হত্যাকাণ্ডের ১ মাস আগে লোকমানকে সরিয়ে দেয়ার প্রস্তাব নিয়ে আশরাফ সরকারের কাছে গিয়েছিল মন্ত্রী রাজুর এপিএস মাকসুদুর রহমান মুরাদ। সে আশরাফকে বলেছিল, লোকমানের বড্ড বাড় বেড়েছে- ওকে সরিয়ে দিতে হবে। এজন্য মোটা অঙ্কের টাকা দেয়ার কথা বলেছিল মুরাদ। তবে সে সময় আশরাফ বলেছিল, এত বড় ঘটনার পর বাঁচতে পারা যাবে না। তখন মুরাদ বলে, পেছনে শক্তিশালী হাত আছে।
কিছুই হবে না। মুরাদ তাকে বলে- মন্ত্রীর ভাই বাচ্চুর নির্দেশেই সে তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। এ সময় বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আশরাফ কথা বলতে চায় বাচ্চুর সঙ্গে। তখন মুরাদ তার মোবাইল ফোন থেকে বাচ্চুর সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়। ঢাকার টঙ্গিতে আশরাফের এক আত্মীয়ের বাড়িতে তার সঙ্গে দেখা করে মুরাদ।
গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছে লোকমান হত্যা মামলার ১১নং আসামি আশরাফ হোসেন সরকার। এছাড়া সে মন্ত্রী রাজু ও কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার বিষয়ে আরও কিছু তথ্য দিয়েছে বলে গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে। তবে সেসব তথ্য খুবই স্পর্শকাতর বলে জানিয়েছেন তারা। ওদিকে রিমান্ডে থাকা সেলিম ও টিপ্পন কাজী স্বীকার করেছে হত্যাকাণ্ডে মূল ছক আঁকে মোবারক হোসেন মোবা। পুরো ঘটনার সমন্বয় করে আশরাফ সরকার।
৩ জনের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে নরসিংদীর আরও বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে এই মুহূর্তে পুলিশের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মোবারক হোসেন ওরফে মোবাকে। হত্যাকাণ্ডের ১৫ দিন পর গ্রেপ্তারকৃত এজাহারভুক্ত আসামি আশরাফ সরকার মামলার এজাহারভুক্ত ২ নম্বর আসামি নরসিংদী পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল মতিন সরকারের ছোট ভাই। গতকাল গ্রেপ্তারকৃত আসামি আশরাফুলকে আদালতে আনা হবে- এ কারণে পুরো আদালত ছিল নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। বেলা সাড়ে ১২টার সময় পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে আশরাফ সরকারকে পুলিশের পোশাক, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয়।
তাকে ওঠানো হয় নরসিংদী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিতাই চন্দ্র সাহার আদালতে। চাঞ্চ্যলকর এই মামলার আসামি আশরাফের বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন প্রার্থনা করে মামলার তদন্তকারী অফিসার ও ডিবি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ। শুনানি শেষে তা মঞ্জুর করেন আদালত। এর পর পিকআপ ভ্যানে করে দ্রুত তাকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। লোকমান হত্যা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১লা নভেম্বর রাতে জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকে ১১নং আসামি আশরাফ সরকার তার হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মেয়র লোকমান হোসেনকে লক্ষ্য করে বুকে গুলি করে।
তার সেই গুলি লোকমান হোসেনের বুকের বাম পাশের উপরিভাগে বিদ্ধ হয়। মঙ্গলবার আশরাফকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি স্বীকার করে পুলিশ। তবে গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, তাকে গত সোমবার গভীর রাতে রাজধানীর উত্তর শাহজাহানপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর কৌশলগত কারণে তার গ্রেপ্তার গোপন রেখে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে আশরাফ।
সে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে বেশ কয়েকজনকে জড়িয়ে তথ্য দেয়। পরে ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে গোয়েন্দারা কিছু প্রমাণ হাজির করলে সব কিছু অকপটে স্বীকার করে। সে জানায়, নানা কারণে মেয়র লোকমানের সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল। সমপ্রতি শহরের একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট-এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। সরকারের কাছ থেকে লিজ নেয়া সাড়ে পাঁচ একর জমির মধ্যে আড়াই একর জমি আশরাফের কাছ থেকে এ প্রকল্পের জন্য নেয়া হয়।
মেয়র লোকমান হস্তক্ষেপ করায় এ জমি হারাতে হয়। সেই থেকে মেয়র লোকমানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে সে। পরে মন্ত্রীর এপিএস তার কাছে লোকমানকে সরিয়ে দেয়ার প্রস্তাব নিয়ে এলে সে প্রস্তাবটি লুফে নেয়। এদিকে ৮দিন রিমান্ডে থাকার প্রথম দিনেই টিপ্পন কাজী গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে বলে, লোকমানকে হত্যার জন্য নেতৃত্ব দেয় আশরাফ। হত্যার সমন্বয়ক ছিল সে।
এদিকে গতকাল সকালে পুলিশ সুপার খ. মহিদ উদ্দিন তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এজাহারভুক্ত একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শিগগিরই আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হবে। হত্যাকাণ্ডের দিন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের পাশে বাজাজ ডিসকভার ১২৫ সিসি মডেলের লাল রঙের মোটরসাইকেলটির নম্বর কুমিল্লা হ-১১-৩১৫২ ফেলে রাখা হয়। সে মোটরসাইকেলের সূত্র ধরেই টঙ্গি থেকে হাজী সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় টিপ্পন কাজীকে।
গত শনিবার গোপালগঞ্জ জেলা সদরের গোপিনাথ গ্রামের শরিফপাড়া থেকে নরসিংদী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদারের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম তাকে আটক করে।
গত ১লা নভেম্বর রাতে জেলা আওয়ামী লীগ অফিসের ভিতরে নরসিংদী জনপ্রিয় পৌর মেয়র লোকমান হোসেনকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের দু’দিন পর নিহতের ভাই কামরুজ্জামান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার ১নং আসামি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দীন রাজুর ভাই সালাউদ্দীন বাচ্চু। View this link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।