বজলু ঝরঝরে রোদে ধবধবে সাদা রঙের একটা শার্ট পড়ে হাজির। আমি তাকে দেখে মোলায়েম মুখে বললাম, “একটা সিগারেট দিবি”।
বজলু হাসিমুখে বলে, “হারামজাদা আরেকবার সিগারেট চাইলে কাচা গিল্লা খায়া ফেলবো।
আজকে বিকাল পর্যন্ত তোর সাথে থাকবো। দুপুরে একসাথে খাবো, কি বলিস?”
আমি হাসিমুখে বলি, “আম্মা বাহিরে মনে হয় বসে আছে। উনাকে নিয়ে আয়। একসাথে খাই”।
বজলু চুপ করে থাকে।
আস্তে আস্তে বলে, “খালাম্মাকে ক্যান্টিনে খাওয়ায় আনছি। এখন একটু উঠে বস। আমি তোরে খাওয়ায় দেই”।
বজলু আজকে আমার জন্য কচুর লতি সাথে ছোট্ট গুড়ি চিংড়ি মিক্স তরকারী নিয়ে আসছে। অনেকদিন পর পেট ভরে খেলাম।
খাওয়া শেষে একটা বিশাল ঢেকুরও তুললাম।
বজলু বাহির থেকে সিগারেট টেনে আমার পাশে বসে বললো, “দোস্ত তোর সাথে অনেকদিন নাট্য মঞ্চে যাইনা। আজাদ ভাই নতুন নাটক নামাইছে। তোর যে অবস্থা তোরে তো মনে হয়না নাটক দেখাইতে পারবো খুব তাড়াতাড়ি”।
আমি কাশতে কাশতে বলি, “দোস্ত ওই নাটকগুলো আমার আসলে বিশ্রী লাগে।
কি সব বলে, দৌড়ায় দৌড়ায় কেমন কেমন করে যেন টেনে টেনে সংলাপ বলে। আমার ওইসব ভালো লাগেনা। তারথেকে টিভিতে বসে ক্যারাম লুডু এইসব নাটকই ভালো লাগে”।
বজলু একটু পর কানে কানে বলে, “তোর পাশের বেডে যে মেয়েটা ভর্তি হয়েছে তার দিকে কিন্তু নজর দিসনা। আমি এদের কথাবার্তা শুনে বুঝেছি, এরা ঢাকাইয়া, নোয়াখালী জাত ঢাকাইয়া।
খবরদার দোস্ত”।
আমি চোখ বড় বড় করে বললাম, “ছাগলু আমার ওই বয়স কি আর আছে। তারমধ্যে বিবাহও হয়েছিলো একবার। পাশের বেডের মেয়েটার নাম মুনা, বয়স অতি অল্প। আর তাছাড়া চরিত্রে আমি রজনীগন্ধা ফুলের মত পবিত্র”।
বজলু মাথা চুলকায় বলে, “মেয়ে মাস্টার্স পরীক্ষার্থী, বয়স কমপক্ষে ২৫ বছর। এরে তোর অল্প বয়স্ক মনে হয়?মেয়ে কিছু খায়না, জোর করেও খাওয়ানো যায়না। যা খায় সব বমি করে দেয়। এইজন্য একটু শুকায় বাচ্চা বাচ্চা লাগে”।
আমি বললাম, “তুই এখনো খুব ঈতর আছিস।
হাসপাতালেও বেটা নারীদের পিছনে ছোক ছোক করিস ছাগু”।
ছাগুরাজ বজলু তার লুচ্চা টাইপ হাসিটা দিয়ে বলে, “তোকে একটা খবর দেয়া হয়নাই। আমি বাবা হতে চলছি। এটুকু বলে বজলু মাথা নিচু করে থাকে”।
আমি যতটা না খুশি হলাম তার থেকে বেশি হতভম্ব হলাম বজলুর বলার ভঙ্গি দেখে।
আমি তার মাথায় হাত দিয়ে বললাম, “ছি বাবা! এভাবে লজ্জা পায়না, কয় মাস বাকি তোমার”।
বজলু না বুঝে বলে, আর মাত্র পাচ মাস। তারপর আমতা আমতা করে বলে, “ইয়ে মানে আমার বৌয়ের আর পাচ মাস বাকি। কেন যেন বাবা হইতেছি এই কথাটা কাউরে বলতে লজ্জা লাগে। আমার জন্য দোয়া করিস, বেশি করবি বাচ্চাটার জন্য”।
বজলু চলে গেলে আমি আবার একটু ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুম থেকে উঠে দেখি মুনা নামের মেয়েটা চুপ করে বসে আছে পাশের বিছানায়। আমি তার দিকে একসময় জিজ্ঞেস করলাম, “কেমন আছেন?”
