আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্লগার এবং মুক্তচিন্তার ওপর আগ্রাসন বন্ধে রুখে দাঁড়ান

একটু ভাবতে হবে.......... যারা ব্লগে লিখেন তাদের লেখার জন্য কোন অনুদান কিংবা আর্থিক সহয়তা দেয়া হয় না । তারা লিখেন নিজের বিবেক ও মতাদর্শের তাড়নায় । কাউকে খুশি করার জন্য বা কারো বাহবা পাওয়া তাদের লেখার উদ্দেশ্য না । তারা শব্দ গাঁথেন রাষ্ট্র ও সমাজের বৈষম্য,আশিক্ষা, কুশিক্ষা,দুর্ণীতি,ধর্মান্ধতা,নারী নির্যাতন ,সাধারণ মানুষের অধিকার ও উগ্র মৌলবাদের বিরুদ্ধে । ব্লগিং কারো পেশা না ।

ব্লগারদের মধ্যে আছে এই দেশেরই ছাত্র,শিক্ষক,হতাশাগ্রস্ত তরুণ ,বেকার যুবক থেকে শুরু করে রাজনীতি বিমুখ তরুণী সবাই । একসময় এই ব্লগিং ও অনলাইন এক্টিভিস্টকে খুব বেশি গুরুত্ব সহকারে দেখা হত না । তাঁর উপর নিন্দুকেরা বলে বেড়াত যারা ব্লগে ও সামাজিক বিভিন্ন মাধ্যমে লিখে তাদের দৌড় ঐ পর্যন্তই, তারা নাকি নায্য দাবি ,অধিকার আদায় কিংবা প্রতিবাদ করতে রাজপথে নামতে ভয় পাই । কিন্তু সাম্প্রতিক সারা দেশে শাহবাগের গণআন্দোলনে উজ্জীবিত হয়ে তরুণ সমাজ যে ভাবে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছে তাতে সবার টনক নড়েছে । তরুণ সমাজ প্রমাণ করেছে তাঁরা শুধু ব্লগ কিংবা ফেসবুকে সীমাবদ্ধ নয় তারা মাতৃভূমির প্রয়োজনে রাজপথেও লড়তে জানে ।

ফলে দেরিতে হলেও আমাদের রাজনৈতিক দল সমূহ ও প্রগতিশীল সমাজ এই ব্লগিং ও অনলাইন কার্যক্রম নিয়ে ভাবতে বাধ্য হয়েছেন । আমাদের আদর্শ বিবর্জিত, দুর্ণীতিপরায়ণ ও পরিবার তন্ত্র চর্চাশীল দুই রাজনৈতিক দল বুঝতে পেরেছে তারুণ্যের এই গণআন্দোলন পরবর্তীতে শুধু একটি জায়গায় আটকে থাকবে না । অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বজীৎ হত্যার মত সরকারের গুন্ডা বাহিনীর পৈষাচিক হত্যাকাণ্ড ,সাগর-রুনির মত সাংবাদিক দম্পতির রহস্য জনক মৃত্যু কিংবা অতীতের জামাত-বিএনপির রেকর্ড দূর্ণীতি ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধেও এই তরুণ সমাজ যেকোন সময় আবার রাজপথে নেমে দুর্বার কোন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে সেই সম্পর্কে আমাদের দুই বৈরি রাজনৈতিক দল এরি মধ্যে অবগত হয়েছেন । সুতরাং দুই দলেই বর্তমানে মুক্তচিন্তক ও প্রগতিশীল তরুণদের ব্লগিং ও সোশ্যাল একটিভিস্ট নিয়ে সমান ভাবেই মাথা খাটাচ্ছে । শুরুর দিকে যদিও বা শাহবাগের গণআন্দোলন সরকারী সহযোগীতা ও নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেই এগোতে থাকে কিন্তু সরকার ভালই অবগত ছিল যে এই আন্দোলন কিন্তু তাদের বিরুদ্ধেই ।

