আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানবতাবাদ - পর্ব ১

আমি আগা গোড়ায় মোড়ানো পুরোপুরি একজন মুক্তমনা মানুষ। মানবতাবাদ হল গবেষণা, দর্শন ও অনুশীলনে এক ধরনের দৃষ্টিভঙ্গী যা মানবিক নীতি ও বিষয়াদি নিয়ে কাজ করে। এই শব্দটির বহু অর্থ হতে পারে, যেমন, ১) একটি ঐতিহাসিক আন্দোলন যাকে ইতালীয় রেনেসাঁসের সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কায়িত করা হয় ২) একটি শিক্ষাবৃত্তিক কার্যপদ্ধতি যা সাহিত্যবিষয়ক উপাদান অথবা মানবিক বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান দান করে ৩) দর্শন ও সমাজবিজ্ঞানের বিচিত্র দৃষ্টিভঙ্গীগুলো যেগুলো যে কোন প্রকার “মানব প্রকৃতি” এর অস্তিত্ব ঘোষণা করে(এক্ষেত্রে প্রতি-মানবতাবাদ লক্ষণীয়) ৪) একটি ধর্মনিরপেক্ষ মতাদর্শ যা যুক্তি, নীতিশাস্ত্র, ও ন্যায়বিচারকে নৈতিকতা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে এবং সবপ্রকার অলৌকিকতা এবং ধর্মীয় শাস্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করে। সর্বশেষ এই অর্থটির উপর ভিত্তি করে ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদকে একটি জীবনবিধান বলা চলে। আধুনিক অর্থে মানবতাবাদ বলতে তাই অলৌকিকতা ও ঐশী কর্তৃত্বকে অস্বীকার করা বোঝায়।

শব্দটির এই ভাবার্থকে প্রথাগত ধর্মীয় বৃত্ত্বে ব্যবহৃত “মানবতাবাদ” শব্দটির ভাবার্থের বিপরীতে দাঁড় করানো যেতে পারে। জ্ঞান আন্দোলনের প্রত্যাদেশবিরোধী আস্তিকতা বা একাত্মবাদ, পুরোহিততন্ত্রের বিরুদ্ধবাদ, ঊনবিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলন(যেমন, ইতিবাদ) এবং বিজ্ঞানের প্রসারের পরিপ্রেক্ষিতে এই তরিকার মানবতাবাদের জন্ম হয়েছে। ইতিহাস : “মানবতাবাদ” শব্দটি বহু অর্থদ্যোতক। ১৮০৬ সালের দিকে “হিউম্যানিসমাস” শব্দটি জার্মান বিদ্যালয়গুলোতে পঠিত ধ্রুপদী পাঠ্যসূচীকে নির্দেশ করার জন্য ব্যবহৃত হত। ১৮৩৬ সালেএর দিকে “হিউম্যানিজম” বা মানবতাবাদ এই অর্থে ইংরেজি ভাষায় ব্যবহার করা শুরু হয়।

১৮৫৬ সালে জার্মান ইতিহাসবেত্তা এবং ভাষাবিজ্ঞানী Georg Voigt “হিউম্যানিজম” শব্দটিকে রেঁনেসার মানবতাবাদকে নির্দেশ করার জন্য ব্যবহার করেছিলেন, শব্দটির এরুপ ব্যবহার বিভিন্ন দেশের(বিশেষ করে ইতালীর) ইতিহাসবেত্তাদের মাঝে জনপ্রিয়তা লাভ করে। “মানবতাবাদী” শব্দটির উপরিউক্ত ব্যবহার পঞ্চদশ শতাব্দীর ইতালীয় শব্দ “ইউমানিস্তা” থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যা সেই ব্যক্তিকে নির্দেশ করে যিনি ধ্রুপদী গ্রীক ও লাতিন সাহিত্য নিয়ে শিক্ষকতা বা গবেষণা করেন। শব্দটি এই বৃত্তির পেছনের নৈতিক দর্শনকেও নির্দেশ করে। অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে হঠাত করেই শব্দটির একটি ভিন্ন অর্থ উদীয়মান হতে থাকে। ১৭৬৫ সালে একটি ফরাসি সাময়ীকপত্রের এক বেনামী প্রবন্ধে দেখা যায়, “মানবপ্রেম….. একটি মহৎ গুণ যার জন্য এখনও কোন নাম আবিস্কৃত হয়নি এবং যাকে আমরা “মানবতাবাদ” বলে অভিহিত করব, কারণ এই মহৎ গুণের নামকরণ করার সময় হয়েছে…..”৭ অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে এবং ঊনবিংশ শতকের শুরুর দিকে তৃণমূল স্তরে বিভিন্ন জনসেবামূলক সংগঠণ গজিয়ে উঠে যারা নিজেদেরকে মানবসেবা ও জ্ঞানের(ধর্মীয় অথবা অধর্মীয়) প্রসারের কাজে নিয়োজিত করেছিল।

রুশোর মত জ্ঞান আন্দোলনের দার্শনিকরা ধর্মীয় নির্দেশনা ছাড়া স্রেফ যুক্তির সাহায্যে সদগুণ তৈরি হতে পারে বলে যে দাবি করেছিলেন, তা এডমুন্ড বুর্ক এবং জোসেফ দে মাইস্ট্রোর মত ধর্মীয় ও রাজনৈতিক রক্ষণশীলদের কাছে সমালোচিত হয়েছিল। তাঁরা একে মনুষ্য পূজোর সাথে তুলনা করেছিলেন। মানবতাবাদ শব্দটি নেতিবাচক অর্থ ধারণ করা শুরু করে। অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারী মতে ১৮১২ সালে একজন ইংরেজ ধর্মযাজক প্রথম “মানবতাবাদ” শব্দটিক সেসব ব্যক্তিদের নির্দেশ করার জন্য ব্যবহার করেন যারা যীশূর মানবিকতায় বিশ্বাস করতেন(অর্থাৎ, তাঁরা যীশূর অলৌকিকতায় বিশ্বাস করতেন না)। একই সময়ে জার্মানীতে মানবকেন্দ্রীক দর্শনের অর্থে “মানবতাবাদ” শব্দটি তথাকথিত বাম হেগেলবাদীদের দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছিল।

আর্নল্ড রুজ এবং কার্ল মার্ক্স স্বৈরাচারী জার্মান সরকারে গির্জার প্রভাবের তীব্র সমালোচক ছিলেন। শব্দটির বিভিন্ন অর্থ নিয়ে অনেক আগে থেকেই বিভ্রান্তি বিরাজমান হয়ে আসছে দার্শনিক মানবতাবাদীরা অনেকটা ভুল করেই মনে করতেন যে অতীতের বিখ্যাত মানবতাবাদী এবং যুক্তিবাদী দার্শনিকরা তাঁদের মত ধর্মবিরোধী মনোভাব পোষণ করতেন। চলবে...... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।