আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুক্তিযুদ্ধের মৌলবাদীরাঃ মুক্তিযুদ্ধকে যারা ব্যবসা বানিয়ে ফেলেছে

মৌলবাদের ইংরেজি প্রতিশব্দটা জানেন? মৌলবাদের ইংরেজি হচ্ছে RADICALISM. এই শব্দটির অর্থ খুঁজতে গিয়ে যখন dictionary.com এ ঢুঁ মারলাম তখন নিচের তথ্যগুলো পেলাম। rad·i·cal·ism [rad-i-kuh-liz-uhm] noun 1. the holding or following of radical or extreme views or principles. 2. the principles or practices of radicals. আমরা অনেকেই ‘মৌলবাদ’ শব্দটি দিয়ে শুধুমাত্র ধর্মীয় মৌলবাদকেই বুঝি। যদিও মৌলবাদী ট্যাগটা আল-কায়েদার কারণে এবং বিশ্বব্যাপী ‘সুশীল মিডিয়া’র কল্যাণে শুধুমাত্র ইসলামী জঙ্গীদের নিজস্ব সম্পত্তি হয়ে গেছে, কিন্তু সত্যটা হল মুসলিম মৌলবাদী ছাড়াও হিন্দু, খ্রিষ্ঠান, বৌদ্ধ সব ধর্মেই মৌলবাদী আছে। তারপরও ‘মৌলবাদী’ শব্দটা শুনলে আমাদের শিক্ষিত বাঙ্গালী সমাজের ৮০% এর মনেই মাথায় টুপি, মুখে দাড়ি, সফেদ পাঞ্জাবী পড়ে বিশাল তরবারি হাতে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা একজন ব্যাক্তির ছবি ভেসে উঠে। বাকী ২০% (যারা নিজেদের অনেকটাই মুক্তমনা দাবী করি) এর মধ্যেও ১৮%-ই মনে করি মৌলবাদী হতে হলে কোন একটি ধর্মের (হিন্দু/মুসলিম/বৌদ্ধ/খ্রিষ্ঠান/ইহুদি) গোঁড়া সমর্থক ও সহিংস কর্মী হতে হবে।

ব্যাপারটা আসলে তা না। প্রকৃতপক্ষে মৌলবাদী বলতে তাকেই বুঝায় যে কোন একটি আদর্শ কিংবা নীতির (হতে পারে তা ধর্মীয়, সামাজিক, কিংবা রাজনৈতিক) অন্ধ সমর্থক এবং সেই নীতির কূপমণ্ডূকতার বাইরে গিয়ে যে একবিন্দুও চিন্তা করতে পারেনা। এখন কথা হচ্ছে হঠাৎ করে আমি এই ‘মৌলবাদী’ শব্দটার মূলোৎপাটনে এত খড়গহস্ত হলাম কেন? আমার দৃষ্টিতে মৌলবাদ কখনোই কোন সমাজে কিংবা বিশ্বাসে কল্যাণকর কিছু বয়ে আনতে পারেনি। একটি আদর্শ কিংবা বিশ্বাস যত ভালই হোক না কেন, এতে যখন কিছু অত্যুৎসাহী কিংবা সুযোগসন্ধানী এসে মৌলবাদের বিষ মিশিয়ে দিয়ে যায়, পুরো বিশ্বাসটাই তখন একটা ‘অকল্যাণের হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার হুমকির মুখে পড়ে। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের এই মুসলিমপ্রধান দেশে ইসলামকে ব্যবহার করে জামাতে ইসলামীর মত একটা ঘৃণ্য গোষ্ঠী যেভাবে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে নিচ্ছে, ঠিক একইভাবে আরেকটি গোষ্ঠী দেশের সাধারণ মানুষের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুঁজি করে খুব সন্তর্পণে দেশে ‘মুক্তিযুদ্ধের মৌলবাদ’ প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চালাচ্ছে! এবং বলতে মুখে আটকাবে না কারণ এই মুহুর্তে সবাই ঠিকই বুঝতে পারছে আমি যে অমি পিয়াল ও তা চেলাচামুণ্ডার কথাই বলছি।