মুনা আমার দিকে তাকিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে হাসি দিয়ে বললো, “ভালো নেই। আবার হয়তো একটু একটু ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?”
আমি ভালো আছি মুনা, কথাটা বলে হঠাৎ করে একটা ধাক্কা খেলাম।
এই কথাটা আমি একজনকে বলেছিলাম। সমস্যা হয়েছে এই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমার মাথাটাও কেন যেন আউলিয়ে গেছে। আগের অনেক কিছুই মনে করতে পারিনা।
মুনা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো, “আমার নাম তো জানেন। আপনার নামটা বলুন তো শুনি”।
আমি একটু অন্যমনস্ক হয়ে বললাম, “আমার নাম হাসনাত। অর্ক হাসনাত। আমি একটা কলেজে পড়াতাম”।
মুনা ওর বেডের সাথে লাগানো সাদা পর্দা দিয়ে ঢাকা জানালা খুলে বললো, “শিক্ষক মানুষ খুব বিরক্তকর হয়। এই হাসপাতালে আমাকে মনে হয় অনেকদিন থাকতে হবে।
আপনি নিশ্চয়ই আমাকে জ্ঞানগর্ভ কথা বলে বিরক্ত করবেন না”।
আমি মাথা নেড়ে বললাম, “আমি শিক্ষক হিসেবে খুব একটা সুবিধার ছিলাম না। আমাকে কলেজের প্রিন্সিপাল দু বার ওয়ার্নিং দিয়েছিলেন, আমি আলহামদুলিল্লাহ বলে হজমও করে নিয়েছিলাম”।
মুনা হেসে ফেললো। তারপর বললো, “আমার অনার্স শেষ হয়েছে কিছুদিন আগে।
এইবছর মাস্টার্স দেয়ার কথা। আমি একজন বোটানিস্ট। জ্ঞানীগুণী বোটানিস্ট”।
আমি শুকনো হাসি দিয়ে বললাম, “ভয়ানক ব্যাপার মুনা। আমার গাছ খুব ভালো লাগে।
আমাকে গাছের গল্প শোনাবে, অদ্ভুত গাছগুলোর গল্প। ঠিক আছে?”
এরপর তিনচারদিন ধরে মুনা আমাকে নানা গাছের গল্প বলে। ক্যালিফোর্নিয়ার পেবল বীচে ঘরবসতি করে তোলা একাকী সাইপ্রাসের গল্প বলার সময় তার চোখ দিয়ে জল পড়ে। কখনও কখনও সে গল্প করে সুন্দরবনের সুন্দরী গাছের। আমি মন দিয়ে শুনি।
পানি সঞ্চয় করে রাখতে পারে এমন একটি গাছের কথাও সে আমাকে খুব চমৎকার বর্ণনা দিয়ে শোনালো। গাছটির নাম বোতল বৃক্ষ। আফ্রিকা অথবা অস্ট্রেলিয়ায় তারা বাস করে, অনেকে এদেরকে বাওবাব বৃক্ষও বলে থাকে। একদিন এমনি করে পৃথিবীর সব সুন্দর সুন্দর সৃষ্টিগুলোর কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে মুনা খুব কাদতে থাকে, আমার খুব কষ্ট হয় তখন। আমি চুপ করে অপেক্ষা করি কখন মুনা কথা বলবে।
মুনা আমার সাথে সেদিন আর একটা কথাও বলেনা।
পরেরদিন খুব ভোরবেলা মুনা আমাকে আস্তে আস্তে ডাকতে থাকে। আমি উঠে বসলে মুনা আমাকে বলে, “আপনাকে সেদিন হামিংবার্ডের মধু সংগ্রহের গল্প বলছিলাম না?”
