আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সময়কে নির্ধারণ করতে দিন কারা কালজয়ী লেখক কারা নয়

নিঃস্ব হবো জেনেও, দর্শনার্থী আমি। হুমায়ূন আহমেদের লেখা নিয়ে আনিসুল হকের সমালোচনাঃ ১. "তিনি সর্বদা যুক্তাক্ষর ব্যবহার করেন না। করলে খুবই কম করেন কিংবা মজা করার জন্য করেন। যেমন : "ইনি একজন ভদ্রলোক। বিশিষ্ট ভদ্রলোক।

" এ্ই বিশিষ্ট শব্দটি তিনি ব্যবহার করেন মজার জন্যেই। " ২. "তাঁর বাক্য কখনোই পাঁচ শব্দের বেশী হয় না । "একজন সুন্দর, লম্বা, চিকন, ফর্সা, লম্বাচুল,দীর্ঘকর্ণ, তিলবিশিষ্ট নারী আসছে। "_এই বাক্যটি হুমায়ূন আহমেদ কখনোই এরকম লম্বা করে লিখবেন না। তিনি লিখবেন : "একটা মেয়ে আসছে।

লম্বা ধরণের মেয়ে। দেহটা চিকন। কানদুটো লম্বা। ধবধবে ফরসা। লম্বা চুল।

কান বড়। মুখে তিল। মায়াবতী। বড়ই মায়াবতী। " বুঝতেই পারছেন, ক্লাস ওয়ানের সবুজ সাথী বইতে এরকম বাক্য আমরা পড়েছি।

''মা। কলম । কলা। আমার মা । লাল কলম।

লাল কলম ভাল। ইহা কলা। ইহা পাকা কলা। আমি কলা খাব। " ফলে তাঁর বাক্য পড়তে অসুবিধা হয় না।

আমাদের দেশে ক্লাস ওয়ান পাস লোকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। ক্লাস টুতে বাকি অর্ধেক ছাত্র ঝরে যায়। ক্লাস ওয়ান পাস লোকজন বই পড়ে না, পড়ে এসএসসি এইচএসসির লোকজন_এরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। কেউ জনপ্রিয় হতে চাইলে লিখতে হবে এদের টার্গেট করে। হুমায়ূন আহমেদও তাই করেন।

সেক্স রাখেন কম, এক লাইনে। ছোটবোন বড়বোনকে জিজ্ঞাসা করবে- "আপা , চুমু খেলে নাকি বাচ্চা হয়। '' ব্যাস, এই পর্যন্তই। " আমার কথাঃ মাধ্যমিক পর্যায়ে আমাদের শ্রী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি প্রবন্ধ পড়তে হয়েছিল। নামটা খুব সম্ভবত "রচনার শিল্পগুণ"।

প্রবন্ধটিতে উনি এত প্রাঞ্জলতার কথা বলছেন, অর্থব্যক্তির কথা বলছেন অথচ এই প্রবন্ধটাই আমার কাছে এই রচনার শিল্পগুণ সম্পন্ন মনে হ্য় নি। এর শব্দ চয়ন যেমন কঠিন মনে হয়েছে, ভাষার ব্যাবহারও মনে হয়েছে, তেমনি জটিল । এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। ১৮৩৮-১৮৯৪ সালে লেখা একটা প্রবন্ধ এ সময়ে এসে আমার কাছে প্রাঞ্জলতাহীন মনে হতেই পারে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় চেয়েছিলেন তার সমসাময়িক বা তার পুর্ববরতী লেখকদের বলয় ভেংগে নতুন একটা স্টাইল তৈরি করতে।

তিনি করেছেন। হুমায়ুন আহমেদও প্রচলিত নিয়ম ভেংগে নিজের স্টাইল তৈরি করে নিয়েছেন। এবং তিনি সফল। আমার ধারণা, এই সকল কালজয়ী লেখকদের (যারা দাবী করেন হুমায়ুন আহমেদের লেখা হারিয়ে যাবে আর ওনাদের লেখা হাজার বছর বাংলা সাহিত্যে, ম্যাজিক টুত পাউডারে মাজা দাতের মত জ্বলজ্বল করবে) গাত্রদাহের কারণ ওনাদের বই এর কম কাটতি। বলি, মামা ভালো বই লিখুন মানুষ কিনবে।

অন্যের পিছনে লাগা ছাড়ুন। সময়কে নির্ধারণ করতে দিন কারা কালজয়ী লেখক কারা নয়। আপনার 'মা','ক্ষুধা এবং ভালোবাসার গল্প','বীর প্রতীকের খোঁজে' বই গুলো ভালো লিখেছেন। আমি দোকান থেকে নগদ টাকা খরচ করে কিনেছি। জানি না কালজয়ী লেখকদের কেন পয়সা পাওয়ার লালসা হয় !! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।