এখন চলেন দেখি, ঠিক কি কি কারণে আমি অমি পিয়াল ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের আমি ‘মুক্তিযুদ্ধের মৌলবাদী’ ট্যাগ দিচ্ছি। ১। ভিন্নমতের প্রতি চরম আক্রমণাত্মক মনোভাবঃ মৌলবাদীদের প্রথম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরা এদের নিজেদের মতের সাথে বিন্দুমাত্র ভিন্নমত কখনোই মেনে নিবে না। একই পথের পথিক হলেও কেউ তাদের ভুল ধরিয়ে দিলে কিংবা তাদর সাথে দ্বিমত পোষণ করামাত্র চরমতম আক্রমণ করতেও এদের একবারও হাত কাঁপবে না। হাতেনাতে উদাহরণঃ - জামাতে ইসলামীর ভন্ডামী মানুষের সামনে তুলে ধরামাত্র জামাতী ছাগুগুলো শোলাকিয়ার ইমাম সাহেবের নামে কুৎসা রটাতে এমনকি তাঁকে মুরতাদ ঘোষণা দিতে বিন্দুমাত্র বিলম্ব করেনি।

- অমি পিয়াল গং তথা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মৌলবাদীদের মনোভাবও ঠিক একই। তাদের মূলমন্ত্রই হচ্ছে “either you are with us, or you are against us”. এবং সামান্য দ্বিমত পোষণকারীদের সাথেও তাদের জিরো টলারেন্স নীতি ব্লগোস্ফিয়ারের সবাই জানে। যে কারনে সামু থেকে বিতাড়িত হয়ে আমারব্লগ খুলেছেন তারা, চারপাশে তাদের মতই 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বেশে চরমপন্থীর মত আচরণ করা' কিছু ব্লগার জুটিয়েছেন ২৪/৭ তাদের পা-চাটার জন্য এবং সর্বোপরি সিন্ডীকেট শক্ত করার জন্য। আর যেই সামু থেকে খ্যাতিলাভ করে আজকে তিনি এতবড় সেলিব্রিটি ব্লগার হয়েছেন, সেই সামু'র বিরুদ্ধেই গত একমাস ধরে প্রচারণা চালাচ্ছেন "সামু যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের ব্লগ" এবং "ছাগু-তোষণকারী ব্লগ" আখ্যা দিয়ে। আর গত পরশু গণজাগরণ মঞ্চের ইমরান এইচ সরকারের মত অমি পিয়ালের সাথে শলা-পরামর্শ না করে শহীদ রুমী স্কোয়াডের ছেলেপুলেরা যখন আমরণ অনশন কর্মসুচী নামিয়ে দিল, সাথে সাথে অমি পিয়াল একটা বিতর্কিত স্ট্যাটাস (দুই নাম্বার উদাহরণে উল্লেখ করছি) দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করল।

এমনকি অনেকে যখন কমেন্টে বুঝাতে চাইলো যেহেতু গণজাগরণ মঞ্চ এবং শহীদ রুমী স্কোয়াডের উদ্দেশ্য অভিন্ন, সেহেতু নিজেদের মধ্যে সংঘাতে লিপ্ত না হয়ে ব্যাপারটায় ক্ষান্ত দিতে, তার বিপরীতে অমি পিয়ালের স্ট্যাটাস (তার প্রোফাইলে সগৌরবে পিনড করা) : “নিজেরা নিজেরা বা নিজেদের মধ্যে এই কথাগুলা আমার কাছে খুবই ক্লিশে লাগে। হোয়াট দ্য ফাক ইজ মিনট বাই দ্যাট! দেয়ার ইজ অনলি আমরা এবং তারা। কোনো নিজেরা নিজেরা নাই, ওদের যারা আমাদের হইতে চাইতেছে ছদ্মবেশে এবং ধরা খাইতেছে, তারাই নিজেরা বা নিজেদের তত্ব দিতেছে। তাদের কই, দূরে গিয়া মরো, আমরা তোমাগো ছাড়াই পারবো, একাত্তরেও পারছি, ২০১৩ সালেও পারবো” (রাত ২:২৫, ২৮মার্চ)। দুঃখিত অমি পিয়াল ভাই, আপনার সাথে আমি জামাতী মৌলবাদী মেন্টালিটীর কোন পার্থক্য খুঁজে পেলাম না।