আমি মাথা নেড়ে তাকিয়ে থাকি ওর দিকে। মুনার দুই চোখ ফুলে গেছে। আমার মনে হয় ও সারারাত কেদেছে।
মুনা ফিসফিস করে বলে, “ছেলেটা জানেন এমন একটা হামিং বার্ডের ছবি একেছিলো। আমার কাছে ছবিটা আছে। দেখবেন?”
আমি মাথা নাড়লে মুনা বেডের নিচ থেকে একটা ব্যাগ বের করে। সেখান থেকে একটা মোড়ানো আর্ট পেপার বের করে বলে, “আমি কখনো এটা হাতছাড়া করিনা। এই দেখেন ছবিটা”।
ছবিটা দেখে আমার মাথা গরম হয়ে যায়। এত সুন্দর করে একজন ছবি আকতে পারে আমার ধারণা ছিলোনা। মনে হচ্ছে ছোট্ট হামিং বার্ডটা সত্যি সত্যি পাখা নাড়ছে। যেই ফুল থেকে সে মধু সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে সেটায় সারা রাত্রি শিশিরভেজা সিক্ততা। আমি মুনার দিকে তাকিয়ে বলি, “তোমাকে বলি যে ছবিটা একেছে তার হৃদয়ে নিশ্চিত ঈশ্বর বাস করেন।
এমন সৌন্দর্য দেখে চোখে পানি এসে যায়”।
মুনার মুখে তখন হাসি ঝলমল করে। আমাকে বলে, “জুনায়েদ যখন আমাকে ছবিটা উপহার দেয় বলেছিলো আমি নাকি এমনই একটা ছোট্ট হামিং বার্ড। আর এই ফুলটা ও। এই দেখেন ছবির নিচে কি সুন্দর করে লেখা, আমার ছোট্ট হামিং বার্ডকে।
আমার হৃদয়ের সব মধু তুমি এমন যত্ন করে আহরণ করো। যত্নে রেখো ভালোবাসাকে”।
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলি। মুনাকে বলি, “ছেলেটা হারিয়ে গেলো কেমন করে?”
মুনা সারা মুখ থমথম করে। ফিসফিস করে বললো, “আমি মেরে ফেলেছি।
বিশ্বাস করেন আমি মেরে ফেলেছি”।
আমি ওর হাত ধরে বললাম, “ভালোবাসার মানুষকে কেউ মেরে ফেলেনা। বলো কি হয়েছে? আমি শুনি, বলো”।
মুনা কিছু না বলে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফুপিয়ে ফুপিয়ে বললো, “আমি ঝগড়া করেছিলাম একদিন। খুব ঝগড়া।
আমার সাথে ঠিকমত দেখা করেনা তাই ঝগড়া করেছিলাম। ও আমাকে আর ভালোবাসতোনা। আরেকজনকে ভালোবাসতো, ওই মেয়েটার ছবি আকতো। আমার অনেক কষ্ট হতো। একদিন দেখলাম ওই মেয়েটার হাত ধরে বসে আছে।
আমি সেদিন রাতে ফোন করে ওকে অনেক বাজে কথা বলেছিলাম। এরপর দিন ও এক্সিডেন্ট করে। বিশ্বাস করেন, ও শুধু আমাকে ভালোবাসতো। আর কাউকে না। আমি জানি আর কাউকে না।
জানেন ও আমাকে কি সুন্দর করে সব কবিতা লিখে দিতো। আমার হাত ধরে গান গেয়ে শুনাতো। কতদিন কল্পনায় ওর হাত ধরে ঘুমিয়ে ছিলাম। আমি ওকে না ভুলতে পারিনা, একদম ভুলতে পারিনা। ওর নিঃশ্বাসের শব্দ খুব কানে বাজে।
আমার ওর কাছে চলে যেতে ইচ্ছা করে। খুব ইচ্ছা করে। আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন আল্লাহ আমাকে ওর কাছে নিয়ে যায়। আমার বাবা মাও বেচে নেই যে আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দেবে”।
