কত কিছু যে করতে চাই, তবুও কিছু করতে না পারার দায়ে মাথা খুঁটে মরি । মানুষ ঘুরতে যায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, বান্দরবান নয়ত সুন্দরবন। আর আমি গেলাম সিরাজগঞ্জ। মনীষী আকাশ_পাগলা কেন এই কাজ করল? জাতি অনেকদিন ধরেই একে অপরকে এই প্রশ্ন করছে। অবশেষে আমি ভাবলাম পুরো কাহিনী জানানো দরকার।
এই রহস্যের মূলে ছিলো সিরাজগঞ্জের সিঙ্গাড়া। আর এই সিঙ্গাড়ার কাহিনী চলতে থাকবে ঘটনার শেষ পর্ব পর্যন্ত। Adventure of Sinbad ইয়ে মানে মনীষী আকাশ_পাগলার কাহিনী নিয়ে আলিফ লায়লা লেখা হয়ে যেতে পারে।
পর্ব – কমোড Vs. The World
এই মাসেই ঘুরতে গিয়েছিলাম সিরাজগঞ্জ। এক ফ্রেন্ডের বাসায়।
হঠাৎ ডিসিশান। এই বন্ধু প্রায় তিন বছর ধরে ঢাকার সিঙ্গাড়া খায় না। মাঝে মাঝে খায়, ভিতরের আলু ফেলে দিয়ে খায়। এর কারণ হল, সিরাজগঞ্জের যেখানে সে থাকে, সেখানকার সিঙ্গাড়া এতই স্বাদ যে আর কোন জায়গারটা সে খাবেই না।
ফ্রেণ্ডদের সাথে কয়েকদিনের ট্যুরে এর আগে আমার যাওয়া হয়নি।
হঠাৎ করে ডিসিশান হওয়ায় না বলার আর সুযোগ নেই। সিরাজগঞ্জের সেই সিঙ্গাড়া খেতে চলে গেলাম সিরাজগঞ্জ। বৃহস্পতিবার রওনা দিলাম। আমার খুব ইমপর্টেন্ট ক্লাস ছিল শনিবার। বাদ।
রবিবার আমার দুটা ক্লাস টেস্ট। ঠিক হল, শনিবার রাতে ফেরত আসার সময় আমি পড়ে নিবো। বাকিদের কারও ঐ দুটা সাবজেক্ট নেই। আমি নিতান্ত খারাপ ছাত্র বলে এদের কথায় রাজি হয়ে গেলাম। আর ধরেছেও এত শক্ত ভাবে, না করার জো নেই।
প্রথমেই ট্রেন ভ্রমণ। বৃহস্পতিবার ক্লাস শেষে এয়ারপোর্ট স্টেশনে চলে গেলাম। লোকাস বাসে দাঁড়াতে হল এক আঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে। পুরা পায়ের পাতা ফেলার কোন জায়গা নাই। হাই ফাই গাড়ি ওয়ালা মন্ত্রী মিনিস্টার কোনদিন এই কষ্ট বুঝবেনা।
আর ট্রাফিক জ্যামে হায় রে গরম !! তখন প্রায় মনে হচ্ছিল সব বাদ দিয়ে বাসায় চলে যাই !
ট্রেনের ভ্রমণ আমার খুব বেশি নাই। অল্প দুএকবার হয়েছিল ভাল লাগেনি। ১ মাইল যাওয়ার আগে ১০০ বার থামে। কিন্তু সবার থেকে শুনি যে ট্রেন ভ্রমণের মত মজা নাকি আর নাই। ত আমি আবারও আগ্রহী হয়ে উঠলাম, ট্রেনের মজা এবার নিয়েই ছাড়ব।
৩টা ১০ এর ট্রেন ৩টা ১০এই হাজির। প্রথমেই আমি টাশকি, ওরে বাবা এত ভীড় ! গাট্টি বস্তা নিয়ে আমি কোনমতে ট্রেনে উঠলাম। টিকিট কাটা আছে বটে, কিন্তু সেই সিট কোনদিকে ? ডানে নাকি বামে ঢুকব? যা থাকে কপালে, ডানে ঢুকলাম। এত ভীড়ে হাঁটার জো নেই। কোনমতে হেঁটে যেয়ে দেখি বন্ধুরা সিট পেয়ে গেছে।
অতক্ষণে একটা কাহিনী ঘটে গেছে। আমরা ছিলাম পাঁচজন। এক পাশে দুটো সিট আরেক পাশে তিনটার মাঝে আমাদের দুটা। আর সামনে একটা। পাশের দুটার জায়গায় তিনটা সিট আমরা নিতে চাই, আর ওখানে যিনি ছিলেন তাকে রিকোয়েস্ট করলাম তার সামনের সিটটায় বসতে যেটার টিকিট আমরা কেটেছি।
আশেপাশের মানুষও ও ব্যাটাকে তাই বলল। কিন্তু সে জায়গা ছাড়বে না। তার কথা হল, তার জায়গা এটা সে এখানেই থাকবে।
মেজাজটা এত চড়ে গেল। আরে, এ ব্যাটা বাচ্চা পোলাপান নাকি? সিটটা ভর্তা করে ওকে খাইয়ে দেয়া দরকার।