২। নির্লজ্জ মিথ্যাচারঃ নিজেরা বাটে পড়লে গা বাঁচাতে কিংবা নিজের স্বার্থোদ্ধারে যাচ্ছেতাই রকমের মিথ্যাচার করতে মৌলবাদীদের কখনোই দ্বিতীয়বার চিন্তা করতে হয় না। - জামাতী শূয়রগুলো যখন দেখল কোনভাবেই গণমানুষের আন্দোলনকে স্তিমিত করা যাচ্ছেনা, প্রজন্ম চত্বরের গণজাগরণ মঞ্চের জনসমর্থন দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে, আন্দোলনের ১০দিনের মাথায় ব্লগার রাজীবের লাশ ফেলে দিয়ে তাকে ‘নাস্তিক ব্লগার’ হিসেবে প্রচার করে পুরো আন্দোলনের জনসমর্থনের ভিত নাড়িয়ে দিল বেশ ভালভাবেই। শুধু তা-ই নয়, ‘ব্লগারমাত্রই নাস্তিক’ টাইপের একটা হাইপ ছড়িয়ে দিল দেশের অর্ধশিক্ষিত জনগণ ও কাঠমোল্লাদের মাঝে। এছাড়া আজিমপুর গোরস্থানের পাশে সাইদীর মুক্তির দাবীতে ৫হাজার জ্বিনের মিছিল কিংবা চাঁদে সাইদীকে দেখা যাওয়ার গালগপ্পো কে না জানে... - ৫ফেব্রুয়ারী থেকে ২৬মার্চ পর্যন্ত এক মাস ২০দিনেরও বেশি সময় ধরে গুটিবাজী করে আন্দোলনটাকে আওয়ামী ফেভারে রাখার পরও প্রাক্তন ছাত্রলীগ ক্যাডার পিয়াল ভাই যখন দেখলেন শহীদ রুমী স্কোয়াডের কিছু পোংটা পোলাপান আল্টিমেটামের অসারতা দেইখা নিজেরাই অনশনের কর্মসুচী দিয়ে দিয়েছে এবং আরেকদল প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়ে প্রজন্ম চত্বরের একপাশে ‘ঘেরাও, ঘেরাও’ বলে স্লোগান দিচ্ছে, পরিস্থিতি বেগতিক দেখে স্ট্যাটাস ফেঁদে বসলেন, “বঙ্গবন্ধুর খুনি বজলুল হুদার পোলার ডাকা অনশনে আমার সমর্থন নাই, সাইন বোর্ডে রুমি ভাইর নাম থাকলেও...”।

হয়তো পিয়াল ভাই ভেবেছিলেন ব্লগে ও ফেসবুকে তার আকাশচুম্বী ফলোয়ারসংখ্যা ও অন্ধভক্তের আতিশয্যকে কাজে লাগিয়ে ভাল একটা প্রোপাগান্ডা মেরে শহীদ রুমী স্কোয়াডকে ঠাণ্ডা করে দিবেন চিরতরে। কিন্তু বিধিবাম, নগদে ধরা খেয়ে গেলেন। প্রথমে শহীদ রুমী স্কোয়াডের কোন একজনকে বঙ্গবন্ধুর খুনী বজলুল হুদার ছেলে বললেও পরে বক্তব্য হালকা পাল্টে বললেন অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম রজত এবং সে হুদার ছেলে না, ভাতিজা। ভাগ্য সহায় না হলে যা হয়, নিচে বেরসিক একজন এসে কমেন্ট করে গেল রজত নামে শহীদ রুমী স্কোয়াডে কেউ নাই!!! এরপর বেশ কয়েকটা স্ট্যাটাস প্রসব করলেও এই কমেন্টের জবাব দিয়ে যাওয়ার সময় পিয়াল ভাইয়ের হয়নাই! (স্ক্রিনশট তুলে দিলাম) গতরাতে এই পোস্ট লেখা পর্যন্ত অমি রহমান পিয়ালের 'বজলুল হুদার ভাতিজা' থিওরির কোন যুক্তি উনি দেখাতে পারেননাই। তখনও কিছু পোলাপান লাফাইতেছিল "পিয়াল ভাই ভুল করতেই পারেন না, উনি নিশ্চয়ই কড়া যুক্তি/ তথ্য-প্রমাণ হাজির করবেন" বলে।