আমি আমতা আমতা করে জিজ্ঞাসা করি, “উনি কে হোন তাহলে তোমার যিনি প্রতিদিন তোমার জন্য খাবার দাবাড় দিয়ে যান”।
মুনা চোখ মুছে বলে, “উনি আমার ফুপু হোন”।
আমি চোখ বুজে শুয়ে থাকি। আমার মাথা ঘুরছিলো মুনার সব কথা শুনে। আমি একজন মুনাকে খুব ভালোবাসতাম একসময়। আমি শুধু একদিন, শুধু একটা কবিতা মুনাকে লিখেছিলাম,
“মুনা
তুমি নীল মুক্তার কণা
ভালোবাসি কতটা
আছে কি তা জানা”
সেই ছোট্টকালে ভালোবাসলাম মেয়েটাকে।
বয়স কতই বা হবে মাত্র পনেরো হয়তো। আমাদের ক্লাসেই পড়তো। আমাকে দেখলে চোখ বড় বড় করে দুষ্টুমি একটা হাসি দিতো। আমি মাথা নিচু করে ওর পাশে দাঁড়িয়ে থাকতাম। আমি আমার পাশের বেডে শুয়ে থাকা আরেক মুনার দিকে তাকিয়ে ভালোবাসার মেয়েটাকে খুব খোজার চেষ্টা করি।
প্রায় দেড়যুগ পর আমি একই নামের অথচ কতটা ভিন্ন এক সত্তাকে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছিলাম। আমি ওকে ডেকে বলি, “একটা গল্প বলি”।
মুনা আমার দিকে মাথা নাড়ে। আমি ওকে বলি, “আমি একটাসময় তোমার মতই খুব যত্ন করে একজনকে ভালোবাসতাম। এক বছর তাকে মনে মনে সাজিয়ে গল্প বানিয়েছি, কিছু বলতে পারিনি।
একদিন কি করলাম শোন। খুব সাহস করে তার হাতটা ধরে বললাম, একটা নীল কালিতে লিখা চিঠিও ধরিয়ে দিলাম। আমার খুব ভয় হয়েছিলো, সে ওই চিঠি নিয়ে খুব ফাজলামী করবে। অদ্ভুত ব্যাপার সে খুব লজ্জা পায়। এরপর সারাক্ষণ সে আমার পিছে পিছে ঘুরতো।
মাঝে মাঝে আহলাদ করে বলতো, একটা আইসক্রিম খাওয়াবা”।
মুনা বললো, “আপনাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো সে?”
আমি মাথা নেড়ে বললাম, “নাহ কেউ কাউকে ছেড়ে যায়নি। ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিলো ইন্টার পরীক্ষার পরই। আমি ওর বিয়েতে উপস্থিত ছিলাম, খুব আশা করে গিয়েছিলাম। বাচ্চা মেয়ে ছিলো তো তাই সাহস করে আমার হাতটা ধরতে পারিনি।
বিয়ের পর ও একটা সোনালী রঙের গাড়িতে করে চলে যাচ্ছিলো। আমি ওকে সাহস করে ওর গাড়ির কাছে এগিয়ে গিয়েছিলাম। যখন বুঝতে পারলাম ও আমার হাত কখনও আর ধরতে পারবেনা তখন নিজ হাতে ওকে গাড়িতে তুলে দিয়েছিলাম। সবাই তখন অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। ওর বাবা মা কেউ আমাকে চিনতোনা।
ঠিক যখন তুলে দিচ্ছিলাম ও আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলো, কেমন আছো?”
আমি ওকে বলেছিলাম, “ভালো আছি মুনা”।
মুনা চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞাসা করলো “আমার আর উনার নাম এক ছিলো? অদ্ভুত ব্যাপার তো? আপনি সত্য সব বলছেন? নাকি গল্প বানাচ্ছেন?”
