কখনো মাথাব্যথা হয়নি এমন মানুষ বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না, মাথাব্যথা হলে কি রকম কষ্ট হয় তা যার হয় শুধু তিনিই বোঝেন। মাথাব্যথার ৯৫ ভাগই গুরুতর অসুখ ছাড়াই হয়ে থাকে...
মাথাব্যথার প্রকারভেদঃ
প্রধানত তিন রকম মাথাব্যথা রয়েছে। টেনশন হেডেক, মাইগ্রেন হেডেক, ক্লাস্টার হেডেক।
টেনশন হেডেকঃ
এই ধরনের মাথাব্যথায় আমরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হই। এটি এপিসোডিক মানে মাঝে মাঝে হতে পারে।
আবার ক্রনিক যেমন মাসে ১৫ দিনের বেশি হতে পারে। এই ব্যথা মাথার দুদিকেই হয়, চাপ চাপ ব্যথা অনুভূত হতে পারে এবং মনে হতে পারে যে মাথার চারদিকে একটি ব্যান্ড আটকে আছে। ব্যথা ৩০ মিনিট থেকে ৭ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। টেনশন হেডেকে বমি বা আলো ভীতি থাকে না। সকালের দিকে মাথাব্যথা কম থাকে এবং বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা বাড়তে থাকে।
কারণঃ
টেনশন হেডেকের কারণ এখন পর্যন্ত পুরোপুরি জানা যায়নি। কিন্তু্তু বলা হয় যে, মাথা ও ঘাড়ের মাংসপেশির অস্বাভাবিক সংকোচনের ফলে এই ব্যথা হয়। মানসিক চাপ ও অবসাদ রয়েছে টেনশন হেডেকের মলে।
চিকিৎসাঃ
প্রথমতঃ এসব ক্ষেত্রে মানসিক চাপ ও অবসাদ কমাতে হবে। সাধারণত টেনশন হেডেক ব্যথা নিরাময়ের যেসব ওষুধ কিনতে পাওয়া যায় সেগুলো ভালো কাজ করে।
তাছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ মত মানসিক চাপ কমাতে এন্টিডিপ্রেসেন্ট এবং মাসল রিলাক্সেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে। ম্যাসাজ ও যোগাসন মাথাব্যথা নিরাময়ে ভালো কাজ দেয়।
মাইগ্রেন হেডেকঃ
এই প্রকার মাথাব্যথায় মহিলারাই বেশি আক্রান্ত হন। বয়ঃসন্ধিকাল থেকে মধ্য বয়স পর্যন্ত মহিলাদের হার সবচেয়ে বেশি। তীব্র দপদাপ করে মাথাব্যথা (ঞযৎড়ননরহম ঢ়ধরহ) সাধারণত ঃ মাথার একদিকে, সেই সাথে বমি বা বমির ভাব এবং আলো ভীতি-এই হচ্ছে মাইগ্রেনের লক্ষণ।
তাছাড়া চোখের সামনে রঙিন আলোকছটা দেখা, দৃষ্টি শক্তির সমস্যা, কথা বলতে বা খেতে অসুবিধা, শরীরে একপাশে দুর্বলতা বা অনুভূতিহীন ইত্যাদি উপসর্গ থাকতে পারে।
চিকিৎসাঃ
যেসব কারণে আপনার এই মাথাব্যথা হচ্ছে তা চিহ্নিত করা এবং সেগুলো থেকে সতর্ক থাকা মাইগ্রেন হেডেকের চিকিৎসার প্রথম ধাপ। ওষুধের ক্ষেত্রে এ্যাসপিরিন বা প্যারাসিটামল কার্যকরী। বমি রোধে সেই সাথে মেটাক্লোপ্রোমাইড বা প্রোক্লোরপেরজিন গ্রহণ করা যেতে পারে।
তীব্র ব্যথার ক্ষেত্রে সুমাট্রিপটান ব্যবহার করা হচ্ছে।
এই ওষুধ ব্যথা এবং বমি দুই-ই কমায়। এটি ট্যাবলেট বা ইনজেকশন হিসেবে দেয়া যেতে পারে।
মাইগ্রেন প্রতিরোধক হিসেবে কিছু ওষুধ ব্যবহৃত হচ্ছে। বারবার আক্রান্ত হবার ফলে দৈনন্দিন কাজ কর্মে ব্যাঘাত ঘটে তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা ভালো। এক্ষেত্রে প্রপাননল, পিজোটিফেন, এ্যামিট্রিপটাইলিন, মিথাইসারজাইড ব্যবহৃত হয়।
একটা কথা অবশ্যই মনে রাখবেন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়।
ক্লাস্টার হেডেকঃ
এই প্রকার মাথাব্যথাকে মাইগ্রেন মাথাব্যথার অন্তর্ভুক্ত বলা হয় অনেক সময়। ক্লাস্টার হেডেক বা গুচ্ছ মাথাব্যথায় সাধারণত ধমপায়ী পুরুষেরা আক্রান্ত হন। প্রতিদিন একই সময় বিশেষ করে সকালের দিকে ৩০ থেকে ৯০ মিনিট তীব্র মাথাব্যথা হয়। এভাবে কয়েকদিন, সপ্তাহ বা মাস এই ব্যথা হয় এবং তারপরে কয়েক মাস আবার কোনো ব্যথা থাকে না।
ক্লাস্টার হেডেকের সাথে এক চোখ ব্যথা, কনজাংটিভার ইনফেকশন, এক চোখ দিয়ে পানি ঝরা এবং নাক বন্ধ হয়ে যায়।
চিকিৎসাঃ
ক্লাস্টার হেডেকের চিকিৎসার প্রথম ধাপ আক্রান্ত ব্যক্তির নিজের হাতে। ধমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করা একান্তভাবে প্রয়োজন। সেই সঙ্গে মানসিক চাপ ও অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম পরিহার করতে হবে। অনেক সময় বিশুদ্ধ অক্সিজেন শ্বাসের সাথে টেনে নিলে এ ধরনের মাথাব্যথায় ভালো ফল পাওয়া যায়।
অনেকে আক্রান্ত দিকের নাকে লোকাল এ্যানাসথেটিক এজেন্ট ব্যবহারে ফল পান। তাছাড়া সুমাট্রিপটান ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়। প্রতিরোধক হিসেবে ভেরাপস্নামিল বা মিথাইসারজাইড ব্যবহার করা যেতে পারে। খুব অবনতি হলে সেসব রোগীর ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে লিথিয়াম ব্যবহার করা হয়।
মাথাব্যথাকে অবহেলা করা ঠিক নয় এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াটাও অত্যন্ত জরুরি।
তবে অনেক সময়ই আমরা মাথাব্যথাকে গুরুত্ব দেই না এবং ব্যথা নিরাময়ক ওষুধ যা কিনা গ্রহণ করে থাকি।
(কোন ভুল থাকলে দুঃখিত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।