এবার হবেই! লোরকের পাশে এবার আপনিও >> ০১৮৩৬৫৫৫৬৪০
ভিস্তি (Visti): যিনি পানি সরবরাহ করেন তাকে ভিস্তি বলে। বিংশ শতকের প্রথম দশক পর্যন্ত এই ব্যবসার প্রচলন ছিল। বর্তমান বাংলাদেশে এই পেশা বিলুপ্তপ্রায়। তবে কলকাতায় আজো এই পেশার লোকেদের চোখে পড়ে। ভিস্তিওয়ালারা এখন কলকাতায় এক মশক পানি বিক্রি করছেন ১০ থেকে ২০ টাকায়।
অনেকে এই পানি রান্না ও গোসলে ব্যবহার করেন। বর্তমানে যারা বোতলে করে মিনারেল পানি সরবরাহ করে তাদের ভিস্তি বলা যাবে কিনা জানি না।
একটি মজার তথ্য মোঘল সিংহাসনে একদিনের জন্য বসেছিল এক ভিস্তি (তথ্যসুত্রঃ বাদশা নামদার, হুমায়ুন আহমেদ)।
বাদশা হুমায়ুন যুদ্ধের ময়দান থেকে একবার পালিয়ে যাচ্ছিলেন তখন এক ভিস্তি তাকে পানি খাইয়ে এবং তাকে পালাতে সাহায্য করেছিল। বাদশা হুমায়ুন তাঁর ইচ্ছার কথা শুনতে চান।
ভিস্তি সিংহাসনে বসতে চান। বাদশা হুমায়ুন তাকে প্রতিশ্রুতি দেন। পরে প্রতিশ্রুতি মোতাবেক এক ভিস্তিকে একদিনের জন্য রাজ সিংহাসনে বসান। এক কালে যুদ্ধের সময় সৈন্যরা ভিস্তিতে পানি রাখত। ব্রিটিশদেরও যুদ্ধ ক্ষেত্রেও দুর্গের মধ্যে খাবার পানির একমাত্র ভরসা ছিল ভিস্তি।
ঢাকায় যে টমটম গাড়ি চলত, তাতেও থাকত পানিভর্তি মশক। এই মশক সাধারণত ছাগলের চামড়া দিয়ে তৈরি করা হয়। এই মশক তৈরি করার জন্য চাই দক্ষতা। সবাই এই মশক তৈরি করতে পারে না। কলকাতায় দুইজনলোক এখনো জীবিত আছেন যারা এই মশক তৈরি করতে পারেন।
ভিস্তি সম্পর্কে মনোজ্ঞ বর্ণনা দিয়েছেন কবি শামসুর রহমান-- "রোজ মশক ভরে দুবেলা পানি দিয়ে যেত আমাদের বাড়িতে। ... কালো মোষের পেটের মতো ফোলা ফোলা মশক পিঠে বয়ে আনত ভিস্তি। তারপর মশকের মুখ খুলে পানি ঢেলে দিত মাটি কিংবা পেতলের কলসের ভেতর। মনে আছে ওর থ্যাবড়া নাক, মাথায় কিস্তি টুপি, মিশমিশে কালো চাপদাড়ি, আর কোমরে জড়ানো পানিভেজা গামছার কথা। ... একদিন পানির কল এলো আমাদের মাহুতটুলীর বাড়িতে।
আর সেই সঙ্গে বিদায় নিল ভিস্তি। ''
ভিস্তি্র কথা উল্লেখ আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জুতা আবিষ্কার কবিতায়।
"তখন বেগে ছুটিল ঝাঁকে ঝাঁক
মশক কাঁখে একুশ লাখ ভিস্তি।
পুকুরে বিলে রহিল শুধু পাঁক,
নদীর জলে নাহিকো চলে কিস্তি।
জলের জীব মরিল জল বিনা,
ডাঙার প্রাণী সাঁতার করে চেষ্টা।
পাঁকের তলে মজিল বেচা-কিনা,
সর্দিজ্বরে উজাড় হল দেশটা।
আমাদের ফেইসবুকে আরো তথ্য পাবেন বাংলাদেশের পেশাজীবীদের নিয়ে
https://www.facebook.com/lorokbd ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।