নোট প্রকাশ করার একটু পরই দেখলাম পিয়াল ভাই তার স্ট্যাটাসে কমেন্ট করেছেন "রজত নামে একটা পোলা আছে এই ছেলে বজলুল হুদার ভাতিজা, কয়দিন আগেইেএকটা বাংলা ব্লগে বজলুল হুদার এক ভাইরে নিয়া বেশ চেচামেচি হলো। সে ব্লগে ভাইয়ের অপকর্ম জায়েজ করার মিশনে আছিলো। আমি বলতেছি ফ্রিডম পার্টির ইনফিলট্রেশন হইছে আন্দোলনে লন্ডন থেকে, জেনেই বলতেছি, দায়িত্ব নিয়াই বলতেছি। এইখানে বহু হিসাব কিতাব, সর্বহারা গ্রুপের পোলা্পাইন আছে ফিল্ডে, আর কিছু পাবলিকের দুইমাস আগের অবস্থান ফেসবুকে এখনও জ্বলজ্বল করতেছে, প্রয়োজনে স্ক্রিনশট দেয়া যাবে। এদের উস্কানিতে মঞ্চের পোলাপাইন বাল ছিড়তেছে বইলা ভিন্ন কর্মসূচী দিয়া বিপ্লব করতেছে সাম মাদার ফাকারস।

তো এইসবের পিছনে কারা, মূল উদ্যোক্তা, ফিনান্স, প্ল্যান সব জানি বইলাই দায়িত্ব নিয়া লেখতে পারি- তুমি কেনো ঘষো আমি তাহা জানি"। আমার কথা হইতেছে উনি যদি আগে থেকেই এতকিছু জাইনা ** ছিড়া টাল দিছে, তাইলে শহীদ রুমি স্কোয়াডের অনশনের আগের প্রোগ্রামগুলোর সময় (শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বিশাল পোর্ট্রেট বসানো, রাস্তায় মানুষের মাঝে চিঠি বিলানো) তাদের মধ্য থেকে 'বজলুল হুদার ভাতিজা'কে ধরে কানসা বেরায় কষায়া একটা থাবড়া দেননাই কেন? এতদিন বইসা তাইলে কি **টা ছিড়ছেন? দুঃখিত অমি পিয়াল ভাই, এবারও আপনার সাথে আমি জামাতী মৌলবাদী মেন্টালিটীর কোন পার্থক্য খুঁজে পেলাম না। ৩। ঝোপ বুঝে কোপ মারাঃ মৌলবাদী হবেন আর ঝোপ বুঝে কোপ মেরে স্বার্থসিদ্ধি করলেন না- এরকম হলে তো চলে না। দেশের স্বাধীনতার সরাসরি বিরোধিতা করেও যেভাবে জামাতীরা একের পর এক সুযোগসন্ধানী চাল চেলে আজ বিএনপিকে পিছনে ঠেলে এখন দেশের প্রধান বিরোধীদলে পরিণত হয়েছে, ঠিক একই কাজ বারবার করেছে অমি পিয়াল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা।

শুরুতে এ-টীম নামে সামু’তে ছাগুনিধন করে এরপর যথেচ্ছভাবে ছাগু ট্যাগিং করে প্রমাণ করতে চেয়েছে শুধুমাত্র তারাই দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী। আমরা বাকীরা সবাই ছাগু অথবা ছুপা-ছাগু। সিন্ডিকেট ব্লগিং এর চুড়ান্ত অপব্যবহার করে যখন-তখন যাকে-তাকে ছাগু ট্যাগ দিয়েছে অমি পিয়াল, তার সাঙ্গপাঙ্গ ও তাদের অন্ধ সমর্থকগোষ্ঠী। প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনের পর অমি পিয়ালের টকশো উপস্থিতি আর রেট বেড়ে গেছে বহুগুণে। এমনকি সারাদিন প্রজন্ম চত্বরে ইসলামী ব্যাংক বর্জনের ডাক দিয়ে বিকালে ঠিকই এটিএন নিউজে ইসলামী ব্যাংকের স্পন্সর করা টকশো’তে গরম আলাপ ছেড়ে ইসলামী ব্যাংকের ‘সম্মানী’ই পকেটে ভরেছেন।

