আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভয়ংকর ৩টি স্বপ্ন এবং স্বপ্ন নিয়ে আমার ভাবনা

পাখি এক্সপ্রেস ঘুমের মাঝে প্রচুর স্বপ্ন দেখি। শৈশবের পুরোটা কেটেছে ভয়ংকর সব স্বপ্ন দেখে। এখন ভালোমন্দ মিশ্রিত দেখি। স্বপ্ন নিয়ে আমার বিশেষ একটা ব্যাপার আছে। অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখার কারণেই পেইন্টিং খুব পছন্দ করি।

খুব একটা যে বুঝি, তা নয়। আবার আমি যেটা বুঝে নিই, সেটাও নিচক কোন “বুঝ” নয়। এ পর্যন্ত দেখা অসংখ্য স্বপ্ন থেকে তিনটি স্বপ্ন নিয়ে এখন ব্লগ লিখবো। সন্ধ্যার ডাকাতেরা বিকেলে বাজার থেকে বাড়ি ফিরছি। ৩ মিনিটের পথ শেষ হওয়ার আগেই ধীরে ধীরে বিকেলের গায়ে কালো রং পড়তে শুরু করলো।

ঠিক অন্ধকার নয়, বলা চলে উজ্জ্বল কালো। রঙে লাইট আছে। যখন উঠোনে পা রাখি, তখন হালকা অথচ শক্তিশালী বাতাসে বালু এবং খড়কুটো উড়ে যাচ্ছে মাটি কামড়ে ধরে। ভয়ানক নিরবতায় আমি ‘মা’ ‘মা’ বলে ডেকে যাচ্ছি। সাড়া পাইনা।

এবার আপুরে... ও আপু.... বলে শুকনো গলায় নিস্তব্ধ চিৎকার করছি। বাতাসের মতো করে আলোও উড়ে যাচ্ছে। পুকুর পাড়ের অন্ধকার থেকে আলো বেরিয়ে আসছে, আর উড়ে যাচ্ছে। কোন কারণে আমাকে পুকুর পাড়ে যেতে হবে। ডান পাশে রান্না ঘরের পেছনটায় প্রচুর অন্ধকার পড়ে আছে।

জমতে জমতে ঘন অন্ধকার জমে গেছে। অনেকক্ষণ হেঁটে পুকুর পাড়ে যেতে না যেতেই গোয়াল ঘরের পেছন দিয়ে কয়েকটি ঘোড়া তাদের পিঠে ডাকাত বহন করে দৌড় দিলো। সবার গায়ে তেলতেলে কালো জামা। প্রায় পঞ্চাশ হাত দূর থেকে ঘরের সিঁড়িটাকে খামচে ধরে শুয়ে পড়ি। প্রাসংগিক :: এ স্বপ্নটি পড়ে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন ঠিক কোন সময়ে আমি সর্বোচ্চ ভয় পেয়েছি।

আসলে আপনারা ভুল বুঝেছেন। সবচেয়ে বেশি ভয় পেয়েছি রান্না ঘরের পেছনের অন্ধকার দেখে। কিন্তু স্বপ্নের মাঝে আমি বারবার ওদিকটায় তাকিয়েছিলাম। পুরো স্বপ্নটাতে যত ভয় ছিলো, সব সরবরাহ করেছিলো ওই অন্ধকারটুকুন। তবে এটিকে যদি এখন চিত্রায়িত করতে বলা হয়, তাহলে ৫০ হাত দূর থেকে হাত বাড়িয়ে ঘরের সিঁড়ি খামচে ধরার দৃশ্যে সবচেয়ে বেশি মনযোগ দিবো।

কারণ পুরো স্বপ্নে আমার সক্ষমতার প্রকাশ আসলে ওখানেই ঘটেছে। গলাকাটা দুখী সাপগুলো সেদিন আমিও খুব দুখী। স্কুল মাঠের এক কোণে ঠিক শুয়ে নাকি বসে আছি মনে নেই, তবে আমি সেখানে আছি। না, অন্ধকার নেই। গ্রামে বিকেলের দিকে বৈশাখী ঝড় আসার আগে আকাশটা অদ্ভুত আলোকিত হয়ে যায় না? ঠিক ওইরকম আলো।

দূর থেকে অনেকগুলো ঢেউ ধেয়ে আসছে। কোন না কোনভাবে জেনে গেলাম ঢেউগুলো কোন একটি নদীর। আমার কাছে আসতেই লাফিয়ে উপরে উঠে সাপ হয়ে গেলো। গলাকাটা সাপ। অনেক দুখী।

অন্ধ এবং বোবা কালা সাপ। কয়েকটি এগিয়ে এসে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো। এবারও কোন না কোনভাবে জানলাম সাপগুলো গলা জড়িয়ে কাঁদছে। আমার ভয় লাগছে, ঘেন্নার ভয়। মায়া লাগছে, কান্না আসছে।

