এই ঠিকানায় আর নেই, ফিরে আসবো কিনা জানিনা। গুল্লা,
কিরে গুল্লা, আমার গুল্লা বন্ধু কেমন আছিশ? গুল্লা ডাক দেখেই বুঝে গেছিস নিশ্চই আমি কে? হা হা, বুঝবিই তো। গুল্লা নামে আমি ছাড়া আর কেউ ডেকেছে কখনো? আজ তোর কথা খুব মনে পড়ছে রে। এই যান্ত্রিক যুগে চাইলেই তোকে ফোন করতে পারতাম, খবর নিতে পারতাম কেমন আছিস। কিন্তু আমার মনে আজ আমাদের ছোট বেলার সৃতিগুলো খেলা করছে।
ফোনে বা মেইলে কি সেগুলো মন খুলে বলা যায়? তাই চিঠি লিখছি।
দোস্ত তোর মনে আছে ঈদের সময় আমরা কি করতাম? নতুন জামা কেনা হলে একজনের বাসার আরেকজন যেতাম ঈদের জামা দেখতে! তুই তো তোর জামা দেখতেই দিতিনা, তোর ভয় যদি দেখতে দিলে পুরানো হয় যায়! সবার মতো অবশ্য আমারও মনে মনে এই চিন্তা কাজ করত তবুও আমি দেখাতাম। তারপর দুজনে মিলে হানা দিতাম পাড়ার বন্ধুদের বাসায় ঈদের জামা দেখে পুরান করার লক্ষে! কত মজাই না ছিল সেই ছোট দিন গুলি।
স্কুলের সেই কান্ড টা মনে আছে? একবার তুই টিফিন টাইমে খেলতে গিয়ে শার্ট ছিরে ফেলেছিলি! তারপর তোর সেকি কান্না! কি করি! কি করি! চিন্তা করতে করতে ১ টা বুদ্ধি অবশ্য বের করেছিলাম। আমার দুটো শার্ট এর একটা তোকে দিয়েছিলাম, স্কুল ছুটির পরে সেটা পড়েই বাড়ি গিয়েছিলি’ সেই যে শার্ট নিলি আজো ফেরত দিস নাই! দিবি কিভাবে দিলে তো তোর বাসায় ধরা খেতি।
১ টা কথা মনে পড়লে আজও খুব হাসি পায়। তুই রোজ আমার বাসায় খেলতে আসতি। ছোট বেলায় আমার খাবার খাওয়া নিয়ে খুব ঝামেলায় ছিল আম্মু। তাই আম্মু তকে শিখিয়ে দিয়েছিল আমাকে খেপানোর জন্য তুই যেন বলিস ‘’আমি খুব ছোট বেলায় দেয়াল খুঁচিয়ে সিমেন্ট বালু খাই’’। অবশ্য এই কথা বলার জন্য তুই কম কিল ঘুশি খাস নাই!
মনে আছে? তোর নাম কি দিয়েছিলাম? হা হা! কুক কুত গুল্লা! বিল্ডিং এর সামনে মেয়েরা যখন ঘর কেটে কুত কুত খেলত তুইও খেলতে যাইতি তাদের সাথে কুত কুত খেলতে, ক্যান রে ভাই মেয়েদের সাথে খেলার ইচ্ছা তো মাংস চোর অথবা দাড়িয়া বান্ধা খেল, তাই যদি না পারিস তাইলে সাত চারা খেল, নাহ তুই খেলতি কুত কুত আর ফুল টোক্কা! হ্যা রে? তোর বউ কে বলেছিস কখনো এই কথা!
