কেউ ডাকে নি তবু এলাম, বলতে এলাম ভালবাসি একটা হাচি দিলাম জোরে। পাশের মানুষটা আমার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকাচ্ছে। রাত একটা থেকে এই প্ল্যাটফর্মে বসে আছি। শীতের তীব্রতা বোধহয় বুকে জায়গা করে নিয়েছে। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।
ব্যাগে একটা ভেন্টলিন ইনহেলার থাকার কথা। একবার চিন্তা করলাম খুজে দেখব কিনা। পরক্ষণে এই চিন্তা বাদ দিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম। দু'বার টান দেয়ার পর কাশতে কাশতে প্রায় পড়ে যাচ্ছিলাম। লোকটা তখন এসে ধরল!
''কই যাইবেন আপনে??''
''আমি কোথাও যাব না,এই স্টেশনে নামলাম ট্রেন থেকে হঠাৎ মন চাইল তাই।
"
লোকটা অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। পাগল টাগল ভাবছে কিনা কে জানে।
একটু দূরে এক পিচ্চি ফ্লাক্সে করে চা বিক্রি করছে, চা খেতে ইচ্ছে করছে!পকেটে পাঁচ টাকার একটা কয়েন আছে। শেষ সম্বলটা দিয়ে এককাপ চা খাওয়া যেতে পারে। চা নিয়ে বসে আবার ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করা যাবে কি করব।
ঘড়ি দেখলাম,চারটা বাজে। জনশূন্য এই স্টেশনটা মাঝে মাঝে ট্রেন আসলে চঞ্চল হয়ে ওঠে। মানুষ যাচ্ছে আসছে,কারো কোন দিকে খেয়াল নেই। মাঝে মাঝ হকার দু একজন ট্রেনের যাত্রীদের মনযোগ আকর্ষনের চেষ্টা করছে। আমি কি রেললাইন ধরে সোজা হাটা দিব নাকি!!
আচ্ছা ট্রেনে কাটা মানুষের দেহ কেমন হয়!!ছিন্ন মাংসের স্তুপ নাকি দুমড়ানো মোচড়ানো একটা পিন্ড??দেখা দরকার,কিন্তু আমি মারা গেলে তো আর আমার দেখা হবেনা,দেখবে আমার আশেপাশের মানুষজন।
আচ্ছা আমি এইসব আবোলতাবোল কথা এই প্ল্যাটফর্মে বসে লিখছি কেন!!এটা আমার সুইসাইড নোট না তো!!
হেসে উঠলাম জোরে। আমার মত ভীরু কাপুরুষ করবে সুইসাইড। নাফিসা যখন আমাকে ছেড়ে অন্য একজনের হাত ধরে চলে গেল তখনই কিছু করিনি আর এখন নিজের জীবন বিকিয়ে দেয়া তো অর্থহীন।
একটা লোকাল ট্রেন থামল স্টেশনে,একটু চঞ্চলা হল স্টেশনটা,পাশে শুয়ে থাকা বৃদ্ধ কুকুরটা একবার চোখ মেলে দেখে আবার চোখ মুদল। ক্লান্ত দেহটা নিয়ে উঠে দাড়ালাম।
ট্রেনটা চলে যাওয়ার পর রেললাইন ধরে এগুবো
''ধীরে ধীরে ভেসে যায় চোখে শেষ প্রিয় মুখ
তবু যদি থেমে যায় চোখে সব কল্পনা
ছুয়ে দেখা স্মৃতি আর
ছুয়ে দেখা আধার
ভেবে নেয়া শহরে ফেলে আসা পথ" ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।