অনেকগুলো দুখী সাপ। মাঠের মাঝখানে আমার বন্ধুরা বসে তাস খেলছে। তাদের ডাকবো বলে ভাবছি, একটি ট্রেন হুইসেল বাজিয়ে এসে থেমে গিয়ে ওদেরকে আড়াল করে দিলো। ট্রেনে কেউ নেই। এতক্ষণে সবগুলো সাপ আমার গলা জড়িয়ে ধরলো।

এবার আমার পতন হলো। তীব্র অসহায়বোধ থেকে ডুঁকরে কেঁদে উঠে শুয়ে পড়লাম। সাপগুলো ট্রেনে করে চলে গেলো। প্রাসংগিক :: ভয় এবং মায়ার মাঝখানে যে অবকাশটুকুন আছে, ঠিক সেখানে পিষে গিয়েছিলাম। এ অদৃশ্য টানাপোড়নে প্রায় শক্তিহীন হয়ে পতিত হলাম।

ভয়ের মাঝেও ভয়, আবার মায়ার মাঝেও ভয়। স্বপ্ন শেষে ঘুম থেকে জেগে স্বপ্নে প্রাপ্ত ভয় নিয়েই টর্চ দিয়ে খাটের তলা, সোফার নিচ চেক করে আবার ঘুমোতে গেলাম। মনে হচ্ছে নদীর সে ঢেউগুলো এখনই দরজা ভেঙ্গে ঢুকে পড়ে সাপ হয়ে যাবে। বাকিরাতে আরো কিছু সম্পূরক স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমার মা বাবা মারা যাচ্ছেন একটি গাছের নিচে কচুরিপানা পঁচা কাদাপানি থেকে বুদবুদ উঠছে।

তার একপাশে শুকনো সমতল, যেখানে আমার বাবা আছেন এবং আরেকপাশে পুকুর পাড়ের মতো উঁচু যায়গা, যেখানে আমি বসে আছি। সম্ভবত কেবল বসেই আছি। কিছু করছি না। সবাই স্বাভাবিক। বাবাকে খুব একটা দেখছি না, কিন্তু মনে হচ্ছে উনি মরে গেছেন।

আমার মা কাদাপানিতে ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছেন। যেটা বুঝতে পারছি, সেটা হচ্ছে আমার মা’র নাক ডুবে গেলেই তিনি মরে যাবেন। সবাই নির্বিকার। আমিও মাও। তাকিয়ে আছি, মা ধীরে ধীরে ডুবছেন।

কোথাও না কোথাও দম বন্ধ করা কষ্ট হচ্ছে। অনেক কষ্ট, প্রচুর কষ্ট। আমার মা কাত হয়ে শুয়ে থেকেই ডুবে গেলেন। কাদাপানিগুলো মিশে গেলো। ডুবে যাওয়ার সময় মা আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।

মনে হচ্ছিলো মা’র ডুবে যাওয়ার জন্যই আমি অপেক্ষা করছিলাম। আমি জানতাম মা মরবেনই মরবেন। বিষয়টা এমন যে, উনি দেরি করে ডুবছেন কেন, এটাই বড় দুশ্চিন্তা। ওদিকে বাবা জেগে উঠলেন, উনি বললেন ‘দেখেছিস, তোর মা মরে গেছে!’ প্রাসংগিক :: এরকম স্বপ্ন এর আগে কখনো দেখিনি। নিজের মৃত্যু দেখেছি বহুবার।

মৃত্যুর পর স্বজনদের কে কী করছে, তাও দেখেছি বহুবার। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমার মা’র নাকটা যখন ডুবে যাচ্ছিলো, তখন ভয় নয় ঠিক... আমি আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলাম। ওই যে, নি:শ্বাসটা ঠিক গলার কাছে এসে আটকে গেলো। এ স্বপ্নটি একেবারে লেটেস্ট। আমার মা বাবা ওই সময় ঢাকায় ছিলেন।

বেড়াতে এসেছিলেন। অনেকদিন পর এরকম ভয়ানক স্বপ্ন দেখলাম। আলোচনা স্বপ্ন জিনিসটা কী অদ্ভুত শক্তিশালী। একটি জমজমাট স্বপ্ন একজন মানুষকে শিল্পী বানিয়ে দিতে পারে। বেশিরভাগ স্বপ্নই অসম্ভব সুন্দর পরাবাস্তব হয়ে থাকে।

স্বপ্নের সাথে না থেকে উল্টো স্বপ্ন নিয়ে উদ্ভট চিন্তা করে মানুষ কতো স্বপ্নকে অহেতুক মেরে ফেলে! সালভাদর দালির লম্বা লম্বা হাতির পা কেবল ঘুমের মাঝে স্বপ্নেই দেখা সম্ভব। কিন্তু নিজে এ পা বানানোর সুন্দর ক্ষমতা তিনি অর্জন করেছেন। তাই তিনি স্বপ্নের চেয়েও জীবন্ত ছবি আঁকতে পেরেছেন। এখানে উল্লেখিত প্রথম দু’টি স্বপ্নই স্কুল জীবনে দেখা। প্রথম স্বপ্নটি আমি কাগজে আঁকতে চেয়েছিলাম।