আমি মুনার কথার উত্তর দেইনা। গল্পে গল্পে বলি, “হাস্যকর ব্যাপার হলো কোন একদিন আমরা কর্ণফুলির শান্ত ঢেউয়ে পা ডুবিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বিয়ে বিয়ে খেলা করেছিলাম। আমার মনে হয়েছিলো সেদিন আমি অনেক বড় হয়ে গেছি। আমার বিয়ে হয়ে গেছে।
এখনও মনে হয় জানো আমি বিবাহিত”।
মুনা বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বললো, “আপনি এরপর আর বিয়ে করেন নাই!!”
আমি হেসে বলি, “আমার বয়স মাত্র ৩৩। এত অল্প বয়সে কেউ বিয়ে করে? এখনও তো নিজের পায়েই দাড়াতে পারলাম না”।
মুনা হাসতে হাসতে বলে, “৩৩ অল্প বয়স? আপনি আমার থেকে পুরা এক দশক সিনিয়র। একজন বিশিষ্ট বুইড়া ব্যাটা”।
আমি হাসতে হাসতে বলি, “তোমার কি হয়েছে বলো তো এখন মুনা? হাসপাতালে কেন তোমাকে ভর্তি করালো?”
মুনা হাসিমুখেই বললো, “আমি যে অনেক অসুস্থ তা আমাকে দেখে বোঝা যায়না তাই না? আমি এই হাসপাতালে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে পড়ে আছি। কিছুদিন আগে বিষ খেয়ে কেবিনে পড়ে ছিলাম, এখন একটু সুস্থ তো, তাই জেনারেল ওয়ার্ডে নিয়ে এসেছে”।
আমার দিকে তাকিয়ে মুনা আবার জিজ্ঞাসা করলো, “আপনি হাত পা ভাঙ্গলেন কি করে?”
আমি মাথা নেড়ে বলি, “কিছু মনে নেই জানো। আম্মু একটু পর আসলে তাকে জিজ্ঞাসা করো”।
মুনা আমার দিকে গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে বললো, “আচ্ছা”।
সেদিন গভীর রাতে ঢাকা শহরে প্রচন্ড ঝড়। আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলে হাসফাস করতে থাকি। পেটে হাত চেপে উঠে বসলাম অনেক কষ্টে। দেখলাম আমার গোঙ্গানীতে মুনার ঘুম ভেঙ্গে গেছে। আমাকে চোখ খুলে জিজ্ঞাসা করলো, “আপনার কি অনেক বেশি খারাপ লাগছে?”
আমি মাথা নেড়ে বলি, “আমি তোমাকে একটা মিথ্যা কথা বলেছি”।
মুনা মাথা নেড়ে বললো, “সমস্যা নেই। এখন বলতে হবেনা। আমার ফুপু পাশে শুয়ে আছেন, উনাকে ডাকবো?”
আমি মাথা নেড়ে ওকে না করি। ওকে বলি, “মুনা আমি আসলে হাত পা ভাঙ্গার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হই নাই। আমার লিভারটা নষ্ট হয়ে গেছে জানো? বেশিদিন মনে হয় আর বাচবোনা?”
মুনা কিছু না বলে আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে।
আমি এরপর কিছু আর মনে করতে পারিনা। কখন জ্ঞান হারিয়ে ফেলি বুঝে উঠতে পারিনি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার বন্ধু বজলু সাথে দুইজন বেশ ভারী ডাক্তার পাশে দাঁড়িয়ে হা হু করছে। আমি চোখ আবার বন্ধ করে তাদের কথা শুনার চেষ্টা করছি। শুনছিলাম আমার বন্ধু বজলু কাদো কাদো হয়ে বলছে, “আমি ছাড়া আসলে ওর আর কেউ নাই স্যার।
ভালো হাসপাতালে যে ভর্তি করাবো সেই সামর্থ্যও নাই। আমার বন্ধুটাকে বাচানো যায়না?”