তার আরেক দোস্ত, আমারব্লগের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সুশান্ত দাসগুপ্ত শাবিপ্রবি’তে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নির্মিতব্য ভাস্কর্য নির্মানের ক্রেডিট ছিনতাইয়ের চেষ্টা করতে গিয়ে যথেষ্ট জলঘোলা করে, তার পোষা সাংবাদিককে দিয়ে ভুয়া শিবিরকর্মীর লিস্ট বানিয়ে (এরমধ্যে একজনকে ফাঁসাতে গিয়ে সে শিবিরকর্মী লিস্টে হিন্দুদের নাম ঢুকাতেও কসুর করেনি) , পুরো শাবিপ্রবিকে “ছাগুর খোঁয়াড়” অপবাদ দিয়ে শেষে নিজেই নাকানিচুবানি খেয়েছে। আর ওইদিন আমরা যারা তার বিরোধিতা করে ছাগু-ট্যাগের অধিকারী হয়েছিলাম, সেই ছাগুরা ৫ফেব্রুয়ারী কাদের মোল্লার রায়ের পর শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের মানববন্ধনের আগেই বিকাল তিনটায় ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে সারাদেশে সর্বপ্রথম প্রতিবাদ মিছিল করেছি। এই ‘ছাগুর খোঁয়াড়’ এর ছাগুরাই গত ৮-১১মার্চ দিনরাত একটানা পরিশ্রম করে শাবিপ্রবির বুকে এঁকেছি বিশ্বের দীর্ঘতম আলপনা (পৌনে দুই কিলোমিটারেরও বেশি রাস্তাজুড়ে), যেখানে তুলে ধরেছি সমগ্র বাংলার ইতিহাস ‘৪৭ এর দেশভাগের পর থেকে ‘১৩র গণজাগরণ পর্যন্ত। এতদিন প্রজন্ম চত্বরের অসংখ্য অসংগতি চোখে পড়লেও কোন সমালোচনা করিনাই। কিন্তু এখন যখন প্রজন্ম চত্বরের নিয়ন্ত্রকরাই শহীদ রুমী স্কোয়াডের ন্যায্য প্রতিবাদকে বলছেন আন্দোলন বিভক্ত করার অপচেষ্টা, তখন আর চুপ করে থাকা যায় না।

জামাতীরা যখন মতিঝিলে লিফটম্যান জাফরকে মেরেছে, আমরা তার প্রতিবাদে মোমবাতি জ্বালিয়েছি। তারা এরপর রাজীবকে খুন করলো, আমরা এর বিপরীতে বেলুন উড়িয়েছি। শেষমেষ তারা শহীদ মিনার ভাঙ্গার স্পর্ধা দেখালো আর এর জবাবে আমরা ২৬শে মার্চ পর্যন্ত একের পর এক অসার আল্টিমেটাম দিয়েছি আর ডজনখানেকের বেশি দফায় শপথ করেছি, সরকারকে এতদিন সময় দেওয়ার পরও জামাত-শিবির নিষিদ্ধ হয়নি। এই অবস্থায় আমাদের উচিৎ সরকারের সুস্পষ্ট বিরোধিতায় যাওয়া। যেখানে সরকার আমাদের কথা শুনে না, বিএনপি মরিয়া হয়ে আছে জামাতকে রক্ষা করতে, সেখানে আমাদের একমাত্র উপায় দ্বিদলীয় গণতন্ত্রের ধারা থেকে বেরিয়ে এসে একটা নাগরিক প্লাটফর্মের ডাক দেওয়া।

যেখানে দেশের সকল মানুষই গত ২৩বছরে বুঝে গেছে লীগ-বিএনপি জনগণের রাজনীতি করেনা, করে ব্যক্তিস্বার্থের রাজনীতি, সেখানে ২৬শে মার্চ যদি সম্মিলিত নাগরিক প্লাটফর্মের ঘোষণা ও সেইসাথে সরকারের প্রতি কঠোর আন্দোলনের হুমকি না দিয়ে পরদিন থেকেই সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঘোষণা আসত, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় কিংবা সচিবালয় লাগাতার ঘেরাও কর্মসুচীর ঘোষণা আসতো- প্রজন্ম চত্বরের ঝিমিয়ে পড়া জনসমর্থন আবারও গগনচুম্বী হতো। কিন্তু এর কিছুই হয়নি, কারণ ইমরান এইচ সরকার সামনে থাকলেও তার নীতি-নির্ধারক মুক্তিযুদ্ধের গায়ে মৌলবাদের কলঙ্ক লাগানো স্বার্থান্বেষী অমি রহমান পিয়াল ও ছাত্রলীগ নেতা সিদ্দিকী নাজমুল আলমের মত কিছু নোংরা কীট। এর মধ্যে গতকাল রাতেই দেখলাম ব্লগারস এন্ড অনলাইন একটিভিস্ট পেইজ থেকে আপডেট এসেছে, “গণজাগরণ মঞ্চ প্রত্যক্ষভাবে রুমী স্কোয়াডের কর্মসূচিতে সমর্থন না দিলেও কোনো বিরোধিতা করছে না। মঞ্চের অন্যতম সংগঠক মারুফ রসুল বলেন, “আমরা আগেই স্পষ্ট ভাষায় বলেছি, শাহবাগ আন্দোলনে অনেক সংগঠন আছে। তারা নিজস্বভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করতে পারে।