কারন কাদের মোল্লার প্রহসনের রায় ঘোষনা ও সরকারের বিগত সময়ের সীমাহীন ব্যর্থতার জন্য তরুণ সমাজ কতটা ক্ষুব্ধ তা সরকার রাজপথে তাদের লড়াইয়ের অদম্য সাহস ও মনোবল দেখেই আঁচ করতে পেরেছে । ফলে শুরু থেকেই সরকার এই আন্দোলনের সুফল নিজেদের ঘরে তোলার জন্য মরিয়া হয়ে উটে । এবং বর্তমানে তারা এই আন্দোলনকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এই শক্তির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেয়ার অপচেষ্টায় নেমেছে । আপনারা জানেন যে আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটা কমিটি গঠিত হয়েছে। এই কমিটি বাংলা অনলাইনে ধর্মবিদ্বেষী লেখা বদ্ধের বিভ্রান্তিকর ফতোয়া দিয়ে মানুষের বাগ-স্বাধীনতার উপর অবৈধ হস্তক্ষেপ করার পাঁয়তারা করতেছে ।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর সহকারী পরিচালক রহমান খান ব্লগস্ফিয়ারের জনপ্রিয় ব্লগিং সাইট “আমারব্লগ” এর ছয়জন ব্লগারের আইপি এড্রেস, লোকেশন, ইমেইল, মোবাইল নম্বর এবং ব্যক্তিগত নাম বিটিআরসি কার্যালয়ে ইমেইলে জমা দিতে বলেছেন। এই কার্যক্রমের প্রথম ধাপ হিসেবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে উপমহাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় বাংলা ব্লগিং সাইট সামহয়্যারইন ব্লগের ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন এর ব্লগ অ্যাকাউন্ট। মূলত সামহোয়্যারইনে লেখালেখির মাধ্যমে ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন জনপ্রিয় হোন এবং পরিচিতি পান । বিশেষ করে শুরু থেকেই ধর্মীয় কুসংস্কার,ধর্মান্ধতা, উগ্র মৌলবাদ, নারী অধিকার ও স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রসঙ্গে তিনি ছিলেন বেশ সোচ্চার । জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে ব্লগ লিখে সরকারের বিরাগভাজন হয়েছিলেন, সেই সময় উনাকে ডিবি অফিসে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল এবং করা হয়েছে নানা ধরনের হেনস্তা।

তাছাড়া প্রতিক্রিয়াশীল ভিবিন্ন উগ্রগোষ্ঠী উনাকে নানা সময় মিত্যু হুমকি দিয়ে আসছিল এবং কিছুদিন পূর্বে মৌলবাদীদের ভয়ংকর আক্রোশের শিকার হয়েছেন । অফিস থেকে ফেরার পথে চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়েছিল উনাকে, ঠিক যেভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে শাহবাগ আন্দোলনের উত্তাল সময়ে ব্লগার ‘থাবা বাবা’ ওরফে রাজীব হায়দারকে। ঠিক সেই ভাবেই মারা যেতে পারতেন আসিফ মহিউদ্দিনও। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে হয়ত তিনি বেঁচে গেছেন । কিন্তু আশার কথা হল এরপরেও ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন উনার ব্লগিং বন্ধ করেন নি।

কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে তিনি আবার উনার শানিত লেখার শক্তিতে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ও বিভিন্ন নীতি বিবর্জিত দেউলিয়া মহলকে আঘাত করতে থাকেন । অথচ দুঃখের বিষয় হল হাজারো হুমকি ও হিংস্র আক্রমণের ফলেও মৌলবাদী গোষ্ঠী যেখানে সাহসী যোদ্ধা আসিফ মহিউদ্দিনকে দমাতে পারে নি সেখানে নিজেদের প্রগতিশীল বলে দাবি করা আমাদের বর্তমান সরকার উটেপড়ে লেগেছে উনাকে থামিয়ে দেয়ার জন্য । একজন লেখকের কাছে তার অমূল্য সম্পদ হল তার লেখা । আসিফ মহিউদ্দীন তার দীর্ঘ সময়ের প্রচেষ্টাই সামহোয়্যারইন ব্লগে মুক্তচিন্তা ও প্রগতিশীল তরুণ প্রজন্ম গড়ার জন্য যেসব মূল্যবান লেখা পোষ্ঠ করেছিলেন তা তাকে কোনরূপ অবগত না করেই সরিয়ে দেয়া হল । যা একজন লেখকের গলায় চুরি চালানোর সামিল ।

সরকারের উদ্দেশ্য স্পষ্ট তাঁরা বুঝে গেছে এই যাত্রাই এই আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও ভবিষ্যতে তাদের নৈরাজ্জের বিরুদ্ধেও তা আবার দানা বাধঁতে পারে । সুতরাং সরকার চাচ্ছে এখুনি নিজেদের মত করে এই ভার্চুয়াল জগতটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে । যার সদূরপ্রসারী প্রভাব হবে বেশ ভয়ংকর । কারন এই ব্লগিং সাইটগুলো হল মুক্তচিন্তা ও নিজের আশা, আকাঙ্কা প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম । এখানে যে কেউ কোন রূপ চাপ ও প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে পুরোপুরি স্বাধীনভাবে নিজের মত প্রকাশ করতে পারে , অন্যের সাথে নিজের উপলব্ধি ও মতাদর্শ শেয়ার করতে পারে ।