তোর উপ্রে ভীষণ রাগ হয়েছল একবার, আমি চুরি করে হরলিক্স আর গুড়াদুধ খেতাম হাতে নিয়ে চেটে চেটে।
আর তুই সেটা একদিন দেখেফেলে আম্মু কে বলে দিয়েছিলি। বলার কি দরকার ছিল? একটু ঘুষ চাইলেও তো পারতি। তোকেও একটু খেতে দিতাম। দুজন মিলে একসাথে খেলে কি এমন ক্ষতি হত? তুই আসলে তোর নামের মতই গাধা। গুল্লা গাধা।
আরেকটু বড় হইলাম। আসলেই কি বড় হইতে পারছিলাম? আর এখনো কি বড় হইতে পারছি?? এখনো যে পরিমান লাফালাফি আর বাঁদরামি করি তাতে মনেহয় না বড় হইতে পারছি। মাঝে মাঝে মনেহয় পিচ্চিকালের স্বভাব এখনো আছে। বয়সের হিসেবে আর বাহ্যিক গড়নে হয়ত বড় হচ্ছি কিন্তু আসলেই আজো পিচ্চিই রয়ে গেছি হয়তো।
সে যাই হোক, বয়সের হিসেবে আমরা যখন একটু বড় তখনকার কথা।
আমরা দেই বিল্ডিং এ থাকতাম তার তিন তলায় থাকতো শিউলি ভাবী। শীতের দিনে আচার বানিয়ে ছাদে শুকাতে দিতেন। আমাদের মত পোংটাদের অত্যাচারে সেই আচারের বয়াম গুলা শীত শেষ হতে হতে খালি হয়ে অর্ধেক হয়ে যেত। মনে আছে শিউলি ভাবী একবার আমার বাসায় বিচার দিয়েছিল পরে আমি যে তোকেও ঝুলিয়ে দিয়েছিলাম? আমি নাহয় বেশি খেতাম। আমি খেতাম আর তুই আমাকে পাহারা দিতি।
তোর জন্য একটু হাতে বাধিয়ে নিয়ে যেতাম। একটু হলেও চুরির ভাগ তোর উপরেও আসে তাই তকেও ঝুলিয়েছিলাম। তার পর অবশ্য আমার সাথে ১ সপ্তাহ কথা বলিশ নাই।
আমি গাছে উঠতে পারতাম না, কিন্তু তুই পারতিস। তাই গাছে থেকে কিছু পাড়তে হলে তোর কাছে আমার যাওয়া লাগত।
মনে আছে একবার ভোর বেলা হুজুরের কাছে আরবি পড়ার নাম করে পেয়ারা চুরি করেছিলাম? কড়া কাচা পেয়ারা লুঙ্গির কোঁচা ভরে চুরি করেছিলাম। চুরি করে ধরা খাইনি ঠিকই তবে বিপদে পড়েছিলাম কোথায় এত পেয়ারা লুকাবো সেটা নিয়ে! ২৮ – ৩০ টা পেয়ারা তো কম কথা না। এই কচি পেয়ারা খেয়ে আমার তো পেট ছুটেছিল রীতিমত।
আমাদের সেই সরকারী কোয়ার্টারের পেছনের দিকে একটা বিশাল বিল ছিল তোর মনে আছে? স্কুল শেষ করেই কোন কথা নাই, ড্রেস টা কোন রকমে চেঞ্জ করেই নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে বিলের ধারে। মাছ ধরা আর কাদায় মাখামাখি খেলা।
আহ! কত সুখের দিন ছিল। আচ্ছা দোস্ত তুই তো আজ অনেক দূরে প্রবাসে। ঐ দিন গুলোর কথা মনে হয়? আমি জানি মনে হয়।
আমার তো চোখে পানি চলে আসে। আমাদের ছোটবেলাটা একসাথে কেটেছে।
আমাকে আর তোকে সবাই সব সম একসাথে দেখত। একবার তো এক আংকেল আমাকে জিজ্ঞেশ করে বসেছিল আমি আর তুই দুই ভাই কিনা। পাড়ার অন্য বন্ধুরাও আমাদের বন্ধুত্ব দেখে হিংসে করত। তবে আমরা দুজন মিলে ওদের উপরে মাতবরি ফলাতাম। ইচ্ছেছিল তুই আর আমি ১ টা লিলিপুট গোয়েন্দা দল বানাব ছটবেলায় কিন্তু সেটা আর হয় ওঠেনি।
মনে পড়ে বিকেল বেলার ক্রিকেট খেলা, বৃষ্টিতে ফুটবল। দুরন্তপনার সব কথা আজো স্মৃতিতে খেলা করে। আচ্ছা দোস্ত আমি না সবকিছু মনে করতে পারছিনা। তোর নিশ্চই আরও অনেক কিছু মনে আছে আমাকে অবশ্যই লিখে জানাবি কিন্তু।
আকের মত ছাড়ছি রে, ভালো থাক।
আর হ্যা, আমার দেয়া ছোটবেলার সেই তিন রঙা লাটিম টা ঠিক ঠাক রাখিস কিন্তু। তোর দেয়া মারবেল গুলো কিন্তু আমি এখনো রেখেছি খুব যত্নে!
ইতি তো ন্যাংটা কালের দোস্ত,
ফটলু
____________________________________________
অ.টঃ পরীক্ষার কারনে সামু থেকে সাময়িক বিদায় নিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পরীক্ষা আপাতত পিছিয়ে গিয়েছে। তাই আবার ফিরে এলাম। ডিসেম্বর মাসটা আছি, তারপর আবার হাইবারনেশনে চলে যাবো। মাঝে ১৫ দিন অনেক পোস্ট মিস করেছি।
সবার পোস্ট পড়তে পারব কিনা জানিনা, তবে অনুসারিত পোস্ট উটিয়র জতটা পাই পড়ে ফেলার চেস্টা করব। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।