আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সায়েন্স ফিকশন : লেভেল টেন (শেষ পর্ব)

আই লাভ দ্যা স্মোক, আই লাভ দ্যা স্মোকি লাইফ। সব ধোয়াটে থাকবে। ইচ এন্ড এভরিথিং। প্রথম পর্বের পর -- ল্যাবের ঠিক দশ ফিট আগেই তাদের গাড়ীর সামনে পড়লো ছয়টা রোবট। চোখের পলকের মধ্যে বাম্পারটা দুমড়ে মুচড়ে ফেললো একটা রোবট।

আরেকটা রোবট গাড়ীর বনেট তুলে ফেলে বের করে ফেলল ইন্জিনটা। প্রচন্ড স্পার্কের সাথে বিস্ফোরণে আগুন লেগে গেলো গাড়ীতে। কাচ ভেঙে পড়লো ওদের গায়ে। আতংকে চিৎকার করে উঠলো রিচি। তানভীর ঘামতে শুরু করলো ভয়ে।

কিন্তু নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারালো না। খুব শক্ত প্রকৃতির ছেলে ও। ঠান্ডা মাথায় গাড়ীর কেবিনেট থেকে বের করে আনলো ওয়ারলেস পাওয়ার কনজিওমার। মাত্র ৭৫০ ভোল্টের এটা। বড়জোড় পাচটা রোবটের পাওয়ার টানা যাবে।

উপায় না দেখে সে সামনের রোবটের দিকে তাক করলো সেটা। মুহুর্তে পাওয়ার হারিয়ে অচল হয়ে মাটিতে পড়ে গেলো পাচটা রোবট। আরেকটার মনে হয় অর্ধেক পাওয়ার চলে এসেছে। কারণ সেটা তখন দাড়িয়ে ধীরে ধীরে ডানে বায়ে তাকাচ্ছে। “কুইক রিচি।

কাম অন”। রিচির হাত ধরে টেনে বের করে আনল তানভীর। রিচি ভয়ে বোবা হয়ে গেছে তখন। - এই রোবটটার সেন্স আসতে আরো পাঁচ মিনিটের মত সময় লাগবে। তারপর এটা নিজে পাওয়ার গেইন করে অন্যগুলোকে সচল করে তুলবে।

মোটমাট দশ মিনিটের মত সময় আছে আমাদের হাতে। যা করার এর মধ্যেই করতে হবে। তাড়াতাড়ি চল ভেতরে। ল্যাবের গেট পার হয়ে যা দেখলো, তার জন্য সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত ছিলো ওরা। প্রফেসর জামানের লাশ পড়ে আছে মাটিতে।

একটা চোখ কোটরে নেই। রক্ত গড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। দেহ ছিন্নভিন্ন। প্রিয় টিচারের এ অবস্থা দেখে চোখ জলে ভরে গেলো তানভীরের। ভাঙা গলায় রিচিকে বললো, - শোনো, এদের নেটওয়ার্কের কন্ট্রোলারটা যে রুমে আছে এনিহাউ আমাদেরকে সেখানে ঢুকতে হবে।

তারপর নতুন একটা প্রোগ্রাম রান করিয়ে দিতে হবে নেটওয়ার্কে যাতে চিপগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। অথবা এদের পাওয়ার যাতে অফ হয়ে যায়। তুমি মাথায় প্রোগ্রামটা সাজাতে থাকো। আমি স্টোরেজ থেকে আরো পাওয়ার কনজিউমার নিয়ে আসছি। আত্নরক্ষার জন্য।

বি সেইফ। আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আসছি। দৌড়ে চলে যায় তানভীর। রিচি লুকিয়ে পড়ে একটা ডেস্কের নীচে। ব্যাগ থেকে খাতা কলম বের করে প্রোগ্রাম ডিজাইন করতে শুরু করে দেয়।

এরই মধ্যে প্রচন্ড শব্দে কোথায় যেন একটা বিস্ফোরণ হয়। অজানা আশংকায় তানভীরের জন্য বুকটা কেপে উঠে রিচির। তানভীরের কিছু হয়নি তো। ছেলেটার কিছু হলে রিচি বাচতে পারবেনা। ইদানীং সে তানভীরকে ভালবাসতে শুরু করেছে।

আকারে ইংগিতে বোঝানোর সাহসও হচ্ছেনা। তানভীরের হাবভাব দেখেও কিছু বোঝেনা রিচি। কনফিউজড। তানভীরের মঙ্গল কামনা করতে করতে কাগজের দিকে মন দেয় রিচি। কিছুক্ষণের মধ্যেই চারটা বড় পাওয়ার কনজিউমার নিয়ে চলে আসলো তানভীর।

রিচি আর তানভীর দৌড় দিলো সিড়ির দিকে। লক্ষ্য চারতলার কন্ট্রোল রুম। দোতলায় স্টোরেজে একটু উকি দিলো তানভীর। অনেকগুলো রোবট সারি বেধে সুশৃঙ্খলভাবে রুমে ঢুকে চিপ আপগ্রেড করছে। চিপ লাগাচ্ছে পাচ ছয়টা রোবট।

এবং বেশ দক্ষতার সাথেই। নিজের আবিষ্কারের জন্য গর্বে বুক ফুলে উঠে তানভীরের। কিন্তু হাতে সময় খুব কম। আবার ছুটতে শুরু করে। তাড়াহুড়োয় সিড়িতে হঠাৎ পড়ে যায় রিচি।

