আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব। ডিসেম্বর ২০০৯, বিজয়ের এই মাসেই মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেয়ার ঔদ্ধত্য দেখাল দলগতভাবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকার কথা থাকলেও শেষ পর্যনত্ম আড়ালেই ছিলেন যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত একাত্তরের ঘাতক জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ। ব্যানারে তাঁর নাম থাকলেও প্রধান অতিথি হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পদক, নগদ অর্থ ও বই তুলে দিয়েছেন প্রেস কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি আবু সাঈদ আহমদ। আর জামায়াতী সংগঠন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের এই পদক গ্রহণ করে করে কবি আল মাহমুদ বলেছেন, পদক গ্রহণকে আমি ন্যায়সঙ্গত হিসেবে দেখেছি।
এই ঘটনা ইতিহাসের অনিবার্য পরিণতি। তবে সংবর্ধনা গ্রহনে আসেননি মেজর এমএ জলিলের পরিবারের কেউ।
অনেক আলোচনা-সমালোচনা আর গোপনীয়তার পর রবিবার রাজধানীর নয়াপল্টনের হোটেল ভিক্টোরিয়ার হল রম্নমে এ সংবর্ধনার আনুষ্ঠানের আয়োজন করে জামায়াত। সংবর্ধিতরা হলেন ৯ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর এমএ জলিল (মরণোত্তর), কবি আল মাহমুদ, ড. বেগম রওশন আরা, লে. কমান্ডার (অব) আফাজউদ্দিন (পিএসসি) এবং অনারারি ক্যাপ্টেন (অব) মোঃ সালাহউদ্দিন আহমদ। এর আগে গত কয়েকদিন কয়েক দফা অত্যনত্ম গোপনীয়তা বজায় রেখে এই অনুষ্ঠানের আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়ে আসছিল দলটি।
কিন্তু জামায়াতের এই কর্মকা- ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সরকার ও মুক্তিযোদ্ধাদের বাধার ভয়ে তা সম্ভব হচ্ছিল না। এর আগে, গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দলের আমির মতিউর রহমান নিজামী দাবি করেছিলেন, “বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ফসল। আর জামায়াত এই আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছে। এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। ” অন্যদিকে দলটির ঢাকা মহানগরের আমির রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, “রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে আমরা স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলাম।
” জানা গেছে, স্বাধীনতার ৩৮ বছর পর এবারই প্রথম জামায়াত পাঁচ মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দিল। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ ঢাকা মহানগরী সভাপতি হান্নান হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ছিলেন জামায়াতের ঢাকা মহানগরী আমির রফিকুল ইসলাম খান, মহানগরী জামায়াতের সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ এমপি, সহকারী সেক্রেটারি নুরম্নল ইসলাম বুলবুল, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. কোরবান আলী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. ইউসুফ আলী, নিউ নেশন পত্রিকার সম্পাদক মোসত্মফা কামাল মজুমদার প্রমুখ।
জামায়াতের পৰে বলা হয়েছিল, মেজর জলিলের পক্ষে তার পরিবারের একজন সদস্য সম্মাননা গ্রহণ করবেন। কিন্তু কেউ আসেননি। মেজর জলিল জীবদ্দশায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল_জাসদের রাজনীতি ছেড়ে কিছুদিন মরহুম হাফেজ্জী হুজুরের নেতৃত্বে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।
পরে তিনি সে দলও ত্যাগ করেন। কবি আল মাহমুদ জাতীয়তাবাদী বলয়ে সাহিত্যচর্চা করছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি আবু সাঈদ আহমদ বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার ৩৮ বছর কেটে গেলেও ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগত উন্নতি হয়েছে, কিন্তু জাতির সামগ্রিক যে উন্নতির দরকার ছিল তা হয়নি। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দেই না বলেই কোন উন্নতি হয় না। হাজারো মুক্তিযোদ্ধা পড়ে আছে, তাদের দিকে দৃষ্টি দেয়া হয় না।
মুক্তিযোদ্ধাদের বিভক্তি দুঃখজনক। মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের চেতনা ধরে রাখতে মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ করে কাজে লাগাতে হবে। দেশ রক্ষায় ধর্মকে মূল্যায়ন করারও আহ্বান জানান তিনি।
জামায়াতের কাছ থেকে পদক গ্রহণ করা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অনুষ্ঠান শেষে লে. কমান্ডার (অব) আফাজউদ্দিন বলেন, ১৯৭১ আর ২০০৯ সাল এক নয়। আমেরিকা আমাদের যুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, কিন্তু আমরা কি সেখানে যাচ্ছি না? আর ২০১১ সালে আমরা কতটা পেরেছি ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।