ডাক্তার সাহেবরা নিশ্চুপ হয়ে থাকেন। হাতের ফাইলে কি কি যেন লিখে সংক্ষেপে বললেন, “সব আল্লাহর ইচ্ছা”।
সবাই চলে গেলে আমি বজলুর দিকে তাকিয়ে বলি, “কিরে ব্যাটা খবর নাই কেন এতদিন। দে আজকে একটা বিড়ি খাই”।
বজলু কিছু না বলে চলে যায়। যাওয়ার আগে মুখ পিছনে নিয়ে বলে, “আমি আর আসবোনা এখানে। আমি তোর জন্য কিচ্ছু করতে পারলাম না দোস্ত মাফ করিস”।
আমি কিছু না বলে ছোট্ট করে হাসি। বজলু কালকে আবার সকালে দৌড়ায় দৌড়ায় আসবে এটা আমি জানি।
বিকেলে শুয়ে শুয়ে যখন বই পড়ছিলাম তখন মুনা হঠাৎ করে আমাকে জিজ্ঞেস করে, “আপনার মা মারা গেছেন কবে?”
আমি কিছু না বলে বইটা বন্ধ করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। মুনাও আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি একসময় ওকে বলি, “আমার মা বেচে আছেন, এই যে ওয়ার্ডের দরজার বাহিরে আছেন। কে তোমাকে বলেছে সে মারা গেছেন?”
মুনা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আমি ওকে বলি, “আমার আসলে কেউ নাই।
১৪ বছর বয়সে মা হারিয়ে গেলে যখনই একা বোধ করতাম মাকে পাশে কল্পনা করতাম। আমার কখনও তাহলে আর একা লাগতোনা। বুঝাতে পেরেছি?”
মুনা আবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “আমারও এই ফুপু ছাড়া আর কেউ নাই। আপনার সাথে আমার কত মিল দেখছেন?”
আমি বিজ্ঞের মত মাথা নেড়ে বললাম, “বিশাল মিল। তোমার সাথে বয়স আরেকটু কম হলে প্রেম করার সর্বাত্তক চেষ্টা করতাম”।
মুনা হেসে ফেলে বললো, “আপনার যে উদ্দেশ্য ভালো না সেটা আমি বুঝতে পারছি আগেই। প্রায়ই প্রেম প্রেম ভাব নিয়ে তাকিয়ে থাকেন আমি খেয়াল করেছি”।
আমি চোখ থেকে চশমা খুলে বলি, “হুমম। ঘটনা খারাপ। তোমার দিকে তো আর তাকানো যাবেনা”।
মুনা হঠাৎ গম্ভীর হয়ে আমাকে বললো, “জানেন আমার হার্টে একটা ছোট্ট ছিদ্র আছে। একদম ছোট্ট। মাঝে মাঝে বুকে খুব ব্যথা হয়। ছোট্ট ঐ ফুটোটার জন্য না, মরে যাবো সেই জন্য। আমার খুব বাচতে ইচ্ছা করে।
আপনার ইচ্ছা করেনা?”