ফলে লেখক ও পাঠকের দীর্য দিনের যুক্তি-তর্ক ও ভাব আদান -প্রদানের মাধ্যমে এই জগতে একটি শক্তিশালী মুক্তমনন ও আদর্শিক প্রগতিশীল প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে । যে প্রজন্মটি এবার তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার হাতিয়ারে রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে রাজপথে নেমেছে সেই প্রজন্মটি অচিরেই যে আমাদের শাসক গোষ্ঠী ও রাজনৈতিকদের দীর্ঘ দিনের ব্যর্থতা ও অপকর্মের বিরুদ্ধে মুষ্টিবদ্ধ হাতে রাজপথে নামবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । বর্তমান পেক্ষাপট দেখে মনে হচ্ছে সরকার ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিষ্টদের নিয়ে যে ভাবে মাথা খাটাচ্ছে তার বিন্দু মাত্রও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জামাত-শিবিরের সাম্প্রতিক আগ্রাসন নিয়ে ভাবতেছে না । ফলে জামাত-শিবির যে ভাবে দেশ জুড়ে শাহবাগ আন্দোলনকে নাস্তিক, নস্টা ও বেশ্যাদের আন্দোলন বলে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে সরকার উদ্দেশ্য মূলক ভাবে সেই উস্কানিই নতুন করে উস্কে দিতে যাচ্ছে । ফলে শাহবাগ আন্দোলন থেকে যতঠুকু সাফল্য না আমরা ঘরে তুলতে পেরেছি তার চেয়ে বেশি সফল হতে যাচ্ছে জামাতিরা।

সরকার জামাতিদেরএই যাবত চালিয়ে আসা সব অপপ্রচার এবং সেইসাথে দীর্য দিনের এইযুদ্ধে আমরা ব্লগার রাজীব হায়দার সহ অন্য যাদের হারিয়েছি কিংবা এই যুদ্ধে যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের উপর চালালো নিশৃংস আগ্রাসনকেও সরকার বৈধতা দিতে যাচ্ছে যা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যাই না । বেশ আশ্চর্যজনক ভাবে লক্ষ করলাম ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্টের উপর সরকারের এই নির্লজ্জ হস্তক্ষেপের প্রতিক্রিয়াই কিছু তথাকথিত সেলিব্রেটি ব্লগার বেশ দায়সারা বেশ দেখাচ্ছে । তোষামদি ও চাটুকারিতাই তাঁরা নিজেদের বিবেক ও আদর্শকে নিলামে বিক্রি করে উল্টো ভুক্তভুগি ব্লগারের নামে বিভিন্ন কুৎসা রটাচ্ছে । তাঁরা হয়ত ভুলে গেছে সরকারের এই অবৈধ হস্তক্ষেপ শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি আসিফ মহিউদ্দীনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এই আঘাত অনলাইনে যারা দীর্য দিন ধরে রাতদিন কুলি খেঁটে মুক্তচিন্তা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাময় একটি প্রগতিশীল প্রজন্ম তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছে তাদের সবার উপর সমান ভাবে বর্তাই । আজকে হয়ত সরকারের বিরাগভাজন হিসেবে ব্যক্তি আসিফ মহিউদ্দীন আক্রান্ত হয়েছেন কিন্তু আমরা যদি এখুনি নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের এই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অপব্যবহারের প্রতিবাদ না করি তবে আজকে অথবা কালকে আমি বা আপনার গলাই চুরি রেখে আমাদের বাগরুদ্ধ করা হতে পারে ।

সুতরাং সমস্ত মত পার্থক্য ও ব্যক্তিগত হিসেব নিকেশ বাদ দিয়ে আমাদের স্বাধীন মত প্রকাশের একমাত্র স্থান বাংলা ব্লগস্ফিয়ারে যে কোন হীন শক্তির কু-প্রভাবমুক্ত রাখতে একসাথে লড়তে হবে । মোদ্দা কথা হল বাংলা ব্লগস্ফিয়ার হচ্ছে মুক্তচিন্তক ও আদর্শিক প্রজন্মের মত প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম । সুতরাং এটাকে রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার । এখানে কারো বিরুদ্ধে সরকারি বা অন্য কোন গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপ আমরা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারি না । প্রয়োজনে আমাদের বাকস্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপকারী যেকোন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে ।

সরকারকে স্পষ্ট ভাবে বলে দিতে চাই বাকশালি কুৎসিত ক্ষমতা প্রদর্শনের জায়গা অনলাইন নয় । যারা আমাদের গলায় ছুরি রেখে আমাদের বাগপ্রতিবদ্ধী বানিয়ে রাখতে চাই তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হউন । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.