কিছু আর বললাম না, টিকিট ওর। ও রাজি না হলে কী করা।
সামনে যেই বন্ধু বসছে, ও পিছে ঘুরে মাঝে মাঝে কথা বলতেছে। পাশে থেকে আরেক লোক কমপ্লেইন দিলো, “হই মিয়া, এত ঘুরেন ক্যান? আপনারা বন্ধু না? রাতে যায়া কথা বইলেন। ” কী আর করা, চুপচাপ বসে থাকতে বাধ্য হলাম।
ট্রেনে যে কী ভীড়। আমার সিটে এক হাত দিয়ে সামনের সিটে আরেক হাত দিয়ে আমার দিকে বগল বের করে এক লোক দাঁড়িয়ে আছে। আরেকজন আমার সিটের হাতলে বসে আছে। পাশের সারিতে দুটা সিটে যেসব ফ্রেন্ড আছে, ওদেরকে সেলফোনে কল দিয়ে, ফেসবুকের চ্যাটে কথা বলা লাগল।
ফার্স্ট ক্লাস সিটে এই অবস্থা।
যারা দাঁড়িয়ে আছে, তাদের কারও টিকিট নাই। টিকেট চেকার যে কত টাকার মালিক !! আমি সত্য বুঝতে পারলাম। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে কী হবে এর চেয়ে টিকিট চেকার হওয়াটা অনেক ভালো।
এমনকি সিটে সোজা হয়ে বসতে পর্যন্ত পারিনি। মানুষের চাপে।
এখন আমি বসে আছি, বাকিরা দাঁড়িয়ে আছে। আমি ত আর ওদের ধমক দিতে পারি না, বা বলতেও বাঁধছিল যে আমার সিটের হাতল থেকে উঠে দাঁড়ান। কিন্তু আমি নিজেও বসেছি পুরা ব্যাকা হয়ে। ঘাড় টার পুরা ব্যাথা হয়ে গেল। কারও সাথে মোবাইলে কথা বলব সে জো নেই।
হাতলে বসা লোকটা, পায়ের ফাঁকে দাঁড়ানো লোকটা কথা শুনছে !
ট্রেনের মজা শিক্ষা আমার কমপ্লিট। আসার প্ল্যান চেঞ্জ করলাম, সিরাজগঞ্জ হোক কী লন্ডন, ফেরত আসতে হবে রিকশায়। সেটাই আপাতত সবচেয়ে আরাম মনে হচ্ছে।
কিন্তু আসল ঘটনাই বাকি। শেষের দিকে লোকজন কিছুটা কমায় সামনের সিটে বসা বন্ধুটা আবার পিছে ফিরে গল্প শুরু করল।
আমরা তিনজন একটা পপকর্ন নিলাম। খেয়েই মনে হল কিছু একটা সমস্যা। আরে এ কী, অস্বস্তি বেড়েই চলছে।
ট্রেন থেকে নামলাম। সিএনজি ঠিক করাও শেষ।
ঢাকার বাইরের সিএনজিতে আবার সামনে বসার জন্য ড্রাইভারের দুদিকে বসার খুব ভাল ব্যবস্থা আছে। ত আমরা পাঁচজন রওনা দিলাম। ওদিকে আমার অস্বস্তি বেড়েই চলছে। বন্ধুর বাসায় যখন যাবো বাথরুমে সবার আগে আমিই যাবো – সিরিয়ালটা আগেই দিয়ে রাখলাম।
আমরা নতুন শহর দেখছি।
এলোমেলো হাঁটছি। সিএনজি দিয়ে এদিক সেদিকের গলি ঘুরে দেখছি। বন্ধুর বাসায় যাবো, কিছু আলুমূলাকলাটা নিতে হবে। এখন ওকেই বা বলি কী করে যে মিষ্টির দোকানে নিয়ে যা। ত আমরা সিএনজির ড্রাইভারকে বললাম যেন বাজারে নিয়ে যায়।
এ ব্যাটা নিয়ে গেল ইলেক্ট্রনিক্সের বাজারে। আর আমরা মিষ্টির দোকান খুঁজে শেষ।
ওদিকে হঠাৎ করে আমার আর্জেন্ট বাথরুম দরকার হয়ে গেছে। অবশেষে একটা মিষ্টির দোকান পেলাম। মিষ্টির দাম ত পরে, আগে বাথরুমের খোঁজ।
কিন্তু না, ওদের নাই। যার বাসায় এসেছি, ওকে সিএনজিতেই বসিয়ে রেখেছিলাম। দৌঁড়ে ওর কাছে গেলাম, “দোস্ত আর্জেন্ট বাথরুম বের কর। ” যারা ফল কিনতে দূরে ছিল, ওদেরও কল দিলাম। কিন্তু আমার অবস্থা শুধু আমিই বুঝি, বাকিরা ত বুঝে না।
ওরা বলতেছে আরেহ, দু মিনিট পরে ত যাবিই। তখন বাথরুম করিস।
সিএনজিতে ব্যাগ রেখে পাহাড়ায় কাউকে না রেখেই আমি ঐ বন্ধুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ব্যাগ স্যাক চুলায় যাক, আমার আগে বাথরুম দরকার। ওরে ভাই, কী যে কষ্ট !