আমি মাথা নেড়ে বলি, “খুব ইচ্ছা করে মাঝে মাঝে। মুনা নামের যে মেয়েটাকে ভালোবাসতাম তাকে একবার খুব দেখার ইচ্ছা। ও এখন ইতালী থাকে। ছোট্ট একটা মেয়েও আছে জানো। মেয়েটা দেখতে অবশ্য ওর মত না।
শুনেছি মেয়েটা দত্তক নেয়া, নিজের সন্তান হবেনা তো তাই। আমার একটাই শখ ছিলো ইতালী যাবো, মুনাকে একবার খুব কাছ থেকে দেখবো। ওর দুষ্টু দুষ্টু নয়ন দেখতে খুব লোভ হয়। আমি সামান্য স্কুলের শিক্ষক, তবুও প্রায় ৭ বছর ধরে যা পারি টাকা জমাচ্ছিলাম। প্রায় ১ লক্ষ ছিয়াশি হাজার টাকা জমিয়েছিলাম।
জানো মুনা, টাকাগুলো সব শেষ হয়ে গেলো। আমি একটা বেসরকারী হাসপাতালে ছিলাম। সব টাকা শেষ হয়ে গেলো সেখানে মাত্র পাচ দিনে। আমার বন্ধু বজলু পরে আমাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে দেয়। মুনা আর ওর বাচ্চাটাকে এখন খুব দেখতে ইচ্ছা হয়”।
আমি আর মুনা দুইজন দুইজনের দিকে তাকিয়ে থাকি। দুজনের চোখ ভরা পানি, সেই পানির আড়ালে কত আকাংক্ষা, না পাওয়ার গল্প তা কাউকে কখনও বোঝানো যায়না। মুনা আমাকে বলে, “আমার মনে হয় কি জানেন। মরে যাচ্ছি ব্যাপারটা খুব একটা খারাপ না। হয়তো অসাধারণ কিছু লুকিয়ে আছে মৃত্যুর পরের সময়টাতে”।
আমি মাথা নেড়ে বলি, “কথা সত্য। আমার খুব ভালো লাগে যখন মনে হয় মার সাথে আমার আবার দেখা হবে। মার কাছে চুপ করে তখন বসে থাকবো। মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে আবার, কি শান্তি লাগে ভাবলে তা বোঝানো যাবেনা”।
সেদিন বিকেলে আমি আর মুনা দুইজনই জানালা দিয়ে রংধনু দেখছিলাম।
আজকে সকাল থেকে দুপুর স্তব্ধ করে দেয়া বৃষ্টি হয়েছে। ঠিক সাড়ে তিনটায় বৃষ্টি থেমে যায়। এরপর সাত রঙের খেলা, শুধুই অমানবিক সৌন্দর্যের খেলা। আমি মুনাকে জিজ্ঞাসা করি, “ভয়ানক ব্যাপার বুঝলা। আমি কখনও এত বড় রংধনু আগে দেখিনাই”।
মুনা বললো, “সত্যি কথা বলবেন একটা?”
আমি মাথা নেড়ে বললাম, “হুমম বলবো”।
মুনা খুব গভীর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “আপনার আমাকে ভালো লাগে?আমাকে কি ভালো লাগার মত মনে হয়?”
আমি টাশকি খেয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম, “হ্যা। গল্প করতে বেশ ভালো লাগে”।
মুনা শব্দ করে হেসে দিলো, ওর হাসিটা খুব মলিন হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। আমিও আগের মত সব অনুভব করতে পারিনা।
কিন্তু ও এমন করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো, আমি খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। ভিতরে কিছু একটা আমার এখনো আছে তা হয়তো বুঝতে পারছিলাম। মুনার হাসি থামলে আমাকে বললো, “আমি জুনায়েদকে প্রায় জিজ্ঞাসা করতাম এই কথাটা। ও খুব লজ্জা পেত। একদিন আমার হাত ধরে বললো, খুব লাগে, বুঝোনা? আমাতে ছিলো সেদিন নয়ন ভরা জল।
আর জল সমার্পন শুধু তার কাছে”।
মুনা এমন করে তার জীবনের কত শত গল্প আমাকে বলে। আমার শুনতে বেশ লাগে। কখনোও কেউ এত আপন করে আমাকে কিছু বলেনি। ও খুব হাত নাড়িয়ে আমাকে এই সেই কত শত বলতো।
আমি সব সময়ের মত একজন খুব ভালো শ্রোতা ছিলো। আজকাল মাঝে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি। দিন দিন পেটের নিচের ব্যাথাটা আরো অসহ্য হয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চায় যন্ত্রণায়। কখন যে ভয়াবহ যন্ত্রণায় চেতনা হারিয়ে ফেলি টের পাইনা।
আবার যখন জেগে উঠি আশেপাশে সবকিছু এত সুন্দর লাগে বুঝাতে পারবোনা। সেদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে আমি এক দৃষ্টিতে মুনার হাতের চুড়ির দিকে তাকিয়ে ছিলাম। মুনা তখন কুটকুট করে ডালিম খাচ্ছিলো। আমি ওকে আস্তে আস্তে বললাম, “আজকাল খুব খারাপ বোধ হয়। হাসপাতাল থেকে গ্রামের বাড়িতে চলে যেতে খুব ইচ্ছা করে”।
মুনা আমার দিকে তাকিয়ে বলে, চলে যাচ্ছেন না কেন?
