দূর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার কেষ্ট প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনে সুন্দরবনকে ভোট দেওয়ার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে, যা এত সহজে লিখে শেষ করা একেবারেই অসম্ভব। তবে ভোট দেওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে এটি পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট। যা বিশ্বের গৌরব আর আমাদের গর্বের ধন।
যতদিন যাচ্ছে, ততই হৃদপিন্ডের কম্পন যেন বাড়তে থাকছে। বসে থাকার দিন অনেক আগেই চলে গেছে।
এখন পালা শুধু শেষ সময়ের আপ্রাণ চেষ্টা করে যাওয়া। আর এই শেষ চেষ্টা পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট আমাদের সুন্দরবনের মাধ্যমে লাল-সবুজের এই দেশকে সারা বিশ্বের মানুষ নতুন ভাবে চিনবে।
বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিম অঞ্চলে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় ৫ লাখ ৭৭ হাজার ২শ’ ৮৫ হেক্টর বা ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের যে বিশাল বনভূমি, তার নাম সুন্দরবন। তবে স্থানীয় জনগণ একে ‘বাদাবন’ বা ‘বাদা’ বলে থাকে। আরবিতে ‘বদর’ শব্দের অর্থ ‘সমুদ্র’।
সে জন্য সমুদ্রের নিকটে অবস্থিত বনকে শুদ্ধ করে ‘বদরবন’ বলা হত। অবশ্য পরবর্তীতে বদরবন পরিবর্তন হয়ে ‘বাদাবন’ বলা হয়েছে। বিশ্বের প্রায় ৩৫টি দেশে উপকূল এবং বড় বড় নদীর মোহনায় বাদাবন রয়েছে। যার মধ্যে সুন্দরবন সবচেয়ে বড়। এ কারণে সুন্দরবনকে বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বলা হয়।
ম্যানগ্রোভ শব্দটি তৈরী হয়েছে পর্তুগীজ ‘ম্যানগু’ এবং ইংরেজী ‘গ্রোভ’ শব্দের সমন্বয়ে। সমুদ্র তীরবর্তী জোয়ার-ভাটা অঞ্চলে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট বনকে পর্তুগীজ ভাষায় ম্যানগু বলে। অপরদিকে গ্রোভ শব্দের বাংলা অর্থ তরুবিথীকা অথবা সারিবদ্ধ ভাবে থাকা অরণ্যকে বোঝায়। সে কারণে ম্যানগ্রোভ ও বাদাবন শব্দ দু’টির মধ্যে ব্যাপক মিল রয়েছে।
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভুমি সুন্দরবন।
প্রকৃতির বিস্ময় সম্পদের ভান্ডার বিশ্ববিখ্যাত এই বন শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের নয় এটি বিশ্বেরও সম্পদ। জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনন্য এ সুন্দরবনকে ইতিমধ্যে জাতিসংঘের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কমিটির বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৭ সালে ৬ই ডিসেম্বর ওর্য়াল্ড হ্যারিটেজ কমিটির ৭৮৯তম অধিবেশনে বিশ্ব সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণার মাধ্যমে পৃথিবীর ৫২২টি বিশ্ব ঐতিহ্যের মধ্যে সুন্দরবনের নাম অর্ন্তভুক্ত হয়। বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিরণপয়েন্ট সংলগ্ন নীলকমলে বিশ্ব ঐতিহ্য ফলক উন্মোচন করেন।
ফলে যেমন বেড়েছে এবনের মর্যাদা ঠিক তেমন বেড়েছে আমাদের দায়িত্ব।
প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে এই বনের উপর নির্ভরশীল। ১৮৭৯ সালে ব্রিটিশ সরকার বন বিভাগকে সুন্দরবনের দায়িত্ব দেন বন রক্ষা করার জন্য এবং প্রথম বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন এমইউ গ্রিন (১৮৮৬ সালে)। বর্তমান বন প্রসাশন খুলনাস্থ বিভাগীয় বন অফিস থেকে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে শরণখোলা রেঞ্জ, চাঁদপাই রেঞ্জ, খুলনা রেঞ্জ ও সাতক্ষীরা রেঞ্জ এই ৪টি রেঞ্জে ভাগ করেছে। ইতিমধ্যে সরকার ৩২,৩৮৬ হেক্টর এলাকাকে সুন্দরবন ইস্ট, সুন্দরবন ওয়েস্ট, সুন্দরবন সাউথ নামে তিনটি অভয়ারণ্যে সৃষ্টি করেছে।
যেখানে বিধি মোতাবেক কোনরকম অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ। কাজেই এই সুন্দরবন রক্ষা করার দায়িত্ব আপনার, আমার এবং আমাদের সকলের। এই সুন্দরবন এখন বিশ্ব প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনে চুড়ান্ত পর্বে প্রতিযোগিতা করছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।