সে সময় কেবল ফ্যাশনের বশেই আর্ট পেপার আর জলরং কিনেছিলাম। মনে আছে ক্যানভাসে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকা একটি ছাই রঙা হাত এবং তার বাম পাশে পাশে প্রচুর অন্ধকার রেখেছিলাম। অনেক দূরে হালকা কালোর মাঝে ঘনকালো রঙে ঘোড়ার শরীরাকৃতি এঁকেছিলাম। বাকিটাতে হালকা, বেশি হালকা কালো রং টেনে দিয়েছিলাম। ওই পেইন্টিং অনেকদিন ছিলো।

দেখতাম আর ভয় পেতাম। আমার এক কলিগ কিছুদিন আগে স্বপ্নে দেখলেন তিনি একটি কক্ষে সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে। নিচে নামবেন। কিন্তু নামতে পারছেন না ভয়ে। সিঁড়ি যতো নিচে গেছে, ওদিকটা ততোই অন্ধকার।

বললেন, সিঁড়িগুলো ‘অদ্ভুত’ ছিলো। সিঁড়িটি আসলে কী রকমের অদ্ভুত এবং ভয়টা কী রকমের, এ দু’টো জিনিসের বর্ণনা তিনি দিতে পারেননি। এই যে ‘অনেক ভয়’, ‘মারাত্মক ভয়’ কিংবা ‘অদ্ভুত’ – এ শব্দগুলোতেই শিল্প লুকিয়ে আছে। এ জিনিসটা নিয়ে ভাবতে গেলে লাভ আছে। অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে।

এবং স্বপ্ন সংক্রান্ত অহেতুক ভাবনা (আতংক) কেটে যাবে। আসলে উনি উনার দায়িত্ব নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলেন। এর আগে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার স্বপ্ন অনেক দেখেছিলেন, কিন্তু সিঁড়ি বেয়ে নামার স্বপ্ন এ প্রথম দেখলেন। গত ক’দিন ধরে উনি ভাবছেন উনার ক্যারিয়ারে কোন বিপর্যয় নেমে আসে কিনা। এমন ভাবনা থেকেই এ স্বপ্নের উৎপত্তি।

রাতে দেখা স্বপ্নকে চিত্রকল্প বানিয়ে আমি মেমোরিতে সেভ করে রাখি। সবগুলো চিত্রকল্প নিয়ে একদিন একটি স্যুররিয়ালিস্ট সিনেমা বানিয়ে ফেলবো। হয়তো কখনো আমি স্বপ্নে দেখলাম একটি গরুর মাথা, এরপরই দেখলাম পায়ের মতো কিছু একটা লম্বা হয়ে নেতিয়ে পড়েছে। সেখানে আবার শিকড়ও গজিয়েছে। মাঝখানটি আমি আর দেখিনি।

দুয়ে মিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমি স্বপ্নের মাঝেই জেনে গেলাম এটি আসলে একটি গরু। এ জানানটা কীভাবে পাই? কিংবা মাত্র ৩/৪ সেকেন্ডে এতোবড় স্বপ্ন কীভাবে দেখি! আমার ভাবনা ওই মাঝখানটা নিয়ে, যা আমি দেখিনি। ওই মাঝেরটুকুনই স্বপ্নকে ৩/৪ সেকেন্ডে শেষ হতে সাহায্য করে। মাত্র তিন চারটি স্ন্যাপ দিয়েই ঢাকা থেকে নোয়াখালী যাওয়ার স্বপ্ন দেখে ফেলতে পারি। যা এক সেকেন্ডেই সম্ভব।

গরুর মাথা এবং নেতিয়ে পড়া পা সাদৃশ্য শিকড়ওয়ালা বস্তুটির মাঝে আমাকে কিছু একটা দেখাতে হবে। আমি যদি এটাকে কোন সিনেমার দৃশ্য ভাবি, তাহলে ওই মাঝেরটুকুনে কী রং কিংবা কী দেখাচ্ছি, তার উপরই নির্ভর করবে এ দৃশ্যটির সৌন্দর্য। ঠিক এরকম চিন্তা করি ঘুমের মাঝে দেখা স্বপ্নগুলো নিয়ে। সালভাদর দালির হাতিগুলো লম্বা পা - লেখাটি শেষ করার পর আবার পড়ে মনে হলো স্বপ্ন নিয়ে আমি যা ভাবি, তার ১০ শতাংশও বুঝাতে পারিনি। মনে হচ্ছে কেবলমাত্র একটি পেইন্টিং দিয়েই আমি তা বুঝিয়ে দিতে পারতাম।

অথবা এসব ভাবনাকে সিনেমা বানিয়ে তারপর কাউকে বুঝানো সম্ভব। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।