শব্দে ফিরে তাকায় রোবটগুলো। ধাওয়া শুরু করে প্রায় বিশটার মত রোবট। প্রাণপণে দৌড়ে কন্ট্রোল রুমে পৌছে যায় রিচি আর তানভীর। রিচি বসে পড়ে কম্পিউটারের সামনে আর তানভীর লাগিয়ে দেয় লোহার দরজাটা। -তাড়াতাড়ি রিচি।

হাতে সময় নেই। - আমি চেষ্টা করছি। কিন্তু আমার মাথা কাজ করছে না। উত্তেজনায়, দুশ্চিন্তায় মন দিতে পারছেনা রিচি। চেষ্টা চালাতে থাকে মাথা ঠান্ডা করার।

দ্রুতহাতে কোড করা শুরু করে দেয়। এরমধ্যে দরজায় এসে পড়ে রোবটগুলো। তানভীর পাওয়ার কনজিউমার দিয়ে পাওয়ার কেড়ে নিতে থাকে একেকটা রোবটের। সে জানে এভাবে বেশীক্ষণ আটকে রাখা যাবেনা এদের। চারটা পাওয়ার কনজিউমার দিয়ে বড়জোড় চল্লিশটা রোবট।

এর মধ্যে রিচির কাজ শেষ না হলে মারা পড়বে দুজনেই। তবু মন শক্ত করে কাজ চালাতে থাকে তানভীর। “ওফফ রিচি, ডু ইট ফাস্টার। প্লিজ”। একসময় পাওয়ার কনজিউমার সবগুলোর পাওয়ার শেষ হয়ে গেলো।

রোবটরা প্রাপণ চেষ্টা চালাচ্ছে দরজা ভাঙার। - রিচি, আর কতক্ষণ? - এইতো শেষ করে ফেলেছি। আর তিরিশ সেকেন্ড। কম্পাইল হচ্ছে। শেষ হলেই রান করাবো।

ও গড। হেল্প আস। - কুইক। দরজা প্রায় ভেঙে ফেলেছে এরা। রিচি একপলক দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো কয়েকটা রোবট আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢুকে পড়বে।

হঠাৎ কম্পিউটার থেকে এরর মেসেজ এলো। আতকে উঠলো রিচি। দ্রুতহাতে বাগ খুজতে শুরু করলো। ভাগ্য ভালো। বাগটা তাড়াতাড়ি পাওয়া গেছে।

ফিক্স করে আবার কম্পাইল শুরু করে দিলো সে। দরজার ভাঙা অংশ দিয়ে তখন একটা রোবট ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছে। দরদর করে ঘামছে তানভীর। আর একদমই সময় নেই হাতে। কম্পাইলেশন শেষ হয়ে গেলো।

রিচি প্রোগ্রামটা রান করে খুশীতে ইয়েস বলে একটা চিৎকার দিলো আর সাথে সাথে তানভীর তার পেছনে প্রচন্ড ধাতব আঘাতের সাথে অসহ্য ব্যথা অনুভব করলো। পেটের দিকে তাকিয়ে দেখলো একটা রোবটের ধাতব হাত তার পিঠ ভেদ করে ঢুকে গেছে ভেতরে, সাদা জামা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। পেছন ফিরে দেখলো সবগুলো রোবট পাওয়ার হারিয়ে পড়ে যাচ্ছে। হালকা হাসি ভেসে উঠলো মুখে। ঝাপসা চোখে রিচির দিকে ফিরলো।

রিচি তখন তার দিকে তাকিয়ে চিৎকারেরও ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে পড়লো রিচি। সম্বিত ফিরলো তানভীরকে মাটিতে পড়ে যেতে দেখে। দৌড়ে এসে তানভীরকে ধরে ফেললো রিচি। জলে ভেসে উঠলো চোখ।

ফুপিয়ে কেদে উঠলো রিচি। - তানভীর....... কিভাবে হলো এটা? গলা শুকিয়ে গেছে তানভীরের। চোখের দৃষ্টিও ঝাপসা হয়ে আসছে। রক্ত আর ঘামে ভিজে গেছে শরীর। দুর্বল গলায় বললো, - রিচি, উই ডিড ইট।

কনগ্র্যাটস টু আস। - তানভীর, উঠে বসো প্লিজ। তুমি এভাবে মারা যেতে পারোনা। - কিছু করার নেই রিচি। অনেক কিছুই মেনে নিতে হয় জীবনে।

আমার সময় শেষ। - না তানভীর। প্লিজ..। আমি তোমাকে ভালবাসি তানভীর। প্লিজ উঠে বসো।

আমাকে এভাবে ফেলে যেওনা। প্রচন্ড যন্ত্রণার মধ্যেও চমকে উঠে তাকায় তানভীর। কি শুনছে সে? এটা কি সত্যি? নাকি হেলুসিনেশান? যাই হোক, মরার আগে সত্যি কথাটা বলে ফেলাই ভালো। - আই লাভ ইউ রিচি। কখনো বলতে পারিনি তোমায়।

আজ বললাম। ভালো থেকো। কাদতে কাদতে রিচি জড়িয়ে ধরে তানভীরের মাথাটা। রিচির গোলাপী জামা থেকে সুগন্ধ ভেসে এসে নাকে লাগে তানভীরের। এটাই কি তাহলে স্বর্গ? তাহলে তো মৃত্যু ভালোই।

আরামে চোখ বুজে এলো তানভীরের। শেষবারের মতন বন্ধ হয়ে গেল তার চোখজোড়া। রিচি শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সামনে। অনেক গুলো রোবট পড়ে আছে করিডোরের এখানে সেখানে। লেভেল টেন।

তার আর তানভীরের সৃষ্টি। প্রথম পর্ব এখানে উৎসর্গ নিশাচর ভবঘুরে রিয়েল ডেমোন নীরব০০৯ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.