“তবে গণজাগরণ মঞ্চ সবার সঙ্গে কথা বলে একটি কর্মসূচি ঠিক করায় অনশনের সঙ্গে সরাসরি সমর্থন দিচ্ছে না। ” আমি এর জবাবে বলবো- এইগুলা কোন ধরণের ফাইজলামী? প্রথমত শহীদ রুমী স্কোয়াডের অনশন বিরোধিতা করার কোন প্রশ্নই উঠেনা। দ্বিতীয়ত, আপনাদের সাথে কথা বলেনাই দেখে তাদের কর্মসুচীতে সমর্থন জানাচ্ছেন না- এইটা কোন ধরণের নোংরামি? আমিও একজন ব্লগার। অনলাইনে আর অফলাইনে অনেক সোশাল এক্টিভিটিজে আমার প্রত্যক্ষ ভূমিকা আছে। তারপরও আপনারা যখন ব্লগারস এন্ড অনলাইন একটিভিস্ট ব্যানারে ৫তারিখ মাঠে নেমেছিলেন, তখন কি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন না বাংলাদেশের ১৬কোটি মানুষকে জিজ্ঞেস করে নেমেছিলেন? আপনারা যেমনে বললেন “আমাগোরে না জিগায় মাঠে নামছো তো আমাগো সাপোর্ট হারাইছো” ওই লজিকে তো আপনারাও আমার মত জেনারেল ব্লগারদের এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের ১৬কোটি মানুষের সমর্থন পাওয়ার অধিকার রাখেন না আপনাদের উদ্দেশ্য যত ভালই হোক।

তাই পরিষ্কারভাবে আপনাদের বলতে চাই, শহীদ রুমী স্কোয়াডের কর্মসুচী নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে জনসমর্থন হারাবেন না। শহীদ রুমী স্কোয়াডের মত সংগঠনগুলোর কর্মসুচী কখনোই আমাদের আন্দোলনে বিভক্তি আনবে না। বরং বিভক্তি আনবে, আন্দোলনকে স্তিমিত করবে এবং সরকারের ইচ্ছামত নিয়ন্ত্রণে রাখবে আওয়ামী গন্ধযুক্ত ব্যক্তিবর্গ ব্লগে-ফেসবুকে দিনে ১০বার মুক্তিযুদ্ধ আর বঙ্গবন্ধুকে বিক্রি করে দেয়, যারা আন্দোলনের ৫ম-৬ষ্ঠ দিনে বামদের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস প্রসব করে আন্দোলনে শুরুতেই বিভক্তি আনার চেষ্টা করেছিল। এদের যত শিগগির সম্ভব দূরে সরান, নাহলে এই আন্দোলন কখনোই জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারবে না। আমরা বাংলাদেশের আজকের দুর্দিনের জন্য শুধুমাত্র জিয়ার আমলে পুনর্বাসিত রাজাকারদের দোষ খুঁজি।

কিন্তু এর আগে থেকেই, সত্যি বলতে মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই সক্রিয় স্বার্থান্বেষী, চাটুকার, দালালরাও এর পিছনে কম দায়ী না। 'আলোর মিছিল' মুভিটা সবাই হয়তো দেখেছেন। ঐখানে 'বড়মামা' চরিত্রটা কিন্তু এই শ্রেণিরই। এরা যুদ্ধের ময়দানে পালিয়ে বেড়ায়, পিছন থেকে কূটচাল চালে আর যুদ্ধজয়ের পর সম্পদ দখল/ক্রেডিট ছিনতাইয়ে নামে। এদেরকে সময়মত নিয়ন্ত্রণ না করার মূল্য আমরা দিয়েছি বঙ্গবন্ধুকে হারানোর মাধ্যমে।

এই দালালগুলাকে আর কোনভাবেই দাঁড়াতে দেওয়া যাবেনা। ৪৩বছর পর দেশ আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, এদের যে-ই দাবায় রাখতে আসবে নিজের স্বার্থে অথবা রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে- নগদে দৌড়ের উপর রাখতে হবে অনলাইনে কিংবা অফলাইনে, কোন ছাড়াছাড়ি নাই। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.