আমি ক্লান্ত কন্ঠে বলি, “আমার বন্ধু বজলু আটকে রেখেছে। ও বলে ডাক্তাররা আমাকে নিয়ে একটা বোর্ড মিটিং করে পরের সপ্তাহের মধ্যে একটা কি অপারেশন করবে। আমার এখনো চান্স আছে”।
মুনা হাসিমুখে বললো, “আমার একটা ভালো খবর আছে। আমার বন্ধুরা টাকা পয়সা জোগাড় করে আমাকে এখন সিঙ্গাপুরে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে।
আজকে সন্ধ্যার পরে আমাকে এখান থেকে রিলিজ করে দেবে জানেন?”
আমি খুব খুশি হয়ে বললাম, “খুব ভালো হলো। আর দুই একদিন থাকলে আমি তোমার প্রেমে পড়ে যেতাম”।
মুনা গম্ভীর হয়ে বললো, “এখনো পড়েন নাই?”
আমি বললাম, “নাহ! আরো সময় লাগবে”।
মুনা বিকেলে যখন চলে যাচ্ছিলো তখন আমি আমার বেডে শুয়ে আছি পেটে প্রচন্ড যন্ত্রণা নিয়ে। ও আমার বেডের কাছে এসে বললো, “আপনি অনেক ভালো মানুষ জানেন?”
আমি বললাম, “কেন?”
মুনা আমার হাত ধরে বললো, “যেই মানুষটাকে এত ভালোবাসেন তাকে সেদিন যেতে দেয়া ঠিক হয়নাই”।
আমি মাথা নেড়ে বলি, “তোমাকেও একটা কথা বলি শোন। আমরা সবাই কাউকে না কাউকে হারাই। মানুষটা যখন ভালোবাসার হয় তখন সে খুব যত্নে বুকের মাঝখানে থেকে। তুমি যখন কষ্ট পাবে তখন সেই সত্তাটাও অনেক কষ্ট পায়। আমি তোমার জন্য দোয়া করি মুনা তুমি সুস্থ হয়ে ওঠো, তোমার জীবনটা যেন অনেক সুন্দর হয়”।
মুনার হাতটা ছাড়তে ইচ্ছা করছিলোনা। আমার ৩৩ বছরের জীবনে আমি কখনো কাউকে এভাবে শক্ত করে ধরে রাখতে পারিনি। সবাই একে একে চলে গেছে। মা মাঝে মাঝে শুধু আসে একটু দেখা দিয়ে যায়। একটু শান্তি দিয়ে যায়।
মুনা আমার পাশে অনেকক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। চলে যাবার ঠিক আগে আমাকে বললো, “আপনি যদি সুস্থ হয়ে ওঠেন আমার সাথে দেখা করবেন। আমি যদি তখন বেচে থাকি আপনার সাথে সারাদিন গল্প করবো। আপনার বয়সটা একটু বেশি হলেও আমি আপনার সাথে অবশ্যই প্রেম করবো। যাই হা?”
মুনার চোখ ভরা তখন কিসের যেন জল, আমার চোখেও জল।
এই জলটা আমি লুকিয়ে রেখেছিলাম সারাজীবন, আজকেও রাখবো। আমি মনে মনে মুনাকে বলি, “আবার যেন দেখা হয়। ঝকঝকে নীল আকাশে ঘেরা এক পূর্ণ জীবনে। আমি তোমাকে জীবনের গল্প শোনাবো। গত ৩৩ বছর ধরে যে জীবনটা আমার না পাওয়া সেই গল্পটা শোনাবো।
বিশ্বাস করো এই গল্পগুলো বলার জন্য তোমার হাত ধরতে হবেনা তোমাকে ভালোবাসতে হবেনা। আজকে বিদায় নিচ্ছি তোমার থেকে, কাল নেবো জীবন থেকে। শুধু স্মৃতি থেকে বিদায় দিওনা”।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।