এখানে আরেকটা ব্যাপার আছে।
আমি মোটামুটি আজীবন ঢাকায় থাকা কদু মার্কা মানুষ। জীবনে প্যান টয়লেট ব্যবহার করেছি খুবই অল্প। আজীবন কমোডে অভ্যাস। গ্রামে কেউ নাই, তাই খুব বেশি যাওয়াও হয়নি। যখন যাই প্যান টয়লেটে পেট সেভাবে পরিষ্কার হয়নি।
আর আমার শরীরটাও ভারী। এখন সিরাজগঞ্জে আমি এসেছি, এসব বুঝেই এসেছি। কিন্তু এরপরেও একটা কুটকুটানি ব্রেইনে ছিল। আমি পারব ত?
হাসবেন না, আমার অনেক পরিচিত লোক আছে সিগারেট না খেলে যাদের বাথরুম হয় না। বাথরুম শুধু শারীরিক না মানসিক ব্যাপারও।
এমনকি এমন একজনের শুনছিলাম, পেপার পড়ে চা না খেলে বাথরুম হয় না। যারা পান খায়, তাদের ত পান ছাড়া বাথরুম না হওয়াটা প্রচুর শুনি। সে তুলনায় আমারটা নিতান্তই সাধারণ।
ত অবশেষে অবস্থা যখন খুবই করুণ তখন খেয়াল করলাম যে, রাস্তার পাশেও দেখি কোন ড্রেন নেই, জঙ্গল বাদ গাছও নেই যে কোনায় চলে যাবো। জীবন বাঁচানো ফরজ ত, তাই না? ঠিক সেই মূহূর্তে বন্ধুরা খবর নিয়ে আসল যে বাথরুম পাওয়া গেছে।
অবশেষে ওরা আমার অবস্থা বুঝতে পেরেছে। ত দুই তলায় গেলাম, কিন্তু যেই কপাল দুটা বাথরুম আছে, দুটাতেই মানুষ বসে আছে। অপেক্ষা করতেই আছি। অতক্ষণে খবর পাওয়া গেল সিএনজি এখনও দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাগ নিয়ে ভাগে নাই।
ঘড়ি দেখতেই আছি।
অবশেষে এক বাথরুম খালি হল। আমি দৌড়ে গেলাম। ওরে কীসের কমোড কীসের প্যান টয়লেট? এ তো বাথরুম রে। কমোড বা ল্যাট্রিন জাতীয় সব কুটকুটানি আমার শ্যাষ, আহ আমি আরেক সত্য বুঝলাম; বাথরুমেই দুনিয়ার সব আরাম।
অবশেষে আমি বীরের মত বের হলাম। সিএনজিতে করে বন্ধুর বাসায় পৌঁছালাম। ওদিকে আঙ্কেল আন্টি খুবই চিন্তায় ছিলেন যে ট্রেন থেকে আমরা নেমেছি সেই কখন আর এখনও পৌঁছাইনি। আমার আমার ফ্রেন্ড এ জাতীয় প্রশ্নের মুখে প্রথমেই আত্মসমর্পণ করে। এই আকাশ সিএনজি থেকে নেমে টয়লেটে দৌড় দিছিলো।
ওরে আমার মান ইজ্জত পুরা গেল !
(তবে আমার ইজ্জত আমি মনে করি সাগর সমান। বালতি বালতি ইজ্জত গেলেও ইহা শেষ হইবে না। )
পরের দিন সকালে গেলাম মহাস্থানগড়। সেইটা একটা চরম এডভেঞ্চার আর টুইস্টে ভরা। সামনের পর্বে আসতেছে সিন্দাবাদের ২য় পর্ব।
© রিজভান হাসান ওরফে আকাশ
আমার ব্যক্তিগত ব্লগে প্রকাশিত।
আমার ব্লগের ফ্যান পেইজ ঘুরে আসতে পারেন।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।